আমাদের সমাজে ইসলামপন্থীদের মাঝে এক ধরণের অবাস্তব কল্পনা বিলাস আছে। আর তা হল শুধুমাত্র সব ইসলামপন্থিরা এক প্লাটফর্মে এলেই অথবা তাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে।
কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। এরকম একটা ধারণা থেকে পাকিস্তানের উদ্ভব
হয়েছে। অথচ দেখুন সেখানে ইসলামের বিজয় হয় নি, বিজয় হয়েছে জাতীয়তাবাদের।
১ম বিষয় হচ্ছে যোগ্যতা। একটি
ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য প্রথমত যেটা জরুরী তা হল ঐ রাষ্ট্র বা জনপদকে ইসলাম মোতাবেক
চালানোর জন্য একদল সেক্টরভিত্তিক যোগ্য লোক তৈরী করা। যারা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও
জনগণের প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক রাষ্ট্র চালাতে পারবে। আল্লাহর রাসূল মক্কায়
অগ্নিপরীক্ষার মাধ্যমে এই ধরণের যোগ্যতা সম্পন্ন লোক তৈরী করেছেন।
২য় বিষয় হল বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মানসিকতা পরিবর্তন করা। যাতে তারা ইসলামের
শাসন ও অনুশাসন মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ আল্লাহ
ও তার রাসূলকে (সঃ) মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ও মানে। তবে আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব
মানতে তারা এখনো অভ্যস্ত হয় নি। এই ধরণের জনগোষ্ঠী মদিনায় তৈরী হয়েছিল।
৩য় বিষয় হল নেতা হবেন আদর্শের মডেল। অর্থাৎ যাদের নেতৃত্বে ইসলাম
প্রতিষ্ঠিত হবে তারা হতে হবে ইসলামের মডেল। তাদের দেখে জনগণ ইসলাম শিখবে। তাদের
জীবনাচরণের সাথে যদি ইসলামের সামান্যতম প্রার্থ্যক্যও থাকে তাহলে তা জনগণের উপর
নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অনেকখানি। আল্লাহর রাসূল সঃ স্বয়ং নিজেই মডেল হিসেবে
উপস্থাপিতহয়েছেন। সেই সাথে ছিল সাহাবাদের উন্নত চরিত্র।
এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত হলে তবেই আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইসলামী রাষ্ট্র
দিবেন। মক্কায় ২য় বিষয়টি অর্জিত হয়নি বিধায় প্রথমেই মক্কায় ইসলামী রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। আল্লাহর রাসূল সঃ মক্কা থেকে যোগ্য নেতৃত্ব সহ মদিনায় গিয়ে
তিনটি বিষয়ের সমন্বয় করাতেই সেখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে।
এখানে শর্টকাট কোন ওয়ে নেই যে আপনি হুট করে ইসলামী
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করবেন। জিন্নাহ যখন দ্বিজাতিতত্ত্ব ঘোষনা করেছিলেন তখন এক সেমিনারে তাকে
প্রশ্ন করা হয়েছিলো পাকিস্তানের সংবিধান কি হবে। সে দ্রুত পকেট হতে একটি ছোট কুরআন
শরীফ বের করে অত্যন্ত আবেগ মেখে বলেছিলো “এটিই হবে পাকিস্তানের
সংবিধান”। অথচ দেখুন আজও কি হয়েছে সেখানে কুরআনের সংবিধান?
হয় নি। কারণ কুরআনকে সংবিধানে রূপ দেয়ার মত যোগ্যতা তার বা তার
মন্ত্রীসভার কারো ছিল না।
ইসলামপন্থীদের জন্যতো বটেই, সবার জন্যই ঐক্য একটা বড়
শক্তি। ঐক্য থাকলে আমাদের অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়। তবে ঐক্য হওয়া উচিত আল্লাহর জন্য।
দ্বীনের জন্য। জাতীয়তাবাদের ঐক্য নয়। সঠিক পন্থায় ঐক্যের জন্য যোগ্যতা দরকার।
আমাদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য থাকে। আমরা যদি একটু ধৈর্য্য ধরে অপরের কথা শুনি,
অপরের মতামত শুনি, খুব শালীন ভাষায় দ্বিমত করি
বা নিজের মতামত উপস্থাপন করি তাহলেই নিজেদের সমস্যাগুলো কেটে যায়। কোন সম্প্রদায়কে
ম্যনশন দোষারোপ করা ঐক্যের জন্য ভয়ানক হুমকি।
আসুন যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করি। নিজ নিজ সেক্টরে অথবা আমাদের
ইন্টারেস্টের জায়গাগুলোতে আমরাই যাতে নেতৃত্ব দিতে পারি সেই ব্যবস্থা আমাদেরই করতে
হবে। এভাবেই একদিন ইসলাম নেতৃত্বের আসনে আসীন হবে ইনশাআল্লাহ।
আর সেই সাথে আমাদের সবার কমন দায়িত্ব, আমরা আমাদের যার
যার অবস্থান হতে আমাদের দাওয়াতকে আরো গতিশীল করবো। মানুষকে আল্লাহ্র
সার্বভৌমত্বের দিকে আহ্বান করবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সমগ্র প্রচেষ্টা কে কবুল
করে নিন। আমিন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন