দুই দফায় প্রায় শ'খানেক মুসলিম আবিসিনিয়ায় হিজরত করলেন। এটা ছিল রাসূল সা.-এর সফল রাজনৈতিক পদক্ষেপ। এরপর সেখানের বাদশাহের কাছে কুৎসা রটনার জন্য ও মুসলিমদের ফিরিয়ে আনার জন্য দুইজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে ব্যর্থ ও অপমানিত হয় মুশরিকরা। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মক্কার মুশরিক নেতারা। এর চাপ পড়ে মুহাম্মদ সা, আবু বকর রা. ও আলী রা.সহ কিছু সাহাবীর ওপর। এই সময় বহুবার রাসূল সা. আবু জাহলের আক্রমণের শিকার হন।
নবুয়তের ষষ্ঠ বছরে একদিন সাফা পাহাড়ের দারুল আরকামে যাওয়ার পথে আবু জাহলের সাথে মুখোমুখি হন মুহাম্মদ সা.। রাসূল সা. দারুল আরকাম যাতে চিহ্নিত না হয় সেজন্য সাফা পাহাড়ের পাদদেশেই অবস্থান করেন। এই সময় আবু জাহল রাসূল সা.-কে নানাবিধ অশ্লীল গালাগাল করতে থাকে। রাসূল সা. নীরব রইলেন। এরপর সন্ত্রাসী আবু জাহল আল্লাহর রাসূল সা. মাথায় পাথর নিক্ষেপ করলো। এতে তাঁর মাথা ফেটে রক্ত বের হলো।
এরপর আবু জাহল কাবার সামনে মুশরিকদের মজলিশে গিয়ে বসলো এবং এই ঘটনা খুব রসিয়ে বর্ণনা করতে লাগলো। রাসূল সা.-এর দূরাবস্থা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে লাগলো। একজন দাসী মুহাম্মদ সা.-এর ওপর নির্যাতনের এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেন। এই সময় রাসূল সা.-এর চাচা হামজা রা. শিকার করে ফিরছিলেন। সেই দাসী তাকে সব কথা জানালেন। হযরত হামজা ক্রোধে অস্থির হয়ে উঠলেন। তিনি ছিলেন কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষ। তিনি দেরি না করে সামনে পা বাড়িয়ে বললেন, আবু জাহলকে যেখানেই পাবো সেখানেই আঘাত করবো।
এরপর তিনি সোজা কাবাঘরে প্রবেশ করে আবু জেহেলের সামনে গিয়ে বললেন, তুই আমার ভাতিজাকে গালি দিচ্ছিস! আঘাত করছিস! অথচ আমিও তো তার প্রচারিত দ্বীনের অনুসারী। একথা বলে হাতের ধনুক দিয়ে আবু জাহলের মাথায় এতো জোরে আঘাত করলেন যে, মাথায় মারাত্মক ধরনের জখমে হয়ে গেল। এ ঘটনার সাথে সাথে আবু জেহেলের গোত্র বানু মাখযুম এবং হযরত হামজা রা.-এর গোত্র বানু হাশেমের লোকেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হয়ে গেল। আবু জাহল এই বলে সবাইকে থামিয়ে দিল যে, ওকে কিছু বলো না। আমি তার ভাতিজাকে আসলেই খুবই খারাপ গালি দিয়েছিলাম।
নিজের ভাতিজাকে গালি দেওয়ায় ধৈর্যহারা হয়ে রাগের মাথায় হামজা রা. ঈমানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে আল্লাহ তায়ালা তার অন্তর খুলে দেন, তিনি ইসলামের বলিষ্ঠ প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। তার কারণে মুসলমানরা যথেষ্ট শক্তি লাভ করেন এবং স্বস্তি অনুভব করেন। এই দিন থেকে মুহাম্মদ সা.-এর ওপর শারিরীক নির্যাতন বন্ধ হয়।
এর কয়েকদিন পর হযরত উমার রা.-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ঘটে। রাসূলুল্লাহ সা. তার ইসলাম গ্রহণের জন্যে দেয়া করেছিলেন। তিনি দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! উমার ইবনে খাত্তাব এবং আমর ইবনে হিশামের (আবু জাহল) মধ্যে তোমার কাছে যে ব্যক্তি বেশি পছন্দনীয় তাকে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ দাও এবং তার দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করো। আল্লাহ তায়ালা এ দোয়া কবুল করেন এবং হযরত ওমর রা. ইসলাম গ্রহণ করেন।
উমার রা. নিজের পূর্বপুরুষদের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। খেলাধুলার প্রতিও তার যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। অন্যদিকে ঈমান ও আকীদার প্রতি মুসলমানদের দৃঢ়তা এবং অত্যাচার নির্যাতনের মুখেও মুসলমানদের ধৈর্য সহিষ্ণুতা তিনি আগ্রহের দৃষ্টিতে দেখতেন। তিনি মাঝে মাঝে গভীরভাবে ভাবতেন যে, ইসলাম ধর্মে যে বিষয়ে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে সম্ভবত সেটা সত্য, অধিক পবিত্র ও উন্নত। এ কারণে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হঠাৎ হঠাৎ ক্ষেপে গেলেও আবার শান্ত হয়ে যেতেন।
আবিসিনিয়ার নাজ্জশীর কাছে মুশরিকদের অপমানিত হওয়ার ঘটনায় উমার রা. মুহাম্মদ সা.-এর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। একদিন তিনি খবর পেলেন মুহাম্মদ সা. তাঁর কিছু সঙ্গীদের নিয়ে একটি বাড়িতে (দারুল আরকাম) সমবেত হয়েছেন। যুবকদের মাথা নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ এনে উমার রা. খোলা তলোয়ার হাতে নিয়ে বেরিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সা. কে খুন করার উদ্দেশ্যে। পথে এক ব্যক্তির সাথে উমার রা.-এর দেখা হয়।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “এভাবে কোথায় যাচ্ছ উমার?”
- “আমি ঐ বিধর্মী মুহাম্মাদের সন্ধানে যাচ্ছি, যে কুরাইশদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, তাদেরকে বেকুফ সাব্যস্ত করেছে, তাদের ধর্মের নিন্দা করেছে এবং তাদের দেবদেবীকে গালি দিয়েছে। আমি তাকে হত্যা করবো।”
- “উমার, তুমি নিশ্চয়ই আত্মপ্রবঞ্চিত হয়েছো। তুমি কি মনে কর যে, মুহাম্মাদকে হত্যা করার পর বনু আবদে মানাফ তোমাকে ছেড়ে দেবে এবং তুমি অবাধে বিচরণ করতে পারবে? তুমি বরং নিজের ঘর সামলাও।
- “কেন, আমার গোষ্ঠীর কে কি করেছে?”
- “তোমার ভগ্নিপতি ও চাচাতো ভাই সাঈদ এবং তোমার বোন ফাতিমা। আল্লাহর শপথ, ওরা উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। তারা মুহাম্মাদের ধর্মের অনুসরণ করে চলেছে। কাজেই পারলে আগে তাদেরকে সামলাও।”
এ কথা শোনামাত্রই উমার রা. তার বোনের ঘরে ছুটলেন। তখন সেখানে খাব্বাব রা.-ও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কাছে পবিত্র কুরআনের অংশবিশেষ ছিল যা তিনি সাঈদ দম্পতিকে পড়াচ্ছিলেন। ঐ অংশে সূরা ত্বহা লেখা ছিল। তাঁরা উমারের আগমন টের পেলেন। খাব্বাব রা. লুকিয়ে গেলেন। ফাতিমা কুরআন শরীফের অংশটুকু লুকিয়ে ফেললেন। উমার গৃহে প্রবেশের প্রক্কালে শুনছিলেন যে, খাব্বাব কুরআন পড়ে তাঁদের দু’জনকে শোনাচ্ছেন।
তিনি প্রবেশ করেই বললেন, “তোমরা কি যেন পড়ছিলে শুনলাম।” সাঈদ ও ফাতিমা উভয়ে বললেন, “তুমি কিছুই শোননি।” উমার বরলেন, “আল্লাহর শপথ, আমি শুনেছি, তোমরা মুহাম্মাদের ধর্ম গ্রহণ করেছো এবং সেটাই অনুসরণ করে চলছো।” এ কথা বলেই ভগ্নিপতি সাঈদকে একটা চড় দিলেন। ফাতিমা উঠে এসে স্বামীকে তার প্রহার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে লাগলেন। উমার ফাতিমাকে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, তিনি আহত হলেন।
উমারের এই বেপরোয়া আচরণ দেখে তারা উভয়ে বললেন,“হ্যাঁ, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আল্লাহ ও তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি। এখন আপনি যা খুশী করতে পারেন।” উমার তাঁর বোনের দেহে রক্ত দেখে নিজের উগ্র আচরণের জন্য অনুতপ্ত হলেন। তারপর অনুশোচনার সুরে বোনকে বললেন, আচ্ছা, তোমরা যেটা পড়ছিলে, সেটা আমাকে দাও তো। আমি একটু পড়ে দেখি মুহাম্মাদ কি বাণী প্রচার করে?”
ফাতিমা বললেন, “আমাদের আশংকা হয়, তুমি তা নষ্ট করে ফেলবে।”
উমার দেবদেবীর শপথ করে বললেন, “তুমি ভয় পেও না। আমি ওটা পড়ে অবশ্যই ফিরিয়ে দেব।” একথা শুনে বোনের মনে এই মর্মে আশার সঞ্চার হলো যে, তিনি হয়তো ইসলাম গ্রহণ করবেন। তাই তিনি বললেন, “ভাইজান, আপনি মুশরিক হওয়ার কারনে অপবিত্র। অথচ এই বই স্পর্শ করতে হলে পবিত্রতা অর্জন করা প্রয়োজন।”
উমার তৎক্ষনাৎ গিয়ে গোসল করে পবিত্র হয়ে আসলেন। ফাতিমা এবার কুরআনের সেই খন্ডাংশ দিলেন। এথম থেকে কিছুটা পড়েই বললেন, “কি সুন্দর কথা! কি মহান বানী!”
আড়াল থেকে এ কথা শুনে খাব্বাব রা. বেরিয়ে এসে বললেন, “উমার মনে হয় আল্লাহ তার নবীর দোয়া কবুল করে তোমাকে ইসলামের জন্য মনোনীত করেছেন। গতকাল তিনি দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমর ইবনে হিশাম অথবা উমার ইবনুল খাত্তাবের দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি কর।’ হে উমার, তুমি আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও, তুমি আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও!”
উমার তখন বললেন, “হে খাব্বাব, আমাকে মুহাম্মাদের সন্ধান দাও। আমি তাঁর কছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করি।” খাব্বাব বললেন, “তিনি সাফা পর্বতের নিকট একটা বাড়িতে কিছুসংখ্যক সাহাবার সাথে অবস্থান করছেন।”
উমার তাঁর তলোয়ার কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাদের সন্ধানে চললেন। যথাস্থানে গিয়ে দরজায় করাঘাত করলেন। আওয়াজ শুনে একজন সাহাবা উঠে এসে জানালা দিয়ে তাঁকে দেখলেন। সেখলেন উমার তরবারী হাতে দাঁড়িয়ে। তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, উমার দরজায় তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।”
হামজা রা. বললেন, “তাকে আসতে দাও। যদি ভালো উদ্দেশ্যে এসে থাকে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো। আর যদি খারাপ উদ্দেশ্যে এসে থাকে তবে তাঁর তরবারী দিয়েই তাকে হত্যা করবো।”
রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, “তাকে আসতে দাও।” তিনি উমারকে ভেতরে যেতে অনুমতি দিলেন। রাসূলুল্লাহ সা. উঠে উমারের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং কক্ষের ভেতরে তাকে সাক্ষাত দান করলেন। মুহাম্মদ সা. বললেন, “হে খাত্তাবের পুত্র, কি উদ্দেশ্যে এসছো?
উমার বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের প্রতি ঈমান আনার জন্যই এসছি।”
একথা শোনামাত্র রাসূলুল্লাহ সা. এমন জোরে ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন যে, সাহাবাদের সবাই বুঝতে পারলো যে, উমার ইসলাম গ্রহণ করেছে। হামজার পরে উমারের ইসলাম গ্রহণে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাহাবাগণের মনোবল বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেল। তাঁরা নিশ্চিত হলেন যে, এই দু’জন এখন মুশরিকদের যুলুম-নির্যাতন প্রতিরোধ করতে পারবেন এবং তারা সবাই ওদের দু’জনের সহযোগিতায় মুসলমানদের শত্রুদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন।
উমার রা. বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর সেই রাতেই চিন্তা করতে লাগলাম যে, মক্কাবাসীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সবচেয়ে কট্টর দুশমন কে আছে। আমি তার কাছে যাবো এবং আমার ইসলাম গ্রহণের কথা তাকে জানাবো। আমি স্থির করলাম যে, আবু জাহলই বড় দুশমন। অতঃপর সকাল হতেই আমি তার বাড়িতে গিয়ে দরজা নক করলাম। আবু জাহল বেরিয়ে আমার সামনে আসলো। সে বললে, “ভাগ্নে, তোমাকে খোশ আমদেদ জানাচ্ছি। কি মনে করে এসছো?”
আমি বললাম, “আপনাকে জানাতে এসেছি যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মুহাম্মাদের প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর আনীত বিধান ও বাণীকে মেনে নিয়েছি।” এ কথা শোনামাত্র সে আমার মুখের ওপর এই বলে দরজা বন্ধ করে দিল, “আল্লাহ তোকে কলংকিত করুক, যে খবর তুই এনছিস তাকেও কলংকিত করুক।”
হামজা রা. ও উমার রা. এর ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহর রাসূল সা. একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন। ইতোমধ্যে তিনি মক্কার সকল মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন। এবার তিনি শক্তি প্রদর্শনের কথা চিন্তা করলেন। এই প্রসঙ্গে উমার রা. বলেন,
//আমি ইসলাম গ্রহন করে প্রিয় নবী সা.-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, মরে যাই বা বেঁচে থাকি, আমরা কি হক এর ওপর বিদ্যমান নেই?
রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, কেন নয়? সেই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, মুশরিকদের সাথে সংঘাতে তোমরা বেঁচে থাকো বা মরে যাও, নিশ্চয়ই তোমরা হক এর ওপর রয়েছো।
এরপর আমি বললাম, তাহলে আমরা কেন পালিয়ে বেড়াবো? সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, নিশ্চয়ই আমরা বাইরে বের হবো।//
এরপর মুহাম্মদ সা. সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা একটি মিছিল সহযোগে কা'বা চত্বরে যাবেন এবং সেখানে সমাবেশ করবেন। মুসলিমরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে মিছিল করে আল্লাহর রাসূল সা. সঙ্গে নিয়ে বাইরে বের হলো। তাঁরা তাকবির ধ্বনি দিতে লাগলেন। এই মিছিল ও তাকবির ধ্বনি মুশরিকদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করেছে।
এই প্রসঙ্গে উমার রা. বলেন, আমরা দুই কাতারে বিভক্ত হয়ে মিছিল শুরু করলাম। এক কাতারে ছিলেন হামজা, অন্য কাতারে আমি, আমাদের চলার পথে যাঁতার পেষা আটার মতো ধুলো উড়ছিলো। আমরা মসজিদে হারামে প্রবেশ করলাম। মুশরিকরা আমাদের মিছিল দেখে মনে এত বড় কষ্ট পেলো, যা ইতিপূর্বে পায়নি। সেই দিন কা'বা চত্বরে রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে 'ফারুক' উপাধি দিলেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এর আগে আমরা কাবাঘরের কাছে নামায আদায়ে সক্ষম ছিলাম না। সুহাইব রুমি রা. বলেন, হযরত উমার ফারুক রা. মুসলমান হওয়ার পর ইসলাম পর্দার বাইরে এলো এবং ইসলামের দাওয়াত প্রকাশ্যে দেয়া শুরু হলো। আমরা কাবাঘরের সামনে গোল হয়ে বসতে লাগলাম এবং কাবাঘর তওয়াফ করতে লাগলাম, যারা আমাদের ওপর এতোদিন বাড়াবাড়ি করেছিলো, তাদের উপর আমরা এভাবেই প্রতিশোধ নিলাম এবং অত্যাচারের জবাব দিলাম।
মুসলিমদের এভাবে শক্তি বৃদ্ধিতে মুশরিকরা হতাশ হয়ে পড়লো। এরপর তারা আবার সমঝোতা ও আপোষের প্রস্তাব নিয়ে আসলো। কুরাইশ প্রতিনিধি দল আবু তালেবের কাছে গিয়ে আলোচনা করলো। তারা বলল, হে আবু তালিব! আমাদের কাছে আপনার যে মর্যাদা রয়েছে, সেটা আপনার অজানা নয়, আপনার ভাতিজার সাথে আমাদের বিরোধ আপনার অজানা নয়। আমরা চাই আপনি তাকে ডেকে তার সাথে আমাদের একটা সমঝোতার ব্যবস্থা করুন। আমরা তার সাথে কিছু অঙ্গীকারে আবদ্ধ হতে এবং তাকেও কিছু অঙ্গীকারে আবদ্ধ করতে চাই। আমরা তাকে তার দ্বীনের উপর ছেড়ে দেব, তিনিও যেন আমাদেরকে আমাদের দ্বীনের ওপর ছেড়ে দেন।
আবু তালিব মুহাম্মদ সা.-কে ডেকে আনালেন। তিনি আসার পর বললেন, দেখ ভাতিজা ওরা তোমার কওমের সম্মানিত লোক। তোমার জন্যই ওরা একত্রিত হয়েছে, তোমার কাছ থেকে ওরা কিছু অঙ্গীকার নিতে চায়, এরপর আবু তালেব ওদের উত্থাপিত প্রস্তাব পেশ করলেন। ওরা চায়, তুমি তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে বলবে না এবং ওরাও তোমার ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।
একথা শুনে মুহাম্মদ সা. মুশরিক প্রতিনিধিদলকে বললেন, আপনারা বলুন আমি যদি এমন কোন কথা পেশ করি, যে কথা গ্রহন করলে আপনারা আরবের বাদশাহ হবেন এবং অনন্যা অনারবরা আপনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তখন আপনারা কী করবেন?
এই প্রস্তাব শোনার পর কোরাইশ প্রতিনিধি দল থমকে গেল। তারা অবাক হয়ে ভাবতে লাগল যে, মাত্র একটি কথা মেনে নিলে এত বড় লাভ যদি হয়, তবে সেটা কিভাবে উপেক্ষা করা যায়? আবু জাহল বললো, বলো সেই কথা, তোমার পিতার শপথ, এ ধরনের কথা একটি কেন দশটি বললেও আমরা মানতে প্রস্তুত রয়েছি। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, আপনারা বলুন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তারা অবাক হয়ে বললো, মুহাম্মাদ! আমরা এক খোদা মানবো? আসলেই তোমার ব্যাপার স্যাপার বড় অদ্ভুত।
এরপর তারা একে অন্যকে বলল, খোদার কসম, এই লোক তোমাদের কোন কথাই মানতে রাজি নয়, কাজেই এসো আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের ধর্মবিশ্বাসের ওপর অটল থাকি। আল্লাহই ওর এবং আমাদের মধ্যে একটা ফয়সালা করে দেবেন। একথা বলে তারা উঠে চলে গেল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন