মূল ঘটনায় যাওয়ার আগে একটি ভিন্ন ঘটনায় নজর দেই। ২৪ নভেম্বর যাত্রাবাড়ি, ১৯৭৪ সাল, ভয়ানক বিস্ফোরণ হয় একগুচ্ছ বোমার। বোমার নাম আলোচিত নিখিল বোমা। সে বোমার জনক নিখিল রঞ্জন সাহা। বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তরুণ লেকচারার। জাসদ করতেন। ২৬ নভেম্বর হরতালকে কেন্দ্র করে দেশকে ব্যাপক অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা গ্রহন করে জাসদ। প্রচুর বোমা দরকার। কিন্তু বোমা বানাবে কে?
সেই গুরুদায়িত্ব গ্রহন করে নিখিল। নিখিল আগে থেকেই বোমা বানায়। পদ্ধতিও ছিল স্থুল। পাতলা এক টুকরো মার্কিন কাপড় চিনি দিয়ে ভিজিয়ে এবং পরে শুকিয়ে মাড় দেয়া কাপড়ের মত করে শক্ত করা হতো। এর ভেতর ধাতব স্প্রিন্টার ঢুকিয়ে দেয়া হতো। তারপর মেশানো হতো পটাশিয়াম ক্লোরেট। জ্যাকেটের মধ্যে কয়েকটা ফোকর রাখা হতো। প্রতিটি ফোকরে অ্যম্পুলের ভেতর থাকতো সালফিউরিক এসিড। এটা ডেটোনেটরের কাজ করতো।
সলতের মধ্যে আগুন লাগিয়ে ছুঁড়ে দিলে তৎক্ষণাৎ কাজ করতো। আর যদি টাইম বোমা বানানোর প্রয়োজন পড়তো তবে কনডম ব্যবহার করা হতো। সেক্ষেত্রে অ্যম্পুলগুলো কনডমে রাখা হতো। হিসেব করে দেখা গেল কনডম থেকে গড়িয়ে এসিড বেরিয়ে আসতে দু'মিনিট সময় লাগে। যদি মনে করা হতো দু'মিনিট পর বিস্ফোরন করা লাগবে তাহলে একটা কনডম, আর যদি চার মিনিট তাহলে দুটো কনডম ব্যবহার করা হতো।
নিখিল তার দুই সহযোগী কাইয়ুম আর নয়নকে নিয়ে বোমা তৈরি করে যাচ্ছিল। হঠাৎ ভুলবশত একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এরপর তৈরি হয়ে যাওয়া একে একে অনেকগুলো। কাইয়ুম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। মারাত্মক আহত হয় নিখিল। নয়ন নিখিলকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।
মাইনুদ্দিন খান বাদলের বাবা পুলিশের বড় অফিসার। সেই পাওয়ার খাটিয়ে নিখিলের বন্ধু সেজে পরদিন তাকে দেখতে যায় বাদল। নিখিল জানায় পুলিশের লোকেরা তার ডায়েরি পেয়েছে। তাই নিখিল বাদলসহ অন্যান্য নেতাদের সরে থাকতে বলেছে। নিখিল আরো জানিয়েছে সে এখনো কিছু পুলিশকে বলেনি। তবে পুলিশ বেপরোয়াভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছে। বাদল ঠিক এই তথ্যের জন্যই সেখানে গিয়েছে। এর পরদিন একটু সুস্থ হয়ে ওঠা বুয়েটের শিক্ষক নিখিল বিষ প্রয়োগে খুন হন। নিখিলের কাছ থেকে জাসদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা মুজিবের পুলিশের কাছে চলে যাবে তাই জাসদই তাকে হাসপাতালে খুন করে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে।[১]
নিখিলের আলোচিত সৃষ্টি এবং যাদের জন্য সৃষ্টি তারাই হত্যা করে নিখিলকে। এভাবেই মৃত্যুবরণ করে নিখিল ও নিখিলের হতদরিদ্র খেতমজুর বাবার পরিবারের স্বপ্ন। নিখিলদের বাড়ি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জিলার নবীনগর থানার বিটনগর গ্রামে।
আরেক সহকর্মী কাইয়ুম থাকতেন পলাশীর সরকারি কলোনীতে। রেডিওতে খবর শুনে তার মা যাত্রাবাড়িতে যান লাশ দেখতে। কাইয়ুমের বাবা সরকারি চাকুরি করতেন, থাকতেনও সরকারি কোয়ার্টারে। কাইয়ুমের মা মানুষের জটলার মধ্যে দাঁড়িয়ে তার ছেলেকে দেখেছিলেন। কিন্তু মুজিবের পুলিশের ভয়, কাইয়ুমের বাবার চাকুরি ও কোয়ার্টার নিয়ে ঝামেলা হতে পারে এজন্য নিজের ছেলে বলে পরিচয় দেয়ার সাহস পাননি। জাসদের পক্ষ থেকেও কেউ যে এগিয়ে আসবে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।
আজকের মূল ঘটনা নিখিল কিংবা বোমা নয়। ১৯৭৪ সালে যারা জাসদ করতো তাদের বড় ভাইরা ২২ বছর আগে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করেছিল। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মৃত্যুবরণ করেন রফিক, সালাম, বরকত, ওহিউল্লাহরা। এদের কারা হত্যা করেছে এই প্রশ্ন আমি নতুন করে তুলতে চাই।
সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সমাবেশ চালাতে থাকে। পুলিশ অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিক ঘিরে রাখে। পুলিশের নমনীয় অবস্থান দেখে ছাত্রলীগ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সমাবেশে যোগ দেয়। বিভিন্ন অনুষদের ডীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঐসময় উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ যোগ দিলে সমাবেশের আকার অনেক বড় হয়ে যায়। তাই এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রশাসনের প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়। অনেক ছাত্র ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে গেলেও বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। উপাচার্য তখন পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে অনুরোধ জানান এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেন। উপাচার্যের কথা পুলিশ শুনলেও বিচ্ছিন্নতাবাদী, জাতীবাদী ও বাম্পন্থী ছাত্ররা শুনেনি। [২]
পুলিশ পিছিয়ে গেলে ছাত্ররা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এ সময় কয়েকজনকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এবার পুলিশ অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে এবং তেজগাঁও নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। দুপুরের দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ভাষা আন্দোলনকারীরা তাদের বাধা দেয়। অনেককে হেনস্তা করে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়ানক পরিবর্তন ঘটে যখন ছাত্ররা দলবল নিয়ে আইনসভার (পার্লামেন্ট) দখল নিতে যায়।
আইনসভার ওপর বাম ছাত্ররা ক্ষ্যাপা কারণ বাংলা আইনসভার বাঙালি সদস্যরা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে পছন্দ করেনি। বাম ছাত্ররা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।[৩] এ সময় ছাত্রদের আক্রমণে লুটিয়ে পড়ে সেক্রেটারিয়েটের পিয়ন[৪] আব্দুস সালাম। যাকে এখন ভাষা শহীদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে আইনসভার সদস্য নিরাপত্তায় গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসররত মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেকে আহত হয় এবং প্রতিবাদকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়।
প্রচলিত ইতিহাসে বলা হয় পুলিশের গুলিবর্ষণে রফিক উদ্দিন, আব্দুল জব্বার এবং আবুল বরকত গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এছাড়া অহিউল্লাহ নামেও একজন বালক পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
বর্তমান জগন্নাথ হল ছিল ১৯৫২ সালের সেক্রেটারিয়েট ও আইনসভা [৫]। সেখানে হামলা চালিয়েছে ভাষা আন্দোলনকারীরা। সেক্রেটারিয়েটের পিয়ন আব্দুস সালাম নিহত হওয়ার পর পুলিশ নিরাপত্তা রক্ষার্থে কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালায়। যারা সেসময় প্রমিনেন্ট ভাষা আন্দোলনকারী ও সামনের সারিতে ছিল তারা কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে প্রমাণ ইতিহাসে নেই। একাধিক ভাষা আন্দোলনকারীদের বয়ানে এটা সুস্পষ্ট যে, বর্তমান শহীদ মিনার এলাকায় শুধুমাত্র সংঘর্ষ হয়।
তাহলে ঢাকা মেডিকেলের হোস্টেলে কেন কথিত ভাষা আন্দোলনকারীরা মৃত্যুবরণ করলো? প্রশ্ন তুলতে চাই কারা তাদের হত্যা করলো?
আমরা যদি সেসময় খুন হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় নিতে চাই তাহলে প্রশ্নের যৌক্তিকতা আরো স্পষ্ট হবে। প্রথমে খুন হন ঢাকা মেডিকেলের হোস্টেলে খুন হন রফিক উদ্দিন। হোস্টেলের ভেতর গিয়ে পুলিশ গুলি চালিয়েছে এমন অভিযোগ কখনোই পাওয়া যায় নি। অভিযোগ ছিল পুলিশ মিছিলে গুলি চালিয়েছে। অথচ রাস্তায় মিছিলে থাকা কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি। রফিক ১৯৪৯ সালে বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন। পরে স্থানীয় দেবেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন কিন্তু পড়ালেখা শেষ করেন নি। [৬]
ঢাকায় এসে বাবার সাথে প্রেসের ব্যবসায়ে যুক্ত হন। তিনি ছাত্র ছিলেন না। তার ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার রেকর্ডও ছিল না। যদিও নতুনভাবে এই আওয়ামী সরকার আসার পর রফিককে জগন্নাথ কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ তার উচ্চ মাধ্যমিক পাশের খবর নেই।
এরপর আব্দুল জব্বারের লাশের খবর পাওয়া যায়। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারির আগের দিন তার ক্যন্সার আক্রান্ত শাশুড়িকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন চিকিৎসা করাতে। তিনি পাকিস্তান সরকারের আনসার বাহিনীতে চাকুরি করতেন। আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বার ঢাকা মেডিকেলে ছিলেন। তাকে সেখানেই কে বা কারা গুলি করে হত্যা করে। তার লাশ ঢাকা মেডিকেলের হোস্টেলে পড়ে ছিল। সেখান থেকে জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। [৭]
ময়মনসিংহ থেকে আসা সরকারি চাকুরে এই আব্দুল জব্বারের ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাকেও খুন হতে হলো অজানা কারনে সংঘর্ষের স্থান থেকে দূরে।
আবুল বরকত ছিলেন ২১ ফেব্রুয়ারি খুন হওয়া একমাত্র ছাত্র। যিনি ঢাবিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। তিনি আমাদের দেশের মানুষ নন, মুহাজির ছিলেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান ভাগ হলে তাঁর পরিবার ভারত থেকে ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করেন। প্রচলিত ইতিহাস মতে তিনি ভাষা আন্দোলনকারী ছিলেন এবং পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু একাধিক ভাষা সৈনিকদের জবানিতে পাওয়া যায় তিনি ভাষা আন্দোলনবিরোধী ও পুলিশের ইনফর্মার ছিলেন।[৮][৯] এই দাবির পক্ষে প্রমিনেন্ট মানুষ হলেন দুইজন, ভাষা আন্দোলনের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ তোয়াহা (সভাপতি, কমিউনিস্ট পার্টি) এবং ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। এই আবুল বরকতও ঘটনাস্থলে নিহত না হয়ে মেডিকেলের হোস্টেলে খুন হন।
যাই হোক সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারিতে খুন হন অহিউল্লাহ নামের একজন শিশু। বয়স আট কি নয় বছর। তার বাবা হাবিবুর রহমান পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। ঢাকার নবাবপুর রোডে খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে গুলিবিদ্ধ হয় নিষ্পাপ এ শিশুটি। ঘাতকের গুলি লাগে অহিউল্লাহর মাথায়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে অহিউল্লাহ। তার মৃত্যুর কারণও অজানা।
২১ শে ফেব্রুয়ারির খুনের মাধ্যমে শেষ হয়নি একুশের খুনীদের রক্তের লালসা। মিছিলে পুলিশের বাধার প্রতিবাদে পরেরদিন অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিও ভাষা আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। পুলিশ লাঠিচার্য করে সেই মিছিল ছত্রভঙ্গ করে। সেদিনও খুন হন একজন। তিনিও আবুল বরকতের মতো এদেশের মানুষ নন। তিনি দেশভাগের জন্য ভারত থেকে আসা মুহাজির। তার নাম শফিউর রহমান।
শফিউর রহমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কোন্নগরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।কলকাতা গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আই.কম পাস করে তিনি চব্বিশ পরগনা সিভিল সাপ্লাই অফিসে কেরানি পদে চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা চলে আসেন এবং ঢাকা হাইকোর্টের হিসাবরক্ষণ শাখায় কেরানির চাকরিতে যোগ দেন।
১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শফিউর রহমান তখন সাইকেল যোগে ঐ পথে অফিসে যাচ্ছিলেন। তখন কে বা কারা তাঁকে পেছন থেকে গুলি করে। তিনি পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঐদিন সন্ধ্যা ৭টায় তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[১০] তিনি কখনো ভাষা আন্দোলন করেননি ও আন্দোলনকারীদের সাথে যুক্ত ছিলেন না।
কী এক আজিব অবস্থা! বর্তমান চালু ইতিহাসে পুলিশ মিছিলে গুলি করে। অথচ ভাষা আন্দোলনের সময় নিহত হওয়া কেউই মিছিলে ছিল না। কেউই ভাষা আন্দোলন করেননি। আর যারা মিছিলে ছিল তারা কেউই নিহত হওয়া তো দূরের কথা, গুলিবিদ্ধও হননি। যারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের নেতৃত্ব দিয়েছেন, মিছিল করেছেন, মিছিলের সামনে থেকেছেন তারা গ্রেপ্তার ও লাঠিচার্জের শিকার হলেও গুলির শিকার হননি।
কী এক আজিব অবস্থা! বর্তমান চালু ইতিহাসে পুলিশ মিছিলে গুলি করে। অথচ ভাষা আন্দোলনের সময় নিহত হওয়া কেউই মিছিলে ছিল না। কেউই ভাষা আন্দোলন করেননি। আর যারা মিছিলে ছিল তারা কেউই নিহত হওয়া তো দূরের কথা, গুলিবিদ্ধও হননি। যারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের নেতৃত্ব দিয়েছেন, মিছিল করেছেন, মিছিলের সামনে থেকেছেন তারা গ্রেপ্তার ও লাঠিচার্জের শিকার হলেও গুলির শিকার হননি।
খুন হওয়া মানুষদের পরিচিতি, অবস্থান, খুন হওয়ার স্থান নির্দেশ করে এরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে খুন হয়নি। ঘোলাটে পরিস্থিতির সুযোগে কেউ তাদের খুন করেছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নুরুল আমিন একজন বাঙালি ছিলেন। বাঙ্গালিদের প্রতি বিদ্বেষবশত তিনি খুনের নির্দেশ দিবেন এটা অমূলক ধারণা। ২১ ফেব্রুয়ারির মৃতরা কি আসলেই পুলিশের গুলিতে ইন্তেকাল করেছে? নাকি কমিউনিস্টরা পরিস্থিতি তাদের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য কিছু নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে?
উপরের নিখিলের ঘটনা উল্লেখ করেছি শুধু এটা অনুধাবন করার জন্য যে, বাম সন্ত্রাসীরা যে কোনো কাজ করতে পারে। এমনকি নিজ দলের বড় সম্পদকেও অবলীলায় খুন করতে পারে। আর সাধারণ মানুষকে খুন করে আন্দোলনের ফলাফল নিজেদের দিকে নিয়ে আসা তো মামুলি ব্যাপার।
তথ্যসূত্র :
১. জাসদের উত্থান পতন / মহিউদ্দিন আহমেদ / পৃষ্ঠা ১৪৫
২. ১৪৪ ধারা ভঙ্গ / জাহীদ রেজা নূর / প্রথম আলো / ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
৩. পূর্ববাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি / ৩য় খন্ড / বদরুদ্দীন উমর / সূবর্ণ প্রকাশন / পৃ. ২৩৩
৪. ভাষা আন্দোলন / বাংলাপিডিয়া
৫. The All-Pakistan Legal Decisions. 1949. p. 6.
৬. আহমদ, রফিক উদ্দিন / বাংলাপিডিয়া
৭. জববার, আবদুল / বাংলাপিডিয়া
৮. ভাষা আন্দোলন : সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন / মোস্তফা কামাল/ পৃ.-৮১
৯. সাক্ষাৎকারে সরদার ফজলুল করিম/ https://arts.bdnews24.com/archives/2092
১০. রহমান, শফিউর / বাংলাপিডিয়া
কি গিলানো হলো আমাদেরকে এতোদিন 🙈🙊
উত্তরমুছুনঅসাধারণ লেখনী আফগানি ভাই। ছোট থেকে কি জানতাম এসব!!
উত্তরমুছুনকী জানলাম কী ঘটেছিল।
উত্তরমুছুনআজিব তামাসা।
কি গিলানো হলো আমাদেরকে এতোদিন,,আমার আগে থেকে এইটা নিয়ে সন্দেহ ছিলো কারণ ভাষা আন্দোলন এর বড় কোন নেতা খুন হওয়ার খবর কখনো শুনি নাই,,তা এরা কারা এতোবছর আমরা যাদের গল্প মুখস্থ করলাম আজকে জানলাম
উত্তরমুছুনসম্পূর্ণ এক অজানা ইতিহাস জানলাম আফগানী ভাই।
উত্তরমুছুনসত্য নিয়ে স্পষ্ট বলায় আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
উত্তরমুছুনAllah apnake nek hayat dan korun
উত্তরমুছুনধন্যবাদ ভাই
উত্তরমুছুনঅদেখা ইতিহাস, প্রতিদিনই মিথ্যা ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছি।
উত্তরমুছুনBeing astonished reading this article
উত্তরমুছুনআশ্চর্য
উত্তরমুছুনআল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আপনি যে চেপে রাখা সত্যকে তুলে ধরেছেন তাঁর জন্য আপনাকে অনেক মোবারকবাদ জানাই
উত্তরমুছুনদেশের জন্মাটাই মিথ্যার ওপর নির্ভর করে হয়েছে।
উত্তরমুছুনতাহলে কি এতদিন আমরা বানোয়াট পুঁথি পাঠ শুনলাম৷
উত্তরমুছুনপ্রয়োজনের তাগিদে ইতিহাস বদল করা হয় সেটার বাস্তব প্রমান পেলাম।
উত্তরমুছুন