২১ অক্টো, ২০২০

শরয়ী দৃষ্টিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ


ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র বেসিক্যালি দুই প্রকার। দারুল ইসলাম ও দারুল হারব।  ফিকহবিদেরা দারুল হারবকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। দারুল আমান ও দারুল হারব। 

তাহলে রাষ্ট্রের তিনটি প্রকার পাওয়া গেল। 

১- দারুল ইসলাম 

২- দারুল আমান 

৩- দারুল হারব 

দারুল ইসলাম

দারুল ইসলাম হলো সেই রাষ্ট্র যেই রাষ্ট্রের মূলনীতি হলো ইসলাম। সেই রাষ্ট্র আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রের সকল বিচার-ফয়সালা ইসলাম অনুযায়ী হয়ে থাকে। এই রাষ্ট্রের প্রকৃত উদাহরণ হলো মদিনাতুন্নবি। এরপর খুলাফায়ে রাশেদার সময়কাল। দারুল ইসলামের অনুত্তম উদাহরণ হলো আব্বাসীয় খিলাফত, উমাইয়া খিলাফত, তুর্কি খিলাফত ইত্যাদি। বর্তমানে দারুল ইসলামের অধম উদাহরণ সৌদি আরবসহ কিছু রাষ্ট্র, যেখানে মূলনীতি ইসলাম কিন্তু শাসক জালিম ও ক্ষেত্রবিশেষে ইসলামকে অনুসরণ করে না। 

দারুল আমান

দারুল আমান হলো সেই রাষ্ট্র যেখানে ইসলাম ও মুসলিমরা নিরাপত্তা পায়। ইসলাম প্রচারের সুযোগ পায়। কিন্তু রাষ্ট্রের বিধিবিধান ইসলামসম্মত নয়। রাষ্ট্রের মূলনীতিও ইসলাম নয়। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব সেখানে প্রতিষ্ঠিত নয়। আল্লাহর রাসূল সা.-এর সময়ে এরকম রাষ্ট্রের উদাহরণ হলো আবিসিনিয়া (ইথিওপিয়া)। বর্তমানে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা এই জাতীয় রাষ্ট্র। 

দারুল হারব    

দারুল হারব সেইসব রাষ্ট্র যেখানে মুসলিমরা নির্যাতিত হয়। তাদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়। মুসলিম হওয়ায় তারা নাগরিক ও মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহর রাসূল সা.-এর সময়ে এর উদাহরণ হলো মক্কা নগরী। বর্তমানে আরাকান, ভারত, ফিলিস্তিন, সিংকিয়াং ইত্যাদি। 

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আমাদের রাষ্ট্রের কাঠামো দারুল ইসলামের দিকে পরিবর্তিত করা। আমরা যদি দারুল ইসলামে থাকি তবে তা রক্ষা করা আমাদের ওপর ফরজ। যদি দারুল আমানে থাকি তবে তাও রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের কাঠামো দারুল ইসলাম থেকে দারুল আমানের দিকে অথবা দারুল হারবের দিকে পরিবর্তিত করা কুফরি ও আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। 

যদি কখনো দারুল ইসলামে ও দারুল আমানে জালিম শাসক প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে শাসকের সমালোচনা করাও জরুরি। একজন মুসলিমের দায়িত্ব সে জালিম শাসকের সামনে হক কথা বলবে। কিন্তু জালিম শাসক থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে দারুল হারবের সহায়তা নিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তন করে দারুল হারবে চলে যাওয়া কুফরি। 

১৯৪৭-১৯৭১ সালের পাকিস্তানকে দারুল ইসলাম আমি বলবো না। তবে নিঃসন্দেহে দারুল আমান বলা যায়। এই অঞ্চলের মুসলিমদের নিরাপত্তায় এই রাষ্ট্রের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনীয়তা নেই। গত শতাব্দিতে যখন সারা পৃথিবীতে মুসলিমরা পরাজিত হচ্ছিল সেই সময়ে ইসলামের নাম নিয়ে এই রাষ্ট্র কুফরি শক্তিগুলোর চক্ষুশূল হয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আর এর জন্য অকাতরে রক্ত দিয়েছে মুসলিমরা। ভারতের মুশরিকরা লক্ষাধিক মুসলিমকে খুন করেছে।  

যদিও এই রাষ্ট্র ইসলামের নাম নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে পরে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠা করতে রাজি হয় নি সেক্যুলাররা। এর জন্য আলেমদের আন্দোলন করতে হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আলেমরা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন করে। ফলশ্রুতিতে এই রাষ্ট্রের মূলনীতিতে ইসলাম নির্ধারিত হয়। ৪৭-৭১ এই সময়ে পাকিস্তানের শাসকদের মধ্যে যারা স্বৈরাচারী ও ইসলামবিরোধী আচরণ করেছে তাদের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল জামায়াতে ইসলামী। এই কারণে জামায়াত দুইবার নিষিদ্ধ হয়। একবার সরকার প্রধান ছিল বাঙালি মোহাম্মদ আলী বগুড়া অন্যবার সরকার প্রধান ছিল পশতুন আইয়ুব খান।  

যখন ইয়াহিয়া, জুলফিকার ও মুজিব সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করছে তখন মুক্তিযোদ্ধারা সারাদেশে নির্দোষ ও অরাজনৈতিক বিহারীদের ওপর গণহত্যা চালায়। এর ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা ঘোষণা করে দারুল হারব ভারতের সহায়তা নিয়ে। ভারতের এই সহায়তা হুট করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নেয়া হয়নি। বরং ভারতের সহায়তায় ১৯৬২ সাল থেকে পাকিস্তানে এই পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালানো হয়েছে। 

দারুল আমান পাকিস্তান ভেঙে দারুল হারব ভারতের করদ রাজ্য বানানো এদেশের মানুষ কখনোই ভালো চোখে দেখে নি। আর এদেশের আলেম সমাজ তো এটিকে ভালো চোখে দেখার, একে সমর্থন করার অথবা এর প্রতি ভালোবাসা দেখানোর প্রশ্নই আসে না। আলেম সমাজ এমন কাজ করেননি, দু'একজন বাদে। 

ভারতের সহায়তায় যাদের নেতৃত্বে দেশ ভাগ হয়েছে তারা বিজয়ের পর এদেশ থেকে ইসলামকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে। দেশের মূলনীতিসহ সমস্ত স্থান থেকে ইসলাম বাদ দিয়েছে। দেশের মূলনীতি গ্রহণ করেছে কম্যুনিজম ও সেক্যুরালিজমকে। সারা দেশে ইসলামপন্থীরা গুম খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ দারুল হারবে পরিণত হয়েছে। 

১৯৭৫ এর পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে দারুল আমানের দিকে পরিবর্তিত হয়েছে। আজও যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্বাসী তারা এদেশের মানুষের মধ্যে ইসলামের প্র্যাকটিস দেখে আতংকিত হয় এবং ইসলামের চেতনাকে রুখে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর এতো বেশি উদাহরণ আছে যে, সেটার তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নেই। 

দুঃখজনক ব্যাপার হলো আজকে কিছু মানুষ সেসময়ের আলেমদের চরিত্র হনন করছে। তারা বলতে চায় সেসময় বাংলাদেশকে দারুল আমান থেকে দারুল হারবে পরিণত করার পেছনে কিছু প্রখ্যাত আলেমের ভূমিকা রয়েছে। যা নিতান্তই মিথ্যা ও বানোয়াট। কোনো আলেম আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণার মতো কাজ করতে পারে না। তবে তাই বলে ব্যাতিক্রম থাকবে না তা তো নয়। ব্যাতিক্রম হয়তো ছিল শাহবাগী মাওলানা ফউ মাসুদের মতো। তবে সেটা নিতান্তই হাতে গোণা।

৩টি মন্তব্য:

  1. পাকিস্তানি জালিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যে হারাম যে বলবে সে কতটুকু ইসলাম বোঝে তা বোঝা হয়ে যায়! পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলার মুসলিম জনতার বিরুদ্ধে যত জুলুমই করুক না কেন তাদের কিছু বলা যাবে না! দেশ ভাগ করা যাবে না! এসব আজাইরা ছ্যাবলামি মার্কা ফতোয়া গোলাম আজম,কাদের মোল্লা টাইপ তথকথিত আলিম নামের জালিমরাই দিতে পারে! পাকিস্তানের দালালদের থেকে এরচেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না! এরা ইসলামের কোন অথোরিটি না! বাংলাদেশে সেই সময়ের সবচেয়ে বড় আলিম হাফেজ্জি হুজুর রহ. পাকিস্তানের বর্বরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাঙালী ধর্মপ্রাণ জনতাকে ইন্সপায়ার করেছিলো। যেসব আলিম বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতেন ও দুনিয়ার খবর রাখতেন তারা সবাই বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন করেছিলো। দেওবন্দের মেইন্সট্রিম উলামারা সব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলো। এখন হাফেজ্জি হুজুরকে তোরা ইন্ডিয়ার দালাল বানাবি! এই হাফেজ্জি হুজুরের মত একজন আলিম,উপমহাদেশে ইসলামের কান্ডারী, তোদের জামাত শিবিরে শত বছরেও একজন আসে নাই! আর পাকিস্তানক দারুল আমান যে সেন্সে বললি সেই সেন্সে বাংলাদেশকেও দারুল আমান বলা যায়! বরং পাকিস্তান বাংলাদেশের তুলনায় আরও বড় খারাপ। আমেরিকার সহযোগী আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে!
    শালা জামাইত্তা খবীশ! সবকিছুতে ভারতের ষড়যন্ত্র মারাস!

    উত্তরমুছুন
  2. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন