১৯ মে, ২০২১

চলমান হামাস-ইসরাঈল যুদ্ধে বড় প্রাপ্তি তিনটি




আমার বিবেচনায় চলমান হামাস-ইসরাঈল যুদ্ধে বড় প্রাপ্তি তিনটি

১. ট্রাম্পের 'জেরুজালেম শান্তি প্রক্রিয়া' অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া।

ট্রাম্প তার শাসনামলের শুরু থেকেই জেরুজালেম শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে। এই কাজ করার মানে হলো ইসরাঈলকে সুবিধা দেওয়া ও ফিলিস্তিন তথা হামাসকে নিরস্ত্র করা। এই শান্তি প্রক্রিয়ার ধারাগুলো জনগণের কাছে গোপন রেখে ট্রাম্প চেয়েছিলো আরব রাষ্ট্রপ্রধানদের একমত করতে।

সৌদি, মিশর, জর্ডান, আরব আমিরাত রাজি হয়ে গিয়েছিল। বাকী ছিল সিরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিনী দলগুলো। সিরিয়ায় ইরান ব্লকের আসাদ জিতে যাওয়ায় সিরিয়ার সমর্থন পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

লেবাননের সা'দ হারিরিকে সৌদির এমবিএস আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাকে গৃহবন্দী করে তার থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা ও লেবাননে শিয়া-সুন্নি যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ট্রাম্প ও এমবিএস। তবে লেবাননের সব পক্ষ (শিয়া, সুন্নি ও খৃস্টান) তাদের সেই চেষ্টাকে ব্যাহত করে দেয়।

ফিলিস্তিনের মাহমুদ আব্বাসকে রাজি করাতে চাপ দেয় ট্রাম্প ও এমবিএস। তাকেও সা'দের মতো আটকানোর চেষ্টা করে। তবে মাহমুদ আব্বাস দৃঢ়ভাবে তা মুকাবিলা করে। মাহমুদ আব্বাস রাজি না হওয়ায় হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যায় নি।

এই প্রক্রিয়া দ্রুত আগাচ্ছিল। এর সূত্র ধরে তুরস্ক, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর চাপ আসে যাতে তারা ইসরাঈলকে স্বীকৃতি দেয়। চাপটা পাকিস্তানের ওপর বেশি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সৌদি-পাকিস্তানের সম্পর্কও বারবার বিনষ্ট হচ্ছিল। অর্থনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তানের সৌদি নির্ভরতার সুযোগ নিতে চেয়েছিলো এমবিএস। সেটা সফল হতে যাচ্ছিল।

এই প্রক্রিয়া কন্টিনিউ হলে সব মুসলিম রাষ্ট্র ধীরে ধীরে ইসরাঈলকে বৈধতা দিত এবং সেইদিকেই আগাচ্ছিল। চলমান যুদ্ধে এই প্রক্রিয়া শুধু থেমে যাবে না বরং যারা আগে শান্তি প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলো তারা তা উইথড্রো করবে।

কমেন্টে ট্রাম্পের শান্তি প্রক্তিয়ার ধারাগুলো দেওয়া হবে।

২. আয়রন ডোমের জারিজুরি ফাঁস

২০০৬ সাল থেকে ইসরাঈল তাদের আকাশের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আয়রন ডোম নামে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দাঁড় করায়। ২০১১ সালে তারা এর মাধ্যমে পুরো ইসরাঈলের আকাশ সীমার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইসরাঈলকে সুপার পাওয়ারে পরিণত করে। কোনো মিসাইল ইসরাঈলের অভ্যন্তরে আর আঘাত হানতে পারবে না।

এটি কাজ করতো এমনভাবে, কোনো মিসাইল যখন ইসরাঈলের আকাশের দিকে আসতো তখনই রাডার তা ডিটেক্ট করতো। সেই মিসাইলের গতি ও অবস্থান নির্ণয় করে আয়রন ডোম নিজেই একটা মিসাইল ছুঁড়ে ঐ মিসাইলকে আকাশে বিস্ফোরিত করে দিত।

এই প্রযুক্তির ফলে হামাসের স্বল্প পাল্লার রকেটগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। হামাস এতে হতাশ না হয়ে তাদের রকেটের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে। কারণ হামাস উপলব্ধি করেছে এই আয়রন ডোম পরিচালনা বাবদ ইসরাঈলকে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হবে।

আগে হামাসের রকেটগুলো লক্ষ্যভেদ হতো না, সমুদ্রে পড়তো, নানানভাবে নষ্ট হতো। কিন্তু এখন হামাসের প্রতিটি রকেটের পেছনে ইসরাঈলের একটি মিসাইল ধ্বংস হয়। হামাসের রকেটের ব্যয় সর্বোচ্চ ৮০০ ডলার। অন্যদিকে ইসরাঈলের প্রতিটি মিসাইলের ব্যয় ৫০০০০ ডলার। এখন দেখা যাচ্ছে হামাসের রকেট যেগুলো আয়রন ডোম ভেদ করে আঘাত হানতে সক্ষম হচ্ছে সেগুলো যত ক্ষতি করছে তার চাইতে বেশি ক্ষতি হচ্ছে যেগুলো আয়রন ডোম আটকে দিচ্ছে। হামাসের একটি রকেটেও বৃথা যাচ্ছে না।

হামাসের এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে যে, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে আয়রন ডোম চালাতে সক্ষম হবে না ইসরাঈল। এই প্রসঙ্গে ইসরাঈলী নীতি নির্ধারকেরাও ইতোমধ্যে একই কথা বলেছে।

৩. সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া মুক্তি নেই, এই উপলব্ধি।

ফিলিস্তিনের মুসলিমরা নানান দলে বিভক্ত। এর মধ্যে অনেকেই ভাবতো রাজনৈতিকভাবেই ইসরাঈলের সাথে মীমাংসা হতে পারে। এটা যে হবে না, সেই উপলব্ধি এখন সবার হয়েছে। এবার যুদ্ধে ফিলিস্তিনের সব পক্ষই জয়েন করেছে। ইসরাঈল গাজা ও হামাস নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকার সুবিধা নিয়ে পশ্চিম তীরের গ্রুপগুলো ইসরাঈলের সীমানাবর্তী শহরগুলোতে মহড়া চালাচ্ছে। আর হামাসও তার দূরপাল্লার রকেটগুলো পরীক্ষা চালাচ্ছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন