তখন ৮ম হিজরি। মুসলিমদের জয় জয়কার। আয়িশা রা. বলেন, খায়বারের ইহুদিদের পরাজিত করার পর আমাদের মনে এরূপ আশা জন্মেছে যে, আমরা এখন থেকে পেটপুরে খেতে পারবো, আমাদের অভাব থাকবে না। আরবের রাজনীতি বেশিরভাগই এখন মুহাম্মদ সা.-এর নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে জর্ডানের বালকা থেকে একটি দুঃসংবাদ আসলো। মুসলিমদের দূতকে হত্যা করা হয়েছে।
মুহাম্মদ সা. হারিস ইবনে উমায়ের রা.-কে পাঠিয়েছেন জর্ডানের বালকাসহ আরো কয়েকটি রাজ্যে। এই অঞ্চল রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। বালকার গভর্নর ছিল শুরাহবিল ইবনে আমর গাসসানি। হারিস রা. যখন তার কাছে ইসলাম গ্রহণ অথবা মুহাম্মদ সা.-এর অনুগত হওয়ার আহবান জানিয়ে মুহাম্মদ সা.-এর চিঠি দেয় তখন সে অত্যন্ত রাগান্বিত হয়। হারিস রা.-কে বন্দি করে ও পরে হত্যা করে। দূতদের হত্যা করা গুরুতর অপরাধ। এটা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল, এমনকি এর চেয়েও গুরুতর মনে করা হতো সেই সময়ে।
মুহাম্মদ সা. খবর পেয়ে অত্যন্ত মর্মাহত হন। রোমান সাম্রাজ্যের মূল নেতা হেরাক্লিয়াসও নবী সা.-এর দূতকে সম্মান করেছে অথচ তার অধীনস্ত বালকার গভর্নর দূতকে হত্যা করলো। মুহাম্মদ সা. চিন্তা করলেন এর যদি যথাযথ প্রতিরোধ না করা হয় তবে আর কোথাও দূত পাঠানো যাবে না। তখন দূর দূরান্তের শাসকেরা মদিনা রাষ্ট্রকে গুরুত্বহীন মনে করবে। নবীর প্রতিনিধিদের সাথে খারাপ আচরণ করবে এমনকি হত্যাও করতে পারে।
মুহাম্মদ সা. কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন। জর্ডানের বালকায় তিনি সৈন্য পাঠানো ও যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মদিনা থেকে বালকা প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে। মধ্যবর্তী অঞ্চলগুলোও ইসলামের অধীনে নয়। মুহাম্মদ সা. আল্লাহর ওপর ভরসা করে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন এবং তিনি জানতেন এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। তারপরও তিনি ইসলামকে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নিলেন। যেহেতু কুরাইশদের সাথে সন্ধি রয়েছে তাই তাদের সাহায্য ছাড়া অন্য কোনো আরব মুশরিক গোষ্ঠী মুসলিমদের ওপর হামলা করবে না এই ভরসাও ছিল।
মুহাম্মদ সা. প্রায় তিনহাজার সৈন্যের এক বাহিনীর সমাবেশ করলেন। এর আগে এত বড় বাহিনী আগে কোনো অভিযানে বের হয়নি। শুধু খন্দকের সময় মদিনা প্রতিরক্ষার জন্য তিন হাজার সৈন্যের বাহিনী মোতায়েন ছিল। এবার দূরত্ব অনেক বেশি, সেই সাথে সৈন্য সংখ্যাও বেশি। ব্যতিক্রমীভাবে মুহাম্মদ সা. এই যুদ্ধের জন্য তিনজন সেনানায়কের নাম ঘোষণা করেন।
জায়েদ বিন হারেসা রা.
জাফর বিন আবু তালিব রা. ও
আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা.
তিনজন ঘোষণা শুনেই মুসলিমরা বুঝতে পারলো এটা বড় কঠিন যুদ্ধ হবে। যেখানে তিনজন সেনাপতি শাহদাতবরণ করবে। মুহাম্মদ সা. তারপর বলেন, জায়েদ নিহত হলে জাফর। জাফর নিহত হলে আব্দুল্লাহ। আর আব্দুল্লাহ নিহত হলে তোমরা তোমাদের থেকে একজনকে সেনাপতি করে নিও।
মুহাম্মদ সা. এরপর সাদা পতাকা জায়েদ বিন হারেসার হাতে তুলে দিয়ে বলেন, হারিস ইবনে উমায়েরের শাহদাতের স্থান বালকায় তোমরা স্থানীয় লোকদের ইসলামের দাওয়াত দিবে। যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তবে তো ভালো। যদি ইসলাম গ্রহণ না করে তবে আল্লাহর দরবারে সাহায্য চাইবে এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর নাম নিয়ে আল্লাহর পথে, আল্লাহর সাথে কুফুরকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, খিয়ানত করবে না, কোন নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং গীর্জায় অবস্থানকারী দুনিয়া পরিত্যাগকারীকে হত্যা করবে না। খেজুর এবং অন্য কোনো গাছ কাটবে না, কোন অট্টালিকা ধ্বংস করবে না।
এরপর মুসলিম সেনাবাহিনী রওনা হয়ে গেল। মহানবী সা. তাদের সাথে কিছুদূর পর্যন্ত গিয়ে বিদায় দিয়ে আসেন। উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মুসলিম সৈন্যরা মাআন নামক এলাকায় পৌঁছলেন। এ স্থান ছিলো হেজাজের সাথে লাগোয়া জর্ডানি এলাকা। মুসলিম বাহিনী এখানে এসে অবস্থান নেন। মুসলিম গোয়েন্দারা এসে খবর দিলেন যে, রোমের কায়সার বালকা অঞ্চলের মাআব এলাকায় এক লাখ রোমান সৈন্যের সমাবেশ করে রেখেছে। এছাড়া তাদের পতাকাতলে লাখাম, জাজাম, বলকিন, বাহরা এবং বালা গোত্রের আরো এক লাখ সৈন্য সমবেত হয়েছিলো। পরের এক লাখ ছিলো আরব গোত্রমূহের সমন্বিত সেনাবাহিনী।
মুসলমানরা ধারণাই করতে পারেননি যে, তারা এতো বড় সেনাদলের সম্মুখীন হবেন। বালকা অঞ্চলের সাথে যুদ্ধ করতে এসে পুরো রোমান সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়ে পড়লেন। মদিনা থেকে বহু দূরে মুসলিম সেনাবাহিনী সত্যিই বড় সংকটে পড়ে গেলেন। তারা কি তিন হাজার সৈন্য নিয়ে দুই লাখ সৈন্যের সাথে মোকাবেলা করবেন? বিস্মিত ও চিন্তিত মুসলমানরা দুই রাত পর্যন্ত পরামর্শ করলেন। কিন্তু সিদ্ধান্তে আসা যায় নি। কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করলেন যে, মুহাম্মদ সা.-কে চিঠি লিখে উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হোক। এরপর তিনি হয়তো বাড়তি সৈন্য পাঠাবেন অথবা অন্য কোন নির্দেশ দেবেন। সেই নির্দেশ তখন পালন করা যাবে।
শেষে আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রা. দৃঢ়তার সাথে সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন। তিনি বললেন, ‘হে লোকেরা! আপনার যা এড়াতে চাইছেন এটাতো সেই শাহাদাত। যার জন্য আপনারা বেরিয়েছেন। স্মরণ রাখবেন যে, শত্রুদের সাথে আমাদের মোকাবেলার মাপকাঠি সৈন্যদল, শক্তি এবং সংখ্যাধিক্যের নিরিখে বিচার হয় না। আমরা সেই দ্বীনের জন্যই লড়াই করি, যে দ্বীন দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে গৌরাবান্বিত করেছেন। কাজেই সামনের দিকে চলুন। আমরা দুইটি কল্যাণের মধ্যে একটি অবশ্যই লাভ করবো। হয়তো আমরা জয়লাভ করবো অথবা শাহাদাতবরণ করে জীবন ধন্য হবে।
৩য় সেনাপতির এমন আবেগপূর্ণ ও দৃঢ় বক্তব্যের পর মুসলিমরা জীবনবাজী রেখে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। মাআন নামক এলাকায় দুই রাত অতিবাহিত করার পর মুসলিম বাহিনী শত্রুদের প্রতি অগ্রসর হলেন। বালকার মাশারেফ নামক জায়গায় তাঁরা হিরাক্লিয়াসের সৈন্যদের মুখোমুখি হলেন। শত্রুরা আরো এগিয়ে এলে মুসলমানরা মুতা নামক প্রান্তরে গিয়ে সমবেত হন। এরপর যুদ্ধের জন্য সৈন্যদের বিন্যস্ত করা হয়।
মুতা জর্ডানের বালকা এলাকার নিকটবর্তী একটি জনপদ। এই জায়গা থেকে বাইতুল মাকদাসের দূরত্ব মাত্র ৭০-৮০ কিলোমিটার। মুতার যুদ্ধ এখানেই সংঘটিত হয়েছিলো। এই যুদ্ধই খৃষ্টান অধ্যুষিত দেশসমূহ জয়ের পথ খুলে দেয়। অষ্টম হিজরীর জমাদিউল আউয়াল অর্থাৎ ৬২৯ খৃষ্টাব্দ বা সেপ্টেম্বর মাসে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এটা বেশ রক্তক্ষয়ী ভয়াবহ যুদ্ধ।
মাত্র তিন হাজার মুসলিম সৈন্য দুই লাখ অমুসলিম সৈন্যের সাথে এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। বিসম্ময়কর ছিলো এ যুদ্ধ। ছোট বাহিনী এক বিশাল ও ঐ সময়ের সুপার পাওয়ার রোমানদের বাহিনীকে ঠেকিয়ে দিয়েছে। পতাকা হাতে যুদ্ধ করা জায়েদ ইবনে হারেসা রা. প্রথম শহীদ হন।
জায়েদ রা.-এর শাহাদাতের পর পতাকা তুলে নেন হযরত জাফর ইবনে আবু তালেব। তিনিও তুলনাহীন বীরত্বের পরিচয় দিয়ে লড়াই করতে থাকেন। তীব্র লড়াইয়ের এক পর্যায়ে তিনি নিজের সাদাকালো ঘোড়ার পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়ে শত্রুদের ওপর আঘাত করতে থাকেন। শত্রুদের আঘাতে তাঁর ডানহাত কেটে গেলে তিনি বাঁ হাতে যুদ্ধ শুরু করেন। এরপর বাঁ হাত কেটে গেলে তিনি দাঁত দিয়ে কামড়ে পতাকা ধরে রাখেন। যাতে ইসলামের পতাকা মাটিতে পড়ে অপমানিত না হয়। শাহাদাত বরণ করা পর্যন্ত তিনি এভাবে পতাকা ধরে রাখেন।
শহীদ জাফর রা.-এর এই অনুভূতি আল্লাহ তায়ালা খুব পছন্দ করেছেন। মুহাম্মাদ সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা জাফর রা.-কে বেহেশতে দুটি সবুজ পাখা দান করেছেন। সেই পাখার সাহায্যে তিনি জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা উড়ে বেড়াতে পারেন। এ কারণে তাঁর উপাধি ‘জাফর আত তাইয়ার’ এবং জাফর যুল জানাহাইন। তাইয়ার অর্থ উড্ডয়নকারী আর যুল জানাহাইন অর্থ দুই পাখাওয়ালা।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, মুতার যুদ্ধের দিনে জাফর শহীদ হওয়ার পর আমি তার দেহে আঘাতের চিহ্নগুলো গুণে দেখেছি। তাঁর দেহে তীর ও তলোয়ারের নব্বইটিরও বেশি আঘাত ছিলো। এ সব আঘাতের একটিও পেছনের দিকে ছিলো না।
সাধারণত কবিরা দুর্বল চিত্তের মানুষ হন। ব্যতিক্রম আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা.। তিনি জানতেন জাফর রা.-এর শাহদাতের পর তার পালা আসবে। তাই তিনি জাফর রা.-এর দিকে খেয়াল রাখছিলেন। জাফর রা.-এর হাতে থাকা পতাকা পড়ে যেতে দেখে ঘোড়া ছুটিয়ে উড়ে গিয়ে সেটা ছোঁ মেরে হাতে তুলে নিলেন। এরপর কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করলেন। যার মূল কথা হলো, ওরে মন! তুমি খুশি থাকো বা বেজার থাকো, যুদ্ধ তোমাকে করতেই হবে। ওরা যুদ্ধের আগুন জ্বেলেছে। অস্ত্র প্রস্তুত করেছে। জান্নাত থেকে কেনরে মন তুমি দূরে থাকতে চাও?
এরপর বীরবিক্রমে লড়াই করে তিনিও আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিলেন। এভাবে একে একে যারা নিশ্চিত মৃত্যুর খবর ও প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন তারা তিনজনই শহীদ হলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. শাহদাতের পর বনু আজলান গোত্রের সাবিত ইবনে আরকাম রা. পতাকা তুলে নেন। তিনি বলেন, হে মুসলমানরা, তোমরা উপযুক্ত একজনকে সেনাপতির দায়িত্ব দাও। সাহাবারা সাবিত রা.-কেই সেনাপতির দায়িত্ব নিতে বললে তিনি বলেন, আমি একাজের উপযুক্ত নই।
এরপর সাহাবারা খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা.-কে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তিনি হুদায়বিয়া সন্ধির পর ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি পতাকা গ্রহণের পর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। খালিদ রা. বলেন, মুতার যুদ্ধের দিনে আমার হাতে ৯টি তলোয়ার ভেঙ্গেছে। এরপর আমার হাতে একটি ইয়েমেনী ছোট তলোয়ার অবশিষ্ট ছিলো।
এদিকে মদিনায় মুহাম্মদ সা. রণক্ষেত্রের খবর ওহির মাধ্যমে পান। তিনি উপস্থিতদের বলেন, জায়েদ পতাকা গ্রহণ করেছিলেন, তিনি শহীদ হন। এরপর জাফর পতাকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি শহীন হন। এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা পতাকা গ্রহণ করেছিলেন, তিনিও শহীন হন। এতটুকু বলে মুহাম্মদ সা. অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি বলেন, তাদের পর যে পতাকা গ্রহণ করেছে সে আল্লাহর তলোয়ার সমূহের মধ্যে একটি তলোয়ার। তাঁর যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জয়যুক্ত করেন।
তাই খালিদ বিন ওয়ালিদের উপাধি সাইফুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর তরবারি। বীরত্ব, বাহাদুরি ও চরম আত্মত্যাগের মানসিকতা থাকা সত্ত্বেও মুসলমানদের মাত্র তিন হাজার সৈন্য দুই লাখ অমুসলিম সৈন্যের সামানে টিকে থাকা ছিলো এক বিস্ময়কর ঘটনা। সাধারণত সেনাপতি মরে গেলে যুদ্ধের ময়দানে এক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। মানুষ রণেভঙ্গ দেয়। পালিয়ে যায়। এখানে সেটি হয় নি, কারণ মুসলিম সৈন্যরা আগেই জানতো তারা পর পর তিন সেনাপতিকে হারাবে। তাই তারা বিচলিত না হয়ে যুদ্ধ করেছে। এই ব্যাপারটাও রোমানদের অবাক করেছে। এই যুদ্ধে মুসলিমরা এতো বেশি রোমান সৈন্যকে হত্যা করেছে যে, তারাও ভড়কে গেছে। খলেদ ইবনে ওয়ালিদ রা. সেদিন বীরত্বের পরিচয় দেন, ইতিহাসে তার তুলনা খুঁজে পাওয়া যায় না।
খালিদ রা. যুদ্ধের সাথে কৌশলও প্রয়োগ করেছেন ফলে যুদ্ধ সমাপ্তির দিকে গেছে। তিনি দূত পাঠিয়ে দেন মদিনায় যাতে সাহায্য আসে। আর এদিকে তিনি যুদ্ধের ময়দানে সেনা অদল বদলের কৌশল করেন। তিনি কিছুক্ষণ পর পর ডানের সৈন্য বাঁয়ে আর বাঁয়ের সৈন্য ডানে বদল করে দেন। এতে রোমানরা ভেবেছে মুসলিমদের সাহায্যকারী বাহিনী এসে পৌঁছেছে। খালিদ রা. ভালো প্রতিরোধ করতে থাকার পরও একটু একটু করে পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে পেছনের দিকে সরে যাচ্ছিলেন। খালিদ রা.-এর ইচ্ছে ছিল তিনি পেছাতে থাকলে সাহায্যকারী বাহিনীর দেখা আগে পাবেন।
সম্রাট হেরাক্লিয়াসের ভাই থিয়োডর ছিল ময়দানের সেনাপতি। তার নেতৃত্বেই যুদ্ধ হচ্ছিল। যুদ্ধের ৩য় দিন তিনি হঠাৎ করে যুদ্ধ বন্ধ করে দেন। আড়াই দিন ধরে এই বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে সে মাত্র ১২ জন মুসলিমকে হত্যা করতে পেরেছে। তার বাহিনীর মৃত্যুর সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। আর এদিকে অদল-বদলের কারণে সে ভাবছে প্রতিদিনই নতুন সৈন্য আসছে। তাই মুসলিম বাহিনীর পেছানো দেখে সে সন্দেহ করেছে তাদেরকে ট্র্যাপে ফেলতে যাচ্ছে মুসলিম বাহিনী। তারা মরুপ্রান্তরে রোমানদের নিয়ে পাল্টা হামলা করে পর্যদুস্ত করবে। এরূপ চিন্তা করে রোমানরা যুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে না এসে নিজেদের সীমানায় চলে গেল। অর্থাৎ বালকায় ফিরে গেল।
অথচ রোমানরা এমন পিছিয়ে যাওয়ার লোক নয়। তারা সে বছরগুলোতে বিশাল পারস্য সাম্রাজ্য দখল করে ফেলেছিলো। খসরুর সৈন্যদের রোমানরা কখনো পালাতে পর্যন্ত দেয়নি।
তবে মুসলিমরা যে প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে মুতা অভিযান পরিচালনা করেছে, সেটা সম্ভব না হলেও এ যুদ্ধের ফলে মুসলমানদের সুনাম সুখ্যাতি বহুদূর বিস্তার লাভ করে। সমগ্র আবর জগত বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। কেননা, রোমানদের মোকাবেলা করা তো দূরের কথা, এমন কথা চিন্তাও করতে পারতো না আরবরা। আবরব মনে করতো যে, রোমানদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়া মানে আত্মহত্যার শামিল। কাজেই, উল্লোখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া তিনহাজার সৈন্য নিয়ে দুই লাখ সৈন্যের মোকাবেলা করা বিশাল ব্যাপার।
আরবের জনগণ বুঝতে সক্ষম হয়েছিলো যে, ইতোপূর্বে পরিচিতি সকল শক্তির চেয়ে মুসলমানরা সম্পূর্ণ আলাদা। আল্লাহর সাহায্য মুসলমানদের সাথে রয়েছে। তাদের নেতা মুহাম্মদ সা. নিঃসন্দহে আল্লাহর মনোনীত ব্যাক্তি। ফলে দেখা গেল এই যুদ্ধের পর মুসলমানদের চিরশত্রু জেদী ও অহংকারী হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু সংখ্যক গোত্র ইসলামের কবুল করে। এসব গোত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গোত্র হচ্ছে, বনু সালিম, আশজা, গাতফান, জিবান ও ফাজারাহ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন