আপনারা তো ফ্রি-মেসন, ইলুমিনাতি ইত্যাদি গুপ্ত সংগঠনের সাথে পরিচিত। পৃথিবীর সকল ষড়যন্ত্র নাকি তাদের দ্বারাই হয়। আমরা আজকে জানবো বাংলার ইলুমিনাতি নিয়ে। বাংলার এই গোপন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খান। নোয়াখালীর সন্তান এই সিরাজুল আলম খান পড়েছেন ঢাকা ভার্সিটিতে গণিত বিভাগে। গণিতে পড়লেও গণিতবিদ না হয়ে হয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিক। কমিউনিস্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নিজের মতো করে রাষ্ট্র কল্পনা করেছেন। তাই তিনি সিপিবি বা ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেননি। যোগ দিয়েছেন ছাত্রলীগে।
এর বেসিক কারণ ছাত্রলীগ জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন। তিনি এর মধ্যে থেকেই তার নিজস্ব কর্মী রিক্রুটমেন্ট করতে সুবিধে হবে। ১৯৬১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যেহেতু পাকিস্তান ধর্মীয় জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ রাষ্ট্র। তাই তিনি এখানে নিজেদের মতো করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে। তাই তিনি প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন পূর্ব পাকিস্তানকে পকিস্তান থেকে আলাদা করা। পাকিস্তান থেকে বাংলাকে আলাদা করতে পারলেই কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে।
আজকে যদি একটি রাষ্ট্রের কথা বলতে বলি যে রাষ্ট্রের মানুষ শরিয়াহ আইন চায় তাহলে সবার আগে যে নামটি আসবে সেটি হলো আফগানিস্তান। তবে ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, আমরা যেই সময়ের কথা আলোচনা করছি সেই সময়ে আফগানিস্তানের অধিকাংশই ছাত্র-যুবকরাই কম্যুনিস্ট হয়ে পড়েছে। আশির দশকে তো সেখানে কম্যুনিস্টরা বিপ্লবই করে ফেলেছে। এই উপমহাদেশে কম্যুনিজমের বিরুদ্ধে ছিল হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের সব রাজনৈতিক গোষ্ঠী। তবে কেউই আদর্শিক ও কার্যকরভাবে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে নি। তাদের দর্শনের তাত্ত্বিক মোকাবেলা করেছেন মাওলানা মওদূদী। তার লেখা ও বক্তব্য মুসলিম সমাজে বেশ ভালো প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
আফগানিস্তানে তার শিষ্য তৈরি হয়েছে কাবুল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর বুরহান উদ্দিন রব্বানী। সেখানের মুসলিম যুবকদের বিপথ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। বাংলায় তাঁর শিষ্য তৈরি হয়েছে মাওলানা আব্দুর রহীম, প্রফেসর গোলাম আযম, একেএম ইউসুফ, আব্বাস আলী খান প্রমুখ। আর পাকিস্তানে তো মাওলানা মওদূদী নিজেই ছিলেন। সাথে ছিলো নঈম সিদ্দিকী, মিয়া তুফায়েল মোহাম্মদ, খুররম জাহ মুরাদ ইত্যাদি। পাকিস্তান ও বাংলায় তাই কম্যুনিস্টরা বিপ্লব করতে পারে নি। আফগানিস্তানে বিপ্লব করলেও বুরহান উদ্দিন রব্বানী, আহমদ শাহ মাসউদ, গুলুবুদ্দিন হেকমতিয়ারের চেষ্টায় আবারো আফগানিস্তানের ছাত্র-যুবকরা ইসলামের পথে ফিরে এসেছে, রুশ কম্যুনিস্টদের সাথে যুদ্ধ করেছে, জীবন দিয়েছে এবং ১৯৯২ সালে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।
আমরা আবার আমাদের মূল আলোচনায় ফিরি। সিরাজুল আলম খান প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ হলেও গোপনে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ লালন করতেন। কিন্তু বাংলায় অনেকে কম্যুনিজম আদর্শ লালন করলেও ধর্ম থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি। তাই সিরাজুল আলম ছাত্রলীগ ও শেখ মুজিবের ওপর ভর করেই কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন।
বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক করার লক্ষ্যে তিনি দেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করার বিষয়টা তার প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছেন। ১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হওয়ার পর তিনি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দেন। তার প্রাথমিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি অনেকের সাথে আলাপ করেন। এর মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাথেও তার যোগাযোগ হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে তার সাথে যুক্ত হয়েছে চিত্তরঞ্জন সুতার এবং কালিদাস বৈদ্য। তারা তাকে ভারতের পক্ষ হয়ে পরামর্শ ও তাদের যথাসম্ভব সাহায্য করার অঙ্গীকার করেন।
যদিও ভারতের মূল লক্ষ্য ও সিরাজের মূল লক্ষ্য এক নয়। ভারত কোনোভাবেই বাম আদর্শ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করতে চায় না। তবে ভারত ও সিরাজের প্রাথমিক লক্ষ্য মিলে যাওয়ায় তারা একে অপরের সাথে কাজ করার অঙ্গীকার করে। সিরাজ ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হয়ে সারাদেশ সফর করেন এবং নিজের মতে যাদের আনা যাবে এমন লোক বাছাই করতে থাকেন। ১৯৬১ সালে সিরাজ পরীক্ষামূলকভাবে ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করেন। কয়েকজন সহযোগী নিয়ে এই সংস্থার নামে লিফলেট বিতরণ করেন। তার এই উদ্যোগ ছাত্রসমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তিনি এখান থেকে সরে আসেন। ছাত্রলীগের বহু নেতা তাকে পাতি বিপ্লবী কিংবা রোমান্টিক বিপ্লবী বলে অভিহিত করেছিলো।
এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সিরাজুল আলম খান প্রকাশ্যে আর স্বাধীনতা বা দেশ ভাগ নিয়ে কাজ করেন নি। ১৯৬২ সালে তিনি তৈরি করেছেন ইলুমিতানিদের মতো অথবা হাল আমলের জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর মতো একটি গুপ্ত সংগঠন। যার নাম নিউক্লিয়াস। পুরো নাম স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসের একেবারে শুরুর নেতা হলেন চারজন। সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ ও আবুল কালাম আযাদ। এই সংগঠনের মিটিং সাধারণত হতো কাজী আরেফের বাসায়। নিউক্লিয়াস প্রথমে ধীরে ধীরে ছাত্রলীগ দখল করলো। সিরাজ ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। সবার কাছে স্পষ্টত যেটা মনে হতো ছাত্রলীগে দুইটি উপদল। একটির সিরাজের প্রভাবাধীন। আরেকটি অংশের নেতা শেখ ফজলুল হক মনি।
সিরাজরা চেষ্টা করতো ছাত্রলীগের শাখা পর্যায়ে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা নিক্লিয়াসের মধ্যে থেকে যেন আসে। সেই চেষ্টা করতো। এদিকে সিরাজে বাইরের অংশ শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়ে চিন্তা করতো। ফলে দেখা গিয়েছে কয়েকবছরের মধ্যে নিউক্লিয়াস যেভাবে যাকে চায় সেই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসীন হয়েছে। ব্যতিক্রম ছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল মুজাহিদী। তিনি সিরাজের বলয়ের বাইরে থেকে উঠে আসা নেতা ছিলেন। আর আওয়ামীলীগের মূল দলে সিরাজের লোক ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনিও কমিউনিস্ট ছিলেন। আদর্শ গোপন করে তিনি শেখ মুজিবের একেবারে কাছের লোকে পরিণত হন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের সময় থেকে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের একক নেতায় পরিণত হন।
সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতা নিয়ে বড় নেতাদের মধ্যে শুধু মাওলানা ভাসানীর সাথে যোগাযোগ করেন। মাওলানা ভাসানী চীনপন্থী বাম ছিলেন। সেসময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের সাথে চীনের সম্পর্ক ভালো ছিল। সেই সুবাদে ভাসানী পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার অনুমতি চীন থেকে পান নি। কারণ পাকিস্তান ভাগ ভারতের পক্ষে যাবে যা চীনের জন্য ক্ষতিকর। চীন পাকিস্তানের পক্ষে থাকায় ভাসানী সিরাজের সাথে কাজ করতে পারেননি। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেশভাগ চাইতেন কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠার জন্য।
এরপর সিরাজুল আলম আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খানের সাথে যোগাযোগ করেন তার নেতৃত্বে কাজ করার জন্য। আতাউর রহমান খান সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন কিন্তু তার সাথে কথা বলে সিরাজ নিশ্চিত হয়েছে তিনি পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের কট্টর সমর্থক, একইসাথে কম্যুনিজমের বিরোধী। এই প্রসঙ্গে সিরাজ বলেন আতাউর রহমানের পেছনে তার বহু সময় অপচয় হয়েছে। তাই সিরাজ বাধ্য হয়ে শেখ মুজিবের পক্ষেই থাকেন। তাকে মূল নেতা বানানোর কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তবে সিরাজের ভাষ্যমতে তিনি মুজিবের কাছে তাঁর মূল পরিকল্পনা কখনোই পরিষ্কার করেন নি।
ছয় দফাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগে যখন ভাঙ্গন দেখা দেয় তখন শেখ মুজিবকে একনিষ্ঠ সাপোর্ট দিয়েছেন নিউক্লিয়াস। শেখ মুজিবকে আওয়ামী লীগের একক নেতায় পরিণত করে নিউক্লিয়াস। শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আসলে নিউক্লিয়াস সদস্যরা তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মূল নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতেন। সিরাজের নির্দেশ হলেই কেবল তা বাস্তবায়ন হতো। কারণ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ তখন ছিল সিরাজের কাছে। এদিকে মুজিবও ছিল অসহায়। ছয় দফাকে জনপ্রিয় করতে গিয়ে মুজিব সিরাজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ১৯৬৬ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত সকল ঘটনা ও দুর্ঘটনার সাথে জড়িত থাকে নিউক্লিয়াস। তারা বাংলায় একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়। তাদের স্বার্থে আঘাত এলে বাইরের মানুষকে নির্ভিঘ্নে খুন তো করতোই। সময়ে সময়ে নিজেদের লোককে খুন করতে দ্বিধা করতো না।
৬-দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র, মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন, ১১-দফা আন্দোলন পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করে এই ‘নিউক্লিয়াস’। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গড়ে তোলা হয় ‘নিউক্লিয়াসে’র রাজনৈতিক উইং বি.এল.এফ এবং সামরিক ইউনিট ‘জয় বাংলা বাহিনী’। এর সম্পর্কে একেবারে জানতেন না মুজিব, বিষয়টা এমন ছিল না। মুজিব মনে করতো সে নিউক্লিয়াসকে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে সিরাজ ভাবতো তারা মুজিবকে ব্যবহার করছে। অবশ্য মুজিবকে দিয়ে আগরতলায় ভারতের সাথে ষড়যন্ত্র করা প্রমাণ করে মুজিব নিউক্লিয়াস দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছেন। তবে স্বাধীনতার পর মুজিবকে দিশেহারা করে ফেলে নিউক্লিয়াস। মুজিবও তাদের প্রচুর সদস্যকে খুন করেছে। নিউক্লিয়াসকে পুরো কন্ট্রোলে নিয়ে আসেন জিয়াউর রহমান।
পাকিস্তানী প্রশাসন প্রায়ই নিউক্লিয়াস সদস্যকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করাকালে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে, চোরাচালানে ও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করতো। তবে এর দায় বেশিরভাগ বহন করতে হতো ছাত্রলীগকে। কারণ প্রতিটি নিউক্লিয়াস সদস্য ছাত্রলীগ নেতা বা কর্মী। আরেকটি বিষয় নিউক্লিয়াসকে রক্ষা করেছে সেটা হলো তাদের স্লিপার সেল সিস্টেম। একজন সদস্য শুধুমাত্র তার উর্ধ্বতন ও তার অধস্থনকে চিনতো। এর বাইরে ওপরে শুধু সিরাজ, রাজ্জাক ও কাজী আরেফকে চিনতো। কোনো টিম ওয়ার্কের প্রয়োজন হলে ঐ কাজ পর্যন্তই তাদের যোগাযোগ ছিল। এর বাইরে কেউ কাউকে চিনতো না। তাই পাকিস্তানী প্রশাসন তাদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে পারে নি।
কম্যুনিস্ট বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে ‘জয় বাংলা’ সহ সকল স্লোগান নির্ধারণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে “...এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বাক্যসমূহের সংযোজনের কৃতিত্ব ‘নিউক্লিয়াসে’র। এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভুমিকাই ছিল মুখ্য। ১৯৬৯-’৭০ সনে গন-আন্দোলনের চাপে ভেঙে পড়া পাকিস্তানী শাসনের সমান্তরালে ‘নিউক্লিয়াস’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠন করা হয় ছাত্র-ব্রিগেড, যুব-ব্রিগেড, শ্রমিক-ব্রিগেড, নারী-ব্রিগেড, কৃষক-ব্রিগেড, সার্জেন্ট জহুর বাহিনী। এদের সদস্যরা ভেঙ্গে পড়া পাকিস্তানী শাসনের পরিবর্তে যানবাহন চলাচল, ট্রেন-স্টীমার চালু রাখা, শিল্প-কারখানা উৎপাদন আব্যাহত রাখা এবং থানা পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খ্লা রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে। নিউক্লিয়াসের সদস্যদের দ্বারা এইসব দুরূহ কাজ সাম্পাদনের জন্য কৌশল ও পরিকল্পনাও ‘নিউক্লিয়াস’র।
১৯৬৯ সাল নাগাদ নিউক্লিয়াসের-এর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ হাজারে। ঊনসত্তরের পর তারা আর সদস্য সংখ্যা বাড়ায়নি। শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বহু মানুষকে কাজে লাগিয়েছে। ১৯৭০ এর নির্বাচনে শেখ মুজিবকে জয়ী করতে হেন কাজ বাকী ছিল না যা তারা করেনি। পাকিস্তানের বিগত নির্বাচনগুলোতে কেন্দ্র দখলের মতো ঘটনা ঘটে নি। ১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রথম সিরাজের পরিকল্পনায় নিউক্লিয়াস সদস্যরা কেন্দ্র দখল করে প্রচুর জাল ভোট দেয়। ফলে ন্যাপ, নেজামে ইসলামী ও মুসলিম লীগের বহু জনপ্রিয় নেতা হেরে যায়। নিউক্লিয়াসের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। গুপ্ত সংগঠন নিউক্লিয়াসের দেখানো কেন্দ্র দখলের প্রসেস থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন আর কখনো বের হতে পারেনি।
১৯৭১ সালে পহেলা মার্চ থেকে সারা বাংলায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে নিউক্লিয়াস। সাত মার্চের আগে তারা বহু অবাঙালিকে হত্যা করে। অবাঙালি শিল্পপতিদের সম্পদ লুটপাট করে। তাদের এসব কাজের বড় উদ্দেশ্য ছিল যাতে রাজনৈতিক সমঝোতা না হয়। রাজনৈতিক সমঝোতা না হলেই তাদের দেশভাগ করা সহজ হবে। আর এজন্যই তারা ঝামেলা তৈরি করে। সারা দেশে সেনাবাহিনীর ওপর বিনা কারণে হামলা করে। ২৫ মার্চের আগে যখন ইয়াহিয়া, মুজিব ও ভুট্টো ঢাকায় ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনারত তখন নিউক্লিয়াস বিহারীদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা চেয়েছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীও যাতে পাল্টা একশনে যায়। যাতে গণহত্যার অভিযোগ এনে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনী পাঠাতে পারে।
নিউক্লিয়াস সদস্যের প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় সেনবাহিনীর বিশেষ তত্ত্বাবধানে উন্নত সামরিক ট্রেনিং প্রাপ্ত হন এবং ‘মুজিব বাহিনী’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্ত ১১টি সেক্টরের পাশাপাশি ৪টি সেক্টরে বিভক্ত করে বি.এল.এফ নামে সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা ও কৌশল ছিল কেবল ভিন্ন ধরনের নয়, অনেক উন্নতমানের এবং বিজ্ঞানসম্মত। বিএলএফ এর চার প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমেদ। তবে তারা সর্বাত্মক যুদ্ধে নামার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। নিউক্লিয়াস আরেকটি কাজ করেছে তা হলো ১৪ ডিসেম্বর বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। এসব বুদ্ধিজীবীদের বেশিরভাগ ছিল মাওবাদী অর্থাৎ চীনের পক্ষে। আর চীনের পক্ষে মানেই তারা ছিল পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে।
১৯৭১ সনের ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় উদ্বোধনী সভা স্থগিত ঘোষণার পরপরই ২রা মার্চ বাংলাদেশর প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণসহ ৩রা মার্চ ‘স্বাধীন বাংলার ইশতেহার’ ঘোষণার পরিকল্পনাও ‘নিউক্লিয়াসে’র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে এই দুটি কাজ ছিলো প্রথম দিক নির্দেশনা। আর এই দুই গুরুদায়িত্ব পালন করেন নিউক্লিয়াসের আ.স.ম আবদুর রব এবং শাজাহান সিরাজ। নতুন দেশের নাম 'বাংলাদেশ' হবে এ সিদ্ধান্তও সিরাজুল আলম খানের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ও নিউক্লিয়াসের শীর্ষ নেতাদের দ্বারা অনুমোদিত।
এই লেখটির কিছু রেফারেন্স পেলে ভালো হতো।
উত্তরমুছুনমাওলানা ভাসানী আলেম হওয়ার পরেও বাম রাজনীতিতে কেন জড়ালেন?
উত্তরমুছুনরেফারেন্স থাকলে বিষয়গুলো বুঝতে সহজ হতো....
উত্তরমুছুন