ছোটবেলার একটি গল্প নিয়ে বেশ হাসাহাসি করতাম। গল্পটি ছিল এরকম। একবার এক দেশে রাজপুত্র জন্মগ্রহন করলো। বিচলিত রাজা ঘরের বাইরে পায়চারি করছেন। এমন সময় দাইমা রাজপুত্রকে কোলে নিয়ে এসে রাজাকে সুসংবাদ দিলেন এবং বললেন “আলামপনা, আমাদের রাজপুত্র এসেছে, তবে সে আপনার মত ফর্সা না”। রাজা অত্যন্ত খুশি হয়ে রাজদরবারে এলেন এবং বললেন “আমার পুত্রসন্তান জন্মগ্রহন করেছে তবে সে একটু কালো”।
এর কিছুক্ষন পর সভাসদরা বেরিয়ে পড়লেন এই সংবাদ প্রচারের জন্য। তারা বলতে লাগলেন আমাদের একটি কালো রাজপুত্র জন্মগ্রহন করেছে। আরো কয়েক কান পর সংবাদটি দাঁড়ালো রাজার একটি কুচকুচে কালো সন্তান হয়েছে। আরো কিছুসময় পর সংবাদ হলো রাজার একটি কাউয়ার মত কালো সন্তান হয়েছে। আরো কিছুদূর যাওয়ার পর সংবাদ হলো “রানী একটা কাউয়া প্রসব করেছে”। কিছুসময় পর সংবাদটি হলো “রানী কাউয়া প্রসব করতেই আছে”।
সারাদেশের জনগন ছুটে আসলো রাজাপ্রাসাদে। আসে আর ঘুরেফিরে কাউয়া গুনে। কেউ বলে পঞ্চাশটা কাউয়া, কেউ ষাট, সত্তর, কেউ একশও ছাড়িয়ে গেলো।
আমাদের দেশেও এই আঁতেল সমাজের অভাব নেই। ইচ্ছেমত রঙ ছড়িয়ে দিতে কি যে সুখ!
নিজামীর পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন পরিষ্কারভাবে মহামান্য আপিলেট ডিভিশনে উপস্থাপন করেছেন যে, নিজামী তার রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে ১৯৭১ সালে অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে বক্তব্য রাখতে পারেন, তবে সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে আনীত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সমুহের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা প্রমানে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমরা মনে করি, ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বদর বাহিনীতে তিনি (নিজামী) ছিলেন না। সাক্ষীরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আদালতে সাক্ষী দেওয়ার সময় বক্তব্যের সঙ্গে কোনো মিল নেই। প্রসিকিউশন সেফ হোমে দিনের পর দিন সাক্ষীদের মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তৈরি করেছেন। হত্যা, খুন, অপহরণের সঙ্গে নিজামী জড়িত ছিলেন না। প্রসিকিউশন অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি।’
‘শেষ সময়ে বলব আদালত যদি মনে করে উনি (নিজামী) দোষী, তাহলে তাঁর বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করতে পারে।’ যোগ করেন খন্দকার মাহবুব।
ওই বক্তব্যের পর দুপুর পৌনে ১টার দিকে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত মামলার কার্যক্রম আজকের মতো শেষ করেন। আগামী ৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে নিজামীর করা আপিল আবেদনের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। নিজামীকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তিনি চারটি যুক্তি তুলে ধরেন।
প্রথম যুক্তি : যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে জেলা প্রশাসকরা একটি রাজাকারের তালিকা জমা দিয়েছিলেন। ওই তালিকায় মতিউর রহমান নিজামীর নাম ছিল না।
দ্বিতীয় যুক্তি : যুদ্ধের পর বুদ্ধিজীবী হত্যায় ৪২টি মামলা হয়েছিল। কিন্তু একটিতেও নিজামীর নাম ছিল না।
তৃতীয় যুক্তি : মতিউর রহমান নিজামী ইসলামী ছাত্র সংঘের নিখিল পাকিস্তানের দায়িত্বে ছিলেন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অথচ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড হয় ডিসেম্বর মাসে। তাই ওই সময় তিনি কোনো দায়িত্বে ছিলেন না।
চতুর্থ যুক্তি : রাষ্ট্রপক্ষের মৌখিক অনেক সাক্ষ্যর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে। আলবদর নেতা হিসেবে নিজামীর বিরুদ্ধে কোনো নথি রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করতে পারেনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব সবসময় উল্টো বুঝেন, আইনী ব্যখ্যা নিজের মত দিতে গিয়ে তার অর্ধেক বয়সী আইনজীবী শিশির মনিরের কাছে আগেও বারংবার ধরা খেয়েছেন। এরপরও তার সুমতি হয়নি। সে খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে মিডিয়ায় ঘোষনা করলো আসামী পক্ষের যুক্তি দেখে আমি যেটা বুঝেছি সেটা হলো নিজামীর আইনজীবী দোষ স্বীকার করে বয়স বিবেচনায় শাস্তি কমানোর আবেদন করেছেন।
জান্ডিস আক্রান্ত মিডিয়া সমাজ খুশিতে অন্ধ হয়ে যায়, একে একে রিপোর্ট করতে থাকে।
১- অপরাধ স্বীকার করে শুধু মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি চান নিজামী’
২- যুদ্ধাপরাধের দায় স্বীকার নিজামীর।
৩- 'যুদ্ধাপরাধের দায় স্বীকার করলেন নিজামী
৪- এবার নিজামীর জন্য অনুকম্পা ভিক্ষা
৫- ৪৪ বছর পর এই প্রথমঃ দোষ স্বীকার নিজামীর
৬- শাস্তির ভয়ে আগেই দোষ স্বীকার নিজামীর
বাহ! এই না হলে বঙ্গদেশের মিডিয়া !
এবার বিচারপতি এস কে সিনহার কথায় আসি। তিনি যুক্তি প্রমাণ নিয়ে কথা বলবেন। প্রতিটা অভিযোগ যখন সন্দেহাতীতভাবে খন্ডন করা হলো তখন তিনি বলে উঠলেন আপনারা মুজাহিদের রায় পড়েননি? ‘তাঁরা (নিজামীরা) যদি পাকিস্তানিদের সমর্থন না করত, তাহলে সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান থেকে এসে তারা এ দেশে নয় মাস থাকতে পারত না। তারা তিন মাস থাকত।
তো এবার বলুক সিনহা সেনাবাহিনীর কোন কর্মকর্তা, সৈনিককে নিজামী আশ্রয় দিয়েছিলো? প্রমাণ করুক সে। তা সে করবে না, ঐ রুপকথার গল্প বলে যাবে। রুপকথা আর উপন্যাস হচ্ছে এদের কাছে শক্তিশালী প্রমাণ।
আরো পড়ুন
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও পর্যালোচনা
বাংলাদেশঃ যেখানে অবিচার হয় বিচারালয় থেকেই
আরো পড়ুন
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও পর্যালোচনা
বাংলাদেশঃ যেখানে অবিচার হয় বিচারালয় থেকেই
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন