২৩ জানু, ২০২২

খিলাফত পর্ব-১৫ : উমার রা. ও খালিদ রা.-এর মধ্যেকার সম্পর্ক


উমার রা. খালিদ রা.-কে তার সাহস, বীরত্ব ও স্পষ্টবাদীতার জন্য জাহেলি যুগ থেকেই পছন্দ করতেন। সম্পর্কে তারা মামাতো ফুফাতো ভাই হন। খালিদ রা. সাইফুল্লাহ উপাধি পেয়ে মুসলিমদের সেনানায়ক হন রাসূল সা.-এর সময়ে। একই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে আবু বকর রা.-এর সময়ও। এই সময় তিনি নতুন দায়িত্ব পান গভর্নর হিসেবে। প্রথমে তিনি ইরাকের ও পরে সিরিয়ার গভর্নর হন। আবু বকর রা.-এর সময়ে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যাপক বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়। এই বিদ্রোহ দমনে রিদ্দার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মূলত এই সময় থেকে খালিদ রা. ও উমার রা.-এর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। 

রিদ্দার যুদ্ধে মালিক ইবনে নুওয়ারাহর হত্যাকাণ্ড থেকে খালিদ রা. ও উমর রা.-এর সম্পর্ক ছিল শীতল। খলিফা আবু বকর রা. নজদের আশপাশের বিদ্রোহী গোত্রগুলোকে দমনে চার হাজার সৈন্যসহ খালিদ রা.-কে পাঠান। নজদের নেতা মালিক ইবনে নুওয়ারাহ মদিনাতে যাকাত পাঠাতে অস্বীকার করেন। তবে তিনি মদিনার সাথে যুদ্ধের জন্য বা বিদ্রোহের জন্য প্রচেষ্টা চালাননি। মালিক তার পরিবারকে নিয়ে মরুভূমির ওপারে স্থানান্তরিত হন। খালিদ রা.-এর সৈন্যরা তার অশ্বারোহীদের থামতে বাধ্য করে। 

মালিককে খালিদ রা. যাকাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। তিনি নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তোমাদের প্রভু ও তোমাদের রাসূল উল্লেখ করেন। এতে খালিদ রা. ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বলেন, আমাদের প্রভু ও রাসূল কি তোমার প্রভু ও রাসূল নয়? এরপর তিনি মালিককে বিদ্রোহী মুরতাদ হিসেবে সাব্যস্ত করেন ও হত্যা করেন। তিনি মালিকের পরিবারকে বন্দী করেন। অভিযান শেষে তিনি মালিকের বিধবা স্ত্রী লায়লা বিনতে আল-মিনহালকে বিয়ে করেন।  

এই ঘটনা অনেকের মতো হযরত উমর রা.ও খালিদ রা.-এর সীমালংঘন হিসেবেই দেখেছেন। উমর রা. অবিলম্বে খালিদকে বরখাস্ত করার জন্য ও বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আবু বকর রা.-এর কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, হত্যা ও ব্যভিচার- এ দুটি অপরাধে খালিদের বিচার করা উচিত। কিন্তু খলিফা আবু বকর রা. এই ঘটনাকে খালিদ রা.-এর ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করেন ও মালিকের পরিবারকে রক্তমূল্য পরিশোধ করেন। আবু কাতাদা আল-আনসারী মদিনা থেকে খালিদ রা.-এর সঙ্গী হয়েছিলেন। মালিকের হত্যাকাণ্ডে কাতাদা এত ব্যথিত হন যে, তিনি অবিলম্বে মদিনায় ফিরে এসে খলিফাকে বলেন, তিনি একজন মুসলিম হত্যাকারীর অধীনে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নন। 

এই ঘটনার কিছুদিন পরেই খলিফা আবু বকর রা. খালিদ রা.-কে ইরাকে পারসিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠান। সেখানে তিনি বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে জয়ী হতে থাকেন। আবু বকর রা. তাঁকে ইরাকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করেন। তার কিছুদিন পর সিরিয়ায় মুসলিম বাহিনী রোমানদের সাথে ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। আবু বকর রা. সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব নিতে খালিদ রা.-কে নির্দেশ দেন। একইসাথে তিনি খালিদ রা.-কে সিরিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব দেন। 

ইরাকের গভর্নর থাকাকালে আবারো মতবিরোধ তৈরি হয় উমার রা.-এর সাথে। উমার রা.-এর মতামত ছিল গভর্নররা যুদ্ধের কৌশল ও চুক্তির ব্যাপারে খলিফার নিকট দায়বদ্ধ থাকবে। তারা স্বাধীনভাবে যুদ্ধ পরিচালনা ও শত্রুপক্ষের সাথে চুক্তি করবে না। অবশ্যই খলিফা থেকে অনুমতি নিয়ে করবে। খালিদ রা. এই ব্যাপারে একমত ছিলেন না। তিনি ভাবতেন যুদ্ধের সিদ্ধান্ত, যুদ্ধকৌশল ও চুক্তির ব্যাপারে ময়দানে থাকা সেনানয়কই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। খালিদ রা. রাষ্ট্রের সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে স্থানীয় ধনী ও প্রভাবশালী লোকদের প্রাধান্য দিতেন। তিনি ভাবতেন এর মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তার অনুগত থাকবে। প্রদেশ পরিচালনা সহজ হবে। অন্যদিকে উমার রা. মতামত দিয়েছেন যখন ইসলাম অপেক্ষাকৃত দুর্বল  ছিল তখন মুহাম্মদ সা. কিছু কিছু প্রভাবশালীকে উপহার দিয়ে ইসলামের প্রতি নমনীয় করে তুলেছেন। কিন্তু এটার আর এখন প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাবার অধিকার রয়েছে মুহাজির ও অভাবীদের। 

এই বিষয় নিয়ে মদিনায় মজলিসে শুরায় দীর্ঘ আলাপ আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, গভর্নররা যুদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে খলিফার অনুমতি নেবেন। এই মর্মে সকল গভর্নরকে চিঠি পাঠানো হয়। খালিদ রা. চিঠির উত্তরে এভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে বলে জানান। এদিকে খালিদ রা.-এর বিজয়ে মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয় যে, মুসলিমদের বিজয় আসে খালিদ রা.-এর মাধ্যমে। উমার রা. ভাবেন এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে ঈমানের ঘাটতি তৈরি হবে। তাই উমার রা. খলিফা নিযুক্ত হওয়ার পর খালিদ রা.-কে গভর্নর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।     

খলিফা উমর রা. আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রা.-কে চিঠি লিখে জানান, আমি আল্লাহকে ভয় করার জন্য আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি চিরঞ্জীব এবং তিনি ছাড়া সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে সৎ পথের নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে এসেছেন। আমি আপনাকে খালিদ বিন আল-ওয়ালিদের বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করছি। সুতরাং কর্তব্য হিসেবে আপনি এ নিযুক্তি গ্রহণ করুন। লুণ্ঠনের স্বার্থে মুসলমানদের ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবেন না। পর্যবেক্ষণ না করে এবং খোঁজ খবর না নিয়ে কোনো তাঁবুতে মুসলমানদের অবস্থান করতে দেবেন না। ইউনিটগুলোকে যথাযথ সংগঠিত করা ছাড়া কোনো অভিযানে পাঠাবেন না। মুসলমানরা নির্মূল হয়ে যেতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন। আল্লাহ আমাকে দিয়ে আপনাকে এবং আপনাকে দিয়ে আমাকে পরীক্ষা করছেন। পৃথিবীর প্রলোভন সম্পর্কে সাবধান হোন। প্রলোভন আপনার আগে অন্যদের ধ্বংস করেছে।

খালিদ রা. এই খবর জানতে পেরে বিনা বাক্য ব্যয়ে সিনিয়র সাহাবী আবু উবাইদাহ রা.-এর কাছে নেতৃত্ব হস্তান্তর করেন। খালিদ রা. আবু উবাইদা রা.-এর অধীনে একজন সেনা কমান্ডার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। উমার রা.-এর প্রশাসন ছিল তার পূর্বসূরি আবু বকর রা.-এর কার্যকলাপ থেকে ভিন্ন। আবু বকর রা. সামরিক কমান্ডারদের বিভিন্ন অভিযানে পাঠাতেন এবং অপারেশন পরিচালনার ভার তাদের ওপর অর্পণ করতেন। অন্যদিকে হযরত উমর রা. প্রতিটি যুদ্ধের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নির্দেশ দিতেন। তিনি তার সেনাপতিদের ওপর নজরদারি করার জন্য একটি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক গঠন করেন। তার খিলাফতকালে তিনি মুসলিম বাহিনীর বামবাহু কিংবা ডানবাহুর নেত্বত্ব কে দেবেন তাও নির্ধারণ করতেন। আবু বকর রা. যাদের কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন, উমর রা. তাদের নিয়োগ পুনরায় অনুমোদন করেন। 

৬৩৮ সালে মারাশ বিজয় শেষে ফিরে এসে খালিদ রা. উদারহস্তে সৈন্যদের দান করেন। এ সময় কিছু লোক খালিদের প্রশস্তিসূচক কবিতা পাঠ করে তার কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করেন। তাদের একজন ছিলেন কবি আল-আশা’স ইবনে কায়েস আল-কিন্দি। কবি আশা’স কিনাচ্ছারিনে (সিরিয়ার হোমস থেকে অল্প দূরে, বর্তমান নাম চেলসিস) আসেন এবং খালিদের প্রশংসাসূচক একটি কবিতা পাঠ করে তাকে শোনান। খলিফা উমার রা. জানতে পারেন যে, খালিদের প্রশস্তিসূচক কবিতা পাঠ করায় কবি আশা’সকে ১০ হাজার দিরহামের বিশাল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। একথা জানতে পেরে উমর মনঃক্ষুণ্ণ হন। এ পরিমাণ অর্থ ছিল রাজকোষ থেকে খলিফার প্রাপ্ত অর্থের চেয়েও বেশি। দ্বন্দ্বযুদ্ধ এবং অন্যান্য যুদ্ধে অর্জিত মাল থেকে প্রাপ্ত আয় খালিদের বেতনের অংশ ছিল না। একজন কমান্ডারের বার্ষিক আয় ছিল ৭ থেকে ৯ হাজার দিরহামের মধ্যে। 

উমার রা. অবিলম্বে আবু ওবাইদা রা.-এর কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে লিখেন, খালিদকে তলব করুন, তার পাগড়ি দিয়ে তার হাত বাঁধুন এবং তার টুপি খুলে নিন। তাকে জিজ্ঞেস করুন তিনি আশা’সকে কোন তহবিল থেকে অর্থ দিয়েছেন। তিনি কি তার নিজের পকেট থেকে নাকি অভিযানে অর্জিত গণিমতের মাল থেকে অর্থ দিয়েছেন? খালিদ যদি স্বীকার করেন যে, তিনি গণিমতের মাল থেকে এ অর্থ দিয়েছেন তাহলে অর্থ আত্মসাতের দায়ে তিনি অভিযুক্ত হবেন। আর যদি তিনি দাবি করেন যে, তিনি তার পকেট থেকে এ অর্থ দিয়েছেন তাহলে তিনি অপব্যয়ের জন্য দোষী সাব্যস্ত হবেন। দুটি ঘটনার প্রতিটির জন্য তাকে বরখাস্ত করুন। 

উমার রা. এই নির্দেশ কার্যকরের জন্য আবু উবাইদা রা. সহযোগী হিসেবে একজন প্রভাবশালী সাহাবীকে দিয়ে কার্যকর করতে চাইলেন। এজন্য তিনি বিলাল রা.-কে এ কাজের জন্য বেছে নেন। তিনি বিলাল রা.-এর কাছে চিঠি হস্তান্তর করেন। কিভাবে খালিদকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে তা তিনি তাকে বুঝিয়ে দেন এবং তাকে সর্বোচ্চ গতিতে এমেসা (হোমস) যাবার নির্দেশ দেন। বিলাল রা. এমেসা এসে পৌঁছান এবং আবু উবাইদা রা.-এর কাছে উমরের চিঠি হস্তান্তর করেন। আবু উবাইদাহ রা. খালিদ রা.-কে ডেকে পাঠান। খালিদ রা. এমেসা আসলে তাঁর বিচার শুরু হয়। 

খালিদ রা.-কে আদালতের মুখোমুখি করা হলো। বিলাল রা. ওঠে দাঁড়ান এবং খালিদ রা.-কে জিজ্ঞাসা করেন, হে খালিদ! আপনি কি আশা’সকে ১০ হাজার দিরহাম পুরস্কার দিয়েছেন? উত্তরে খালিদ রা. বললেন, হ্যাঁ। এ অর্থ আপনি কোথা থেকে দিয়েছেন? আপনার নিজের পকেট থেকে নাকি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে? তিনি জানালেন, নিজ পকেট থেকে দিয়েছেন। অবশেষে অপব্যয়ের দায়ে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো এবং অবিলম্বে খলিফা উমার রা.-এর সঙ্গে দেখা করার জন্য বলা হলো।

খালিদ রা. কিনাচ্ছারিনে ফিরে যান এবং তার অতি প্রিয় ভ্রাম্যমাণ অশ্বারোহী বাহিনীকে সমবেত করেন এবং তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। এ বাহিনীর যোদ্ধারা বিনা প্রশ্নে তার নির্দেশ মেনে নিতো। তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাদের জানান যে, তাকে কমান্ড থেকে অপসারণ করা হয়েছে এবং এখন তিনি খলিফার নির্দেশে মদিনা যাচ্ছেন। এবং তিনি নতুন সেনানয়কের নির্দেশ মানতে নসিহত করেন। 

মদিনায় দুজন লৌহমানব তদানীন্তন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক উমার রা. এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতি খালিদ রা. একে অন্যের মুখোমুখি হন। উমর রা. প্রথম কথা বলেন। তিনি খালিদ রা.-এর সাফল্য ও কৃতিত্ব স্বীকার করে তাৎক্ষণিক একটি কবিতা রচনা করেন এবং আবৃত্তি করেন। উত্তরে খালিদ রা. বলেন, 

- আমি মুসলমানদের কাছে আপনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। হে উমর! আল্লাহর কসম! আপনি আমার প্রতি অন্যায় করেছেন।
- আপনি এত সম্পদ কোথায় পেলেন? 
- গণিমতের মালে আমার হিস্যা থেকে। ৬০ হাজার দিরহামের অতিরিক্ত হলে আপনার।

উমর রা. জমাকৃত গণিমত ও খালিদ রা. সম্পদ হিসাব করলেন। হিসাবে খালিদ রা. থেকে ২০ হাজার দিরহাম পাওনা হলো রাষ্ট্র। খালিদ রা. সেগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে দিলেন। 

হিসাব শেষ করে উমর রা. খালিদকে বললেন, হে খালিদ! আল্লাহর কসম! আপনি আমার চোখে অত্যন্ত সম্মানিত। আপনি আমার প্রিয়পাত্র। আজকের পরে আমার কাছে আপনার অভিযোগ করার কোনো কারণ থাকবে না। উমার রা. খালিদ রা.-এর জন্য নিয়মিত সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করেন।

কয়েকদিন পর খালিদ কিনাচ্ছারিনের উদ্দেশে মদিনা ত্যাগ করেন। তিনি আর কখনো আরবে ফিরে আসেননি। খালিদ রা. মদিনা ত্যাগ করা মাত্র খলিফা উমর রা.-এর কাছে লোকজন এসে ভিড় জমায় এবং খালিদ রা.-এর সম্পদ তার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করে। জবাবে উমর রা. বলেন: আমি আল্লাহ ও মুসলমানদের সম্পদ লেনদেন করতে পারি না।

খালিদ রা.-এর সম্মান রক্ষার্থে উমার রা. সকল গভর্নর ও প্রতিনিধির কাছে চিঠি পাঠান উমার রা.। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আমি আমার ক্রোধ অথবা তার অসাধুতার জন্য খালিদ রা.-কে বরখাস্ত করিনি। লোকজন তাকে গৌরবান্বিত করায় এবং বিভ্রান্ত হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করেছি। আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, লোকজন তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে। আমি তাদেরকে একথা জানিয়ে দিতে চেয়েছি যে, আল্লাহই সব করেন। এ ভূখন্ডে কোনো ভুল ধারণা পোষণ করার সুযোগ নেই। 

এরপর খালিদ রা. এমেসায় (হোমস) বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। যদিও তাদের মধ্যে সম্পর্ক শীতল ছিল কিন্তু তাঁরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতেন। মৃত্যুর আগে খালিদ রা. তার সকল সম্পদ উমর রা.-এর হাতে অর্পণ করে যান এবং উমর রা.-কে নিজ অসিয়তের বাস্তবায়নকারী মনোনীত করে যান। 

খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. যখন মৃত্যুশয্যায় ছিলেন তখন তাকে দেখতে আবু দারদা রা. গিয়েছিলেন। খালিদ রা. আবু দারদা রা.-কে বলেন, হে আবু দারদা! উমারের মৃত্যুর পর আপনি অপছন্দনীয় অনেক কিছু ঘটতে দেখবেন। 

তিনি আরো বলেন, আমি তার ওপর মন খারাপ করেছি। এখন অসুস্থ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছি। আমি বুঝতে পেরেছি উমার তার সব কাজেই আল্লাহকে খুশি করার চেষ্টা করেন। যখন তিনি আমার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করছিলেন আমি খুবই রাগান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু আমার পূর্বে ইসলামগ্রহণকারী বাদরি সাহাবীদের ব্যাপারেও তিনি এমন কঠোর আচরণ করেছেন। যেহেতু তিনি আমার নিকটাত্মীয় তাই ভেবেছিলাম ওনার কাছ থেকে কোমল ব্যবহার পাবো। আমি দেখলাম তিনি কখনো স্বজনপ্রীতিকে প্রশ্রয় দেননি। হকের খাতিরে কারো নিন্দার পরোয়া করেন নি। এটাই তার প্রতি আমার মনোভাব বদলে দিয়েছে। তিনি আমার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি আমার প্রতি রাগান্বিত হয়েছেন, এর কারণ ছিল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা। আমার দান তিনি পছন্দ করেননি। 

খালিদ রা.-এর মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েন উমার রা.। তিনি তাঁর জন্য কবিতা আবৃত্তি করেন ও চোখের পানি ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, আবু সুলাইমান (খালিদ রা.) শির্ক ও মুশরিকদের অপদস্ত করতে ভালোবাসতেন। তিনি আরো বলেন, আজ ইসলামের দেয়ালে একটি ছিদ্র তৈরি হলো।    


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন