৯ নভে, ২০১৯

উপমহাদেশের মুসলিমদের কাণ্ডারি জ্ঞানতাপস আল্লামা ইকবাল


ইসলামের কাণ্ডারি হিসেবে যারা নিজেদের জীবনকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র মুসলিম জাতীয়তাবাদের কবি ও দার্শনিক আল্লামা ইকবাল। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ড। মুসলিমদের একটি ভূখণ্ড দরকার এর প্রয়োজনীয়তা বুঝা ও রূপরেখা দাঁড় করানোর মতো জটিল ও সদূরপ্রসারী চিন্তা ও কাজ করেছেন আল্লামা ইকবাল। আল্লামা ইকবালের সেই চিন্তা আজ অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। 

প্রখ্যাত এই মুসলিম মনীষী ও জ্ঞানতাপস যে সময়টাতে জন্মগ্রহণ করেছিল সে সময়টা ছিল মুসলিম মিল্লাতের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ। পাক ভারত উপমহাদেশের রাজত্ব মুসলমানদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পর মুসলিম সমাজ যখন অধঃপতনের শিকার হচ্ছিল ঠিক সেসময় আল্লামা ইকবাল অধঃপতিত এই সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোর দিশা দেখাতে কলম ধরেন। ইকবাল শুধু মুসলমানের কবি নন, তিনি মানবতার কবি তথা বিশ্বমানবের কবি ছিলেন। বাংলাদেশ তথাকথিত স্বাধীন হওয়ার পর মহান কবি আল্লামা ইকবালকে অন্ধকারে পাঠিয়ে দেয়। যেসব স্থাপনার নাম আল্লামার নামে ছিলো তা সব পরিবর্তন করে ফেলা হয়। তার জীবনী ও কর্ম পাঠ্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। 

জন্ম ও শিক্ষাজীবন : 
১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ নূর মুহাম্মদ পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মাতা ইমাম বিবি ছিলেন একজন ধর্মানুরাগী পরহেযগার মহিলা। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশু ইকবাল সৈয়দ মীর হাসানের কাছে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৮৯৩ সালে স্কচ মিশন হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে উর্ত্তীণ হন এবং মেডেল বৃত্তি লাভ করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮৯৫ সালে ইন্টারমেডিয়েট পাস করে লাহোর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৯৭ সালে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আরবিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৮৯৯ সালে তিনি দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯০৫ সালে বৃত্তি লাভের পর লন্ডনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯০৭ সালে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯০৮ সালে জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছরে লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারী এবং আরবিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯০৮ সালের জুলাই মাসে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করার জন্যে শিয়ালকোটের নাগরিক সমাজ তাঁকে বিশাল সংবর্ধনা দেন। পাঞ্জাব কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ১৯০৯ সালের মে মাসে তিনি লাহোর সরকারি কলেজে দর্শনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৩৩ সালের ৪ ডিসেম্বর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করে। তিনিই একমাত্র প্রথম ভারতীয় ব্যক্তি যাকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। শিক্ষকতা ও আইন ব্যবসা ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। সর্বোপরি তিনি একজন বিখ্যাত মানবতার কবি ছিলেন। 

রাজনীতিতে ভূমিকা : 
আল্লামা ইকবাল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পুরোপুরি পক্ষপাতী ছিলেন না, কিন্তু ১৯২৬ এর পরবর্তী সময়ে ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত তাঁকে রাজনীতিতে টেনে আনে এবং রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। কবি আল্লামা ইকবালের অনেক পরিচয়, সবগুলো পরিচয়ে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। ইসলামের একজন দায়ী হিসেবে লিখনীর মাধ্যমে সংগ্রাম করেছেন। মুসলিম উম্মাকে উজ্জীবিত করার জন্য আসরারে খুদি বা খুদির দর্শন জাতিকে উপহার দিয়েছেন। ইকবালের রাজনৈতিক দর্শন মানুষ খেয়াল না করলেও উপমহাদেশের সমকালীন রাজনীতিতে তাঁর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। রাজনীতির ক্ষেত্রে ইকবালের অবদান খুবই প্রণিধানযোগ্য। অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মূল প্রতিষ্ঠান ছিল। ইকবাল তদানীন্তন মুসলিম লীগে সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুসলিম লীগকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সাধ্যমতো কাজ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে মুসলিম লীগ ভারতীয় রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল। ভারতের রাজনৈতিক বিবর্তনে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। তিনি ইসলামের ভাবধারা ও চেতনার সাথে আধুনিক জাতীয়তার সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তাঁর অপরিসীম ত্যাগ ও কোরবানীর স্বীকৃতি দিতে গিয়ে মরহুম কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ইসলামের প্রতি অবিচল বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি সেই বিরল মনীষার অন্তর্গত যার মনন ও বুদ্ধিবৃত্তি উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ইসলামী আবাসভূমির রূপরেখা বিনির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনেক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু সেকুলার গণতন্ত্রকে পছন্দ করতে না। ইসলামভিত্তিক গণতন্ত্রকে প্রকৃত গণতন্ত্র বলে মনে করতেন; যেখানে আইন হবে মহান আরশের মালিকের আর শাসন হবে মানুষের। 

১৯০৮ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। পাঞ্জাব আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে ইকবালের ভূমিকা স্বল্পকালীন হলেও বিভিন্ন দিক দিয়ে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য ভক্ত ও অনুরাগীরা পীড়াপীড়ি করতে থাকে। কিন্তু তাঁর পুরনো বন্ধু মিয়া আব্দুল আজিজের সাথে নির্বাচনী যুদ্ধে অংশগ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯২৬ সালে তিনি নির্বাচনে অংশ নেন এবং লাহোরের জনগণের সমর্থন ও ঐকান্তিক সহযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বী খান বাহাদুর মালিক মোহাম্মদ দীনকে তিন হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী ভূমি রাজস্বের উপর আয়কর উসুল করার প্রস্তাবের উপর পাঞ্জাব আইন সভায় ভাষণ দেন। ১৯২৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিল্লীতে অনুষ্ঠিত All Party Muslim Conference-এ ভাষণে মুসলমানদের স্বতন্ত্র কার্যক্রম গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। পাঞ্জাবের গভর্নর স্যার ম্যালকম হেইলি স্যার ফজলে হোসেনের মাধ্যমে ইকবালকে হাইকোর্টের বিচারপতি বানানোর প্রস্তাব পাঠানো হলে ইকবাল তা প্রত্যাখ্যান করেন। ২৫ জুলাই ১৯২৭ সালে আল্লামা ইকবাল পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলিতে তিনটি প্রস্তাব পেশ করেন। 

এক. নবী করিম (সাঃ) কে অবমাননার পথ রুদ্ধ করার জন্য আইন জারি করার দাবি উত্থাপন করেন। 
দুই. পাঞ্জাবে মদ পান বন্ধের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি করেন। 
তিন. একটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে বলেন, আমি ভারত ও ইসলাম দুয়েরই বৃহত্তর স্বার্থে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করি।

ইসলামী আন্দোলনে ভূমিকা : 
ইকবাল তাঁর লেখনীতে মুসলমানদের গৌরবময় যুগের কথা উল্লেখ করে বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, এমন একটা সময় তো ছিল যখন মুসলমানেরা সংখ্যায় নগণ্য হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালার বাণীকে বহন করিবার জন্য তারা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করিতে প্রস্তুত ছিল। হককে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে তারা জীবনের রক্তটুকু বিলিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করেনি। ইকবাল আফসোস করে বলেছিলেন,আধুনিক কালে মুসলমানেরা এই মিল্লাতের ঐক্যকে নিঃশেষ করেছে এবং চারিত্রিক দৃঢ়তা ও আকাংখাকে হারিয়ে ফেলেছে। যে কারণে মুসলমানদের উপর বাতিল পন্থীদের জুলুমের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তিনি মুসলিম বিশ্বকে একই সুতায় গাঁথার জন্য আমৃত্যু একজন কলম যোদ্ধা হিসেবে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। ইকবালের প্রত্যাশা ছিল ইসলাম একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই। মহান আরশের মালিক যেন কালেমার পতাকে বিশ্বব্যাপী উড্ডীন করেন। আল্লামা ইকবাল একটি নিরেট ইসলামী আদর্শ বহনকারী রাজনৈতিক দলের স্বপ্ন দেখতেন। এজন্য তিনি মাওলানা মওদুদীর চিন্তাগুলোকে খুব এপ্রিশিয়েট করতেন। মাওলানা মওদুদীর চিন্তা তাঁকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। কবি ইকবাল জামায়াতে ইসলামী গঠনে মাওলান মওদূদীকে বহু সহযোগিতা করেন। তার সহযোগিতায়ই মাওলানা মওদুদী দারুল ইসলাম ট্রাস্ট গঠন করতে সক্ষম হন। তবে জামায়াত গঠনের আগেই কবি ইন্তেকাল করেন। 

ইকবালের রচনাবলী : 
কবি আল্লামা ইকবাল গদ্য-পদ্য উভয় রচনাতেই ছিলেন সিদ্ধ হস্ত। তিনি ছিলেন মুক্তছন্দ কবি ও লেখক। তিনি লেখালেখি করেছেন বিভিন্ন বিষয়ের উপর। অর্থনীতির মত জটিল বিষয় থেকে শুরু করে আধ্যাত্মিকতার মতো বিমূর্ত বিষয় পর্যন্ত উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। গ্রন্থ রচনা ছাড়াও তিনি বিস্তর প্রবন্ধ লিখেছেন। ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও পন্ডিতদের সাথে আজীবন চিঠিপত্র বিনিময় করেছেন তিনি। আল্লামা ইকবাল তার জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে রচনা করেন মাত্র ২৪টি কবিতা। তাও এর অধিকাংশই তার বন্ধু “মাখজান” সম্পাদক আব্দুল কাদিরের অনুরোধে। কবি-জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ইকবাল উপর উর্দু কবি “দাগ”-এর প্রভাব ছিল প্রবল। পরবর্তীতে “কবি গালিব” ও “কবি হালী”-এর প্রভাবে গতানুগতিকা ছেড়ে তাঁর কবিতা সম্পূর্ণ নতুন খাতে প্রবাহিত হয়। 

আল্লামা ইকবাল সর্বপ্রথম ১৮৯৯ সালে লাহোরে “আঞ্জুমানে হিমায়াতে ইসলাম”-এর বার্ষিক সভায় জনসম্মুখে কবিতা পাঠ করেন। কবিতার শিরোনাম ছিল “নালায়ে ইয়াতিম” (অনাথের আর্তনাদ)। ১৯১১ সালের এপ্রিল মাসে একই সংগঠনের বার্ষিক সভায় তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী খন্ডকাব্য “শিকওয়া” পাঠ করেন। এর প্রভাবে আল্লামা ইকবালের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় ব্যাপকভাবে। এরই প্রেক্ষিতে অনেক দেওবন্দি আলেম তাকে কাফের ঘোষণা করে। এরপর তিনি রচনা করেন আরেকটি যুগান্তকারী খন্ডকাব্য “জাওয়াবে শিকওয়া”। এর মাধ্যমে কাফের ঘোষণাকারীরা তাদের ভুল বুঝতে পারে। এরপর একে রচনা করতে থাকেন অসংখ্য কবিতা। এই কবিতার মাধ্যমেই পাওয়া যায় তার চিন্তা-ধারার প্রকৃত পরিচয়। তার রচিত গ্রন্থাবলী হচ্ছে-

(১) ইলমুল ইকতিসাদ
অর্থনীতির উপর লেখা উর্দুভাষার প্রথম পুস্তক। তিনি এটি লাহোর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক থাকাকালীন সময়ে রচনা করেন।

(২) তারিখ-ই-হিন্দ
এটি ইতিহাস বিষয়ক বই। এর একটি সংস্করণ অমৃতসর থেকে প্রকাশিত হয়।

(৩) আসরার-ই-খুদী
আল্লামা ইকবালের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে এই “আসরার-ই-খুদী”। এটি ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয়। এই বই প্রকাশের পর সাড়া পড়ে যায় সর্বত্র। কিন্তু সূফী তরীকার অনুসারীরা এই পুস্তক প্রকাশকে প্রসন্ন দৃষ্টিতে গ্রহণ করেননি। কেননা ইকবাল এই গ্রন্থে সূফী কবি হাফিজ শিরাজীর তীব্র সমালোচনা করে ৩৫টি কবিতা লিখেছিলেন। উত্তেজনা এতই চরম আকার ধারণ করেছিল যে, ইকবালের চিন্তাধারার সমালোচনা করে খান বাহাদুর পীরজাদা মোজাফফর আহমদ ‘ফজলে রাজ-ই-বেখুদী’ নামে একটি দীর্ঘ কবিতা প্রকাশ করেন। ইকবাল পরবর্তী সংস্করনে উল্লেখিত ৩৫টি কবিতা বাদ দিয়ে দেন। প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ আর,এ, নিকলসন ১৯২০ সালে এর ইংরেজী তরজমা করেন প্রকাশ করেন।

(৪) রমুযে বেখূদী
প্রকৃতপক্ষে আসরার-ই-খূদীরই ক্রম সম্প্রসারিত এই সংকলনটি ১৯১৮ সালে রমুযে বেখুদী নামে প্রকাশিত হয়। আর্থার জন আর্বারী এটি ইংরেজীতে অনুবাদ করেন।

(৫) পায়াম-ই-মাশারিক
এই বইটি প্রকাশিত হয় ১৯২৩। এ সময়ে ইকবাল কবি হিসেবে অর্জন করেছেন সর্বজন স্বীকৃতি। তাঁর কবিতা এগিয়ে চলেছে পূর্ণ-পরিনতির দিকে। তিনি এ কাব্যে পাশ্চাত্য দর্শনের পাশাপাশি প্রাচ্যের কোরআনী চিন্তার ফসলকেও তুলে এনেছেন। এই কাব্যাটি গ্যাটের চিন্তাধারার অনুসরণে রচনা করেন। এতে মোট আশিটি কবিতা সংকলিত হয়েছে।

(৬) বাঙ্গ-ই-দারা
ইকবালের কবি জীবনের শুরু উর্দু কবিতার হাত ধরে। আর এই কাব্যটি উর্দু কবিতা সংকলন। উর্দুতেই তিনি রচনা করেছিলেন তাঁর শ্রেষ্ঠ দেশাত্মবোধক এবং জনচিত্তে আগুন ধরানো কবিতাসমূহ। ১৯২৪ সালে তিনি বাঙ্গ-ই-দারা নামে এ সকল উর্দু কবিতার সংকলনটি প্রকাশ করেন। এ কাব্যের কবিতাগুলো দেশাত্ববোধক, প্রকৃতি প্রীতি ও ইসলামী অনুভূতি এই তিনটি অংশে বিভক্ত।

(৭) যবুর-ই-আযম
ইকবালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফার্সী কবিতা সংকলন যবুর-ই-আযম। ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়। এর দুটি অংশের প্রথম অংশে ক্ষুদ্র কবিতা ও গীত এবং দ্বিতীয় অংশের নাম গুলশান-ই-রাজ-ই-জাদীদ। এখানে ইকবাল তার বিশিষ্ট দার্শনিক ভঙ্গিতে বর্তমান পৃথিবীর সমস্যাবলীর বর্ণনা ও সমাধান উল্লেখ করেন। 

ইকবালের মৃত্যু : 
১৯৩৪ সালের জানুয়ারী মাসে তার গলায় এক অজানা রোগ হয়। লাহোর ও দিল্লীতে এ রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করার পরও তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। তার শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে ১৯৩৪ সালে আইন ব্যবসা বন্ধ করে দেন। কয়েক বছর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কাটানোর পর ১৯৩৮ সালের ২১ এপ্রিল ভোরে চতুর্দিকে যখন মসজিদের মিনার হতে ফজরের আযান হচ্ছিল ঠিক সে সময় তিনি মহান প্রভুর ডাকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কয়েকদফা জানাযার পর লাখো ভক্ত অনুরাগীকে কাঁদিয়ে রাত পৌনে দশটার দিকে লাহোর দুর্গ ও বাদশাহী মসজিদের প্রবেশদ্বারের মাঝখানে হাজুরিবাগে তাকে কবর দেয়া হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন