আমাদের প্রিয় নবী সা.-এর কোনো শিক্ষক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি ছিলেন অক্ষরজ্ঞানহীন। এটা আল্লাহ তায়ালার একটি কুদরত। এরকম একজন মানুষ যখন হুট করে জ্ঞানের চর্চা ও নসিহত দিচ্ছিলেন তখন আরবের লোকজন একথা মানতে বাধ্য হয়েছে যে, মুহাম্মদ সা. কাছে ফেরেশতা আসে এবং এগুলো তাঁকে শেখানো হয়।
যাই হোক, মুহাম্মদ সা. অক্ষরজ্ঞানহীন হওয়ায় নবুয়্যতের শুরু থেকেই কাতিবে ওহির প্রয়োজন হয়। আল্লাহর রাসূল সা.-এর কাছে ওহি নাজিল হয় ২৩ বছর। এই ২৩ বছরে প্রায় ২২ জন কাতিবে ওহির সাহায্য নেন মুহাম্মদ সা.। এর মধ্যে কেউ ছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত। আর কেউ নিজ থেকে কাজটা করেছেন। আর কেউ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কাতিবে ওহির দায়িত্ব পালন করেছেন। আর একজন সুপারিশের ভিত্তিতে এই দায়িত্ব পেয়েছেন।
আল্লাহর রাসূল সা.-এর মাক্কী জীবনে সর্বপ্রথম কাতিবে ওহির দায়িত্ব পালন করেছেন আবু বকর রা.। তার সাথে ছিলেন আলী রা. ও উসমান রা.। তারা চামড়ার টুকরো ও খেজুরের ডালে ওহি লিখে সংরক্ষণ করতেন। এরপর দারুল আরকামে ইসলামের গোপন শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপিত হলে আরকাম ইবনে আবুল আরকাম রা. ওহি লিখে রাখতেন যাতে নতুন মুসলিমদের শিক্ষা দেওয়া যায়। উমার রা. ইসলাম গ্রহণের পর তিনি কুরআন সংরক্ষণ করা শুরু করেন। একইসাথে তিনি কুরআন মুখস্ত করতে থাকেন। যতদূর জানা যায় তিনি প্রথম কুরআনে হাফেজ।
মাক্কী জীবনের ১৩ বছরে আরো কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন, খালিদ ইবনে সাঈদ রা., যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা., আমির ইবনে ফুহাইরা রা. এবং আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ রা.।
যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা. আবিসিনিয়ায় হিজরত করার সময় ওহি লিখে নিয়ে যান যাতে সেখানে দাওয়াতের কাজ করা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ রা. ছিলেন উসমান রা.-এর দুধভাই। তিনি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণ করেন। পরে তিনি ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যান। ইসলামের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখেন। মক্কা বিজয়ের সময় রাসূল সা. যাদের হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। পরে উসমান রা.-এর সুপারিশে তিনি মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি পান ও পুনরায় ইসলামে দাখিল হন।
আল্লাহর রাসূল সা. যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন যায়িদ বিন সাবিত রা. ছিলেন ১১-১২ বছরের কিশোর। তিনি লেখাপড়া জানতেন। মুহাম্মদ সা. তাঁকে কাতিব বা লেখক হিসেবে নিয়োগ দেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল মুহাম্মদ সা. ও ইসলামী রাষ্ট্রের সব ডকুমেন্ট লেখা ও সংরক্ষণ। সেই হিসেবে তিনি কাতিবে ওহিও ছিলেন। তিনি কুরআনের সব অংশ সংগ্রহ করেন ও লিখে রাখেন। এটা তাঁর অফিসিয়াল দায়িত্ব ছিল।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তাঁর অনুপস্থিতে বহু সাহাবি কাতিব ও কাতিবে ওহি ছিলেন। যারা কাতিব ছিলেন তারা বিভিন্ন চুক্তিপত্র ও নির্দেশনামা লিখেছেন যেমন খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এবং হানজালা রা. (শহীদ হানজালা নয়)। এছাড়াও মাদানী জীবনে যাদের নাম পাওয়া যায় তারা হলেন উবাই ইবনে কা'ব রা., আবান ইবনে সাঈদ রা. আব্দুল্লাহ বিন যায়দ রা., সাবিত ইবনে কায়স রা., আব্দুল্লাহ ইবনুল আরকাম রা., আলা ইবনুল হাদরামি রা., মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা., আলা ইবনুল উকবা রা., মুগিরা বিন শু'বা রা. এবং মু'আবিয়া বিন আবু সুফিয়ান রা.।
এর মধ্যে মুগিরা বিন শু'বা রা. ছিলেন মুহাম্মদ সা. দেহরক্ষীর মতো। তিনি সবসময় রাসূল সা.-এর নিরাপত্তায় নিজেকে উতসর্গ করেছিলেন। তাই তিনি নানান সময়ে ওহি নাজিলের সাক্ষী ছিলেন এবং বিভিন্ন পত্রাদি ও চুক্তি লিখেছেন। আল্লাহর রাসূল সা.-এর বিশাল কাতিব বাহিনীর সর্বশেষ সংযোজন ছিল মু'আবিয়া রা.।
তিনি ও তাঁর বাবা মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। মক্কা বিজয় ও আরো কিছু অভিযান শেষ করে রাসূল সা. মদিনায় পৌঁছলে তাঁর কাছে আবু সুফিয়ান তিনটি আবেদন করেন,
১. আমাকে সেনাধিনায়ক করে দিন আমি ইসলামের বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ করেছি এখন ইসলামের পক্ষে সেভাবে যুদ্ধ করবো।
২. আমার ছেলে মু'আবিয়াকে আপনার কাতিবদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিন।
৩. আমার একটি মেয়েকে আপনি স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করুন।
আল্লাহর রাসূল সা. আবেদনগুলো কবুল করেন ৩য় টি ছাড়া। কারণ ইতোমধ্যে আবু সুফিয়ানের একটি মেয়ে (উম্মে হাবিবা রা.) রাসূল সা.-স্ত্রী ছিলেন।
ইয়ামামার যুদ্ধে যখন বহু হাফিজ সাহাবি শাহদাতবরণ করে তখন আবু বকর রা. কুরআন সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেক্ষেত্রে তিনি উমার রা. ও যায়িদ বিন সাবিত রা.-কে দায়িত্ব দেন যেন কুরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ কপি তৈরি করা হয়। তারা কুরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ সংকলন করে উম্মুল মু'মিনিন হাফসা রা.-এর কাছে সংরক্ষণ করেন।
ماشاءالله. احسنت. تباركالله. মা-শা-আল্লাহ।
উত্তরমুছুন