৬ সেপ, ২০১৬

সফলতাঃ দুনিয়া ও আল্লাহর দৃষ্টিকোণ


মাক্কী জীবনের মাঝামাঝি অবস্থা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কাফেরদের মধ্যে ভীষণ সংঘাত চলছে। কিন্তু তখনো কাফেরদের নির্যাতন নিপীড়ন চরমে পৌঁছে যায়নি। তবে নির্যাতনের ব্যপকতা দিন দিন বেড়েই চলছে। অপরদিকে এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ধৈর্য্য ধারণ করে সহ্য করা ছাড়া অন্য কোন পথ ছিল না। এমতাবস্থায় সাহাবাদের মধ্যে কিছু হতাশা বিরাজ করছিল। অন্যদিকে কাফেররা মুসলিমদের উপহাস করে বলছিল, তোমাদের তো আল্লাহ আছে! অথচ তোমরাই লাঞ্চনার মধ্যে আছ। তোমরা ব্যর্থতায় পর্যবসিত। এই অবস্থায় আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা মুমিনদের জন্য নিয়ে এসেছেন আশার বানী। মুমিনদের সফলতা জানান দিয়ে নাজিল হয়েছে সূরা মুমিনূন এর প্রথম দশটি আয়াত। 

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ .الَّذِيْنَ هُمْ فِىْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ .وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ .وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ. وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ إِلَّا عَلى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ فَمَنِ ابْتَغى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُوْلئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ وَالَّذِينَ هُمْ عَلى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ أُوْلَئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ الَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ [সূরা আল মুমিনূন : ১-১১]

“সফলতা লাভ করলো সেই সব মুমিন যারা তাদের ছালাতে খুশু অবলম্বন করে, যারা বেহুদা কাজ থেকে বিরত থাকে, যারা পবিত্রতা বিধান কাজে তৎপর থাকে, যারা লজ্জাস্থানের হিফাজাত করে নিজেদের স্ত্রী ও দক্ষিণ হস্তের মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ছাড়া, এই ক্ষেত্রে তারা ভৎসনার যোগ্য নয়, তবে এর বাইরে কিছু চাইলে তারা হবে সীমালংঘনকারী, যারা আমানাত ও ওয়াদা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, যারা সালাতের পূর্ণ হিফাজাত করে। তারাই সেই উত্তরাধিকারী যারা উত্তরাধিকার হিসাবে ফিরদাউস পাবে, সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল।”

দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষকেই জীবনের প্রকৃত মিশনের প্রতি উদাসীন থেকে ‘সফলতার’ ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে বেহুঁশের মতো ছুটতে দেখা যায়। সাধারণ মুসলিমরা এই জীবনে টাকার পাহাড় গড়তে পারা, বিশাল অট্টালিকার মালিক হওয়া, বহু সংখ্যক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়া, বিলাসী জীবন যাপন করতে পারা এবং প্রভাব-প্রতিপত্তিতে অপরকে ছাড়িয়ে যেতে পারাকেই তারা মনে করে সফলতা। আর দ্বীন কায়েমের পথে সংগ্রামরত অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র দুনিয়ার প্রভাব প্রতিপত্তি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ইত্যাদি ইসলামপন্থীদের হাতে থাকাই সফলতা। অন্যথায় আমরা ব্যর্থ। 

কিন্তু মহাজ্ঞানী রাব্বুল আলামীনের দৃষ্টিতে সফলতার স্বরূপ ভিন্ন। আল কুরআনের বহু সংখ্যক আয়াতে তিনি সফল ব্যক্তিদের পরিচয় তুলে ধরেছেন যাতে মানুষ ‘সফলতার’ ভুল ধারণা থেকে মুক্ত হতে, সঠিক ধারণা লাভ করতে এবং সঠিক কর্মপন্থা অবলম্বন করতে পারে। বেশীরভাগ নবী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পান নি। তাই বলে কি তাঁরা ব্যর্থ? আসুন আমরা জানি আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা সফলতা এবং সফল ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলেছেন। 

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,
أَلاَ إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُوْنَ الَّذِينَ آمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ لَهُمُ الْبُشْرُى فِى الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاخِرَةِ لاَ تَبْدِيْلَ لِكَلِمَاتِ اللهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ [সূরা ইউনুস : ৬২-৬৪] 

“জেনে রাখ, যারা আল্লাহর বন্ধু, যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের কোন ভয় ও চিন্তার কারণ নেই। দুনিয়া এবং আখিরাতে- উভয় জীবনেই তাদের জন্য সুসংবাদ। আল্লাহর কথা পরিবর্তিত হবার নয়। এটি বড়ই সফলতা।”

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكّاهَا وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسّاهَا [সূরা আশ্ শামস : ৯, ১০]

“অবশ্যই সেই ব্যক্তি সফল যে নিজকে পরিশুদ্ধ করে নিয়েছে। আর সেই ব্যক্তি বিফল যে নিজকে দাবিয়ে দিয়েছে।”

يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنْصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ [সূরা আল মায়িদা : ৯০]

“ওহে যারা ঈমান এনেছো, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য নজরানা পেশ করার স্থান এবং ভাগ্য গণনার জন্য শর নিক্ষেপ নাপাক, শয়তানী কাজ। তোমরা এইগুলো পরিহার করে চল। আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।”

فَاتِ ذَا الْقُرْبى حَقَّه وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ ذَلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ وَأُوْلئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ [সূরা আর রূম : ৩৮]

“আত্মীয়দেরকে তাদের হক দাও, মিসকীন ও মুসাফিরদেরকেও। যারা আল্লাহর সন্তোষ প্রত্যাশী তাদের জন্য এটি খুবই উত্তম কাজ। তারাই ঐসব লোক যারা সফল।”

قُلْ لاَ يَسْتَوِى الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِ فَاتَّقُوْا اللهَ يا أُولِى الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ[সূরা আল মা-য়িদা : ১০০]

“বলে দাও, অপবিত্রতার আধিক্য তোমাদেরকে চমৎকৃত করলেও পবিত্র ও অপবিত্র জিনিস সমান নয়। ওহে জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চল। আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।”

يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا لاَ تَأْكُلُوْا الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ[সূরা আলে ইমরান : ১৩০] 

“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আল্লাহকে ভয় করে চল। আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।”

فَأَمَّا الَّذِيْنَ امَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ فَيُدْخِلُهُمْ رَبُّهُمْ فِى رَحْمَتِه ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْمُبِيْنُ[সূরা আল জাসীয়া : ৩০]

“অতপর যারা ঈমান এনেছে এবং আমালে ছালেহ করেছে তাদের রব তাদেরকে তাঁর রাহমাতের মধ্যে দাখিল করে নেবেন। এটি সুস্পষ্ট সফলতা।”

الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلاةَ وَمِمَّا رَزَقْناهُمْ يُنْفِقُوْنَ. والَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْاخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ أُوْلـئِكَ عَلى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْ وَأُوْلـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ[সূরা আল বাকারা : ৩-৫]

“যারা গাইবে বিশ্বাস করে, ছালাত কায়েম করে, আমি যেই রিয্ক তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে দান করে, যারা তোমার প্রতি ও তোমার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান পোষণ করে, আর আখিরাতের প্রতিও যাদের রয়েছে ইয়াকীন, তারাই রয়েছে তাদের রবের নির্দেশিত পথে। আর তারাই সফল।”

إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا دُعُوْا إِلَى اللهِ وَرَسُولِه لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُوْلئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ [সূরা আন্ নূর : ৫১] 

“নিশ্চয়ই মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা মেনে নেওয়ার জন্য ডাকা হয় তখন তারা বলে আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। এবং এরাই সফল।”

يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُولَه فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا 

[সূরা আল আহযাব : ৭০, ৭১]

“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহকে ভয় করে চল এবং সোজা সঠিক কথা বল। তাহলে আল্লাহ তোমাদের আমলগুলো সংশোধন করে দেবেন এবং তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে চলে সে লাভ করেছে বিরাট সফলতা।”

الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْاخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ أُوْلئِكَ عَلى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْ وَأُوْلئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ [সূরা লোকমান : ৪, ৫] 

“যারা ছালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখিরাতের প্রতি ইয়াকীন রাখে, তারাই রয়েছে তাদের রবের নির্দেশিত পথে। আর তারাই সফল।”

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِىْ شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَّأَحْسَنُ تَأْوِيلاً [সূরা আন্ নিসা : ৫৯]

“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আর আনুগত্য কর উলুল আমরের (আদেশ প্রদানের অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের)। তোমাদের মধ্যে যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরাও। এটাই সঠিক কর্মনীতি এবং শেষ ফলের দিক দিয়ে এটাই ভালো।”

فَالَّذِيْنَ امَنُوْا بِه وَعَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَاتَّبَعُوْا النُّوْرَ الَّذِىْ أُنْزِلَ مَعَهُ أُوْلـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ[সূরা আল আ‘রাফ : ১৫৭]

“অতপর যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সহযোগিতা করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার প্রতি নাযিলকৃত নূরের (আল কুরআনের) অনুসরণ করে, তারাই সফল।”

وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَه أُوْلـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ حَكِيْمٌ وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِى جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ [সূরা আত্ তাওবা : ৭১, ৭২]

“এবং মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কাজের নির্দেশ দেয়, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, ছালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। আল্লাহ শিগগীরই তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী মহাবিজ্ঞ। এই মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের সাথে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে তিনি তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত এবং সেখানে তারা থাকবে চিরদিন। সবুজ বাগানে তাদের জন্য উত্তম বাসস্থান থাকবে। আর সবচে’ বড় কথা, তারা আল্লাহর সন্তোষ হাছিল করবে। আর এটাই তো বড় সফলতা।”

قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكى لَهُمْ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا يَصْنَعُوْنَ وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلى جُيُوْبِهِنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ ابَائِهِنَّ أَوْ ابَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِىْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِىْ أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِيْنَ غَيْرِ أُوْلِى الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوْبُوْا إِلى اللهِ جَمِيْعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

[সূরা আন্ নূর : ৩০, ৩১]

“মুমিন পুরুষদের বল তারা যেনো তাদের চোখ সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযাত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। তারা যা কিছু করে আল্লাহ তার খবর রাখেন। মুমিন মহিলাদেরকে বল তারা যেন তাদের চোখ সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযাত করে। তারা যেন তাদের সাজ দেখিয়ে না বেড়ায় এটুকু ছাড়া যা আপনাআপনি প্রকাশিত হয়ে পড়ে। তারা যেন তাদের বুকের ওপর ওড়নার আঁচল দিয়ে রাখে। তারা যেন তাদের সাজ প্রকাশ না করে, তবে তাদের সামনে ছাড়া, তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজের ছেলে, নিজের স্বামীর ছেলে, আপন ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, ঘনিষ্ঠ চেনা-জানা মহিলা, নিজেদের দাস, অধীনস্থ এমন পুরুষ যাদের অন্য রকম চাহিদা নেই এবং এমন বালক যারা মেয়েদের গোপন বিষয় জানে না। তারা যেন তাদের গোপন সাজ সম্পর্কে লোকদেরকে জানাবার উদ্দেশ্যে যমীনে জোরে পা ফেলে না চলে। হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা কর। আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।”

وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُوْلـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ [সূরা আলে ইমরান : ১০৪] 

“তোমাদের মধ্য হতে এমন একদল লোক থাকতে হবে যারা লোকদেরকে কল্যাণের দিকে ডাকবে, মা‘রূফ কাজের নির্দেশ দেবে এবং মুনকার থেকে বিরত রাখবে। আর এরাই সফল।”

فَاتَّقُوْا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوْا وَأَطِيْعُوْا وَأَنْفِقُوْا خَيْرًا لِّأَنْفُسِكُمْ وَمَنْ يُوْقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ [সূরা আত্ তাগাবুন : ১৬]

“আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে চল। শুন, আনুগত্য কর এবং ইনফাক কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম। যারা মনের সংকীর্ণতা থেকে বেঁচে গেছে তারাই সফল।”

لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِيْنَ الَّذِيْنَ أُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُْونَ اللهَ وَرَسُولَه أُوْلئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ تَبَوَّؤُوْا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُوْنَ فِى صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُوْنَ عَلى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوْقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ [সূরা আল হাশর : ৮, ৯]

“(ঐ মাল) ঐ দরিদ্র মুহাজিরদের জন্য যারা নিজেদের বাড়ি-ঘর ও সহায়-সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদকৃত। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তোষ প্রত্যাশী। এরাই সত্যনিষ্ঠ। (ঐ মাল তাদের জন্যও) যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বেই ঈমান এনে বসবাস করছিলো। তারা ঐসব লোকের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে যারা হিজরাত করে তাদের কাছে এসেছে। এমনকি মুহাজিরদেরকে যা কিছু দেওয়া হয় সেই বিষয়ে তারা নিজের অন্তরে কোন চাহিদা পর্যন্ত অনুভব করে না। নিজেদের যতো অভাবই থাকুক না কেন তারা নিজেদের ওপর অন্যদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের সংকীর্ণতা থেকে বেঁচে গেছে তারাই সফল।”

يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَابْتَغُوْا إِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ وَجَاهِدُوْا فِى سَبِيْلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ [সূরা আল মা-য়িদা : ৩৫]

“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহকে ভয় করে চল, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধানে লেগে থাক এবং তাঁর পথে জিহাদ কর। আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।”

إِنَّ اللهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقَاتِلُوْنَ فِى سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِىْ التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيْلِ وَالْقُرْانِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِه مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِى بَايَعْتُمْ بِه وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ [সূরা আত্ তাওবা : ১১১] 

“আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জান-মাল কিনে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, মারে ও মরে। তাদেরকে জান্নাত দেবার মজবুত ওয়াদা আত্ তাওরাত, আল ইনজীল ও আল কুরআনে করা হয়েছে। ওয়াদা পালনে আল্লাহর চেয়ে বেশি যোগ্য আর কে আছে? অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে যেই বেচা-কেনা করেছো সেই ব্যাপারে খুশি হয়ে যাও। এটা অতি বড় সফলতা।”

الَّذِيْنَ امَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِىْ سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِ وَأُوْلئِكَ هُمُ الْفَائِزُوْنَ[সূরা আত্ তাওবা : ২০]

“আল্লাহর কাছে তো ঐসব লোকের মর্যাদাই বড় যারা ঈমান এনেছে, হিজরাত করেছে এবং আল্লাহর পথে তাদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে। আর এরাই তো সফল।”

يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُولِه وَتُجَاهِدُوْنَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِىْ جَنَّاتِ عَدْنٍ ذلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ [সূরা আছ্ ছাফ : ১০-১২] 

“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আমি কি তোমাদেরকে এমন ব্যবসার কথা বলবো যা তোমাদেরকে কষ্টদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবে? আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং মাল ও জান দিয়ে তাঁর পথে জিহাদ কর। যদি তোমরা জান, এটাই তো তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন, তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। তোমাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতে উত্তম ঘর দেবেন। এটি অতি বড় সফলতা।”

يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوْا وَاذْكُرُوْا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلحُوْنَ [সূরা আল আনফাল : ৪৫]

“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, কোন বাহিনীর সাথে তোমাদের মুকাবিলা হলে তোমরা দৃঢ়পদ থাক এবং বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ কর। আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।”

يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا اصْبِرُواْ وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُواْ اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ 

[সূরা আলে ইমরান : ২০০]

“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, ছবর অবলম্বন কর, বাতিলপন্থীদের মুকাবিলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর, সদা-সর্বদা প্রস্তুত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করে চল, আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।”

لـكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِيْنَ امَنُوْا مَعَهُ جَاهَدُوْا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَأُوْلـئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ [সূরা আত্ তাওবা : ৮৮] 

“কিন্তু রাসূল এবং ঐসব লোক যারা তাঁর সাথে ঈমান এনেছে তাদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে। এদের জন্যই তো সব কল্যাণ। আর এরাই তো সফল।”

لاَ تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاخِرِ يُوَادُّوْنَ مَنْ حَادَّ اللهَ وَرَسُولَه وَلَوْ كَانُوْا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيْرَتَهُمْ أُوْلئِكَ كَتَبَ فِيىْ قُلُوْبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوْحٍ مِّنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ أُوْلئِكَ حِزْبُ اللهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللهِ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ [সূরা আল মুজাদালা : ২২] 

“তোমরা কখনো এমন দেখতে পাবে না যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান পোষণ করে তারা এমন লোকদেরকে ভালোবাসে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করছে, ঐ লোকেরা চাই তাদের পিতা, পুত্র, ভাই কিংবা গোষ্ঠীর কেউ হোক না কেন। আল্লাহ এইসব লোকের অন্তরে ঈমান বদ্ধমূল করে দিয়েছেন এবং নিজের পক্ষ থেকে একটি রূহ দিয়ে তাদেরকে শক্তি যুগিয়েছেন। তিনি তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে ঝর্ণা প্রবাহিত থাকবে। তারা সেখানে থাকবে চিরদিন। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এরাই আল্লাহর বাহিনী। জেনে রাখ, আল্লাহর বাহিনীর লোকেরাই সফল।”

এইসব আয়াতে একনজরে আমরা যেগুলোকে সফলতা হিসেবে দেখতে পাই তা হলো,
১। আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা-ইখতিয়ার কিংবা অধিকারে শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হওয়া।

২।আখিরাতের জওয়াবদিহিতা, শাস্তি ও পুরস্কারের কথা মনে জাগ্রত রেখে জীবন যাপন করা।

৩।কোন বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা জানার পর বিনা দ্বিধায় মেনে চলা।

৪।একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করতে থাকা।

৫।সালাত কায়েম করা ও খুশু সহকারে সালাত আদায় করা।

৬।যাকাত আদায় করা।

৭।আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়গুলোর অনুশীলন করতে থাকা।

৮।আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিবেদিত থাকা।

৯। ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহ করতে থাকা।

১০।মা‘রূফের প্রতিষ্ঠা ও মুনকারের উচ্ছেদে সচেষ্ট থাকা।

১১।সর্বাবস্থায় সবর অবলম্বন করা।

১২।যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ়পদ থাকা।

১৩।আত্মীয়, মিসকীন ও মুসাফিরের হক আদায় করা।

১৪।সুদ থেকে বেঁচে থাকা।

১৫।মদ থেকে বেঁচে থাকা।

১৬।জুয়া থেকে বেঁচে থাকা।

১৭।আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য নজরানা পেশ করা হয় এমন স্থান পরিহার করে চলা।

১৮।তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্য গণনা থেকে বেঁচে থাকা।

১৯।নাপাক জিনিস পরিহার করা।

২০।অবৈধ যৌনাচার থেকে বেঁচে থাকা।

২১।পর নারীর সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে বেঁচে থাকা।

২২।আমানাতের হিফাযাত করা।

২৩।ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালন করা।

২৪।বেহুদা কাজ থেকে বেঁচে থাকা।

২৫।কৃপণতা থেকে মুক্ত হওয়া।

২৬।আত্মীয়-স্বজন হলেও যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তাদেরকে ভালো না বাসা।

দুনিয়ার জীবন ক্ষনস্থায়ী এবং পরীক্ষা ক্ষেত্র। এর সফলতা কিংবা ব্যর্থতা মূলত কিছুই নয়। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِيْنَ وَالْقَنَاطِيْرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللهُ عِنْدَه حُسْنُ الْمَابِ[সূরা আলে ইমরান : ১৪] 

“মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তুপ, সেরা ঘোড়া, গৃহপালিত পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আকর্ষণকে খুবই সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এইগুলো দুনিয়ার জীবনের সামগ্রী মাত্র। আর আল্লাহর কাছে তো রয়েছে উত্তম আবাস।”

الْمَالُ وَالْبَنُوْنَ زِيْنَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا [সূরা আল্ কাহফ : ৪৬]

“এই অর্থ-সম্পদ এবং সন্তান সন্তুতি তোমাদের দুনিয়ার জীবনের সাময়িক সাজ-সজ্জা মাত্র। আসলে তো টিকে থাকার মতো নেক আমলই তোমার রবের নিকট পরিণামের দিক দিয়ে উত্তম। এবং এই বিষয়েই ভালো কিছু আশা করা যায়।”

إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَاللهُ عِنْدَه أَجْرٌ عَظِيْمٌ [সূরা আত্ তাগাবুন : ১৫]

“অবশ্যই তোমাদের অর্থ-সম্পদ এবং সন্তান সন্তুতি একটি পরীক্ষা। আর কেবলমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে বিরাট প্রতিদান।”

اِعْلَمُوْا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِى الْأَمْوَالِ وَالْاَوْلاَدِ [সূরা আল হাদীদ : ২০]

“জেনে নাও, দুনিয়ার জীবন একটি খেলা, তামাশা, বাহ্যিক চাকচিক্য, তোমাদের পারস্পরিক গৌরব-অহংকার এবং অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে একে অপরকে অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

وَمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ [সূরা আল আনকাবুত: ৬৪]

“আর দুনিয়ার জীবন তো হাসি-তামাশা, খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর আখিরাতের ঘর, সেটাই তো জীবন, যদি ওরা জানতো।”

“অর্থাৎ এর (দুনিয়ার জীবনের) বাস্তবতা শুধুমাত্র এতটুকুই যেমন ছোট ছেলেরা কিছুক্ষণের জন্য নেচে-গেয়ে আমোদ করে এবং যার যার ঘরে চলে যায়। এখানে যে রাজা হয়ে গেছে সে আসলে রাজা হয়ে যায় নি বরং শুধুমাত্র রাজার অভিনয় করছে। এক সময় তার এই খেলা শেষ হয়ে যায়। তখন সে তেমনি দীনহীন অবস্থায় রাজ সিংহাসন থেকে বিদায় নেয় যেইভাবে এই দুনিয়ার বুকে এসেছিলো। অনুরূপভাবে জীবনের কোন একটি আকৃতিও এখানে স্থায়ী ও চিরন্তন নয়। যে যেই অবস্থায়ই আছে সাময়িকভাবে একটি সীমিত সময়ের জন্যই আছে। মাত্র কয়েক দিনের জীবনের সাফল্যের জন্য যারা প্রাণপাত করে এবং এরই জন্য বিবেক ও ঈমান বিকিয়ে দিয়ে সামান্য কিছু আয়েশ আরামের উপকরণ ও শক্তি প্রতিপত্তির জৌলুস করায়ত্ত করে নেয়, তাদের এই সমস্ত কাজ মন ভুলানো ছাড়া আর কিছুই নয়। [তাফহীমুল কুরআন, সাইয়্যেদ আবুল ‘আলা মওদূদী ১১ খণ্ড, সূরা আল ‘আনকাবূতের তাফসীরের ১০২ নাম্বার টীকা।]

فَمَا أُوْتِيْتُمْ مِّنْ شَىْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَّأَبْقى لِلَّذِيْنَ امَنُوْا وَعَلى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ [সূরা আশ্ শূরা : ৩৬]

“তোমাদেরকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে তা দুনিয়ার (ক্ষণস্থায়ী) জীবনের সামগ্রী। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা যেমনি উত্তম তেমনি স্থায়ী। তা সেই সব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের ওপর তাওয়াক্কুল করেছে।”

وَلَوْلاَ أَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ أُمَّةً وَّاحِدَةً لَّجَعَلْنَا لِمَنْ يَّكْفُرُ بِالرَّحْمَنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِّنْ فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُوْنَ وَلِبُيُْوتِهِمْ أَبْوَابًا وَسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِؤُوْنَ وَزُخْرُفًا وَإِنْ كُلُّ ذلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِيْنَ [সূরা আয্ যুখরুফ : ৩৩-৩৫]

“সকল মানুষ একই পথ ধরার আশংকা না থাকলে আমি কাফিরদের ঘরের ছাদ, যেই সিঁড়ি দিয়ে তারা উপরে ওঠে সেই সিঁড়ি, তাদের ঘরের দরওয়াজাগুলো এবং যেই উচ্চাসনে তারা হেলান দিয়ে বসে রূপা ও সোনা বানিয়ে দিতাম। এইগুলো তো পার্থিব জীবনের (সামান্য) উপকরণ। তোমার রবের নিকট আখিরাত তো কেবল মুত্তাকীদের জন্য নির্ধারিত।”

“অর্থাৎ এই সোনা-রূপা যা কারো লাভ করা তোমাদের দৃষ্টিতে চরম নিয়ামাত প্রাপ্তি এবং সম্মান ও মর্যাদার চরম শিখরে আরোহণ, তা আল্লাহর দৃষ্টিতে এতই নগণ্য যে যদি সকল মানুষের কুফরের দিকে ঝুঁকে পড়ার আশংকা না থাকতো, তাহলে তিনি প্রত্যেক কাফিরের বাড়ি-ঘর সোনা-রূপা দিয়ে তৈরি করে দিতেন। এই নিকৃষ্ট বস্তুটি কখন থেকে মানুষের মর্যাদা ও আত্মার পবিত্রতার প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? এই সম্পদ তো এমন সব মানুষের কাছেও আছে যাদের ঘৃণ্য কাজ-কর্মের পংকিলতায় গোটা সমাজ পুঁতিগন্ধময় হয়ে যায়। আর একেই তোমরা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড বানিয়ে রেখেছো।”

[তাফহীমুল কুরআন, সাইয়্যেদ আবুল ‘আলা মওদূদী, ১৪শ খণ্ড, সূরা আয্ যুখরুফের তাফসীরের ৩৩ নাম্বার টীকা।]

وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَتَمَتَّعُوْنَ وَيَأْكُلُوْنَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ 

[সূরা মুহাম্মাদ : ১২]

“আর কাফিররা দুনিয়ার ক’দিনের মজা লুটছে। জন্তু-জানোয়ারের মতো পানাহার করছে। ওদের চূড়ান্ত ঠিকানা জাহান্নাম।”

وَلاَ تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلى مَا مَتَّعْنَا بِه أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيْهِ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَّأَبْقَى [সূরা তা-হা : ১৩১]

“দুনিয়ার জীবনের এই জাঁকজমক যা আমি তাদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়েছি সেই দিকে তুমি চোখ তুলেও তাকাবে না। এইসব তো তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলার জন্য দিয়েছি। আর তোমার রবের রিয্কই উত্তম ও স্থায়ী।”

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

اِنَّ لِكُلِّ اُمَّةٍ فِتْنَةً وَفِتْنَةُ اُمَّتِى الْمَالُ.

[কা‘ব ইবনু ইয়াদ (রা), জামে আত্ তিরমিযী]

“অবশ্যই প্রত্যেক উম্মাতের জন্য রয়েছে এক একটি ফিতনা। আমার উম্মাতের ফিতনা হচ্ছে অর্থ-সম্পদ।”

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

وَمَا أَمْوَالُكُمْ وَلاَ أَوْلَادُكُمْ بِالَّتِىْ تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفى إِلَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُوْلئِكَ لَهُمْ جَزَاءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوْا وَهُمْ فِى الْغُرُفَاتِ امِنُوْنَ [সূরা সাবা : ৩৭]

“তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি এমন নয় যে তা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে, তবে যারা ঈমান আনে এবং আমালে ছালেহ করে তারা এমন লোক যাদের জন্য রয়েছে তাদের কর্মের দ্বিগুণ প্রতিদান এবং তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে অবস্থান করবে।”

وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُوْرِ [সূরা আলে ইমরান : ১৮৫]

“আর দুনিয়ার জীবন তো ছলনার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।”

يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذلِكَ فَأُوْلئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ [সূরা আল মুনাফিকুন : ৯]

“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে না রাখে। যারা এমনটি করবে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”

“বিশেষভাবে অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতির উল্লেখ করা হয়েছে এই জন্য যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ এইসব স্বার্থের কারণে ঈমানের দাবি পূরণ না করে নিফাক অথবা ঈমানের দুর্বলতা অথবা পাপাচার ও না-ফরমানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।”

[তাফহীমুল কুরআন, সাইয়্যেদ আবুল ‘আলা মওদূদী, ১৭শ খণ্ড, সূরা আল মুনাফিকুনের তাফসীরের ১৮ নাম্বার টীকা।]

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللهِ جَنَاحَ بَعُوْضَةٍ مَا سَقى كَافِرًا مِنْهَا شِرْبَةَ مَاءٍ[সাহল ইবনু সা‘দ (রা), জামে আত্ তিরমিযী] 

“আল্লাহর নিকট দুনিয়াটার মূল্য যদি একটি মশার ডানার মূল্যের সমান হতো, তাহলে তিনি কোন কাফিরকে এর থেকে এক চুমুক পানি পান করতে দিতেন না।”

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

يا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ [সূরা ফাতির : ৫]

“ওহে মানব জাতি, অবশ্যই আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। আল্লাহর ব্যাপারে ধোঁকাবাজ (শাইতান) যেন তোমাদেরকে ধোঁকা দিতে না পারে।”

فَلاَ تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلاَ يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ [সূরা লোকমান : ৩৩] 

“অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে। আর ধোঁকাবাজ (শাইতান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে না পারে।”

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ اَحَبَّ دُنْيَاه اَضَرَّبِاخِرَتِه وَمَنْ اَحَبَّ اخِرَتَه اَضَرَّبِدُنْيَاه فَاثِرُوْامَا يَابْقى عَلى مَا يَفْنى

[আবু মূসা আল আশ‘আরী (রা)। আহমাদ, ইবন হিব্বান, আল বাযযার, আল হাকিম, আল বাইহাকী।]

“যেই ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবাসে সে তার আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে ব্যক্তি আখিরাতকে ভালোবাসে সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতএব যা ধ্বংসশীল তার ওপর যা স্থায়ী তাকে অগ্রাধিকার দাও।”

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِى سَبِيْلِه فَتَرَبَّصُواْ حَتَّى يَأْتِىَ اللهُ بِأَمْرِه وَاللهُ لاَ يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ [সূরা আত্ তাওবা : ২৪]

“তাদেরকে বল, তোমাদের আব্বা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের উপার্জিত অর্থ-সম্পদ, তোমাদের ঐ ব্যবসা যার মন্দার আশংকা তোমরা কর, তোমাদের পছন্দের ঘর-বাড়ি যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ থেকে বেশি প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আর আল্লাহ ফাসিকদেরকে সঠিক পথের দিশা দেন না।”

এই আয়াতের দাবি হচ্ছে, দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে একজন মুমিনের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ প্রিয়তর হতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদকে অগ্রাধিকার দিতে পারার ওপরই নির্ভর করে তার আখিরাতের সফলতা।

আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা আমাদের জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করুন, আমীন। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন