একটা জরুরি বিষয়ে আপনাদের অবহিত করতে চাই। আর সেটি হলো মৃত ব্যক্তির গোসল ও কাফন। বর্তমানে মহামারী চলার কারণে এই বিষয়টা জানা প্রত্যেকের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। নিজের কোন আত্মীয় ইন্তেকাল করলে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট পাওয়া না গেলে নিজেকেই সব কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে এসব সহজ বিষয় জানা জরুরি। মৃতের গোসল, কাফন, জানাযার সালাত এবং দাফন করা ফরজ। মনে করুন আপনার পরিবারের এক সদস্য ইন্তেকাল করেছে। কী করবেন?
১- পানি গরম করবেন। সাথে বরই পাতা দিতে পারলে ভালো।
২- মৃত ব্যক্তি যদি পুরুষ হন তাহলে পুরুষ যদি মহিলা হন তবে মহিলারা গোসল দিবেন। তবে উত্তম হলো স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে গোসল দিবে। এটা সম্ভব না হলে নিকটাত্মীয়রা দিবে। যেমন পুরুষ হলে বাবা, ছেলে, নাতি ইত্যাদি। মহিলাদের ক্ষেত্রে মা, মেয়ে, নাতনী ইত্যাদি। মৃত ব্যক্তি যদি কার ব্যাপারে ওসিয়ত করেন তবে সেটা পূর্ণ করা উত্তম।
৩- মৃত ব্যক্তিকে এমন স্থানে নিয়ে যাবেন যেখানে পানি ঢাললে সমস্যা হয় না। সেক্ষেত্রে আমাদের শহুরে পরিবেশে বারান্দায় নিয়ে যেতে পারেন। অবশ্যই পর্দা টানিয়ে দিবেন। যাতে গোসল করানো ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কেউ লাশ না দেখতে পান।
৪- সতর অংশ ছাড়া বাকীটা অনাবৃত করে নিবেন। মহিলা হলে একটি কাপড় সবসময় দেহের উপর রাখবেন।
৫- লাশকে শোয়া থেকে বসানোর মতো করে একটু উঠাবেন ও পেটে হালকা চাপ দিবেন। যাতে কোন মলমূত্র আটকে থাকলে তা বের হয়ে যায়। পানি দিয়ে উভয় মলমূত্র বের হওয়ার স্থানদুটি ভালোভাবে ধৌত করে নিবেন। সতর না দেখে যতটা সম্ভব ভালো করে ধুবেন। এক্ষেত্রে আপনি হ্যান্ড গ্লাভস পরে নিতে পারেন অথবা হাতকে ন্যাকড়া দিয়ে মুড়িয়ে নিতে পারেন।
৬- বিসমিল্লাহ বলে অযু করিয়ে নিবেন। তবে মুখে ও নাকে পানি দেওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে ভেজা কাপড় দিয়ে মুখের ভেতর ও নাকের ভিতর পরিষ্কার করে দিবেন। যতটুকু পারা যায়।
৭- তারপর মাথার সামনে পেছনে পানি ঢালবেন। সামনের ডান দিকে পানি ঢেলে ধুবেন। লাশটাকে একটু তুলে ধরে ডানদিকের পিঠের অংশে পানি ঢেলে ধুবেন। একইভাবে বাম পাশে সামনের ও পিঠের অংশ ধুবেন। গোসল হয়ে গেল। মোটকথা হলো পুরো শরীরে ভালোভাবে পানি পৌঁছে দিবেন। এভাবে তিনবার করবেন। চাইলে সাবান ইউজ করতে পারেন। শেষবারে যদি থাকে তবে কাপুর মিশ্রিত পানি দিতে পারেন।
৮- এরপর পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিবেন। লজ্জাস্থানের উপর এক খণ্ড শুকনো কাপড় রাখবেন।
৯- মৃতের চুল আঁচড়ানোর দরকার নেই। মহিলাদের ক্ষেত্রে বেণী করে দেওয়া যেতে পারে।
১০- এরপর কাফন পরিয়ে দিতে হবে। কাফনের কাপড় সাদা হওয়া উত্তম। অন্য কিছুও হতে পারে। ফিতা সাতটা নিবেন। কিছু কম-বেশি হলেও সমস্যা নেই।
১১- পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রথমে সাতটি ফিতা একের পর এক রাখতে হবে। তিনটি বড় কাপড় ফিতার উপর রাখবেন। তার তপর লাশ রেখে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নিবেন। এরপর ফিতা দিয়ে বেঁধে ফেলবেন।
১১- কাফনের কাপড় সাদা হওয়া উত্তম। অন্য কিছুও হতে পারে। ফিতা সাতটা না হলেও সমস্যা নেই। তবে বেঁধে ফেলা জরুরি।
১২- মহিলাদের ক্ষেত্রেও একইভাবে হতে পারে। তবে পাঁচটি কাপড় কাফন পরানো উত্তম। সেক্ষেত্রে নিচের দিকে লুঙ্গির মতো করে এখখণ্ড কাপড় জড়ানো হবে। একখণ্ড কাপড় জামার মতো করে মুড়িয়ে দিবেন। ৩য় খণ্ড দিয়ে মাথা মুড়িয়ে দিবেন। বড় দুই খণ্ড দিয়ে পুরো শরীর মুড়িয়ে বেঁধে ফেলবেন।
কিছু সম্পূরক প্রশ্ন
১- যদি গোসলের জন্য কাউকে না পাওয়া যায় তবে কী হবে?
যদি কোন পুরুষকে গোসলের জন্য কোন পুরুষকে ও কোন মহিলাকে গোসলের জন্য কোন মহিলাকে না পাওয়া যায় তবে গোসল দেওয়ার দরকার নেই। সে ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করিয়ে নেবেন। তায়াম্মুম করানোর নিয়ম হলো পরিষ্কার মাটিতে হাত মেরে মৃত ব্যক্তির দুই হাত ও মুখমণ্ডল মাসেহ করে নিবেন।
২- লাশ যদি ছিন্নভিন্ন থাকে?
লাশ যদি ছিন্ন ভিন্ন ও আগুনে পুড়ে যাওয়া হয় সেক্ষেত্রে গোসল দেওয়ার দরকার নেই। গোসল ছাড়াই অঙ্গগুলো (যা পাওয়া যায়) কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। একটা জরুরি বিষয় জানা দরকার। তা হলো শহীদের গোসল। আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যারা শহীদ অর্থাৎ যাদের অন্যায়ভাবে খুন করা হয়েছে তাদের গোসল দেওয়া হবে না। ব্যাপার শুদ্ধ নয়। যারা এরূপ বলেন তাদের দলিল হলো উহুদের যুদ্ধ। ব্যাপারটা ছিল উহুদে মুসলিমদের বিপর্যয় হয়েছিলো। তখন গোসল, কাফন ও দাফনের সঠিক নিয়ম পালন করার সাধ্য ছিলো না।
তাই জরুরি অবস্থায় আল্লাহর রাসূল সা. শহীদদের গোসল, কাফন, জানাজার সালাত ছাড়াই দাফন করেছেন। শুধু তাই নয় এক গর্তে কয়েকজনকে সমাহিত করেছেন। অতএব জরুরি অবস্থা আর স্বাভাবিক অবস্থার দলিল এক হতে পারে না। যারা মনে করেন শহীদদের গোসল দেওয়ার দরকার নেই তাদের কিন্তু কাফন ও জানাজার সালাত বাদ দেওয়ার কথা বলেন না। যাই হোক মূল বিষয় হলো কোন শহীদকে যদি গোসল দেওয়ার পরিবেশ থাকে তবে গোসল দিতে হবে। যদি পরিস্থিতি এমন হয় লাশ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে তাহলে দরকার নেই। এটা শহীদ এবং শহীদ ভিন্ন সবার জন্য একই বিধান। তিন খুলাফায়ে রাশেদা শাহদাতবরণ করার পর প্রত্যেকেরই গোসল দেওয়া হয়েছে।
৩- চুল দাঁড়ি কাটা ও পশম উপড়াতে হবে কি?
না, এমন কাজ করবেন না। চুল দাঁড়ি কাটার দরকার নেই। আর লজ্জাস্থানের পশম উপড়ানো জায়েজ নয়।
৪- লাশের পেট থেকে ময়লা বের হতে থাকলে?
লাশ থেকে যদি ক্ষণে ক্ষণেই ময়লা বের হতে থাকে তবে কাপড় গুঁজে দিয়ে গোসল শেষ করতে হবে।
৫- শিশু বাচ্চার ক্ষেত্রে কে গোসল দিবে?
বাবা-মা দিতে পারলে ভালো। নতুবা নারী-পুরুষ উভয়েই শিশুদের গোসল দিতে পারবে।
বি.দ্র.- উপরোক্ত বিষয়গুলো হাদিস দ্বারা সাব্যস্থ। কেউ যদি আরো বিস্তারিত জানতে চান তবে হাদিস গ্রন্থগুলোর জানাজা অধ্যায় দেখে নিবেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন