আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে থাকে। প্রশাসনে অতি দলীয়করণের কার্যক্রম চলতে থাকায় দেশব্যাপী মাঠ প্রশাসনে স্থবিরতা দেখা দেয়। গত ১৩ বছরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাই, দখলদারিত্ব ও খুনের মতো গুরুতর অপরাধ বেড়েছে। সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থানায় থানায় পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনা।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুসারে দেখা যায় ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল জুলাই পর্যন্ত ১২ বছরে খুন হয়েছে ৪৬৫০৯ টি। এই বিশাল সংখ্যাই আমাদের ধারণা পেতে সহায়তা করে কী পরিমাণ আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে দেশে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ২৯৫৮ টি, ২০১০ সালে ৪০১৭টি, ২০১১ সালে ৩৯৮৮টি, ২০১২ সালে ৩৯৮৮টি, ২০১৩ সালে ৪৫৮৮টি, ২০১৪ সালে ৪৫২৩টি, ২০১৫ সালে ৪০৩৫টি, ২০১৬ সালে ৩৫৯১টি, ২০১৭ সালে ৩৫৪৯টি, ২০১৮ সালে ৩৮৩০টি ২০১৯ সালে ৩৯৮৭ টি, ২০২০ সালে ৩৪৫৫ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায় প্রায় ৭০% মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। যেসব ঘটনায় খুনীরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী সেসব ঘটনায় খুনীদের গ্রেপ্তারই করা হচ্ছে না। অন্যান্য ঘটনায় খুনীদের গ্রেপ্তার করা হলেও পুলিশের দূর্বল তদন্ত রিপোর্টের জন্য বেশিরভাগ খুনীরাই জামিন পেয়ে বের হয়ে যাচ্ছে এবং ভিকটিম পরিবারকে নানানভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
এসব খুনের মধ্যে সিংহভাগ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। এছাড়া খুনের একটা বড় অংশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও ঘটেছে। গত ১৩ বছরে ২৮৬৪ জন মানুষ খুন হয়েছে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যেকার দলীয় কোন্দলে খুন হচ্ছে প্রচুর মানুষ। শুধু ২০১৮ সালে ছাত্রলীগ খুন করেছে ৩১টি। দৈনিক প্রথম আলোর রিপোর্টে দেখা যায়, ২০০৯-২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ হয় অন্তত ৪৩২ টি, আহত হয় ১ হাজার ৫ শতাধিকেরও বেশি। প্রথম পাঁচ বছরে খুন হয়েছে ৫৫ জন, কিন্তু পরবর্তী ৫ বছরে খুন হয় ১২৯ জন; যা প্রথম ৫ বছেরর খুনের সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি।
এর মধ্যে রয়েছে স্কুল ছাত্রও। ২০১৭ সালের শেষদিকে ছাত্রলীগ প্রতিটি স্কুলে তাদের তাদের স্কুল কমিটি দেয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর তাদের নোংরা রাজনীতি শুরু হয় স্কুল পর্যায়ে। ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের নোংরা রাজনীতির বলি হয় কলেজিয়েট স্কুলের ১০ শ্রেণীর ছাত্র আদনান ইসফার। স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করে চন্দনপুরা এলাকার ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরের অনুসারী মাঈন ও তার সহযোগীরা।
এর মধ্যে রয়েছে স্কুল ছাত্রও। ২০১৭ সালের শেষদিকে ছাত্রলীগ প্রতিটি স্কুলে তাদের তাদের স্কুল কমিটি দেয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর তাদের নোংরা রাজনীতি শুরু হয় স্কুল পর্যায়ে। ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের নোংরা রাজনীতির বলি হয় কলেজিয়েট স্কুলের ১০ শ্রেণীর ছাত্র আদনান ইসফার। স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করে চন্দনপুরা এলাকার ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরের অনুসারী মাঈন ও তার সহযোগীরা।
স্থানীয় যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামধারী ক্যাডাররাও এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজি এবং দখলবাজি করছে। এসব ক্যাডার এলাকার ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ীদের অথবা অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের টার্গেট করে। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। অনেকে প্রাণ ভয়ে গোপনে চাঁদা দেন। ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে তারা থানা পুলিশকে এসব বিষয়ে অবহিত করেননি বা করেও কোন ফল হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীকেই বিপদে পড়তে হয় এবং তাকে প্রকাশ্যেই খুন করা হয়।
কেউ বাড়ি নির্মাণের কাজ ধরলেই কয়েকদিনের মধ্যেই সেখানে চাঁদাবাজরা উপস্থিত হয়। প্রথমে তারা খোঁজ করে বাড়ির মালিককে। তাকে না পেলে খোঁজা হয় ঠিকাদারকে। তাকেও না পেলে খোঁজ করা হয় দারোয়ানকে। দারোয়ানের কাছে একটি চিরকুট ও মোবাইল ফোন নম্বর ধরিয়ে দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়, তাদের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে চাঁদা নিয়ে হাজির হতে বলা হয়। কখনো বলা হয়, মালিককে চাঁদার টাকা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে। সময় মতো এসে চাঁদার টাকা নিয়ে যাবে তাদের লোক। এতে কোনো রকম ব্যত্যয় ঘটলেও শুরু হয় এ্যাকশন। দারোয়ান অথবা নির্মাণ শ্রমিককে পায়ে গুলী করে ভয় দেখানো হয়। চাঁদা না দিলে এর পরিণতি কি হতে পারে বাড়ির মালিক ও ঠিকাদারের পরিণতি কি হতে পারে তা বুঝিয়ে দেয় তারা গুলী চালিয়ে। চাঁদা না দেয়ায় ৯ মে ২০০৯ গোপীবাগের ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহানকে গুলী করে হত্যার চেষ্টা চালায় সন্ত্রাসীরা। গুলী লক্ষ্যভ্রস্ট হওয়ায় বেঁচে যান তিনি।
আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের মাস খানেকের মধ্যে শুরু হয়েছে বেশ কয়েকটি হত্যাযজ্ঞ। ২০০৯-এর জানুয়ারি মাসে পুরনো ঢাকায় ডিশ ব্যবসায়ী আজগরকে হত্যা করে লাশ ১৫ টুকরো করে সন্ত্রাসীরা। ১১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের চরকমলাপুরে চর দখল করা নিয়ে সংঘর্ষে আইয়ুব প্রামাণিক, আমিন প্রমাণিক, শিরজান প্রামাণিক ও মোসলেহ উদ্দিন নিহত হন। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়িতে মা ও তার দুই মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। একই দিন রাতে ফকিরাপুল বাজারের সামনে ৩২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন সুমনকে আটকে গুলী করে সন্ত্রাসীরা। এভাবে খুনের মহোৎসবের মধ্যে দিয়েই চলেছে দশটি বছর।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রখ্যাত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি তাদের পেশাগত দৃঢ় কর্মকাণ্ডের কারণে ঢাকায় নিজ বাসভবনে খুন হতে হয়। আজ পর্যন্ত এর কোন সুরাহা হয় নি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুনীদের গ্রেপ্তার করার ঘোষণা দিলেও আজ পর্যন্ত খুনীদের শনাক্তই করেনি পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়ে মন্তব্য করেন “আমরা কারো বেডরুম পাহারা দিতে পারবো না”।
২০১২ সালের ৯ই ডিসেম্বর ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে দিনে দুপুরে খুন হন বিশ্বজিৎ দাস। বিশ্বজিৎ ছিলেন একজন দর্জি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাকে বিএনপি কর্মী মনে করে চাপাতি ও দা দিয়ে কুপিয়ে দিনে দুপুরে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে তাকে হত্যা করা হয়। এমন ঘটনা গত দশ বছরে প্রচুর ঘটেছে। কিন্তু বিশ্বজিৎ একজন হিন্দু হওয়াতে এবং অরাজনৈতিক ব্যাক্তি হওয়াতে এই খুনটি খুব আলোচিত হয়।
আলোচিত হত্যাকান্ডের মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন। এ হত্যাকান্ডের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে র্যাব-১১ জড়িত ছিল। এর মধ্যে র্যাব-১১ এর শীর্ষ তিন কর্মকর্তার নামও উঠে আসে। পরে তারা আদালতে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। র্যাব সদর দফতরের তদন্তেও বিষয়টি উঠে আসে। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দি ৭টি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির চন্দন সরকার ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামও রয়েছেন। এ ঘটনার মূল হোতা বলে পরে প্রকাশ পায় নূর হোসেনের নাম। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন।
আরেকটি আলোচিত হত্যাকান্ড হলো ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যা। ২০১৪ সালের ২০ মে একরামুলকে কুপিয়ে এবং পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় পুরো দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অভিযোগের তীর উঠে স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে।
এছাড়া হলি আর্টিজানে জঙ্গীদের হত্যাকাণ্ড, কুমিল্লার তনু হত্যা, অভিজিৎ হত্যা, জুলহাস হত্যা, প্রকাশক দীপন হত্যা, কয়েকজন বিদেশী নাগরিক হত্যা, বাঁশখালীতে নির্বিচারে গুলি করে ৫ গ্রামবাসীকে হত্যা, প্রকাশ্য দিবালোকে চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খুন, পুরান ঢাকায় মসজিদে বেলাল হোসেন নামের একজন মুয়াজ্জিনকে হত্যা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র নাজিম উদ্দিন হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি ছিল খুব আলোচিত।
গত ১০ বছরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল শোচনীয় পর্যায়ে। একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটেছেই। মারামারি, হানাহানি, দখলবাজি, পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিশোধ নেয়া, প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলাসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলেছে দেশজুড়ে। বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিকান্ড, দখলবাজি ও প্রতিহিংসাবশত প্রকাশে খুনের ঘটনা শুরু হয় শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই। যেন একযোগে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মহোৎসব শুরু হয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। প্রকাশ্যে বেরিয়ে পড়ে লাফিয়ে থাকা খুনি ও দাগী সন্ত্রাসীরা। বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীরাও দেশে এসে আশ্রয় নেয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায়। খুনের তালিকায় রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অবুঝ শিশুসহ সাধারণ নাগরিক।
বাংলাদেশের আলোচিত হত্যাকান্ডগুলো একনজরে দেখা যাক
নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন
২০১৪ সালের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকান্ড হলো নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন। এ হত্যাকান্ডের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে র্যাব-১১ জড়িত ছিল। এর মধ্যে র্যাব-১১ এর শীর্ষ তিন কর্মকর্তার নামও উঠে আসে। পরে তারা আদালতে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। র্যাব সদর দফতরের তদন্তেও বিষয়টি উঠে আসে।
গত বছরের ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দি ৭টি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির চন্দন সরকার ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামও রয়েছেন। এ ঘটনার মূল হোতা বলে পরে প্রকাশ পায় নূর হোসেনের নাম। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন।
র্যাব এ ঘটনার পর বিষয়টি অস্বীকার করে এলেও গণমাধ্যমে বিষয়গুলো প্রকাশ পেতে থাকলে র্যাব-১১ এর তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে প্রতিরক্ষা বিভাগ। এরা হলেন- তৎকালীন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার এমএম রানা। এ তিন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার পরই পুলিশ তিন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে। প্রথমে তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করলেও পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ পর্যন্তএই হত্যাকা ন্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় ২৪ জন আসামী গ্রেফতার হয়েছেন। মূল আসামী নূর হোসেন কলকাতায় গ্রেফতার হয়েছে। তবে এ ঘটনার ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্তপুলিশ এই মামলার তদন্তপ্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারেনি।
একরাম হত্যা
বছরের আলোচিত হত্যাকান্ডগুলোর মধ্যে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যা। গত ২০ মে একরামুলকে কুপিয়ে এবং পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় পুরো দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অভিযোগের তীর উঠে স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে। তবে এই ঘটনার পর নিহতের ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে মাহাতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়, যার মধ্যে ৩১ জন গ্রেফতার রয়েছেন। পলাতক আছেন ২৫ জন। গ্রেফতারদের মধ্যে ফেনীতে রয়েছেন ৩০ জন এবং ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার।
বিহারী পল্লীর হত্যাকান্ড
গত ১৪ জুন মিরপুর কালশীর কুর্মিটোলা বিহারী পল্লীতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগে ১০ জন নিহত হন। আতশবাজি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বিহারীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জেরে বিহারী পল্লীতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে একই পরিবারের ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনার কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
অভিযোগ আছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার নির্দেশে পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় যুবলীগ কর্মীরা এই হামলা চালায়। তবে ইলিয়াস মোল্লা এবং পুলিশ এই ঘটনা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য এবং ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার দিন পুলিশ মারমুখী অবস্থানে ছিল। এমনকি বিহারী পল্লী ভাংচুরের সময় দুর্বৃত্তদের সঙ্গে পুলিশও ছিল।
মাওলানা ফারুকী হত্যাকান্ড
গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপক ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।এই ঘটনাটি ধর্মীয় মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা ঘটিয়েছে বলে দাবি করে আসছে পুলিশ। ফারুকীর রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মতাদর্শ ও স্বার্থগত কারণে জামায়াতপন্থী উপস্থাপকরা এই হত্যাকা ন্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে চার মাসেও এই হত্যাকা-ের বিষয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি গোয়েন্দারা।
এই ঘটনার দিন রাতেই ফারুকীর ছোট ছেলে ফয়সাল ফারুকী শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে ডাকাতি ও হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়। পরে এজাহারে উল্লেখিত ডাকাতির বিষয়ে ফয়সাল নিজেই প্রশ্ন তুলেন। মামলার এজাহারে ডাকাতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তা তিনি জানতেন না বলে দাবি করেন।
এদিকে গত ৪ সেপ্টেম্বর ফারুকী হত্যার ঘটনায় ছয় টিভি উপস্থাপকের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে আদালতে একটি মামলা করা হয়। মামলাটি থানায় করা আগের মামলার সঙ্গে যুক্ত করে একসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
মগবাজারে তিন খুন
গত ২৮ আগস্ট মগবাজারের নয়াটোলা এলাকার সোনালীবাগের একটি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলীতে নিহত হন বৃষ্টি আক্তার ওরফে রানু, তার বাড়ির ভাড়াটে মুন্না ও বিল্লাল হোসেন। পুলিশ জানায়, জমিজমা সংক্রান্তবিরোধের জেরে এই হত্যাকা-টি ঘটায় কালা বাবু।
ঘটনার পরের দিন নিহত বৃষ্টি আক্তার রানুর ভাই শামীম ওরফে কালা চাঁদ রমনা থানায় শাহ আলম ওরফে কালা বাবুকে প্রধান আসামী করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, কালা বাবু ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা সম্পত্তি সংক্রান্তবিরোধের জেরে কালা চাঁন ওরফে শামীমের কাছে চাঁদা চেয়ে আসছিল। চাঁদা না দেয়ায় তারা কালা চাঁনের বোনকে ও তার বাড়ির দুই ভাড়াটিয়াকে গুলী করে হত্যা করে।
এদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টায় রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস রেলগেট এলাকায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’-এ প্রধান আসামী শাহ আলম ওরফে কালা বাবু নিহত হন। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে এ কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী আল আমিন, ২০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোঃ সাইফুল্লাহ সিয়াম, মোঃ রমজান আলী, মোঃ রুবেল মিয়া ওরফে সানি, মোঃ মারুফ হোসেন, মোঃ শাফিন লস্করকে গ্রেফতার করে র্যাব।
কেরানীগঞ্জে চার খুন
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চার খুন আলোচিত হত্যাকান্ডের মধ্যে অন্যতম। চুরি ও ডাকাতির টাকা, মালামাল ভাগাভাগি এবং পরকীয়ার সম্পর্কের জেরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমপুর গ্রামে একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দুই শিশুসহ একই পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন, সাজু আহমেদ, তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম রঞ্জি, তাদের ছেলে ইমরান ও মেয়ে সানজিদা।
এ ঘটনায় সাজুর ভাই বশির উদ্দিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশের দাবি, নিহত সাজু ডাকাত দলের সদস্য ছিল। মামলার পর অভিযান চালিয়ে এ হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় নাছির, মোঃ সুমন, জনি, আ. মজিদ, মোঃ রফিক, সাহিদা বেগম, মুক্তা বেগম ও রানী বেগমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাজু এদের সহযোগী হিসেবে ডাকাতি করত বলে পুলিশ জানায়।
সুন্দরবনে কথিত ক্রসফায়ার
সুন্দরবনে পুলিশের সঙ্গে দুই দফায় বন্দুকযুদ্ধে বনদস্যু কাশেম বাহিনীর ১৩ সদস্য নিহত হয়। গত ৫ অক্টোবর ভোরে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটির জিরবুনিয়া গ্রামে দুজন এবং দুপুর ২টার দিকে কালাবগি সংলগ্ন সুন্দরবনের গহীনে হড্ডায় ১১ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় পাইকগাছা থানায় নিহতদের বিরুদ্ধে তিনটি ও পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। এর আগে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বন্দুকযুদ্ধে একসঙ্গে এত সংখ্যক নিহতের ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশের দাবি,বনদস্যু কাশেম বাহিনী চাঁদার দাবিতে দেলুটির জিরবুনিয়া গ্রামের কলেজশিক্ষক প্রশান্তকুমার ঢালীকে অপহরণ করে। এ সময় জনতা ও পুলিশ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গণপিটুনি ও পুলিশের গুলীতে করিমুল ও আজিবুর নামে দুই বনদস্যু নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে জনতার সহায়তায় ১১ ডাকাতকে আটক করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সুন্দরবনের গহীনে গাংরকির চরে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে দুপুর ২টার দিকে কাশেম বাহিনীর অন্য সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলী করে। এরই একপর্যায়ে গুলীবিদ্ধ হয়ে আটক ১১ বনদস্যু মারা যায়। তবে স্থানীয়দের দাবি, এরা সবাই বনদস্যু নয়। পরিবারগুলোও বলছে, পুলিশ ঠান্ডা মাথায় তাদের হত্যা করেছে।
রাজশাহীতে শিক্ষক হত্যা
গত ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিউল ইসলাম নিলনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৬ নভেম্বর নগরীর মতিহার থানায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর এন্তাজুল হক বাদী হয়ে মামলা করেন। হত্যাকা ন্ডের ক্লু উদঘাটনে গোয়েন্দারা মাস্টার্সের ফলপ্রার্থী এক ছাত্রীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। হত্যাকা ন্ডের পরপরই ওই শিক্ষকের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
পরবর্তী সময়ে র্যাবের হাতে গ্রেফতার কাটাখালী পৌর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মানিক, যুবদল কর্মী সবুজ, পিন্টু, আল-মামুন ও সিরাজুল ইসলাম কালুকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ হাজির করে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় র্যাব। আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার জিন্নাত, আরিফ ও সাগরকে দুই দফায় তিন দিনের এবং ইব্রাহিম খলিল ওরফে টোকাই বাবুকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। র্যাব ও পুলিশের দাবি, কাটাখালী যুবদলের এক নেতার স্ত্রীর সঙ্গে ওই শিক্ষকের অসৌজন্যমূলক আচরণের সূত্র ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটে।
অভিজিৎ রায়
২০১৫ সালের শুরুতেই ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অভিজিৎ রায়কে। পরদিনই এর দায় স্বীকার করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। হত্যাকান্ড তদন্তেবাংলাদেশ ঘুরে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এফবিআই) সদ্যরা ১১টি আলামত নিয়ে যায়। হত্যাকা ন্ডে অভিজিৎ রায়কে হত্যার হুমকি দেয়ায় শফিউর রহমান ফারাবি নামে এক যুবককে আটক করে র্যা ব। পরে র্যা ব দাবি করে, অভিজিৎ রায়কে হত্যার হুমকি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে ফারাবি।
ওয়াশিকুর রহমান
চলতি বছরের ৩০ মার্চ সকালে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বেগুনবাড়িতে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পালানোর সময় এলাকার কয়েকজন হিজড়া দুই হত্যাকারীকে আটকে পুলিশে দেয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানায়, হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।’ তবে কয়েক দফায় রিমা ন্ডেও উল্লেখযোগ্য তথ্য পায়নি পুলিশ।
ব্লগার অনন্তবিজয় দাস
একইভাবে মে মাসের ১২ তারিখ সিলেটে খুন হন ব্লগার অনন্তবিজয় দাস। ডিএমপি’র গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই হত্যাকান্ড আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের স্লিপার সেলের কাজ। তবে ২৭ দিন পর জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় দৈনিকের ফটোসাংবাদিক ইদ্রিস আলীকে গ্রেফতার করে সিআইডি পুলিশ।
নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়
গত ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ গোড়ানে ভাড়া বাসায় ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় (২৭) দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন। সেদিন রাতেই তার স্ত্রী আশা মনি বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
এ ঘটনায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই জঙ্গি নাহিয়ান ও মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে ডিবি। এই হত্যাকা ন্ডের ৭ দিন আগে সাইফুল ইসলাম নামে একজনকে জঙ্গিকে গ্রেফতার করলেও হত্যাকা ন্ডের পরিকল্পনা করার কথা স্বীকার করে সাইফুল। তবে গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লগার নিলাদ্রী হত্যাকা ন্ডের সঙ্গে ছাত্রশিবির জড়িত বলে জানায় পুলিশ।
বায়েজিদে ল্যাংটা ফকির ও আব্দুল কাদের হত্যা
গত ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার বাংলাবাজারে মাজারে প্রবেশ করে ল্যাংটা ফকির ও আব্দুল কাদের নামে দু’জনকে নৃশংসভাবে গলা কেটে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ ‘জেএমবি’র সদস্য সুজন আটক হওয়ার পর হত্যাকা ন্ডের দায় স্বীকার করে বলে জানায় পুলিশ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বলেন, সুজন ল্যাংটা ফকিরসহ দু’জনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। ‘কথিত পীর’ ল্যাংটা ফকিরকে ভক্ত-মুরিদরা সিজদা দিয়ে শ্রদ্ধা জানাত। এ কর্মকান্ডকে ইসলাম বিরোধী মনে করে জেএমবি ল্যাংটা ফকিরকে খুন করা হয়। বাঁচাতে এসে খুন হয় কাদের।
ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেল্লা হত্যা
২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর কূটনীতিক পাড়া গুলশানে ৯০ নম্বর সড়কে ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেল্লাকে গুলি করে খুন করে দুর্বৃত্তরা। পরে এ ঘটনায় দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’ এই দাবি জানিয়েছে। ওয়েবসাইটটি তাদের অফিসিয়াল পেইজে এ সংক্রান্ততথ্য উপাত্ত তুলে ধরে।
এ ঘটনায় মো. রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল ওরফে বিদ্যুৎ রাসেল, মিনহাজুল আরিফিন রাসেল ওরফে ভাগিনা রাসেল ওরফে কালা রাসেল, তামজিদ আহমেদ রুবেল ওরফে মোবাইল ওরফে শুটার রুবেল এবং শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরীফ নামে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।
জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও হত্যা
অন্যদিকে গত ৩ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে রংপুরের কাউনিয়ায় মাহিগঞ্জ আলুটারি এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই বন্দুকধারীর গুলিতে জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও নিহত হন। পরে আইএসের টুইটার বার্তার বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, কুনিও হত্যায় জড়িত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
এ ঘটনায় গঠিত তদন্তকমিটির প্রধান রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির বলেন, রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে আটক জেএমবি নেতা ইসহাক আলী (২৫)।
প্রকাশক দীপন হত্যা
৩১ অক্টোবর বিকেলে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার ১৩২ নম্বর দোকানে জাগৃতি প্রকাশনার স্বত্ত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনাতেও জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়।
এ ঘটনায় ২ নভেম্বর দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান শাহবাগ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তের দায়ভার দেয়া হয় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে।
মুফতি জাহিদ হাসান মারুফ নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে আটক করা ছাড়া পৌনে ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা ও আশুলিয়ায় ২ পুলিশ সদস্য হত্যা
২২ অক্টোবর গাবতলীর দারুসসালাম থানাধীন পর্বত সিনেমা হলের সামনে চেকপোস্টে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা। এ ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে আনা হয়। তবে পরবর্তীতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান এ ঘটনাতেও জঙ্গি সংগঠন জড়িত।
অন্যদিকে, গত ৪ নভেম্বর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আশুলিয়ার বাড়ৈপাড়া এলাকায় নন্দন পার্কের উল্টো পাশে চেকপোস্টে প্রস্তুতিকালে দুর্বৃত্তদের চাপাতি কোপে নিহত হন কনস্টেবল মুকুল হোসেন (২৪)। আরেক কনস্টেবল নূরে আলমকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
এ ঘটনাতেও পরদিন দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট সাইট ইনটেলিজেন্স এ তথ্য জানায়। এ ঘটনার তদন্তেও নেই অগ্রগতি।
খিজির খান হত্যা
৫ অক্টোবর রাজধানী মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাটে জ-১০/১ নং বাড়িতে পিডিবি’র সাবেক এ চেয়ারম্যান খিজির খানকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার পরিবারের সদস্যদের হাত-পা-মুখও বেধে ফেলে যায় তারা। এঘটনার পরদিন রাজধানীর বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-৭) দায়ের করেন নিহতের ছোট ছেলে আশরাফুল ইসলাম।
খিজির খান নক্সাবন্দিয়া মুজাদ্দেদিয়ার একজন পীর ছিলেন। অনুসরণ করতেন নুরীকওম তরিকাহ। রহমতিয়া খানকাহ শরীফের ঢাকার শাখাটিও পরিচালনা করতেন তিনি। তারিকুল ইসলাম ওরফে মিঠু ও আলেক বেপারী নামে জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ জানায়, পীর খিজির খানকে খুন করেছে জেএমবি সদস্যরা।
তাজিয়া মিছিলে হামলা
২৪ অক্টোবর রাজধানীর পুরান ঢাকায় মহররম উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের হওয়ার সময় রাত আড়াইটার দিকে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে সানজুম (২৮) এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জন আহত হন। এ ঘটনায় রাজনৈতিকভাবে জামায়াত শিবিরের দিকে ইঙ্গিত করা হলেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাকেই গুরুত্ব দিয়ে তদন্তকরছে ডিবি পুলিশ।
তনু হত্যাকান্ড
২০১৬ সালের ২০ মার্চ সেনানিবাস এলাকায় নিজ বাড়ির কয়েকশ’ গজ দূরেই খুন হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু। সেনানিবাস সংলগ্ন সংরক্ষিত এলাকায় এ হত্যাকান্ড নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তবে তদন্তেউল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আজও হয়নি।
এত দিনেও খুনি শনাক্ত না হওয়ায় হতাশ তার মা-বাবা। তনুর পোশাকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলানোর এবং খুনীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার না করায় তার মা-বাবা মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি’র প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জবি ছাত্র নাজিম উদ্দিন সামাদ হত্যা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র নাজিমউদ্দিন সামাদকে গত ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীও ছিলেন সামাদ। পুলিশের মতে,নাজিম ধর্মবিরোধী বা ব্লগার ছিলেন না। তবে বিভিন্ন সময়ে মতামত তুলে ধরে ফেসবুকে লেখালেখি করতেন তিনি।
অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী
২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকায় বাড়ির কাছেই নির্মমভাবে কুপিয়ে তাকে খুন করা হয়। অধ্যাপক রেজাউল ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক এবং ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন।
কাশিমপুরে প্রধান কারারক্ষী
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের কয়েকশ’ গজ দূরে প্রধান কারারক্ষী রুস্তম আলীকে গত ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রস্তম আলী ‘সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর’ পদের দায়িত্বে ছিলেন।
জুলহাস মান্নান ও তনয়
পার্সেল দেয়ার কথা বলে গত ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল বিকেলে কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকায় ৫/৭ যুবক জুলহাস মান্নানের বাসায় ঢুকে তাকে এবং তার বন্ধু তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদক জুলহাস আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মণির খালাতো ভাই।
মাহবুব রাব্বী তনয় ছিলেন লোকনাট্য দলের কর্মী। পিটিএ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ‘শিশু নাট্য প্রশিক্ষক’ হিসেবেও তিনি কাজ করতেন। আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখা ওই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করলেও পুলিশ অভিযুক্ত করে দেশীয় উগ্রপন্থীদের।
রাজশাহীতে পীর হত্যা
শিক্ষক রেজাউল করিমের মতো একই কায়দায় গত ২০১৬ সালের ৭ মে কুপিয়ে হত্যা করা হয় শহিদুল্লাহ নামে এক ‘পীর’কে। গোয়ালন্দঘাটের পীর নূর মোহাম্মদ দয়ালের ভক্ত ছিলেন শহিদুল্লাহ। এ ঘটনায় মামলা হলেও রহস্য উদঘাটিত হয়নি।
বৌদ্ধ ভিক্ষু
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মং শু হুক (৭৫) নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০১৬ সালের ১৪ মে সকালে বাইশরি বৌদ্ধবিহারের ভেতর তার রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। জানা যায়, দুই বছর আগে বৌদ্ধমন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভিক্ষু মং শু হু সেখানে ধ্যানমগ্ন থাকতেন।
মিতু হত্যা
২০১৬ সালের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকান্ড। গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় সন্তানকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নিজ বাসার ১০০ গজ দূরে ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন মাহমুদা আক্তার মিতু। ঘটনার পর পুলিশ জানায়, জঙ্গি দমনে বাবুল আক্তারের সাহসী ভূমিকার কারণে জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে খুন করতে পারে। পরে জানা যায় এই হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার বিজেই জড়িত।
হলি আর্টিসান
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায়। হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জন এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৯ ইতালীয়, ৭ জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন। এ ঘটনায় রাতেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করে। ঘটনার পরদিন সকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ পরিচালনা করে সেনা কমান্ডোর একটি দল। কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। তারা হলো- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল।
শোলাকিয়া হামলা
গুলশান হামলার রেশ না কাটতেই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হন। আট পুলিশ সদস্যসহ আহত হন আরো ১৫ জন। তবে এ ঘটনায় জড়িত আটজনকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়।
হামলার দিনই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আবীর রহমান নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য। আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় শফিউল নামে আরেক জঙ্গি। এরপর দেশব্যাপী শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী অভিযান।
স্কুলছাত্রী রিশা হত্যা
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজের উপরে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির সুরাইয়া আক্তার রিশার পেট ও হাতে ছুরি মেরে পালিয়ে যায় টেইলার্স কর্মচারী ‘বখাটে’ ওবায়দুর রহমান। পরে তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায় রিশা। পরিবার ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নীলফামারী ডোমার থেকে ওবায়দুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দেয় সে।
নাটোরে ৩ যুবলীগ কর্মী হত্যা
নাটোরের যুবলীগ কর্মী রেদওয়ান আহমেদ সাব্বির,আবু আব্দুল্লাহ ও সোহেল আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর উদ্ধার করা হয়। নিহতদের পরিবারের অভিযোগ,র্যাব পরিচয়ে রাতে সদর উপজেলার তকিয়া বাজার থেকে তাদের তুলে নেয়া হয়। পরদিন নাটোর সদর থানায় এ ব্যাপারে জিডিও করেন তারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব। নিহত তিনজনই শীর্ষ সন্ত্রাসী। সাব্বির ও সোহেলের নামে ১৫টি মামলা আছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এমপি লিটন হত্যা
২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি গাইবান্ধা-১ এর এমপি ও আওয়ামী নেতাকে নিজ বাসায় হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই আলোচিত হত্যাকান্ডের সাথে মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির নেতা কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান। তিনি সহ আরো ছয়জনকে আদালত ফাঁসীর আদেশ দিয়েছে।
বরগুনায় রিফাত হত্যাকান্ড
২৬ জুন ২০১৯ সালে বরগুনায় রিফাত শরিফ হত্যাকান্ড ছিলো ২০১৯ সালের আলোচিত হত্যাকান্ড। স্ত্রী মিন্নির সামনে তাকে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল যুবক। প্রধান আসামী নয়ন বন্ডকে পুলিশ ক্রসফায়ারে হত্যা করে।
বুয়েটে আবরার হত্যাকান্ড
৭ অক্টোবর ২০১৯ সালে বুয়েটে আবরারকে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগ। আবরার ছিলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) -এর তডড়ৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথে তার জডড়ত থাকা নিয়ে সন্দেহ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আবরার হত্যায় জড়িত ২৬ জন ছাত্রলীগ নেতাকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। ভারতের সাথে গোলামী চুক্তির প্রতিবাদে আবরারের দেয়া ফেসবুক পোস্টের অপরাধে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
মেজর সিনহা হত্যা
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের চেকপোস্টে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গাড়ি থেকে বের হলে তাকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। এই হত্যার ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার কক্সবাজারের আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওসি প্রদীপসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। হত্যাকান্ডের সময় সিনহার সঙ্গে কক্সবাজারে ডকুমেন্টারি তৈরির কাজ করছিলেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং তাহসিন রিফাত নূর। পরে পুলিশ তাদেরকেও গ্রেপ্তার করে। পুলিশ বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করে। গত ১৩ ডিসেম্বর একই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। মামলায় যে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে ১৪ জন গ্রেপ্তার আছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।
সিলেটে পুলিশের হাতে রায়হান হত্যা
২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট মেট্রোপলিটনের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় যুবক রায়হানকে। এ ঘটনায় নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে পরের দিন ১২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রায়হান হত্যাকান্ডে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ ৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপরে সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক সৌমেন মিত্র এবং এসআই আব্দুল বাতেন ভুঁইয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুলিশের সদর পুলিশের সদর দপ্তরের তদন্ত দলের প্রতিবেদনের পর তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সদর দপ্তরের তদন্ত দলের প্রতিবেদনের পর তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে বলে জানা গেছে। এর আগে গত ৯ নভেম্বর দুপুরে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে খুন হন মুহিবুল্লাহ
চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যা¤েপ দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন রোহিঙ্গানেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে তৎপর ছিলেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন মুহিবুল্লাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কূটনীতিকরা মনে করেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বাধাগ্রস্ত করতেই মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যা¤েপ ছয় মাদরাসা ছাত্র হত্যা
গত ২২ অক্টোবর গভীর রাতে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যা¤প-১৮ তে দারুল উলুম নদওয়াতুল ওলামা আল ইসলামিয়া মাদরাসায় ছয় রোহিঙ্গাকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এরপর এ ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে তারা আদালতে ১৪৪ ধারার জবানবন্দি দেন। পুলিশ জানায়, ওই মাদরাসায় সন্ত্রাসীরা তাদের ক্যা¤প করতে চাওয়ায় মাদরাসায় ছয় ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করা হয়। এর আগেই গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুতুপালং ক্যা¤েপ নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে।
মিরপুরে সন্তানের সামনে প্রকাশ্যে সাহিনুদ্দীন হত্যা
রাজধানীর পল্লবী থানার ডি ব্লকে প্রকাশ্যে সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীন নামে এক যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসার কথা বলে বাসা থেকে ডেকে এনে এ হত্যাকাণ্ড চালায় সন্ত্রাসীরা। চলতি বছরের ১৬ মে বিকাল ৪টায় জনসম্মুখে এ ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্য দিবালোকে রোমহর্ষক ওই হত্যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। মানুষ মানুষকে কিভাবে পাষবিকভাবে হত্যা করতে পারে! নেট দুনিয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে মূল দুই আসামি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
বাইকের টাকা জোগাতে বন্ধুকে অপহরণ করে হত্যা
মোটরসাইকেলের টাকা জোগাতে বন্ধুকে অপহরণ করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে খুলনার পাইকগাছা গদাইপুর গ্রামের কলেজপড়–য়া ফয়সাল সরকার। এরপর মুক্তিপণের টাকা না মেলায় কলেজপড়–য়া বন্ধু আমিনুরকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয় ফয়সাল। এ বছরের ৭ নভেম্বর খুলনা উপজেলার পাইকগাছা আগরঘাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন অভিযুক্ত
ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পুলিশ জানায়, গত ৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমিনুরকে বাসা থেকে ডেকে নেয় বন্ধু ফয়সাল। পাইকগাছা উপজেলার আগরঘাটা বাজারের পাশে কপোতাক্ষ নদের তীরে দেখা হয় তাদের। সেখানে প্রথমে আমিনুরকে জুসের সঙ্গে মিশ্রিত করে ঘুমের বড়ি খাওয়ানো হয়। এরপর জ্ঞান হারালে
গলায় ও ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয় ফয়সাল।
জমি বিক্রির টাকা নিতে এসে দুই ভাই খুন
ভোলার চরফ্যাশনে জমি বিক্রির টাকা নিতে এসে অমিত সরকার ও দুলাল সরকার নামে দুই ভাইকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর তাদের মাথা আলাদা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলে হত্যাকারীরা। আর মাথা দুটি ঘটনাস্থলের দূরবর্তী একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে রাখে ঘাতকরা। এ বছরের গত ৭ এপ্রিল রাতে ভোলার চরফ্যাশন আসলামপুরে এ ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
ঘটনার ১৪ দিন পর ২২ এপ্রিল তিনজনকে গ্রেপ্তার করে চরফ্যাশন থানা পুলিশ। পুলিশ জানায়, আসলামপুর ইউনিয়নের আসলামপুর গ্রামের ফরাজী বাড়ির মহিবুল্লাহর বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে কাটা মাথা উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী মো. বেল্লাল, বেল্লালের শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম ওরফে আবু মাঝি ও ভাই কাশেম হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে
বলে দাবি করেছে পুলিশ।
নির্বাচনী সহিংসতায় বলি কাউন্সিলর সোহেল
গত ২২ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় সন্ত্রাসীরা কুমিল্লা নগরের পাথুরিয়া পাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে গুলি করে কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে হত্যা করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আরও পাঁচজন। পরদিন কাউন্সিলর সোহেলের ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো আট থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়াও এজাহারভুক্ত তিন আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পুলিশ জানায়, মূলত নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা চলছে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয় স্বামী
বিয়ের পরে দা¤পত্য কলহের জের ধরে স্ত্রী ও ৯ মাসের কন্যাকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয় পাষন্ড স্বামী শাহিন মুন্সি। গত ১ জুলাই রাতে বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময়ে ১২ জুলাই চট্টগ্রামের বন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহিন মুন্সিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারের পর শাহিন মুন্সি স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। সিআইডি জানায়, শাহিন সুমাইয়া (১৮) নামে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে তিন মাস হাজতবাসের পর জামিনে বেরিয়ে তাকেই বিয়ে করেন। সেই ক্ষোভ থেকে বিয়ের পরে দা¤পত্য কলহের জের ধরে একদিন স্ত্রী ও ৯ মাসের কন্যাকে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যান শাহিন মুন্সি।
জেএসএস নেতা পুশৈ থোয়াই মারমা হত্যা
বান্দরবানে অপহৃত জনসংহতি সমিতির (জেএসএস-মূল দল) নেতা পুশৈ থোয়াই মারমার লাশ ১৩ ডিসেম্বর সকালে উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন সন্ধ্যায় ডলুপাড়া থেকে একদল অস্ত্রধারী তাকে অপহরণ করে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা-রাঙ্গামাটি সড়কের আমতলিপাড়ার অদূরে তার লাশ পাওয়া যায়।
বন্ধুদের হাতে ছয় টুকরো বন্ধু
২০২১ সালের ১৩ জুলাই আশুলিয়ার নরসিংহপুরে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু বর্মণকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন তারই বন্ধুরা। হত্যার পর লাশ ছয় টুকরো করে স্কুলের আঙিনায় পুঁতে রাখেন তারা। র্যাবের তদন্তে লাশের পাঁচ টুকরো স্কুলের আঙিনা থেকে এবং বিচ্ছিন্ন মাথা ঢাকার আশকোনার একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। র্যাব জানায়, সাভারের আশুলিয়ায় প্রাইভেট পড়া নিয়ে দ্বন্দ্বে মিন্টু চন্দ্র বর্মণকে হত্যা করা হয়। আদালতে দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
নির্বাচনে হেরে নির্বাচিতকে খুন
২০২১ সালের শুরুতেই (১৬ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন তরিকুল ইসলাম। ফল ঘোষণার পরপরই পরাজিত প্রার্থী শাহাদত হোসেনের সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালান। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তরিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পরদিন নিহতের ছেলে হৃদয় খান শাহাদত হোসেনসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন