একজন হুজুর(!) বই লিখেছেন। ফতওয়ার বই। জিহাদবিরোধী ফতওয়া। কেন জিহাদ করা যাবে না? কেন একজন অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবেনা? কেন ভারতের আধিপত্য মেনে নেয়া আমাদের উচিত? ইত্যাদি বিষয়ে সেখানে দারুণ আলাপ আছে নাকি। আমি পড়িনি। তাই নিশ্চিত করতে পারছি না।
আপনারা আবার এটা বলে বসবেন না, একজন মানুষের বিরুদ্ধে নিশ্চিত না জেনে অভিযোগ করা ঠিক না। আসলে রুচি হয়নি ঐ হুজুরের বই পড়তে। যে হুজুর শাহবাগে নাস্তিকদের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে পারে তার বই আমাকে পড়তে হবে এতটা দৈন্যতা আমাকে এখনো পেয়ে বসে নি।
তাহলে কেন এই পোস্ট? সে কথা একটু পরে বলছি।
গতকাল দেখলাম সেই হুজুরকে পার্শ্ববর্তী মুশরিকদের দপ্তরে তার দুই সন্তানসহ। কৌতুহলী হয়ে উঠলাম। ভাবলাম এটা আবার গুজব কিনা? কারণ আজকাল গুজবের শেষ নাই। যে কেউ এডিট করে অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। যেহেতু মুশরিকদের হাইকমিশনারকে দেখা যাচ্ছে তখন বুঝে নিলাম এটা এডিটেড না হয়ে যদি সত্য হয় তবে হাইকমিশনের ফেসবুক পেইজে সেই ছবি থাকবে।
কথা ঠিক পেয়ে গেলাম আমাদের হুজুর(!)কে সেখানে। তাহলে ঘটনা সত্য। কেউ ভারতীয় দূতের সাথে মিটিং করলেই বাতিল হয়ে যায় না। এটা আমি জানি। তাই জানার চেষ্টা করলাম আমাদের হুজুর(!) কেন সেখানে গেলেন? কোন রাজনৈতিক আলাপ? দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়?
হুজুর(!) একটা ক্রেস্ট দিচ্ছেন। ক্রেস্টে লিখা রয়েছে বড় করে 'ফতওয়া'। বাকীটুকু পড়ার আর সুযোগ নেই। অন্তত আমার নেই। কারণ বয়স হয়েছে। চোখ এতো সুক্ষ জিনিস ধরতে পারে না। খবর নেয়ার চেষ্টা করলাম, ব্যাপারখানা কী? জানা গেলো ঐ যে শুরুতে বললাম হুজুর(!) একখানা বই লিখেছেন। সেটাসহ নানান ব্যাপার।
দ্বীন এ ইলাহীর মতো সর্বধর্ম প্রার্থনা করতেন সেই হুজুর(!)
মুশরিকরা হুজুর(!) এর বই পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছেন। তাই তাকে স্বাগত জানিয়েছেন হাইকমিশনে। সুযোগ পেয়ে হুজুর(!) একখানা ক্রেস্ট বানিয়ে নিয়ে গেলেন। সাথে তার গুণধর দুই পুত্রকেও নিয়ে গেলেন।
এই হুজুর(!) এর আরো ব্যাপার রয়েছে। তিনি ভারত স্পন্সরড মুসলিম সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশের একজন সদস্য ছিলেন। ২০০১ থেকে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুশরিকরা এই সরকারকে হটানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এর মধ্যে আওয়ামীলীগের তৎকালীন সেক্রেটারি আব্দুল জলিল ৩০ এপ্রিল ২০০৪ একটি ডেডলাইন দিয়েছিল।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সেই ষড়যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ১৭ মে ২০০৫ সালে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা করে জেএমবি। তারা প্রায় তিন মাস সরকারকে নাজেহাল করে ফেলে। এটাও জোট সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ও সারাদেশে এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ তৈরি করে ষড়যন্ত্র রুখে দেয়। আমার মনে আছে বাংলাদেশের প্রতিটি মসজিদ থেকে জেএমবির বিরুদ্ধে মিছিল বের হয়েছিলো।
নাস্তিকদের সাথে তার সখ্যতা রাজনীতির মাঠ ছাড়িয়ে ড্রয়িং রুম পর্যন্ত চলে গিয়েছে। এভাবেই আড্ডা দিতেন তিনি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সেই চৌকস সেনা অফিসারদের এই ভারত আওয়ামীলীগের সহায়তায় হত্যা করে বিডিয়ার বিদ্রোহের নামে। মুশরিকরা প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক মুশরিকরা তাদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এদেশের ঈমানদারদের হত্যা করিয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের একটি অংশ ছিল শাহবাগে নাস্তিকদের আন্দোলন।
যাই হোক আমরা আবার ফিরে আসি হুজুর(!) এর প্রসঙ্গে। এই হুজুর(!) জেএমবির একজন সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন। পরে অপরাধের ভয়াবহতা প্রমাণ হয়নি বিধায় মুক্তিও মিলেছে। আমি জেএমবির প্রসঙ্গ এইজন্যেই টেনেছিলাম। হুজুর(!) জেএমবিতেও ছিলেন শাহবাগেও ছিলেন। এটা অনেকে মিলাতে পারেন না। অথচ মিলটা কত সোজা! দুইটাই তো মুশরিকদের প্রজেক্ট। হুজুর(!) ভালো খেলেছেন। দুইদিকেই ছিলেন।
শাহবাগে গিয়ে তিনি নাকি সবচেয়ে বড় নেককাজ করেছেন!
কেন এই পোস্ট?
এই পোস্টটা হলো হুজুরকে চিনে রাখার জন্য। আসলে বর্তমান সময়ের জন্য এই পোস্ট নয়। এখনকার বেশিরভাগ মুসলিম তাকে অপছন্দ করে। কিন্তু বাঙালি গোল্ডফিস মেমোরি। কিছু সময় অতিবাহিত হলে পরে সব ভুলে বসে থাকে।
বাংলাদেশে যখন ৭১ এর গণ্ডগোল হয়েছিলো তখন বেশিরভাগ হুজুর এর বিরোধী ছিল। অন্তত ৮০ সাল পর্যন্ত মানুষ একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘৃণা করতো এখন যেভাবে শাহবাগীদের ঘৃণা করে। কিন্তু ধীরে ধীরে একাত্তর এখন মহান চেতনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কালক্রমে সব হুজুর(!) এখন একাত্তরকে মহান বলে। অনেকে তো একধাপ এগিয়ে নিজেদেরই মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে। এরপর পিনাকী বই লিখে 'মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম'। সেখানে দেখানো হয় একাত্তর ইসলামিস্টদেরই অবদান। একাত্তর মানেই ইসলাম, একাত্তর মানেই মুসলিম। আর এই বই দেখে বাংলার মুসলিম সমাজ হইচই করে উঠে। আসলেই তো...
মুশরিক ও শাহবাগী পিনাকী ভট্টাচার্যের লিখা "মুক্তিযুদ্ধে হুজুরদের মহান ভূমিকা" শীর্ষক বই
এমন ভয়ংকর কাজ যাতে আমাদের পঞ্চাশ বছর পরে না হয়, তার জন্যই এই পোস্ট। এখন তো শাহবাগ আন্দোলনে যুক্ত ছিলো জানলে মুসলিম পরিবারে বিবাহই হয় না। কিন্তু এখন থেকে ৫০ বছর পর যদি শাহবাগ আন্দোলন কোন কারণে মহান কিছু হয়ে যায় তখন কেউ যাতে এই ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে দেখিয়ে বলতে না পারে শাহবাগ মুসলিমদের আন্দোলন ছিল।
মৃত্যু হুট করে চলে আসবে। আমাদের সন্তানদের হয়তো সবকিছু বলে যেতে পারবো না। কিন্তু তারা যাতে ভুল পথে পা না বাড়ায়, বিভ্রান্ত না হয়, সেজন্য এই পোস্ট। আমি দুনিয়া থেকে চলে গেলেও আমাদের সন্তানেরা এই লিখা পড়বে, জানবে। ইনশাআল্লাহ।
জিহাদের সাথে তার ছিল আজন্ম শত্রুতা
এই হুজুর(!) ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করে না। সে মুশরিকদের প্রতিনিধিত্বকারী। অতএব সাবধান থাকুন। তার কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। এদেশের কওমীদের ভয় আর টাকার লোভ একসাথে দেখালে তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে সময় নেয় না।
ফরিদ উদ্দিন মাসউদ হাসিনাকে বুঝিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী দেয়ার লোভ দেখিয়ে অলরেডি কওমীদের হাত করে ফেলেছে। আগে যেভাবে মাসউদকে অগ্রাহ্য করতো এখন এতটা করেনা। কওমীরা ইতিমধ্যে ভুলে গিয়েছে ৫ মে ২০১৩ রাতে তাদের উপর ম্যসাকার চালানোতেও ভূমিকা ছিল এই হুজুরের(!)। সত্যিকারের ইসলামপন্থীরা ভুল করবে না এটাই আশাবাদ থাকলো।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন