এখন থেকে দুই শতাধিক বছর আগে এই বঙ্গে জন্ম নিয়েছেন এক অসাধারণ ব্যক্তি। যিনি মুশরিক ও নাসারাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজের সারাজীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। এদেশের মুসলিমদের মধ্যে প্রকৃত ইসলামী চেতনা জাগ্রত করেছেন। এদেশের তাওহীদবাদীদের সমস্যা মোকাবেলায় আত্মনিয়োগ করেছেন।
আজ ১৯ নভেম্বর। শহীদ মাওলানা সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর রহ.-এর শাহদাতবার্ষিকী। ১৯০ বছর পূর্বে ইংরেজ ও হিন্দুদের মিলিত শক্তির সাথে যুদ্ধে কামানের গোলার আঘাতে তিনি শাহদাতবরণ করেন। স্মরণ করছি সেই সময়ের কথা যখন ইংরেজদের সাথে চূড়ান্ত যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার ক্ষণ এসেছিলো তখন তিনি তার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে রাখা প্রেরণাদায়ক বক্তব্যে বলেছেন,
ওহে ঈমানদার বীর ভাইয়েরা!
একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইতে হার-জিত আছেই। এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য, ইসলামের জন্য শহীদ হওয়ার মর্যাদা অনেক। তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে । আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে। ইনশাআল্লাহ"
- শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীর রহ.
(শাহাদাতবরণের আগের দিনে প্রদত্ত বক্তব্য)
মাওলানা তিতুমীর রহ. এর কাহিনী পড়লে সাধারণ চোখে মনে হবে তিতুমীর ব্যর্থ হয়েছেন। তার কেল্লা ধ্বংস হয়েছে। তার সেনাপতিদেরকে ফাঁসী দেয়া হয়েছে। কিন্তু আসলে কি তিনি ব্যর্থ হয়েছেন?
না, কখনোই নয়। তিতুমীর ব্যর্থ হননি। তিতুমীর যখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন অনেক মুসলিম (উদার) তাকে তিরস্কার করেছেন। তারা ইংরেজদের দালালি করতেন। পোষাকে ও চালচলনে ইংরেজ হওয়ার চেষ্টা করতেন। ইংরেজদের মতো করে সন্তানদের নাম রাখতেন।
এভাবে যখন মুসলিম সমাজ ইংরেজদের গোলামীতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছিলো তখন তিতুমীরদের রহ. মতো কিছু মানুষের ঐকান্তিক চেষ্টা ও জীবন বিলিয়ে দেয়ার ঘটনায় মানুষের ইংরেজবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার চেতনা তৈরি হয়।
এদেশের বেশিরভাগ মানুষই মৌলবাদী থাকতে পারেন না। আপাত জয়ী আদর্শের পেছনে ছুটেন। ইংরেজদের পর এদেশের মুসলিমরা কম্যুনিস্টদের পেছনে ছাতা ধরেছে। বিশ্বব্যাপী কম্যুনিস্টরা পরাজিত হওয়ার পর সেক্যুলারদের উত্থান হয়েছে। এখন মুসলিমরা ছুটছে সেক্যুলারদের পেছনে। এই সেক্যুলাররা বলতে চান রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ধর্মকে আলাদা রাখতে।
এগুলো শয়তানের কুমন্ত্রণা। আসুন এসব অলীক চিন্তা থেকে সরে আসি। ইসলামকেই একমাত্র আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করি। মনে রাখবেন এই পথে চলতে গেলে বাধা আসবেই। আর সেই বাধায় মৃত্যু হলে আমাদের মুক্তির দ্বার উন্মোচিত হবে। আমরা হবো সফল ব্যক্তি। যে তালিকায় আছেন শহীদ হামযা রা., শহীদ উমার রা., শহীদ ইমাম আবু হানিফা রহ., শহীদ তিতুমীর রহ., শহীদ গোলাম আযম রহ., শহীদ নিজামী রহ. প্রমুখ ব্যক্তিগণ।
মাওলানা ইউসুফ আল কারযাভী তাঁর 'ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা : তত্ত্ব ও প্রয়োগ' বইতে রাসূল সা.-এর একটি হাদীসের কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো,
//মুয়াজ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। "সাবধান! ইসলামের চাকা ঘূর্ণায়মান, তোমরাও ইসলামের সাথে ঘুরতে থাকবে। সাবধান! অচিরেই কুরআন ও ক্ষমতা আলাদা হয়ে পড়বে। অর্থাৎ ধর্ম থেকে রাষ্ট্র অচিরেই পৃথক হয়ে যাবে। তোমরা আল্লাহর কিতাব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ো না। সাবধান! অচিরেই তোমাদের ওপর এমন শাসক চেপে বসবে যারা নিজেদের জন্য এমন ফয়সালা করবে যা তোমাদের জন্য করবে না। তোমরা যদি আনুগত্য না করো তবে তারা তোমাদের হত্যা করবে, আর যদি আনুগত্য করো তবে তোমাদের পথভ্রষ্ট করবে।
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, আমরা তখন কি করব হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, তোমরা তা করবে যা ঈসা ইবনে মারয়াম আ.-এর অনুসারীগণ করেছেন। করাত দিয়ে তাদের ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে এবং শূলে চড়ানো হয়েছে (এরপরও তারা আল্লাহর আনুগত্য থেকে সরে আসেনি)। আল্লাহর নাফরমানী করে বেঁচে থাকার চেয়ে আনুগত্যের পথে মারা যাওয়া অনেক শ্রেয়।//
করণীয় সম্পর্কে এর চেয়ে দারুণ গাইডলাইন আর কী হতে পারে! কৃতজ্ঞতা ও দোয়া শহীদ মাওলানা তিতুমীরের জন্য। আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা এই বীর মানুষটিকে কবুল করুন। তাঁকে সর্বোচ্চ খেতাব দান করুন। তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিন।
সেই সাথে মহান আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা আমাদের সীরাতুল মুস্তাকীমে রাখুন। আমাদের ঈমানের পথে অবিচল থাকার সাহস দান করুন। আমরা যাতে কুরআন থেকে আলাদা না হয়ে যাই। আমরা যাতে সেক্যুলারদের ফিতনায় না পড়ি। রাষ্ট্রব্যবস্থা ও কুরআন একসাথে রাখার আন্দোলন তথা ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলন আমরা যেন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারি। মহান রব আমাদের তাওফিক দান করুন।
আমরা যেন দ্বীন কায়েমের পথে শহীদ মাওলানা তিতুমীরের মতো জীবন দিতে পারি! আল্লাহ তায়ালা আমাদের কবুল করুন। আমীন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন