এতদিন শুনেছি আইন সবার জন্য সমান, আইন অন্ধ এখন দেখি বিচারকেরাই অন্ধ। কারণ এখানে যুক্তি খাটেনা, তথ্য প্রমাণের কোন বালাই নাই, প্রসিকিউটররা নানান গল্পকারের গল্প উপন্যাস নিয়ে বিচারালয়ে হাজির করেন। আর বিচারক মহোদয় সবকিছু গম্ভীরভাবে শুনে বলেন, ওকে ডিসমিসড, ডিসমিসড। তোমাদের রিভিউ খারিজ। তোমাদের ঝুলিয়ে দেয়া হবে।
এক নজরে কাদের মোল্লার গ্রেফতার থেকে ফাঁসি
গ্রেফতার : ১৩ জুলাই ২০১০ সুপ্রিম কোর্ট এলাকা থেকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার।
তদন্ত শুরু : ২১ জুলাই ২০১০
তদন্ত শেষ : ৩১ অক্টোবর ২০১১
আদালতে অভিযোগ উত্থাপন : ১৮ ডিসেম্বর ২০১১
শ্যোন অ্যারেস্ট : ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ থানায় মুক্তিযুদ্ধকালে গোলাম মোস্তফা নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
অভিযোগের সংখ্যা : ৬টি
৬ নং অভিযোগ : মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা। আর এই চার্জেই ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লাহকে
অভিযোগ আমলে নেয় : ২৮ ডিসেম্বর ২০১১
চার্জ গঠন করে : ২৮ মে ২০১২
অভিযোগের ওপর সূচনা বক্তব্য শুরু হয় : ১৬ জুন ২০১২
রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষ্য : ৩ জুলাই ২০১২
রাষ্ট্রপক্ষের মোট সাক্ষী : ১২ জন
সাক্ষ্য শেষ হয় : ৪ নভেম্বর ২০১২
কাদের মোল্লার পক্ষের সাক্ষীর আবেদন : ৫ নভেম্বর ২০১২
কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষী : ৬ জন
কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষ্য শুরু : ১৫ নভেম্বর ২০১২
কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষ্য শেষ হয় : ৬ ডিসেম্বর ২০১২
রাষ্ট্রপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক : ১৭ ডিসেম্বর
মামলা পুনর্বিচারের জন্য আবেদন : ৩ জানুয়ারি ২০১৩
পুনর্বিচারের আবেদন খারিজ : ৭ জানুয়ারি ২০১৩
আসামিপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক : ৭ জানুয়ারি ২০১৩
রায় দেয়ার ঘোষণা : ১৭ জানুয়ারি ২০১৩
ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় : ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
শাহবাগেিদর দাবি অনুযায়ী সরকারকে আপিলের সুযোগ দিতে আইন সংশোধন : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
সরকারে আপিল : ৩ মার্চ ২০১৩
কাদের মোল্লার আপিল : ৪ মার্চ ২০১৩
আপিলের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩
আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ : ৯ ডিসেম্বর ২০১৩
ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি : ১০ ডিসেম্বর ২০১৩
মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত : ১০ ডিসেম্বর রাত ১০টা।
রিভিউ আবেদনের শুনানি খারিজ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৩
মৃত্যুদন্ড কার্যকর : ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ রাত ১০টা ১ মিনিট।
৬ নং চার্জের পোস্টমর্টেমঃ
এই চার্জটি প্রমাণ করা হয় একজন মাত্র সাক্ষী দিয়ে। তিনি হলেন ঘটনায় বেঁচে যাওয়া হযরত আলি লস্করের বড় মেয়ে মোমেনা বেগম। কথা ছিল মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন ক্যামেরা ট্রায়ালে।
তিনি তিন জায়গায় তিন রকম সাক্ষ্য দিয়েছেন হজরত আলী লস্করের মেয়ে মোমেনা বেগম, ২৬শে মার্চ সন্ধ্যা ছয়টায় তার বাবা-মাসহ পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের প্রতিনিধি, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা মোহনা বেগম এবং ট্রাইব্যুনালে ক্যামেরা ট্রায়ালে সেই ঘটনার বর্ননা দেন।তার সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে আপিল বিভাগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে কাদের মোল্লার দন্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
সবাই ভালো করে নিচের দলিলটি দেখুন দেখুন, এটি মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য । যেটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত প্রতিবেদনে দেখা যায় মোমেনা বেগম ঘটনার দুই দিন আগে তার শ্বশুর বাড়িতে চলে যান। ফলে তিনি প্রানে বেঁচে যান এ ঘটনা থেকে। মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের হত্যার জন্য বিহারীদের দায়ী করেছেন।সেখানে কাদের মোল্লার কোন নাম গন্ধই নেই।
যে মোমেনা বেগম এতদিন কাদের মোল্লাকে চিনতেন না তিনি এখন কোর্টে এসে সাক্ষ্য দিলেন তিনি নাকি দেখেছেন কাদের মোল্লার নেতৃত্বে তার বাবাকে ও পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে। পর্যবেক্ষনে বুঝা যায় যিনি ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষী তিনি আসল মোমেনাই না। তিনি নকল তাই ধরা পড়ার ভয়ে চেহারাসহ পুরো শরীর কালো কাপড়ে ঢেকে এসেছেন। এবার বিচারকরা এসব কাহিনী শুনে ও দেখে আচরণ করেছেন অন্ধ ও বধিরের মত। এই ধরণের ঠুনকো ও মিথ্যা সাক্ষী দিয়েই খুন করা হলো আব্দুল কাদের মোল্লাহকে।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রসঙ্গঃ
সাত অভিযোগের ভিত্তিতে কামরুজ্জামানের বিচার হয়। তার মধ্যে চুড়ান্তভাবে রায়:
১ নং অভিযোগ - খালাস
২ নং অভিযোগ - ১০ বছরের কারাদন্ড
৩ নং অভিযোগ - সংখ্যাগরিষ্টের মতামতের ভিত্তিতে মৃত্যুদন্ড।
৪ নং অভিযোগ - যাবজ্জীবন
৫ নং অভিযোগ - খালাস
৬ নং অভিযোগ - খালাস
৭ নং অভিযোগ - যাবজ্জীবন
অর্থাৎ ৩ নং অভিযোগের রায়ই আজ কার্যকর করা হল যাতে মাননীয় বিচারকেরা একমত হতে পারেননি। এবার আসুন দেখে নিই অভিযোগটি কি ছিল। অভিযোগটি হচ্ছে, কামরুজ্জামানের পরিকল্পনায় এবং নেতৃত্বে সোহাগপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১২০ জনকে খুন করে এবং অনেক মহিলাকে ধর্ষন করে।
১- কামারুজ্জামানের জন্ম ১৯৫২ সালে, ১৯৭১ সালে তার বয়স ১৯ বছর। ১৯ বছরের একজন কিশোর কিভাবে এতবড় অভিযানের পরিকল্পনা করেন? কিভাবে সেনাবাহিনীর জাঁদরেল অফিসারদের সামনে নেতৃত্ব দেন? আর এমনটাও নয় যে ঐ এলাকার মানুষ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিলো। হঠাত করে ৪০ বছর পর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে এই ধরণের সাজানো অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হত্যাকান্ডেরই নামান্তর।
২- এই চার্জে তিনজন মহিলা ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালে তারা বলেন তাদেরকে ধর্ষন করা হয় এবং সেখানে কামারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। অথচ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দিতে তারা কামারুজ্জামানের উপস্থিতির ব্যাপারে কিছুই বলেন নি। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সময়ও বলা হয়নি তিনি ঘটনার সময় ঐ গ্রামে উপস্থিত ছিলেন।
এই মামলায় দশজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়ার পর নতুন করে তাদের দিয়ে সাক্ষ্য দেয়ানো হয়। অথচ মূল সাক্ষী তালিকার ৪৬ জনের মধ্যে তাদের নাম ছিলনা।
এর মধ্যে ১১ নং সাক্ষী হাসেন বানু বলেন, দেশ স্বাধীন হলে আমরা মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি এই আসামী বড় নেতা ছিলেন এবং স্বাধীনতার পর তিনি শেরপুরে ধরা পড়েছিলেন। তিনি আদৌ কামারুজ্জামানকে চিনেন না।
১২ নং সাক্ষী হাফিজা বেওয়া বলেছেন দেশ স্বাধীন হলে তিনি টিভিতে প্রথম কামারুজ্জামানকে দেখেছেন। হাফিজা বেওয়াও বলেছেন কামারুজ্জামানের নাম মুরুব্বিদের কাছ থেকে শুনেছেন। কোন মুরুব্বি ? এই জিজ্ঞাসায় তিনি কোন মুরুব্বির নাম বলতে পারেননি। এই মুরুব্বী কি সরকারের কর্তাব্যাক্তিরা?
করফুলি বেওয়া আমি যুদ্ধের আগে থেকে কামারুজ্জামানকে চিনিনা। দেশ স্বাধীনের ৩-৪ মাস পরে কামারুজ্জামান সাহেবকে চিনেছি। কিভাবে চিনেছেন এই প্রশ্নের উত্তরও বেশ মজার, তিনি বলেন, আমার বাড়ির আশে পাশে দিয়ে অনেক মানুষ নিয়ে কামারুজ্জামান হেঁটে যায়, তখন চিনেছি। অথচ স্বাধীনতার পর সোহাগপুরে গিয়ে হাঁটাহাঁটির কোন কারনই নেই। কামারুজ্জামানের বাড়ি ভিন্ন থানায়। সোহাগপুর থেকে প্রায় ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরে।
জেরায় তারা কেউই কামারুজ্জামানকে চিনেন না। সবাই মুরুব্বিদের থেকে শুনেছিলেন। তাহলে তাদের ধর্ষন ও স্বামী হত্যার দায় কামারুজ্জামানের উপর পড়বে কেন?
তারা তিনজন যে কত মিথ্যা কথা বলেছে তা তাদের তিনজনের জেরার বর্ণনা পড়লে তা বুঝতে পারবেন। একজন বলেছে আরেকজনের সাথে এসেছে। অন্যজন বলেছে তিনি একাই এসেছেন। আবার তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো কত টাকা দিয়ে এসেছেন? তিনি আর তা বলতে পারেননি। সমানে মিথ্যা কথা বলা সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতে কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা দিয়েছে।
৩- সাক্ষীদের কেউই বলতে পারেননি কামারুজ্জামান কখন কোথায় কাকে এই গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন
৪- সাংবাদিক মামুনুর রশীদ “সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা” নামে একটি গবেষনামূলক লিখেন। তিনি সেই সময়ের গণহত্যা নিয়ে ১৫ জন মহিলার সাক্ষাৎকার নিয়ে বইটি লিখেন। বইটি প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। সেখানে হাসেন বানু, করফুলি বেওয়া তাদের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তারা কেউই কামারুজ্জামানের নাম উচ্চারণ করেননি। সেই বইতে ভিকটিমদের সাক্ষাৎকার অনুসারে ১৪৮ জন রাজাকারের নাম প্রস্তুত করা হয়। সেখানেও নাম নেই কামারুজ্জামানের। কি আজিব বিষয়! যে মহিলারা ২০১০ সালে কামারুজ্জামানকে চিনতোনা তার বিরুদ্ধে তাদের কোন অভিযোগ ছিলনা অথচ এখন কামারুজ্জামান ছাড়া আর কারো বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ নেই।
৫- কামারুজ্জামানের পক্ষে সাফাই সাক্ষী দেয়ার জন্য ৬০০ জন সাক্ষী থাকলেও আদালত অনুমতি দেয় মাত্র পাঁচজনকে।
আদালত এগুলো কিছুই বুঝার চেষ্টা করেন নি কারণ তাদের তো রায় দিতে হবে। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সুত্র ধরে যদি বলতে হয় তাহলে বলতে “সরকার গেছে পাগল হইয়া তারা একটা রায় চায়”। বিচারপতিগণ অতি নিষ্ঠার সাথে সরকারের চাওয়া সেই রায়েরই বাস্তবায়ন করেছেন। যেখানে বিচার পদদলিত হয়েছে অবিচারের কাছে।
এবার আসা যাক আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ সাহেবের প্রসঙ্গেঃ
বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী, যিনি অত্যন্ত সততার সাথে তাঁর মন্ত্রীত্ব পরিচালনা করেছেন। জনাব মুজাহিদকে আলবদরের কমান্ডার হিসাবে সাজা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত প্রশ্নমালার কোন সদুত্তর রাষ্ট্রপক্ষ দিতে পারেননি-
ক. কে কখন কোথায় কিভাবে জনাব মুজাহিদকে আলবদরের কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন?
খ. তিনিই কি আলবদরের প্রথম এবং শেষ কমান্ডার? তার আগে এবং পরে কে বা কারা এই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন?
গ. রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্যমতে ১৯৭১ সালের মে মাসে জামালপুরে মেজর রিয়াজের প্রচেষ্টায় আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। ঐ সময় জনাব মুজাহিদ ঢাকা জেলার ছাত্র সংঘের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তাহলে ঢাকায় বসে কিভাবে তিনি জামালপুরে গঠিত আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হলেন?
ঘ. জনাব মুনতাসির মামুন সম্পাদিত “দি ভ্যাঙ্কুইশড জেনারেলস” বইয়ে রাও ফরমান আলী এবং জেনারেল এ, এ, কে, নিয়াজি স্বীকার করেছেন যে, আলবদর বাহিনী সরাসরি আর্মির কমান্ডে এবং কন্ট্রোলে পরিচালিত হতো। প্রশ্ন হলো জনাব মুজাহিদ একজন ছাত্রনেতা হয়ে কিভাবে এই বাহিনীর কমান্ডার হলেন?
ঙ. জেরায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন যে, তার তদন্তকালে রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বা শান্তি কমিটির সংশ্লিষ্ট কোন তালিকায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নাম ছিল মর্মে তিনি কোন প্রমান পাননি। তিনি আরও স্বীকার করেন যে, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত জনাব আলী আহসান মো: মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলাধীন কোন থানায় বা বাংলাদেশের অন্য কোন থানায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সংঘঠিত কোন অপরাধের জন্য কোন মামলা হয়েছে কিনা তা আমি আমার তদন্তে পাইনি। তাহলে আদালত কিসের ভিত্তিতে তাকে আলবদরের কমান্ডার সাব্যস্ত করলেন?
চ. স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তীকালে (১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত) তদানিন্তন জাতীয় গণমাধ্যমে আলবদরের কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ ছাপা হয়েছে এমনকি ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। অথচ ঐসব সংবাদ ও বিজ্ঞপ্তিতে জনাব মুজাহিদের নাম কেউ উল্লেখ করেনি। সত্যিই যদি তিনি আলবদরের সারা দেশের কমান্ডার হতেন তাহলে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে তার নাম কেউ উল্লেখ করেনি কেন?
ছ. বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড নিয়ে ১৯৭২ সালে দালাল আইনে ৪২ টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর একটিতেও জনাব মুজাহিদকে আসামী করা হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলাগুলোর নথি আদালতে উপস্থাপন করেনি। অথচ ৪২ বছর পর কিভাবে এই হত্যাকান্ডের সকল দায়-দায়িত্ব তার উপর চাপানো হয়েছে?
জ. ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের তদন্তের জন্য জনাব জহির রায়হানকে আহবায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। প্রথিতযশা সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলাম এবং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এই কমিটির সদস্য ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ এই কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তদন্ত রিপোর্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়নি এবং তদন্তকালে তাঁদের কারো সাথে আলোচনাও করেনি। কেন রাষ্ট্রপক্ষ এই তদন্ত রিপোর্ট জাতির সামনে প্রকাশ করেনি?
এইসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দিবেনা। কারন এদেশে এখন সবচেয়ে বেশী অবিচার হয় বিচারালয় হতেই। এখানে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী বিচারপতি নাসিমকে রায় দেয়ার জন্য বলে। সেখানে বিচার আশা করা পাপ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনালের ভাষায় “বিচারের গর্ভপাত হচ্ছে”। যে দেশে পাপীরা বিচারকের আসনে বসে আছে সে দেশে সৎ মানুষেরা শাস্তি পাবে এটাই স্বাভাবিক। একটি সুন্দর বাংলাদেশের আশা করছি মহান রাব্বুল আলামীন হয়তো সেই ব্যবস্থা করে দিবেন যেখানে বর্তমান বিচারালয় হতে অসৎ মানুষদের সরিয়ে ও শাস্তি দিয়ে বিচারালয় কলঙ্কমুক্ত হবে।
অনেক গরুত্বপুর্ন
উত্তরমুছুনআপনাকে অনেক ধন্যবাদ এভাবে বিস্তারিত ভাবে প্রতিবেধন দেওয়ার জন্য
উত্তরমুছুন