মানুষকে আল্লাহ্ তায়ালা খলিফা হিসেবে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। এই দুনিয়ায় আমরাই আল্লাহর প্রতিনিধি। তাই দুনিয়ার সিস্টেমকে নষ্ট হতে না দেয়া এবং এর সংরক্ষন আমাদের উপরেই বর্তায়। সুতরাং পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব মানষেরই। ইসলাম হচ্ছে ফিতরাত বা স্বভাবগত বা প্রকৃতির ধর্ম। মহান রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টির অন্যতম সেরা মানুষ বেসিক্যালি সামাজিক জীব। মানুষকে ঘিরেই পরিবেশ-প্রকৃতি ও সমাজের সৃষ্টি। তাই পরিবেশ সংরক্ষন ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বৃক্ষ বা গাছ, মানুষ ও পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি বিস্তৃত করেছি ভুমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম, বিবিধ উদ্ভিদরাজি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ।” (সূরা কা’ফ ৭-৮)। সবুজ গাছপালার উপরই নির্ভর করে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর টিকে থাকা। জীবের জন্য গাছপালা সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুত করে। শুধু খাদ্য তৈরী নয়, সালোক-সংশ্লেষণের সময় তারা কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন বের করে দেয়। ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা হয়। হাদীসে রাসূল (সা) থেকে জানা যায়, একজন লোক যখন অকারণে একটি গাছের ডাল ভাঙ্গে তখন নবী করিম (সা) সে লোকটির চুল মৃদুভাবে টান দিয়ে বললেন, “তুমি যেমন শরীরে আঘাত বা কেটে গেলে ব্যথা পাও, গাছের ডাল বা পাতা ছিঁড়লে গাছও তেমন ব্যথা পায়।” পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য গাছ লাগাবার শিক্ষা আমরা মহানবী (সা) থেকে পাই। তিনি বলেছেন, “যদি তুমি মনে করো আগামীকাল কিয়ামত হবে, তবু আজ একটি গাছ লাগাও।” রাসূল (সা) বৃক্ষরোপনকে উৎসাহিত করে বলেছেন, “বৃক্ষরোপন সদকায়ে জারিয়া হিসাবে পরিগণিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম) রাসূল আরো (সা) বলেছেন, “কোন মুসলমান যদি একটি বৃক্ষ বা গাছ রোপন করে অথবা ক্ষেত-খামার করে, অতঃপর তা হতে মানুষ, পাখি বা কোন প্রাণী ভক্ষণ করে, তা তার জন্য দান বা সদকার সওয়াব হবে।” পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তা মহানবী (সা.)-এর উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বলতে গেলে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা সুস্পষ্ট।
কোরআন-হাদিসে পরিবেশ সংরক্ষণকে বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি (আল্লাহ) পানি থেকে সৃষ্টি করলাম’ (সূরা আল আম্বিয়া : ৩০)। দুনিয়ায় যা কিছু প্রাণ পেয়েছে তা কেবল পানি থেকেই পেয়েছে। পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মাটি ও পানি। মূলত মাটি থেকেই বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা হয় এবং উৎপাদিত শস্য পানি দ্বারা জীবিত থাকে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপাদন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপাদন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝর্ণাধারা, যাতে তারা ফল খায়।’ (সূরা ইয়াসিন : ৩৩)। আল্লাহ পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন: ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম বিবিধ উদ্ভিদরাজি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ’ (সূরা কাফ:৭-৮)। সূরা আন’আমের ১৪১ নম্বর আয়াতের শেষাংশে তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না’। এই আয়াত আরও গুরুত্ব পেয়েছে, মহানবী তাঁর এক সাহাবীকে সতর্ক করেছিলেন কারণ, ওই সাহাবী গোসলের পর অবশিষ্ট পানি ফেলে দিয়েছিলেন। মহানবী তাকে বলেছিলেন, উদ্বৃত্ত পানি নদীতে ফিরিয়ে দেয়া উচিত, যাতে ভাটির অন্য মানুষের চাহিদা পূরণ হয়। ভাটির মানুষের অধিকার এখানে আল্লাহর রাসূল (সা.) সুস্পষ্ট করেছেন। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় উজানের মানুষেরা বাঁধ দিয়ে নদীর পানির স্বাভাবিক স্রোতকে বাধাগ্রস্থ করে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ভাটির মানুষ। পরিবেশ ও ভাটির মানুষের অধিকার রক্ষায় মহানবী (সা.) সামান্য গোসলের পানির ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন।
কোরআন-হাদিসে পরিবেশ সংরক্ষণকে বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি (আল্লাহ) পানি থেকে সৃষ্টি করলাম’ (সূরা আল আম্বিয়া : ৩০)। দুনিয়ায় যা কিছু প্রাণ পেয়েছে তা কেবল পানি থেকেই পেয়েছে। পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মাটি ও পানি। মূলত মাটি থেকেই বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা হয় এবং উৎপাদিত শস্য পানি দ্বারা জীবিত থাকে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপাদন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপাদন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝর্ণাধারা, যাতে তারা ফল খায়।’ (সূরা ইয়াসিন : ৩৩)। আল্লাহ পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন: ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম বিবিধ উদ্ভিদরাজি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ’ (সূরা কাফ:৭-৮)। সূরা আন’আমের ১৪১ নম্বর আয়াতের শেষাংশে তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না’। এই আয়াত আরও গুরুত্ব পেয়েছে, মহানবী তাঁর এক সাহাবীকে সতর্ক করেছিলেন কারণ, ওই সাহাবী গোসলের পর অবশিষ্ট পানি ফেলে দিয়েছিলেন। মহানবী তাকে বলেছিলেন, উদ্বৃত্ত পানি নদীতে ফিরিয়ে দেয়া উচিত, যাতে ভাটির অন্য মানুষের চাহিদা পূরণ হয়। ভাটির মানুষের অধিকার এখানে আল্লাহর রাসূল (সা.) সুস্পষ্ট করেছেন। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় উজানের মানুষেরা বাঁধ দিয়ে নদীর পানির স্বাভাবিক স্রোতকে বাধাগ্রস্থ করে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ভাটির মানুষ। পরিবেশ ও ভাটির মানুষের অধিকার রক্ষায় মহানবী (সা.) সামান্য গোসলের পানির ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন।
সুন্দর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ গঠনে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের জন্য সমুদ্র ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।’ (সূরা রুম : ৪১) রাসূল(সা) বলেছেন, “ঈমানের ৭৩টি শাখার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু দুরীভূত করা। পরিবেশ দুষণ থেকে বাঁচতে হলে পরিচ্ছন্নতা অতি জরুরী।রাসূল (সা) বলেছেন, “পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ।” হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা) পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। রাসূল (সা) আরো বলেছেন, “তোমরা অভিশাপ পাওয়ার তিনটি কাজ অর্থাৎ পানির ঘাটে, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়া তলে মলত্যাগ থেকে বিরত থাক।” হাদীসে রাসূল (সা) থেকে আরো জানা যায়, মৃত শরীরের কোন অংশ তিনি যত্রতত্র ফেলতেন না, কারণ তা একসময় শুকিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যেতে পারে। যা পুঁতে না ফেললে তা কোন প্রাণী বা পাখির দ্বারা ছড়িয়ে পরিবেশ দুষিত করতে পারে। এজন্য রাসূল (সা) রক্ত বা গোশত মাটিতে পুঁতে ফেলতেন বা পুঁতে ফেলার নির্দেশ দিতেন। বায়ু দূষিত হলে নানান রোগজীবাণু সৃষ্টি হয় যা অনেক সময় মহামারীর আকার ধারণ করে।
আল্লাহপাক পৃথিবীতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য পাহাড়কে সৃষ্টি করেছে। সমগ্র সৃষ্টি জগতের কল্যাণের জন্য আল্লাহপাক পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন। ভুমিকম্প, ভুমিধ্বস কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যাতে মানুষকে নিয়ে এ পৃথিবীর নড়া-চড়া করতে না পারে অথবা। সেজন্য আল্লাহপাক্ পাহাড়সমূহকে পেরেকের মত গেড়ে দিয়েছেন বলে এরশাদ করেছেন। “এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয়।” (সূরা আন্ নহল-১৫) অন্যত্র বলা হয়েছে, “তিনিই স্থাপন করেছেন ভুপৃষ্ঠে অটল পর্বতমালা এবং তাতে রেখেছেন প্রভুত কল্যাণ।” (সূরা হা-মীম-আস্ সাজদা-১০) অন্য আয়াতে আছে, “আর পাহাড় গুলোকে পেরেকের মত গেড়ে দিয়েছি।” (সূরা নাবা-৭) আরো এরশাদ হয়েছে, “আর পাহাড়কে শক্ত করে দাঁড় করানো হয়েছে।” (সূরা গাশিয়া-১৯)। মহান সৃষ্টিকর্তা পাহাড় সম্পর্কে এসব বর্ণনার মাধ্যমে পাহাড়ের গুরুত্ব নিশ্চিত করেছেন। অথচ আমরা মানুষ আমাদের দায়িত্ব ভুলে সাময়িক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করছি।
স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে প্রকৃতি সংরক্ষণে মানুষ তার খিলাফতের দায়িত্ব এবং নিয়ম-কানুন অনেকাংশে এড়িয়ে যাচ্ছে। নদীকে দূষণ আর দখল করে তাকে বিপন্ন করে তুলছি, বন উজাড় করছি, বায়ু দূষণ করছি, শব্দ দূষণ করছি। ফলে আমাদের ওপর নেমে আসছে সর্বনাশা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কালো ছায়া। ইসলামে প্রসঙ্গক্রমে গাছপালা, প্রাণিজগৎ, পাহাড়-নদী সর্বোপরি প্রকৃতি সংরক্ষণের কথা উঠে এসেছে বারবার। ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব আর অসচেতনতার কারণে প্রকৃতি সংরক্ষণের চেয়ে আমরা প্রকৃতির ক্ষতি করছি বেশি। সেই সঙ্গে অনিশ্চিত করে তুলছি আমাদের ভবিষ্যৎ। দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা ও এর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই রক্ষা করা সম্ভব আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ। গড়ে তোলা সম্ভব সুন্দর পরিবেশে সুস্থ জীবন।
এই সুবিশাল মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক ছোট্ট গ্রহে জীবের বেঁচে থাকার জন্য সকল উপাদান দিয়ে আল্লাহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আমাদের কারণে পৃথিবীর পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ফলে জীবের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ হারাচ্ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ অধিকতর গলে যাওয়ার ফলে বিশ্বের কিছু কিছু নিম্নভুমি বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণে সুষ্ঠু নিয়ম মেনে চলা, মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়া, বন-বনানী থেকে বৃক্ষ উজাড় না করা, পরিকল্পনা ছাড়া ঢালাওভাবে পাহাড় না কাটা, পশু-পাখি নির্বিচারে শিকার না করা, কল-কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনে যথাযথ নিয়ম মেনে চলা, ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়ার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জনসাধারণকে আরো অধিক সচেতন হওয়া অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় আইন রচনা করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়াটাও অত্যন্ত জরুরী। আসুন আমরা আমাদের খিলাফতের দায়িত্ব পালনে আরেকটু সচেতন হই। পরিবর্তন শুরু করি আমরা নিজেদের দিয়েই। আমাদের দ্বারা যেন পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন