কালো বর্ণের এই মানুষটিকে কোনদিন দেখিনি। দেখার কথাও না। তিনি যে বছর শাহদাত বরণ করেন সে বছর আমার মায়ের জন্ম। কিন্তু এক অজানা ভালোবাসা লোকটার প্রতি। তার গল্প শুনলে, লাইফ স্টাইল নিয়ে আলোচনা হলে বুকের ভেতর হু হু করে উঠে। আবেগে দুই চোখ বন্ধ হয়ে আসে। মন তখন চিৎকার করে বলে উঠে তোমাদের পরাজয় নেই, হতে পারে না। মালেক ভাইরা যে কাফেলার মশাল নিয়ে হাঁটছে সে কাফেলার পরাজয় হতে পারেনা। তারা দূর্দম, তারা অজেয়।
সাহাবাদের গল্প শুনেছি আর মালেক ভাইয়ের গল্প শুনেছি। সাহাবাদের জীবনের প্রতিফলন এত অসাধারণভাবে নিজের জীবনে ঘটিয়েছেন তিনি। আল্লাহু আকবার। শহীদেরা এমনই...। শহীদেরা মরেন না। তাদের মৃত্যু নেই এই কথা বুঝার জন্য মালেক ভাইয়ের দিকে তাকালেই হয়। এখনো নিরবিচ্ছিন্নভাবে দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। এখনো আমরা তার বক্তব্যে আন্দোলিত হই, উৎসাহিত হই, নতুন করে ইসলামী আন্দোলনে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার শপথ নেই।
১৯৬৯ সালের ১২ আগষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শিক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত একটি কর্মশালায় ৫ মিনিটের এই বক্তব্য রেখে আলোড়ন সৃষ্টি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়নের মেধাবী তরুন শহীদ আব্দুল মালেক।
১৯৬৯ সালের ১২ আগষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শিক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত একটি কর্মশালায় ৫ মিনিটের এই বক্তব্য রেখে আলোড়ন সৃষ্টি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়নের মেধাবী তরুন শহীদ আব্দুল মালেক।
এই বক্তব্যের পর ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ এবং জোর সমথর্ন সৃষ্টি হয়। প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে বাম সেকুলার পন্থী নেতারা সোহরাওয়ার্দীর উদ্যানে ফেরার পথে রড, হকিস্টিক দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে আব্দুল মালেক কে। ২ দিন পর ঢাকার পিজি হাসপাতালে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন আব্দুল মালেক।
চলুন সেই আলোড়ন সৃষ্টি করা বক্তব্যটি পড়া যাক...
নতুন ঘোষিত শিক্ষানীতির Ideological basis সম্পর্কে এখানে আলোচনা হতে যাচ্ছে।
এখানে এই basis সম্পর্কে শিক্ষানীতিতে যেটা বলা হয়েছে যে, “Pakistan must aim at ideological unity not at ideological vacuum”. It must impart a unit and integrated system of education which can impart education on the common set of cultural value based on teaches of Islam.
আমার মনে হয় আজকে যারা এখানে আলোচনা করেছেন তাদের পক্ষ থেকে এমন অনেকগুলো অযৗক্তিক বিষয় এর অবতারণা করা হয়েছে এ প্রসঙ্গে। Common set of cultural value বলতে হয়তো কেউ বুঝেছেন one side of cultural value. কিন্তু তাদের এটা মনে রাখা দরকার common set value মানে one side of cultural value নয়। One side of cultural value সোভিয়েত রাশিয়াতে রয়েছে যেখানে একটা politarianism society. আর সেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্র যেগুলো রয়েছে অঙ্গরাজ্যগুলোর culture কে সম্পুর্নভাবে ধ্বংস করে দিয়ে সেখানে একটা one side of cultural value তৈরী করা হয়েছে। আমরা এটার বিরোধী। আমরা বলতে চাই common set of cultural value, not one side of cultural value.
এর পরবর্তী পর্যায়ে আমি আলোচনা করতে চাই যে, আসলে শিক্ষার উদ্দেশ্য কি? আমি এখানে অন্য কোন বিষয় না আলোচনা করে শুধুমাত্র মহা কবি মিল্টনেরই একটা কথাই আলোচনা করতে চাই। তিনি বলেছিলেন, “Education is the harmonious development of body, mind and soul. এই body, mind and soul এর the harmonious development কোন Ideology বা কোন আদর্শ ছাড়া হতে পারে? এটা যারা Ideological শিক্ষাব্যবস্থা চান না তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা।
এর পরে এসে আমি আপনাদের সামনে যে জিনিসটা আলোচনা করতে চাই তা হল যে মিল্টনের এ সংজ্ঞাকে সামনে রেখে আমরা যদি দেখি তাহলে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যক্তি চেতনা এবং সঠিক ব্যাক্তিত্ব সৃষ্টি করার মাধ্যমে জাতীয় চেতনা এবং জাতীয় মতের সৃষ্টি করা। এর পরে শিক্ষার্থী যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে mental, physical এবং moral ট্রেনিং দিয়ে তাদেরকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাতে করে তারা ভবিষতে জনসমষ্টির সাথে একটা common cultural এবং ideological basis একটা bridge তৈরী করতে পারে। এবং এখনকার যে আদর্শ রয়েছে সেটা যাতে ধীরে ধীরে increase হতে পারে ভবিষতের দিকে। এরকমই একটা পরিকল্পনা রয়েছে মিল্টনের এই সংজ্ঞার ভিতর দিয়ে।
এরপরে আমি আপনাদের সামনে আলোচনা করতে চাই ধমর্হীন শিক্ষাব্যবস্থার যারা প্রবক্তা তারা পাশ্চাত্যের সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখুন যে পাশ্চাত্যে সমাজে liberal education এর নাম দিয়ে যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ণ করা হয়েছে সেই শিক্ষাব্যবস্থায় আমেরিকার একজন Philosopher, social philosopher তিনি বলেছেন শিক্ষা সম্পর্কে যে, Three kinds of progress are significant; progress in knowledge & technology; progress in socialization of man and progress in spirituality. The last is the most important. আর এই ভদ্রলোকের নাম হচ্ছে Albert Richard. তিনি যে বই লিখেছেন তার নাম হচ্ছে ‘Visiting of random part of life’. এরপর এসে তিনি বতর্মান আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা যে, secular এবং liberal শিক্ষাব্যবস্থা যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সেখান থেকে turning point এ শিক্ষাকে ideological orient করার জন্য বলেছেন। এজন্য পরামর্শ দিয়েছেন, Our age must achieve spiritual renewal. A new Renesa must come. The Renesa in which mankind is covered with the ethical action, the supreme truth and the supreme utilitarianism. By which mankind will be revaluated. এই spiritual revaluation ছাড়া mankind এর কোন বিকল্প হতে পারে না- তিনি এটা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন।
তো আমার মনে হয় আর কোন কথা এখানে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই যে, যে পাশ্চাত্যে ধমর্হীন শিক্ষাব্যবস্থায়, তথাকথিত লিবারেল এডুকেশনে যিনি শিক্ষিত তিনি বতর্মান শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে; সেই পাশ্চাত্যের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে এ কথাগুলো বলেছেন।
তো আমার কথা হচ্ছে পাকিস্তানের বুকে বাইশ বছর যাবৎ পর্যন্ত এ সেকুলার এবং ধমর্হীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের সমাজে এমন কতগুলো macular brain child এবং brown Englishman তৈরী করেছে যাদের মুখ থেকে আমরা ধমর্হীন শিক্ষাব্যবস্থার কথা শুনছি। জেনে রাখা দরকার এ শিক্ষাব্যবস্থা যখন প্রবর্তন করা হয় আজ থেকে দেড়শ বছর আগে তখন এই শিক্ষাব্যবস্থা যখন fail করলো মুসলমানদের মধ্যে তখন স্যার উইলিয়াম হান্টারকে assessment করতে দেয়া হয়েছিল।
তিনি কি কথাগুলো বলেছিলেন দেখুন, তিনি বলেছেন, ‘The truth is that our system of public instruction is appose to the tradition on to that requirement and hatful to the religion of the Mussulmen’.
তো যারা বলেন যে ইসলামের Ideology কি? তাদেরকে আমি শুধু এই প্রশ্ন করব যে আপনারা একটু তার ইতিহাস একবার পর্যালোচনা করুন। ইসলামের ইতিহাস দেখে তার পরে বলুন ইসলামের ideology কী? এটার একটা বিরাট রকমের পরিস্কার instruction রয়েছে। আর Islamic ideology বা Islamic culture এর ভিত্তিতে যে সমাজ ও সোসাইটি গড়ে উঠেছিল সেখানে তার স্থানীয় culture বা স্থানীয় সংস্কৃতিরও সেখানে দাম ছিল এবং তাদেরকেও বিকাশ করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। সোভিয়েত রাশিয়ার মত সেখানে one side of culture করা হয়নি; common set of culture করা হয়েছিল।
আজ আমার শেষ বক্তব্য হচ্ছে, পাকিস্তান আমরা পেয়েছি যে জন্য, যে উদ্দেশ্য সেখানে ১৯৩৮ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেব পাটনা সম্মেলনে ঘোষণা করেছিলেন যে আমরা পাকিস্তান এর বুকে একটি ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চাই।
............................................................
............................................................
আসুন মালেক ভাইয়ের কিছু বিখ্যাত উক্তি পড়ি।
"জানি আমার কোন দুঃসংবাদ শুনলে মা কাঁদবেন, কিন্তু উপায় কি বলুন? বিশ্বের সমস্ত শক্তি আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা মুসলমান যুককরা বেঁচে থাকতে তা হতে পারেনা"।
"হয় বাতিলের উৎখাত করে সত্যের প্রতিষ্ঠা করবো, নচেৎ সে চেষ্টায় আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে"
"আমার প্রিয় ক্যাম্পাসের ছাত্রদেরকে ইসলামের দিকে আমার ডান হাত দিয়ে ডাকবো, ইসলামের শত্রুরা যদি আমার ডান হাতটি কেটে ফেলে তাহলে বাম হাত দিয়ে ডাকবো। ওরা যদি আমার বাম হাতটিও কেটে ফেলে তাহলে দুটো পা দিয়ে হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে ডাকবো। ওরা যদি আমার দুটো পাও কেটে ফেলে তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি ছেলেকে ইসলামের দিকে ডাকবো। ওরা যদি আমার চলার গতি স্তব্দ করে দেয় তাহলে আমার যে দুটো চোখ বেঁচে থাকবে সে চোখ দুটো দিয়ে হলেও ছাত্রদেরকে ইসলামের প্রতি ডাকবো। আমার চোখ দুটিকেও যদি ওরা উপড়ে ফেলে তাহলে হৃদয়ের যে চোখ রয়েছে তা দিয়ে হলেও আমি আমার জীবনের শেষ গন্তব্য জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকবো"
"সৎগুণ ও সৎবৃত্তির বিকাশে মানুষের জীবন মনুষ্যত্বে ও মহত্বে পূর্ণ করে জীবন ও জগতের কল্যাণ সাধনই আদর্শ জীবনের চরম লক্ষ্য, পরম উদ্দেশ্য"
"মায়ের বন্ধন ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। বৃহত্তর কল্যাণের পথে সে বন্ধনকে ছিঁড়তে হবে। কঠিন শপথ নিয়ে আমার পথে আমি চলতে চাই। আশির্বাদ করবেন, সত্য প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে যেন আমার জীবনকে আমি শহীদ করে দিতে পারি"
"আমার মা এবং ভাইরা আশা করে আছেন, আমি একটা বড় কিছু হতে যাচ্ছি। কিন্তু মিথ্যা সে সব আশা। আমি চাইনে বড় হতে, আমি ছোট থেকেই স্বার্থকতা পেতে চাই"
"আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসগুলোর চেয়ে ইসলামী ছাত্রসংঘের অফিস আমার জীবনে বেশী গুরুত্বপূর্ণ"
"আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে কারাগারের নীরন্ধ্র অন্ধকার, সরকারি যাঁতাকলের নিষ্পেষন আর ফাঁসীর মঞ্চও যেন আমাকে ভড়কে দিতে না পারে"।
"সংগ্রামের জিন্দেগী, মঞ্জিল তো অনেক দূরে। কুরআনের ডাকে, সেই পথে তীব্র গতিতে ছুটে চল"
"কেবল নফল ইবাদত আর তাসবীহ পড়ে ঐ তাসবীহর দানার উপর ইসলাম কায়েম হবেনা"
আল্লাহ তায়ালা এই মহান মানুষটিকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আমীন
আল্লাহ তায়ালা এই মহান মানুষটিকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আমীন
# প্রেরণার বাতিঘর হতে সংগৃহীত
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন