মুহাম্মদ সা. যখন মদিনায় এলেন তখন তাঁর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মদিনার বিভিন্ন টাইপের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করা ও তাদেরকে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য করানো। কারণ মুসলিম ছাড়া বাকিরা মুহাম্মদ সা.-কে নিরঙ্কুশভাবে নেতা মানেন নি। মহানবী সা. তাই সেই সময়ে আরবে চলতে থাকে গোত্রভিত্তিক রাজনীতির বাইরে একটি নতুন ধারা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। এর দ্বারা কোনো গোত্র নয় বরং যোগ্য ব্যাক্তি রাষ্ট্রের নেতৃত্বে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। রাসূল সা. গোত্র পরিচয়ে বড় হওয়া, অহংকার করা ও গোত্রের জন্য যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। একে তিনি নোংরা কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই আসাবিয়্যাত বা জাতীয়তাবাদ শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বড় অন্তরায়। আল্লাহর রাসূল সা.-এর ব্যবস্থা ৪০ বছর পর্যন্ত বহাল ছিল। আলী রা.-এর শাহদাতের মধ্য দিয়ে আবারো আসাবিয়্যাত ও রাজতন্ত্রের উত্থান হয়েছে মুসলিমদের মধ্যে। এখান থেকে আমাদের বিচ্যুতি শুরু হয়েছিল।
এখন আল্লাহর রাসূল সা.-এর সামনে অনেক গোত্রের তিন টাইপের মানুষ অবস্থান করছিল
১. মক্কা, মদিনা ও আরবের বিভিন্ন স্থানের মুসলিম
২. আওস ও খাজরাজ গোত্রের মুশরিক
৩. মদিনার ইহুদী গোত্র
নবী সা. এই বিভিন্ন টাইপের মানুষগুলোকে একীভূত করতে একটি সংবিধান প্রনয়ণ করেন তাঁর বিজ্ঞ সাহাবী ও বিভিন্ন গোত্রের নেতাদের সহযোগে। যার ফলে প্রত্যেক টাইপের মানুষ অনুভব করতে সক্ষম হয়েছে এই আধুনিক রাষ্ট্র শুধুমাত্র মুসলিমদের অথবা মুহাম্মদ সা.-এর নয়, বরং মদিনায় অবস্থানকারী সবারই এই রাষ্ট্র। আল্লাহর রাসূল সা.-এর সেই সংবিধান কার্যকর হওয়ায় কয়েক বছরের মধ্যেই ২য় টাইপের মানুষ অর্থাৎ আওস ও খাজরাজ গোত্রের মুশরিকরা হারিয়ে গেছে। তারা সবাই ইসলামের ছায়াতলে সমবেত হয়েছেন। এই সংবিধান মদিনা সনদ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত ও সমাদৃত।
সংবিধান প্রস্তুত করার আগে মহানবী সা. নতুন রাষ্ট্রের অফিস ও সেন্টার তৈরি করেছিলেন। যেহেতু তাঁর উট আবু আইয়ুব আনসারীর বাড়ির সামনে যে স্থানে থেমেছে তাই সেখানের সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু করলেন। সেন্টার স্থাপন হওয়া পর্যন্ত নবী সা. আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর বাড়িতে মেহমান হিসেবে থেকেছেন।
যেখানে নবী সা. উট থেমেছিলো সেই জমির মালিক ছিল দু'জন ইয়াতিম বালক। মুহাম্মদ সা. তাদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সেই জমিন ক্রয় করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এই নির্মাণ কাজে সমগ্র মুসলিম কাজ করেছেন। আল্লাহর রাসূল নিজেও পাথর টেনেছেন। মসজিদ নির্মাণ কাজে শ্রমিকের কাজ করেছিলেন। মসজিদের দরজার দুটি পিলার ছিলো পাথরের। দেয়ালসমূহ কাঁচা ইট এবং কাদা দিয়ে গাথা হয়েছিলো। ছাদের উপর খেজুর শাখা ও পাতা বিছিয়ে দেওয়া হলো, তিনটি দরজা লাগানো হলো, কেবলার সামনের দেওয়াল থেকে পেছনের দেয়াল পর্যন্ত একশত হাত দৈর্ঘ্য ছিলো, প্রস্থ ছিলো এর চাইতে কম। ভিত্তি ছিলো প্রায় তিন হাত গভীর।
নবী সা. মসজিদের অদূরে কাঁচা ঘর তৈরি করলেন নিজের জন্য। এই ঘরের দেয়াল খেজুর পাতা ও শাখা দিয়ে তৈরি। এরপর তিনি আবু আইয়ুব আনসারীর বাসা থেকে নিজের বাসায় উঠলেন। নির্মিত মসজিদ শুধু নামাজ আদায়ের জন্য ছিলনা। বরং এটি ছিল একটি কমপ্লেক্স। এখান থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হতো তাই এটি ছিল সদর দফতর। এখানে সাহাবারা ইসলাম, ধর্মীয় আচার, রাজনীতি, রাষ্ট্র ও আইন সম্পর্কে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করতেন তাই এটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে রাষ্ট্রের যাবতীয় বিচার-সালিশ হতো তাই এটি ছিল বিচারালয়। এখানে অসহায়, দরিদ্র ও বঞ্চিতদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হতো তাই এটি ছিল পুনর্বাসন কেন্দ্র। এখানে রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও আইন পাশ হতো তাই এটি ছিল মজলিশে শুরা বা সংসদ ভবন।
একটি দুঃখজনক বিষয় না বললেই নয়, আমরা আমাদের মসজিদগুলোকে বিরানভূমি বানিয়ে ফেলেছি। আমাদের ওপর সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ চেপে বসেছে। আল্লাহর রাসূল সা. মসজিদকে বানিয়েছিলের রাজনীতি ও সমাজের কেন্দ্রবিন্দুতে। আর আমরা মসজিদকে বানিয়েছি ব্যক্তিগত ইবাদতের স্থান হিসেবে। জেনে রাখবেন আল্লাহর রাসূল সা. মসজিদভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অর্থাৎ সমাজের রাজনীতি এখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে। এটাই ইসলামী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। কেউ যদি মসজিদকে শুধুমাত্র নামাজের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে তবে সে আল্লাহর রাসূল সা.-এর চেতনার পরিপন্থী।
আমাদের অনেক মসজিদে লেখা থাকে 'মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম'। এটা কী দলিলের ভিত্তিতে হারাম বলা হয় তা আমার জানা নেই। দুনিয়াবী কথা বলতে যদি অপ্রয়োজনীয় ও ফাহেশা কথা বুঝানো হয় তবে তা মসজিদ ও মসজিদের বাইরে সর্ব অবস্থায় হারাম। মসজিদে আলাদাভাবে হারাম বলার মাধ্যমে মসিজিদের বাইরে এটাকে জায়েজ করার অপচেষ্টা হিসেবে ধর্তব্য হবে। আর এটা দিয়ে যদি দুনিয়ার ব্যবসায়িক ঝামেলা, মামলা মোকদ্দমা, রাজনীতি ইত্যাদি বুঝানো হয়ে থাকে তবে আল্লাহর রাসূল সা. এসব কাজের সুরাহা মসজিদে বসেই করতেন। তবে মসজিদকে কেউ যাতে তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জায়গা না বানায় সেজন্য রাসূল সা. মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। এটা এমন জায়গা যেখানে সব মুসলিম আসবে আমি যদি সে সুযোগে এখানে পণ্য বিক্রি করি তাহলে এটা নিন্দনীয়।
আমাদের মসজিদ থেকে যে রাজনীতি দূর হয়ে গেছে এর জন্য দায়ি সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলো। তারা রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলাম পরিপন্থী বহু বিষয়কে জায়েজ হিসেবে সাব্যস্থ করেছে। ইসলামের এই বিকৃতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি আলেম সমাজ। যাদের থেকে মুসলিমরা ইসলামের জ্ঞান লাভ করে। একেকজন মুহাদ্দিস, মুফতি কুরআন ও হাদিস পড়েন ও শিক্ষা দেন অথচ দিনশেষে বলেন, আমরা রাজনীতি করি না। ওয়াল্লাহি! আল্লাহর রাসূল সা. তাঁর সারাজীবন রাজনীতি করে গেছেন। তাঁর প্রধান সাহাবীরা রাজনীতি করে জীবন পাড়ি দিয়েছেন। তাহলে এই আলেমরা কীভাবে নায়েবে রাসূল হয়? আল্লাহ তায়ালা এই আলেম নামধারীদের হিদায়াত দান করুন। ইসলামের পথে প্রত্যাবর্তন করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফেল নন”। [সূরা বাক্বারা, আয়াত ৮৫]।
আমাদের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে নবী সা. আগেই ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, মুয়াজ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, "সাবধান! ইসলামের চাকা ঘূর্ণায়মান, তোমরাও ইসলামের সাথে ঘুরতে থাকবে। সাবধান! অচিরেই কুরআন ও ক্ষমতা আলাদা হয়ে পড়বে, অর্থাৎ ধর্ম থেকে রাষ্ট্র অচিরেই পৃথক হয়ে যাবে। তোমরা আল্লাহর কিতাব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ো না। সাবধান! অচিরেই তোমাদের ওপর এমন শাসক চেপে বসবে যারা নিজেদের জন্য এমন ফয়সালা করবে যা তোমাদের জন্য করবে না। তোমরা যদি তাদের আনুগত্য না করো তারা তোমাদের হত্যা করবে, আর যদি আনুগত্য করো তবে তোমাদের পথভ্রষ্ট করবে।
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, আমরা তখন কি করব ইয়া রাসূলুল্লাহ?
রাসূলুল্ললাহ সা. বলেন, "তোমরা তা করবে যা করেছেন ঈসা ইবনে মরিয়ম আ.-এর অনুসারীগণ। করাত দিয়ে তাদেরকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং শূলে চড়ানো হয়েছে (এরপরও তারা আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে আসেনি)। আল্লাহর নাফরমানী করে বেঁচে থাকার চেয়ে তাঁর আনুগত্যের পথে মারা যাওয়া অনেক শ্রেয়।
যাই হোক, আল্লাহর রাসূল সা. এরপর নয়া সংবিধান রচনার দিকে মনোনিবেশ করলেন। তিনি তিন টাইপের মানুষকে একটি রাষ্ট্রীয় বন্ধনের মধ্যে আবদ্ধ করতে চাইলেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। সেই সাথে ঘটে গেল ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি হলো প্রথম লিখিত সংবিধান। এর মাধ্যমে রাসূল সা. আধুনিক রাষ্ট্রের সূচনা করলেন যার ভিত্তি হলো ইসলাম।
মদিনার সংবিধানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ
১. মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন।
মুসলিমরা মোটা দাগে দুই ধরণের ছিলেন। একপক্ষ হলেন মুহাজির, যারা মক্কা থেকে খালি হাতে এসে মদিনায় আশ্রয় নিয়েছেন। অপরপক্ষ হলেন আনসার, যারা মদিনার অধিবাসী। নবী সা. এই দুই পক্ষকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলেন। প্রতিটি মুহাজিরের জন্য একজন আনসার ভাই নির্দিষ্ট করে দিলেন। জাহেলী যুগের রীতিনীতি অবসান ঘটিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং বর্ণ, গোত্র, আঞ্চলিকতার পার্থক্য মিটিয়ে দেওয়াই ছিলো এ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের উদ্দেশ্য।
স্বাধীন ও দাস ব্যক্তি কখনো ভাই হয়ে গলায় গলায় ভাব হতে পারে এরকম অভিনব দৃশ্য আরববাসী এই প্রথম দেখতে পেল। আনসাররা তাদের সম্পত্তি ভাগ করে মুহাজির ভাইকে দিয়ে দিল। এমনি অনেকে তাদের একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে একজনকে তালাক দিয়ে ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। ঘর বানিয়ে দিল। আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যকার এ ভ্রাতৃত্ব বন্ধন এক অনন্য রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার প্রমাণ। সেই সময় মুসলমানরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, এই ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন ছিল তার একটি চমৎকার সমাধান।
২. মুসলিমদের থেকে ইসলামের প্রতি সহযোগিতার অঙ্গীকার
ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক ছাড়াও নবী সা. মুসলমানদের জন্য আরেকটি অঙ্গীকারনামা প্রণয়ন করেন। এর মাধ্যমে জাহেলী যুগের সকল দ্বন্দ্ব সংঘাত ও গোত্রীয় বিরোধের ভিত্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। নতুন জাতীয়তা পরিচয় 'মুসলিম' দেওয়া হয়। সকল মুসলিমের এক জাতি এক উম্মাহ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা ও রাষ্ট্রের বিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে আল্লাহর নবী সা.-এর আনুগত্যের বাইয়াত নেওয়া হয়।
৩. বিধর্মীদের অধিকার নিশ্চিত
মদিনাবাসীদের মধ্যে যারা এখনো মুশরিক রয়ে গেছেন তাদের ধর্ম পালনের অধিকার। রীতি রেওয়াজ পালনের অধিকার তাদের নিরাপত্তা ও বসবাসের পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়। বিনিময়ে তারা রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকবে। রাষ্ট্রের শত্রুদের সহায়তা করবে না। রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে একযোগে শত্রুর সাথে লড়াই করবে এই অঙ্গিকার নেওয়া হয়।
৪. ইহুদিদের সাথে চুক্তি সম্পাদন
আল্লাহর রাসূল সা. ইহুদিদের ব্যাপারে সাবধানী ছিলেন। তারা যাতে নতুন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে না যায় তাই তিনি শুরুতেই তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন। সেখানে তাদের নিজেদের ধর্ম পালন, ব্যবসায়ের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি দেওয়া হয়। বিনিময়ে তাদের থেকে মদিনা রক্ষার নিশ্চয়তা ও রাষ্ট্রের শত্রুদের সহযোগিতা করা ও চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। এর মাধ্যমে রাসূল সা. নিশ্চিত হতে চেয়েছেন তারা যাতে রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকে ও হটকারিতা না করতে পারে।
এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর মদিনা এবং তার আশে পাশের এলাকা নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। সেই রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল মদিনা। রাসূল সা. ছিলেন সেই রাষ্ট্রের প্রধান। এর মূল কর্তৃত্ব ছিল মুসলমানদের হাতে। এভাবে পৃথিবীর বুকে ইসলামী স্টেট প্রতিষ্ঠা লাভ করলো। এই চারটি পদক্ষেপের মিলিত নাম হলো মদিনা সনদ।
পাকিস্তানের ইসলামিক স্কলার তাহির আল ক্বাদরি এই মদিনা সনদকে ক্যাটাগরিভিত্তিক ভাগ করে একটি সুন্দর রূপ দান করেন। তিনি মদিনা সনদকে ৬৩ টি আর্টিকেলে ভাগ করেন। নিচে তা উপস্থাপন করা হলো।
আর্টিকেল ১ : সাংবিধানের মূলনীতি :
এই সংবিধান আল্লাহর তায়ালার নির্দেশে রাসূল সা. কর্তৃক প্রণীত।
আর্টিকেল ২ : সংবিধানের অধিভুক্ত পক্ষসমূহ :
কুরাইশ মুসলিম, মদীনার নাগরিক, তাদের অধীনস্থ গোত্রসমূহ যারা রাজনৈতিকভাবে তাদের সাথে যুক্ত হবে এবং তাদের হয়ে যুদ্ধ করবে।
আর্টিকেল ৩ : সাংবিধানিক জাতীয়তা :
উপরোল্লিখিত পক্ষসমূহ একটি সাংবিধানিক ঐক্যের ভিত্তিতে পরিচিত হবে যা অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ থেকে তাদের আলাদাভাবে পরিচিত করবে।
আর্টিকেল ৪ : রক্তমূল্য পরিশোধের পূর্ববর্তী গোত্রীয় আইন :
মুহাজির কুরাইশগণ আগেকার বিধিবিধান মোতাবেক তাদের গোত্রের জন্য দায়বদ্ধ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যৌথভাবে রক্তঋণ পরিশোধ করবে এবং প্রতিটি পক্ষই মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের বন্দীদের মুক্ত করে নিবে এবং বিশ্বাসীদের মাঝে যাবতীয় লেনদেন হবে বিদ্যমান আইন মোতাবেক এবং ইনসাফের ভিত্তিতে।
মুহাজির কুরাইশগণ আগেকার বিধিবিধান মোতাবেক তাদের গোত্রের জন্য দায়বদ্ধ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যৌথভাবে রক্তঋণ পরিশোধ করবে এবং প্রতিটি পক্ষই মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের বন্দীদের মুক্ত করে নিবে এবং বিশ্বাসীদের মাঝে যাবতীয় লেনদেন হবে বিদ্যমান আইন মোতাবেক এবং ইনসাফের ভিত্তিতে।
আর্টিকেল ৫ : বনি আউফ গোত্রের জন্যও একই কথা
আর্টিকেল ৬ : বনি হারিস গোত্রের জন্যও একই কথা
আর্টিকেল ৭ : বনি সাঈদা গোত্রের জন্যও একই কথা
আর্টিকেল ৮ : বনি জুশাম গোত্রের জন্যও একই কথা
আর্টিকেল ৯ : বনি নজর গোত্রের জন্যও একই কথা
আর্টিকেল ১০ : বনি আমর গোত্রের জন্যও একই কথা
আর্টিকেল ১১ : বনি নাবীত গোত্রের জন্যও একই কথা
আর্টিকেল ১২ : বনি আউস গোত্রের জন্যও একই কথা
আর্টিকেল ১৩ : আইন ও সুবিচারের সমতা সকল গোত্রের জন্য প্রযোজ্য :
সকল গোত্রকে বন্দীমুক্তি দেয়ার অধিকার দেয়ার মাধ্যমে বিশ্বাসীদের প্রতি আইনের সমতা এবং সুবিচার নিশ্চিত করা হলো।
আর্টিকেল ১৪ : আইনে শিথিলতা নিষিদ্ধ :
বিশ্বাসীরা নিজেদের মাঝে কোনো ঋণগ্রস্থ রাখবে না, সাধ্যমতো তাকে মুক্তিপণ পরিশোধ করতে সহায়তা করবে।
আর্টিকেল ১৫ : অন্যায় পক্ষপাত নিষিদ্ধ :
কোনো বিশ্বাসী অন্য কোন বিশ্বাসীর সাথে তার মতামত না নিয়ে কোনো অ্যালায়েন্স করবে না।
আর্টিকেল ১৬ : অবিচার, নিষ্ঠুরতা এবং আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ :
মদীনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিরোধিতাকারী বা জোরপূর্বক কোনো কিছু জবরদখল করার চেষ্টারত বা বিশ্বাসীদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী’ এদের বিরুদ্ধে সকল বিশ্বাসী একসাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। যদি সেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী তাদের কারো সন্তানও হয়ে থাকে।
আর্টিকেল ১৭ : একজন মুসলিম কর্তৃক আরেকজন মুসলিম হত্যা করা নিষিদ্ধ :
একজন অবিশ্বাসীর জন্য কোন মুসলিম অপর কোনো মুসলিমকে হত্যা করবে না; এমনকি কোন বিশ্বাসীর বিরুদ্ধে কোনো অবিশ্বাসীকে সাহায্যও করবে না।
আর্টিকেল ১৮ : সকল মুসলিমের জন্য জানের নিরাপত্তার সমঅধিকারের নিশ্চয়তা :
আল্লাহ কর্তৃক সবার নিরাপত্তা সমানভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই সংবিধান সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, এর জন্যে সকল বিশ্বাসীকে সর্বোচ্চ পরিমাণে বিনয়ী হতে হবে।
আর্টিকেল ১৯ : অন্যান্য সাংবিধানিক কমিউনিটির চেয়ে মুসলিমদের আলাদা সাংবিধানিক পরিচয় :
বিশ্বাসীরা এক উম্মাহ ও মুসলিম হিসেবে পরিচিত হবে। একে অপরকে সাহায্য করবে বহির্বিশ্বের বিপরীতে।
আর্টিকেল ২০ : অমুসলিম ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী (ইহুদি)-এর জন্যও জীবনের নিরাপত্তার সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ :
রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল একজন ইহুদির জীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হলো যে পর্যন্ত না তিনি বিশ্বাসীদের জন্য ক্ষতিকর কিছু না করেন বা বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে বাইরের কাউকে সাহায্য না করেন।
আর্টিকেল ২১ : সমতা এবং ইনসাফের ভিত্তিতে সকল মুসলিমের জন্য শান্তি এবং নিরাপত্তার বিধান :
বিশ্বাসী কর্তৃক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা সবার জন্য সমান। যখন আল্লাহর রাস্তায় কোন জিহাদের প্রয়োজন হবে কোন বিশ্বাসী শত্রুপক্ষের সাথে আলাদাভাবে কোন চুক্তিতে যাবে না, যদি না সেটা সকল বিশ্বাসীদের জন্য সমতা এবং নায্যতা প্রতিষ্ঠা করে।
আর্টিকেল ২২ : যুদ্ধের সহযোগী পক্ষগুলোর জন্য ছাড় :
যুদ্ধের প্রতিটি পক্ষের জন্যই যুদ্ধের যাবতীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ ছাড়।
আর্টিকেল ২৩ : আল্লাহর রাস্তায় হতাহতের বিরুদ্ধে মুসলিমদের প্রতিশোধ :
আল্লাহর রাস্তায় নিহতদের প্রতিশোধ নিতে বিশ্বাসীরা একে অপরকে সাহায্য করবে।
আর্টিকেল ২৪ : ইসলাম জীবনের পূর্ণাঙ্গ বিধান :
তাকওয়াসম্পন্ন বিশ্বাসীদের জন্য উৎকৃষ্ট এবং সবচেয়ে সঠিক জীবন পদ্ধতি ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।
আর্টিকেল ২৫ : শত্রুপক্ষকে জীবনের এবং সম্পদের নিরাপত্তা দেয়া নিষেধ :
কোন মুশরিক কুরাইশকে আশ্রয় দেওয়া যাবে না। এমনকি কোন বিশ্বাসীর বিরুদ্ধে তাদের সহায়তাও প্রদান করা হবে না।
আর্টিকেল ২৬ : মুসলিম হত্যার প্রতিশোধ :
যখন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুসলিমকে হত্যা করে এটা সত্য প্রমাণিত হলে সেই হত্যাকারীকেও হত্যা করা হবে। যদি না নিহতের আত্মীয়-স্বজন জানের বদলা হিসেবে রক্তমূল্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন।
আর্টিকেল ২৭ : সংবিধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী বা ধ্বংসকারীদের ক্ষেত্রে কোন সুরক্ষা বা ছাড় নেই :
যারা বিশ্বাসী, এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং পরকালে বিশ্বাস করে এবং এই দলিলের সব ধারার সাথে সম্মতি জানিয়েছে তারা এই সংবিধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী বা এই সংবিধান অকার্যকর করার সাথে যুক্ত এমন কাউকে কোনরূপ সুরক্ষা বা ছাড় দেবে না।
আর্টিকেল ২৮ : মুসলিমদের মধ্যে দ্বিমত বা বিতর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের :
যখন তোমাদের মাঝে কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিবে, তখন সেটি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কাছে সেটি পেশ করবে। যেহেতু সকল বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই দেবেন।
আর্টিকেল ২৯ : অমুসলিম মানে ইহুদিগণ যুদ্ধের ব্যয়ভার সমানুপাতিক হারে বহন করবে :
ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ইহুদিগণ যতক্ষণ তাদের সাথে একসাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে, সমানুপাতিক হারে যুদ্ধের ব্যয়ভার এবং দায়দায়িত্ব বহন করবে।
আর্টিকেল ৩০ : সকল মুসলিম এবং অমুসলিমদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা :
বনি আউফ গোত্রের ইহুদিগণ বিশ্বাসীদের সাথে মিলে একটি কমিউনিটি হিসেবে বিবেচিত হবে। মুসলিমদের সাথে সাথে তাদেরও পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। তাদের এবং তাদের সহযোগী সবার জন্যই এই অধিকার সুনিশ্চিত করা হলো, তাদের ছাড়া যারা অন্যের ওপর বলপ্রয়োগকারী অপরাধী এবং যারা এই চুক্তি ভঙ্গকারী। এভাবে তারা শুধুমাত্র নিজেদের এবং তাদের পরিবারের প্রতি দুর্ভোগ বয়ে আনবে।
আর্টিকেল ৩১ : বনি নজর গোত্রের ইহুদিগণেরও বনি আউফ গোত্রের মতো সমান অধিকার ভোগ করবে।
আর্টিকেল ৩২ : বনি হারিস গোত্রের ইহুদিগণেরও বনি আউফ গোত্রের মতো সমান অধিকার ভোগ করবে।
আর্টিকেল ৩৩ : বনি সাঈদা গোত্রের ইহুদিগণেরও বনি আউফ গোত্রের মতো সমান অধিকার ভোগ করবে।
আর্টিকেল ৩৪ : বনি জুশাম গোত্রের ইহুদিগণেরও বনি আউফ গোত্রের মতো সমান অধিকার ভোগ করবে।
আর্টিকেল ৩৫ : বনি আউস গোত্রের ইহুদিগণেরও বনি আউফ গোত্রের মতো সমান অধিকার ভোগ করবে।
আর্টিকেল ৩৬ : বনি থা’লাবা গোত্রের ইহুদিগণেরও বনি আউফ গোত্রের মতো সমান অধিকার ভোগ করবে।
আর্টিকেল ৩৭ : বনি থা’লাবার উপগোত্র জাফনার ইহুদিগণেরও বনি আউফ গোত্রের মতো সমান অধিকার ভোগ করবে।
আর্টিকেল ৩৮ : বনি শুতাইবা গোত্রের ইহুদিগণেরও বনি আউফ গোত্রের মতো সমান অধিকার ভোগ করবে।
আর্টিকেল ৩৯ : থা’লাবা গোত্রের সকল সহযোগীদের অধিকারের সমতা নিশ্চিত করা হলো।
আর্টিকেল ৪০ : ইহুদি সকল শাখার জন্য অধিকারের সমতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো।
আর্টিকেল ৪১ : সশস্ত্র যুদ্ধে যাবার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং আদেশ দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহর রাসূল-এর :
আল্লাহর রাসূল সা.-এর পূর্বানুমতি ছাড়া কেউ সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করতে পারবে না। যেহেতু যুদ্ধের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার অথরিটি কেবলমাত্র রাসূল সা.।
আর্টিকেল ৪২ : প্রতিশোধের ক্ষেত্রে কোন ব্যতিক্রম নেই :
কেউ কোন যৌক্তিক প্রতিশোধ বা খুনের বদলা নিতে চাইলে সেখানে কোনরূপ বাধা প্রদান করা হবে না।
আর্টিকেল ৪৩ : বেআইনি হত্যার দায় দায়িত্ব :
কেউ যদি বেআইনিভাবে কাউকে খুন করে তবে সে এবং তার পরিবার এর জন্য দায়ী হবে, তবে সে যদি কোন নিষ্ঠুর বা অত্যাচারী কাউকে খুন করে সেক্ষেত্রে ছাড় পেতে পারে। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এই সনদের আনুগত্যকারীদের সাথে আছেন।
আর্টিকেল ৪৪ : পৃথকভাবে যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করা :
মুসলিম এবং ইহুদিগণ পৃথকভাবে নিজ নিজ যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করবে।
আর্টিকেল ৪৫ : যুদ্ধের সময় একে অপরকে সহায়তা করা অবশ্য কর্তব্য :
এই সনদে স্বাক্ষরকারীদের সাথে যারা যুদ্ধরত তাদের বিরুদ্ধে সকলের পারস্পরিক সহায়তা করা অবশ্যকর্তব্য।
আর্টিকেল ৪৬ : পারস্পরিক আলোচনা এবং সম্মানজনক লেনদেন :
এই চুক্তিনামায় স্বাক্ষরদানকারী প্রতিটি পক্ষ নিজেদের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া বজায় রাখবে এবং সম্মানজনকভাবে লেনদেন করবে এবং নিজেদের মাঝে করা সকল প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকবে।
আর্টিকেল ৪৭ : বিশ্বাসঘাতকতা নিষিদ্ধ এবং নিপীড়িতদের সহযোগিতা প্রদান :
কেউ মিত্রপক্ষের জন্য কোন চুক্তি ভঙ্গ করবে না এবং নিপীড়িতদের সাহায্য করা হবে।
আর্টিকেল ৪৮ : ইহুদিগণ যুদ্ধের সময়ে রাষ্ট্রের প্রতি আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়াবে :
মুসলিমদের পাশাপাশি ইহুদিরাও যুদ্ধের সময়ে রাষ্ট্রকে দেয়া আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়াবে।
আর্টিকেল ৪৯ : রাষ্ট্রে বিদ্যমান বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ এবং রক্তপাত নিষিদ্ধ :
ইয়াসরিব উপত্যকা পবিত্র ভূমি, সেখানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গোত্রের মাঝে যুদ্ধ এবং রক্তপাত নিষিদ্ধ করা হলো।
আর্টিকেল ৫০ : সনদের অধীনে আশ্রয় নেয়া জনগণের সমভাবে জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা :
কোন ব্যক্তিকে মদীনায় আশ্রয় দেয়া হলে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ক্ষতিকর কিছু করছে বা বিশ্বাসঘাতকতা করছে ততক্ষণ পর্যন্ত জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে তারও সমান অধিকার।
আর্টিকেল ৫১ : নারীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে আইন :
একজন নারীকে তার পরিবারের সম্মতি ছাড়া আশ্রয় দেয়া হবে না।
আর্টিকেল ৫২ : কোন মতবিরোধ সংঘাতের দিকে পৌঁছালে আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসূল-ই হবেন এর চূড়ান্ত ফায়সালাকারী :
যখনই এই সনদে স্বাক্ষরকারী দলসমূহের মধ্যে কোন মতপার্থক্য চরমে পৌঁছালে, সংঘাতের দিকে যাবার আশঙ্কা তৈরি হলে সেটার বিচারের ভার আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ওপর ন্যস্ত করা হবে। রাসূল-ই চূড়ান্ত এবং সর্বোচ্চ মানদণ্ডের সঠিক সমাধান দিবেন।
আর্টিকেল ৫৩ : শত্রুরাষ্ট্রের কাউকে বা তাদের কোন মিত্রকে কোন আশ্রয় নয় :
কুরাইশ এবং তার মিত্রদের কোনো আশ্রয় দেয়া হবে না।
আর্টিকেল ৫৪ : রাষ্ট্রের ওপর কোন আঘাত আসলে সম্মিলিত প্রতিরোধ :
বাহির থেকে মদীনা রাষ্ট্রের ওপর কোন আঘাত আসলে মুসলিম এবং ইহুদিগণ সম্মিলিতভাবে সেটা প্রতিরোধ করবে।
আর্টিকেল ৫৫ : প্রতিটি মিত্র গোত্রের জন্য শান্তিচুক্তি মেনে চলা অবশ্যকর্তব্য :
ইহুদিদের কোন শান্তিচুক্তিতে আহ্বান জানানো হলে এটা তাদের দায়িত্ব যে তারা সেটি পালন করবে এবং এর সাথে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধভাবে যুক্ত থাকবে। একইভাবে মুসলিমদের কোন শান্তিচুক্তিতে আহ্বান জানানো হলে এটা তাদের দায়িত্ব যে তারা সেটি পালন করবে এবং এর সাথে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধভাবে যুক্ত থাকবে।
আর্টিকেল ৫৬ : ধর্মপালনে বাধা দেওয়া হবে না :
চুক্তিবদ্ধ প্রতিটি পক্ষ তাদের নিজেদের ধর্ম পালন করতে পারবে। এতে কেউ বাধা দেবে না।
আর্টিকেল ৫৭ : প্রতিটি মিত্রপক্ষ তাদের নিজ নিজ সম্মুখভাগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে :
চুক্তিতে স্বাক্ষররত প্রতিটি পক্ষ তাদের নিজ নিজ সম্মুখভাগের সমরনীতি নিজেরাই নির্ধারণ করবে এবং কীভাবে নিজেদের রক্ষা করবে সে ব্যাপারে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে।
আর্টিকেল ৫৮ : স্বাক্ষরকারী প্রত্যেকটি দলের জন্যই মূল সাংবিধানিক মর্যাদা সমান :
আউস গোত্র এবং তাদের মিত্র সকল ইহুদিগণ এই সংবিধানে স্বাক্ষরকারী অন্য দলগুলোর মতো সমানভাবে সাংবিধানিক মর্যাদা পাবে এই শর্তে যে তারা নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
আর্টিকেল ৫৯ : সংবিধান অবমাননা করার কোন অধিকার কোন পক্ষের নেই :
বিদ্যমান কোন দলেরই সংবিধান অবমাননা করার কোন অধিকার নেই। কেউ যদি কোন অপরাধ করে তাহলে সে নিজেই এর জন্য দায়ী।
আর্টিকেল ৬০ : সংবিধানের প্রতি আনুগত্যশীলদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা দয়াশীল :
যারা বিশ্বস্ততার সাথে এই সংবিধানের প্রতি আনুগত্যশীল থাকবে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি সবসময়ে সদয় থাকবেন।
আর্টিকেল ৬১ : কোন বিশ্বাসঘাতক বা বলপ্রয়োগকারীর জন্য এই সংবিধানের অধীনে কোনো আশ্রয় নেই :
এই মর্মে বলা হচ্ছে যে এই সংবিধান কোন বিশ্বাসঘাতক বা অন্যায়ভাবে বলপ্রয়োগকারীকে কোন সুরক্ষা দিবে না।
আর্টিকেল ৬২ : সকল শান্তিপূর্ণ নাগরিক নিরাপদ এবং সুরক্ষিত :
যারা যুদ্ধে যাবে বা যারা মদীনায় অবস্থান করবে সবার জন্যই নিরাপত্তা, শুধুমাত্র তাদের ছাড়া যারা গোলযোগ সৃষ্টি করছে এবং সংবিধান মেনে চলছে না।
যারা যুদ্ধে যাবে বা যারা মদীনায় অবস্থান করবে সবার জন্যই নিরাপত্তা, শুধুমাত্র তাদের ছাড়া যারা গোলযোগ সৃষ্টি করছে এবং সংবিধান মেনে চলছে না।
আর্টিকেল ৬৩ : সংবিধানের প্রতি আনুগত্যশীল :
মদীনার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সা. হলেন রক্ষাকর্তা। এ মর্মে ঘোষণা করা হচ্ছে যে, আল্লাহ এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল সা. মদীনার সুনাগরিক এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের রক্ষাকর্তা।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন