৩০ মার্চ, ২০২২

বাংলাদেশ : ইসলাম যেখানে বন্দি


বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হলেও এই আওয়ামী আমলে ইসলামপন্থীরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। এখানে ইসলামের অনুশাসন মানাই বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই ইসলাম বিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি দলটির তৎপরতার ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই প্রদান করে। ভোট চাওয়ার সময় ধর্মপ্রাণ মানুষের সহানুভূতি যোগাড়ে কাতরতা দেখায় আর ক্ষমতায় যেয়ে বামপন্থী ও আলট্রা সেক্যুলারদের পৃষ্ঠপোষকতায় লিপ্ত হয়। আওয়ামী চরিত্রের এই দ্বৈততা তুলে  ধরতেই তাদের সাম্প্রতিক শাসনামলের ইসলাম বিরোধিতার বিভিন্ন দিকের উপর আলোকপাত করা হলো।

ইসলামবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন :
শুধু ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডই নয়, সরকার একের পর এক কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বেশকিছু আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও গত ১৩ বছরে সরকার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর, বোরকাবিরোধী তত্পরতা ও পরিপত্র জারি, সংশোধনীর নামে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসে সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব আইন করছে।

সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মাথায় মরহুম অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, শুরু থেকেই তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন সংগঠন। পরবর্তীতে ওই কমিটির ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির যে রিপোর্ট দেয়—তা প্রত্যাখ্যান করে সেটি সংশোধন বা বাতিলের জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এসব দাবি ও আলেম-ওলামাদের মতামত উপেক্ষা করেই সরকার শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে এবং ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর তা সংসদে পাস হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ওই বছর ২৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ হরতালের ডাক দিলে সরকার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তা স্থগিত করা হয়। কিন্তু সে দাবি আর বাস্তবায়ন করেনি সরকার।

‘নাটোরের সরকারি রানী ভবানী মহিলা কলেজে বোরকা পরে আসতে মানা’ শিরোনামে ২২ আগস্ট একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে এবং এ সম্পর্কে কোর্টের তত্পরতার পর সরকারও উদ্যোগী হয়। বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও একটি পরিপত্র জারি করা হয়। বাংলাদেশে অনেকগুলো মাদ্রাসা ও স্কুলের নির্ধারিত ড্রেসই হচ্ছে বোরকা। সেসব মাদ্রাসা স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সরকার গত বছরের ৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতির খসড়া অনুমোদন করে। এটি বাতিল বা সংশোধনের জন্য ব্যাপক আন্দোলন, এমনকি হরতাল পালিত হলেও এখনও পর্যন্ত সরকার অনড় অবস্থানে রয়েছে। এদিকে গত বছরের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণ করে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন করা হয়। শুধু তাই নয়, এতে বিসমিল্লাহর বিকৃত অনুবাদ সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া সংবিধান থেকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন সংক্রান্ত ধারা বাদ দেয়া হয়েছে।

সবকিছুর কর্তৃত্ব আল্লাহর এবং সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর গঠনতন্ত্রে এমন কথা থাকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। একই সাথে সকল ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধের জন্য একের পর এক হুমকি ও আইন পাশ ও সংবিধান সংশোধন করেছে সরকার।

সরকারি কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য :
গত তিন বছরে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের লাগামহীন ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত বক্তব্যে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। গত বছর অক্টোবরে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন—‘এবার গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে।’ একই বছর ১৩ জুলাই এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন—‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই।’ আর সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন—‘সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়া মুছে ফেলা হবে।’ ২০০৯ সালে পৃথক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ বলেন, বোরকার ব্যবহার ৫০০% বেড়ে গেছে, সেনাবাহিনীতে মাদ্রাসার ছেলেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দেশ থেকে বোরকা তুলে ফেলতে চাই। সেনাবাহিনী থেকে ইসলামপন্থীদের বিতাড়িত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু প্রধানমন্ত্রী চাই।

২০০৯ সালের ১ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, ‘কওমী মাদরাসাগুলো এখন জঙ্গিদের প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কওমী মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে। এসব কওমী মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা কূপমণ্ডূকতার সৃষ্টি করছে। ’৭৫-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ’৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাত্ করার ফলেই এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।’ একই বছর পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা।’ রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো কওমী মাদরাসাগুলো গজিয়ে উঠেছে।’ গত ১০ ডিসেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।’

মন্ত্রীদের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজালের বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যও ছিল আলোচনার বিষয়। ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে (!)। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়।’ গত বছর ১০ ডিসেম্বর ইমামদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা ইহুদিদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।’ এর ক’দিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘জিহাদ বিদায় করতে হবে।’ ২০১০ সালের এপ্রিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। এছাড়া মার্চের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়।

সাবেক পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা। তিনি আরো বলেন, টাকা ইনকামের জন্য আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ হজ্বে প্রবর্তন করেন। তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, রাসুল(সাঃ)কে কটুক্তি করা স্বাভাবিক বিষয়,এটানিয়ে হৈচৈ করা ঠিক নয়। জাসদের আরেক নেতা মাইনুদ্দিন খান বাদল বলেন, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলেন! আওয়ামী নেতা হাসান মাহমুদ বলেন, মেয়েদেরকে বোরকার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে,তাদের নাচগান শিক্ষা দিতে হবে।  ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, কুৎসিত চেহারা ঢাকতেই মেয়েরা বোরকা পরে।

আল্লাহ, রাসুল ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তি :
গত তিন বছর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মহল থেকে আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম নিয়ে অসংখ্য কটূক্তি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবিতে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সত্ত্বেও সরকার তাদের শাস্তির পরিবর্তে অনেককে পুরস্কৃত করেছে। ২০১০ সালের ১ আগস্ট বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট দেবনারায়ণ মহেশ্বর পবিত্র কোরআন শরিফের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। রিট আবেদনে তিনি দাবি করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর বড় ছেলে ইসমাইলকে (আ.) কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বলে যে আয়াত পবিত্র কোরআন শরিফে রয়েছে, তা সঠিক নয়। তিনি দাবি করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর ছোট ছেলে হজরত ইসহাককে (আ.) কোরবানি করতে নিয়ে যান। এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা ও কোরআনের আয়াত শুদ্ধ করার জন্য দেবনারায়ণ মহেশ্বর আদালতের কাছে প্রার্থনা করেন। আদালত রিট খারিজ করে দেয়ার পর দেবনারায়ণের এ চরম হঠকারি ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে দেবনারায়ণকে পুলিশের পাহারায় এজলাস থেকে বের করে তাদের ভ্যানে প্রটেকশন দিয়ে আদালত এলাকার বাইরে নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে যায়।

২০১১ সালে ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পিতৃভূমি টুঙ্গিপাড়ার জিটি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস দশম শ্রেণীর ক্লাসে দাড়ি রাখা নিয়ে সমালোচনাকালে হজরত মোহাম্মদকে (সা.) ছাগলের সঙ্গে তুলনা করেন। এতে ওই ক্লাসের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে শঙ্কর বিশ্বাস টুঙ্গিপাড়া থেকে পালিয়ে যায়। একই বছর ২৬ জুলাই ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র হজ নিয়ে কটূক্তি করেন। সহকর্মী শিক্ষকদের সঙ্গে এক সভায় তিনি মন্তব্য করেন, ‘এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে। এভাবে বিয়ে করতে করতে ১৫-১৬টি বিয়ে করে। মুহাম্মদও ১৫-১৬টি বিয়ে করেছে। তাহলে মুসলমানদের মুহাম্মদের হজ করা স্থান মক্কায় গিয়ে হজ না করে ওই ১৫-১৬টি বিয়ে করা লোকের বাড়িতে গিয়ে হজ করলেই তো হয়।’ এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে সরকার তাকে অন্যত্র বদলি করে শাস্তির আড়ালে পদোন্নতি দেয়।

একইভাবে মানিকগঞ্জে বিশ্বজিত মজুমদার কর্তৃক রাসুল (সা.) এর জন্ম এবং পবিত্র কোরআন নিয়ে কটূক্তি, বাগেরহাটের এক হিন্দু কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদকে শিব লিঙ্গের সঙ্গে তুলনা, খুলনার পাইকগাছায় আরেক হিন্দু মহান আল্লাহ সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ হাইস্কুল গেটের কোরআনের আয়াত সংবলিত সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলা, বাগেরহাটের কচুয়ায় এক হিন্দু কর্তৃক মহান আল্লাহর ছবি ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্কন করা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে রাসুল (সা.) সম্পর্কে হিন্দু কর্তৃক চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক হিন্দুর (সা.) প্রতি কটূক্তিসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের ইসলামবিরোধী বক্তব্য স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরকম ঘটনা অনেক।

২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের সময় দেশের গুটিকয়েক নাস্তিক বিভিন্ন ব্লগে আল্লাহ, মুহাম্মদ সা., ও ইসলাম এমনসব কুৎসিত ও অশ্লীল কথা বলেছে যে তা কোনভাবেই মুদ্রনযোগ্য নয়। এসব নাস্তিক ব্লগারদের সরকার দিনের পর দিন শাহবাগে পুলিশ প্রোটেকশনে তাদের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ করার সুযোগ করে দিয়েছে। খাবার, পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করেছে। অন্যদিকে তাদের যখন হেফাযতে ইসলাম আন্দোলন শুরু করেছে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। হেফাযতে ইসলামে সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অগণিত মুসল্লিকে খুন করা হয়েছে। হেফাযত ইসলামের কর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে শত শত মামলা হয়েছে। অথচ অন্যদিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে যারা কটুক্তি করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি তো দূরের কথা তাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড :
দেশের সর্ববৃহত্ সরকারি ইসলামী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে গত তিন বছরে ব্যাপক দুর্নীতি, ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সর্ব মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও জজ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হিসেবে শামীম মোহাম্মদ আফজাল নিয়োগ পাওয়ার পরপরই শীর্ষ আলেমরা তাকে একজন প্রতিষ্ঠিত মাজারপন্থি ও কবর পূজারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। নিয়োগ পাওয়ার পর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি অবশ্য একথার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের একাধিক পীরের ঘনিষ্ঠ মুরিদ দাবিদার শামীম মোহাম্মদ আফজাল তার ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এরই মধ্যে বিদ’আতি মাজার-খানকাপন্থিদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। এসব জায়গায় হাক্কানি আলেম-ওলামাদের দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলাম ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতেই ইসলামী চিন্তা-চেতনা বিরোধী এই ডিজিকে আওয়ামী লীগ সরকার নিয়োগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী।

২০১০ সালে রমজানে সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে ইফার উদ্যোগে তাদের পছন্দের আলেমদের নিয়ে ১০০ টাকা ফিতরা নির্ধারণ করা হলে সারাদেশে বিতর্কের ঝড় ওঠে। একপর্যায়ে ফিতরার সর্বনিম্ন ১০০ টাকার স্থলে ৪৫ টাকা নির্ধারণে বাধ্য হয় তারা। দীর্ঘদিন ধরে হামদ, নাত ও ইসলামী সঙ্গীত তথা ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও বর্তমানে সেই ঐতিহ্য ম্লান হতে চলেছে। এখন এসব সংস্কৃতির বদলে অশ্লীল নাচ-গানের আসরের আয়োজন করা হয়। ২০১০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। অনুষ্ঠানে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে করমর্দনও করেন ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজাল। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার একতারা এবং শরীর দুলিয়ে নাচ-গানে বিব্রত অবস্থায় পড়েন উপস্থিত ইমামরা। এছাড়া ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে জাতীয় শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে হামদ ও নাতের বিচারক হিসেবে এমন শিল্পীদের আনা হয় যাদের অনেকেই ইসলামি সঙ্গীতের ধারার সঙ্গে পরিচিত নয়। এ নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

একইবছর ২৭ নভেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ঘটে সবচেয়ে বড় ঘটনা। ওইদিন আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ডিজির অনুরোধে ইমামদের সামনে মার্কিন তরুণ-তরুণীরা পরিবেশন করে অশ্লীল ব্যালে নৃত্য। অবশ্য এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানায় ব্যালে ড্যান্স নয় ৩৫ সেকেন্ডের ‘সুয়িং ড্যান্স’ পরিবেশন করা হয়। গত বছর ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে ফাউন্ডেশনের পরিচালক হালিম হোসেন খান অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে জনতার হাতে আটকের ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় ও তাকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে। আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ তেমন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের বিতর্কিত খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দিন কর্তৃক জাতীয় ঈদগায় ঈদুল ফিতরের নামাজে ভুল করা নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

জঙ্গিবাদী জিহাদি বই নিয়ে অপপ্রচার ও নির্যাতন :
বর্তমান সরকারের তিন বছরে আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দমনে ব্যাপকভাবে ‘জঙ্গি ও জিহাদি বই’ বিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী, বিরোধী মতকে দমন বা ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার ছিল এটি। পুলিশ যখন যাকে ইচ্ছা জিহাদি বই পাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে। এ সময় বিভিন্ন ইসলামী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়। পুলিশ জিহাদি বই উদ্বারের নামে যেসব পুস্তক আটক করে এর কোনোটিই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়। এমনকি কুরআন হাদীসকে জঙ্গী বই আখ্যা দিয়ে মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৩ বছরে নারী, শিশু-কিশোরসহ হাজার হাজার মানুষ গ্রেপ্তার ও হয়রানী করা হয়েছে শুধুমাত্র ঘরে ইসলামী বই, কুরআন ও হাদীস রাখার অপরাধে।

আলেমদের গ্রেফতার নির্যাতন :
গত তিন বছরে দেশকে অনৈসলামিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার আলেম-উলামাদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের মাধ্যমে নিষ্ক্রীয় এবং ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখার চেষ্টা চালায়। সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আলেমরা যাতে মাঠে নামতে না পারেন সে জন্যই নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৯ সালের মে মাসে মিথ্যা একটি মামলায় ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আন্দোলনের মুখে তাকে ছেড়ে দেয় সরকার। এরপরও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়নসহ সরকারের বিভিন্ন অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গত বছরের ৪ এপ্রিল মুফতি আমিনীর ডাকে সারাদেশে হরতাল পালনের পর ষড়যন্ত্রের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছুদিনের মাথায় তার ছেলে অপহরণ, তাকে গৃহবন্দি এবং ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে রাখা হয়েছে।

৫মে ২০১৩ সালে হেফাযতে ইসলাম নাস্তিকদের শাস্তির দাবীতে মহাসমাবেশ করে। সেই সমাবেশে নজিরবিহীন গণহত্যা চালিয়েছে সরকার। সব লাশ গুম করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত কতজন মানুষ সেই ঘটনায় নিহত তার কোন পরিসংখ্যান জানা যায় নি। হেফাযতে ইসলামের মহাসচিব বাবুনগরীসহ শত শত আলেমকে গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। অনেককে রিমান্ডে গুলি করা হয়েছে। এর বিপরীতে নাস্তিকদের দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মান। আলেমদের নির্যাতনের ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান। দেশে দাঁড়ি, টুপি ও ইসলামী পোষাক পরিধান করাই এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের বহু স্থানে তাফসীর মাহফিল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাফসীর মাহফিল থেকে আলেমদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয়েছে।

শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্মহীন করা
ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার নামে ধর্মবিবর্জিত নীতি বাংলাদেশে চালু রয়েছে।  অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি মুলত উগ্রধর্মনিরপেক্ষ (আল্ট্রা সেক্যুলার) শিক্ষা নীতি প্রনয়ণ করে।  যে শিক্ষা নীতিতে শিশুকিশোরদের ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে নৈতিক মান সম্পন্ন মানুষ গড়ার দিকটি অস্বীকার করা হয়।  ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির নামে ধর্মের নৈতিকতার দিকটি অনেকটা উপেক্ষা করা হয়।  বাংলাদেশে যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় সেখানে ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি মসজিদ, মন্দির প্যাগোডায় ধর্মমন্ত্রণালয়ের অধীনে করার প্রস্তাব করা হয়।  পরবর্তীতে শিক্ষা নীতি কিছুটা সংশোধন করা হলেও ধর্মশিক্ষাকে অনেকটা গুরুত্বহীন করে ফেলা হয়। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা হিসাবে তুলে ধরা হলেও অত্যন্তসংকুচিত ও সংকীর্ণ করা হয়েছে।  একই ভাবে মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত, তথ্যপ্রযুক্তি মতো বিষয়গুলোকে আবশ্যিক করা হলেও কুরআন হাদিস কিংবা ফিকাহকে বাধ্যতামুলক করা হয়নি।  

অধ্যাপক কবীর চৌধুরী প্রণীত এই শিক্ষা নীতির আলোকে এক দশকে শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা ধরণের পরিবর্তন আনা হয়েছে কিন্তু স্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে এই শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষিত হওয়া তরুণদের মধ্যে কতটা সৎ এবং নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। 
গত এক দশকে বাংলাদেশের কিশোর তরুণদের মধ্যে অবক্ষয়ের চিত্র ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এমনকি ছাত্র-শিক্ষক সর্ম্পক শ্রদ্ধার সর্ম্পকে ঘাটতি দেখা গেছে।  একটি শিক্ষা নীতির আলোকে প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থায় সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার কথা।  কিন্তু বাংলাদেশে সামাজিক অস্থিরতা আরো বেড়েছে।  কিশোর তরুণদের নৈতিক অধ;পতন ঘটেছে এবং অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের এই শিক্ষা নীতির মাধ্যমে সুশিক্ষিত মানুষ তৈরির পথ যেমন রুদ্ধ হয়েছে তেমনি অস্থিরতা বেড়েছে।   

মাদ্রাসা শিক্ষায় হস্তক্ষেপ:
মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং পদক্ষেপ প্রকৃত অর্থে নেতিবাচক। 

১. সিলেবাস পরিবর্তন
আলিয়া মাদ্রাসা সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার পরিসর সংকুচিত করে সেখানে সাধারণ শিক্ষার বিপুল সিলেবাস চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে একদিকে মাদ্রাসা ছাত্রদের সামনে সময়ে সাধারণ স্কুল কলেজের ছাত্রদের চাইতে ৪০০/৫০০ নম্বরের অতিরিক্ত বিষয় পড়তে হচ্ছে। ফলে তাদের পড়াশুনার চাপ বেড়ে গিয়ে তা এক ভারসাম্যহীনতার ফাঁদ তৈরী করেছে। শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে কেবলই কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার দিকে বেশী মাত্রায় ঝুঁকে পড়ছে। ফলে সমাজে পর্যাপ্ত জ্ঞান, মান ও মেধা সম্পন্ন ধর্মীয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তিত্ব তৈরির ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। 

২. ইসলাম বিরোধী নির্দেশনার কবলে মাদ্রাসা শিক্ষা 
মাদ্রাসা শিক্ষার সিলেবাসে কাটছাটের পাশাপাশি ইসলামি মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক নানাবিধ বাধ্যবাধকতা (যেমন- ছবি, শহীদ মিনার, মহিলা শিক্ষক, জাতীয় সংগীতসহ অন্যান্য সংগীত, সহশিক্ষা) আরোপ করা হচ্ছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে বাধ্য হয়ে মাদ্রসা শিক্ষা তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে। ধর্মীয় নিয়মবিধি লংঘন করে সরকারের নির্দেশ মানতে গিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষাঙ্গন সর্ববিষয়ে একটি অপাঙতেয় পরিস্থিতিতে পড়েছে। 

৩. মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি বৈষম্য 
শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, বৃত্তি সহায়তা, শিক্ষা উপকরণ, গবেষণা সুযোগ ইত্যাদি সকল দিক থেকেই মাদ্রাসাগুলো চরম বৈষম্যের শিকার।
 
৪. মাদ্রাসা ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা 
আওয়ামী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মাদ্রাসা ছাত্রদের ভর্তির ব্যাপারে বিপুল প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়েছে। মাদ্রাসা ছাত্ররা ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যের পরিচয় দিলেও নানান অজুহাত তুলে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় ছাড়া অধিকাংশ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মাদ্রাসা ছাত্রদের ভর্তির সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পর্যাপ্ত নম্বরের ইংরেজি পাঠ্য না থাকায় মাদ্রাসা ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিভাগে পড়ার সুযোগ পাওয়ার উপযুক্ত নয়। অথচ যুগ যুগ ধরে বিপুল সংখ্যায় মাদ্রাসা ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিষয়ে উচ্চতর অধ্যয়ন সমাপ্ত করেছেন এবং সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন ধর্মবিদ্বেষী গোষ্ঠীর নব উদ্ভাবিত বিরূপ নীতিমালার কারণে মেধাবী ও প্রতিভাবান ছাত্ররা পছন্দনীয় বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পায়নি এরূপ বিস্তর দৃষ্টান্তরয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় পেয়েও উচ্চশিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রযেছে মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্ররা।  ধর্মের প্রতি বৈরী বুদ্ধিজীবীরা অহরহই দেশে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বললেও মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে না দিয়ে শিক্ষার দুই ধারার মাধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির কৌশল গ্রহণ করেছেন।

৫. ২০২টি মাদ্রাসা বন্ধ, ৯৬টি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু 
শিক্ষার্থী না পাওয়াসহ নানা অভিযোগে ২০১৮ সন থেকে সারাদেশে ২০২ টি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী স্বীকৃত কোন মাদ্রাসায় রেজিস্ট্রেশন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৯৬টি মাদরাসায় চলতি বছরের দাখিল পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ বা পাস করতে না পারায় তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।  মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরির কারণে মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থী হ্রাসের প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষিতদের চাকরি প্রদানে অনীহা এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সীমিত করার প্রত্যক্ষ ফল দ্রুততই দেখা দিতে শুরু করেছে।

আল্লাহ, কুরআন, নবী-রাসূল ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তি
সারাদেশে ইসলামী শব্দগুলোসহ আল্লাহ ও নবী-রাসূল নিয়ে কটূক্তি যেন অহরহ হয়ে গেছে। এবং এর কোন কার্যকর শাস্তি হচ্ছে না। অথচ দেশের কোন চিপায় চাপায় কেউ শেখ হাসিনা বা শেখ মুজিব নিয়ে কিছু বললে সরকারি অ্যাকশন খুব দ্রুতত দেখা যায়। সরকারের ইসলাম বিরোধী অবস্থানকে পুঁজি করে এদেশের একশ্রেণীর সেক্যুলার প্রায়ই মুসলিম জনতাকে আঘাত করে যাচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে যখন সাধারণ জনগণ বিক্ষোভ করে তখন সরকার তৌহিদবাদী জনতার দিকে বন্দুকের নল তাক করে। যার সর্বশেষ উদাহরণ হলো ভোলার ঘটনা। পুলিশ প্রতিবাদী জনতার সমাবেশে বিনা উস্কানীতে গুলি করে ৪ জন মুসলিমকে হত্যা করে। এর কোন বিচার বা এর কোন সুরাহা কিছু তো হয় নি উল্টো ভোলার ধর্মপ্রাণ হাজার হাজার মুসল্লিকে মামলার আসামী করে হয়রানী করছে। 

জিহাদ শব্দটাকে সন্ত্রাসের নামান্তর করে ফেলা
আওয়ামী সরকার এদেশে ইসলামী রাজনীতি করা মানুষদের গ্রেফতার করে যাচ্ছে। তাদের কাছে পাওয়া ইসলামী বইকে জিহাদী বই এবং সন্ত্রাসী বই আখ্যা দিয়ে মানুষকে ইসলামী বই থেকে দূরে রাখার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে সরকার। কেউ এখন আর কুরআন পর্যন্তনিজের কাছে রাখতে সাহস পায় না। এমনও দেখা গিয়েছে কুরআনকেও জিহাদী বই হিসেবে জব্দ করেছে। কুরআন হাদীস ও ইসলামী সাহিত্যকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন এগুলো নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী বই। একইভাবে পথভ্রষ্ট জঙ্গীদের সাথে জিহাদ শব্দটাকে সন্ত্রাসী শব্দ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং হচ্ছে।     
 
দাঁড়ি-টুপি নিয়ে কটাক্ষ ও ব্যঙ্গচিত্র
ইসলামবিদ্বেষী ভিনদেশী সেবাদাসদের নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিটিভিসহ সরকারি দলের সমর্থক মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত নাটক এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে দাঁড়ি ও টুপিধারীদের খারাপ চরিত্র হিসেবে উপন্থাপন করানো হয়। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও দাড়ি-টুপি এবং পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তিকে বিশাল দৈত্যের রূপ দিয়ে ভাস্কর্য করা হয়। ইসলামের অনুসারী আলেম-ওলামাদের বিষয়ে জনমনে একটি খারাপ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। শাহবাগের কথিত জাগরণ মঞ্চে ইসলামবিদ্বেষীরা বীভৎস মুখ এঁকে মাথায় চাঁদ-তারা খচিত টুপি এবং থুতনিতে দাড়ি দেখিয়ে পবিত্র ইসলামের অবমাননা শুরু করে। এরপর থেকে বামপন্থী সংগঠনগুলো শহীদ মিনার ও শাহবাগে নিয়মিতভাবে এই ধরণের কাজ করে যাচ্ছে। 

ওয়াজ মাহফিলে নিষেধাজ্ঞা
আওয়ামী সরকারের গোটা সময়টাতেই সারাদেশে ওয়াজ মাহফিল বা ধর্মসভা আয়োজনে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। থানা ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো ওয়াজ মাহফিল করা যায় না। আর অনুমোদন চাইতে গেলে বহুরকম শর্তের বিড়ম্বনা। যেমন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সভার সভাপতি বা প্রধান অতিথি হিসেবে রাখতে হবে। কে বা কারা বক্তা হিসাবে থাকবেন তাদের ব্যাপারে আগে থেকেই ছাড়পত্র নিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আলোচনা করতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো আলোচনা হবে না তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের কাজের প্রশংসা করতে হবে। জিহাদ বিষয়ক কোনো আলোচনা করা যাবে না। এতসব মেনে যেসব ওয়াজ মাহফিল আয়োজিত হয়েছে সেসব ক্ষেত্রেও ওয়াজ মাহফিলে মাইক বন্ধ করা, মাহফিল থেকে বক্তাকে গ্রেফতার করা, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া, ছাত্রলীগের হামলা প্রভৃতি ঘটনা ঘটেছে বিস্তর। সাম্প্রতিক মিজানুর রহমান আযহারী ও তারেক মনোয়ারের প্রায় প্রতিটি মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। 

জুমআ'র খুতবা নিয়ন্ত্রণ
দেশের প্রায় সকল মসজিদে জুমআ’র নামাজে খতিব ইমামদের খুতবার ওপর বিশেষ নিয়ন্ত্রণ আরোপের উদ্যোগ নেয় সামীম আফজাল ইসলামী ফাউন্ডেশনের নাম করে । ইমামদেরকে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে নিয়ে থানা, প্রশাসন বা আওয়ামী নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে পরামর্শ-নির্দেশ প্রদান করা হয় যাতে তারা সরকার বা ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে যায় এমন কোনো বক্তব্য না দেন। আবার এমন কোনো বক্তব্যও যাতে না করা হয় যা থেকে তরুণ ও যুবকদের মধ্যে ইসলামের বিদ্রোহাত্মক চেতনা ছড়িয়ে পড়ে। নির্দেশনা অনুসরণে কোনোরূপ ব্যত্যয় হলে ইমামদের হয় চাকরিচ্যুতি হয়েছে অথবা মামলা, মারধর বা কোনো না কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গোপনে খুতবা রেকর্ড করার তথ্যও পাওয়া যায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে লিখিত খুতবা তৈরি করে মসজিদগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে এবং নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন ইমামগণ নিজ নিজ খুৎবার পরিবর্তে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত খুতবা পড়ে শোনান। এভাবে ইমামদের চিন্তা ও বক্তব্যের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করার বহুমুখী প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।

ইসলামি রাজনীতি নির্মূল অভিযান
বিভক্তি ও বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে গত এক দশকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা সুসংহত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ শক্তির নামে পুরো জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির নামে ইসলামপন্থী রাজনীতিকে প্রতিপক্ষ হিসাবে হাজির করা হয়েছে। যার প্রধান টার্গেট হয়েছে দেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। কার্যত এ দেশের সমাজ এবং রাজনীতি থেকে ইসলামী মুল্যবোধ ও বিশ্বাসের মূলোৎপাটনের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ইসলামপন্থীদের তরুণ প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হিসাবে তুলে ধরা হয়। এজন্য জনমত গঠনের পাশাপাশি ইসলামপন্থী দলগুলো এ দেশের রাজনীতি থেকে দূরে সরে রাখার নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। 

দেশি-বিদেশি ইসলাম বিদ্বেষী একটি মহলকে খুশী করে ক্ষমতা সংহত করার জন্য আওয়ামী লীগ গত এক দশকে জামায়াতে ইসলামীর ওপর নানা ধরনের নিপীড়নমুলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের অভিযোগ এনে সাজানো বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সারা দেশে দলটির রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম ও বিচারবর্হিভুতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এমনকি দলটির নারী কর্মীদের ওপর নানা ভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের মূলে ছিলো এ দেশে ইসলামপন্থী রাজনীতির বিকাশ রুদ্ধ করা। দেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী দলটিকে নির্মূল করার পর অন্য ইসলামপন্থী দলগুলোর ওপর দমন পীড়নের পাশাপাশি বিভেদ ও বিভক্তি বাড়ানো হয়েছে। 

সরকারের পৃষ্টপোষকতায় একটি নাস্তিক্যবাদী চক্র মহানবী স. কে অবমাননা করায় হেফাজতে ইসলাম নামে অরাজনৈতিক একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিলো। সেই সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও নিপীড়ণ চালানো হয়। আওয়ামী লীগ প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে নির্বাচনের সময় ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে এক ধরণের সহযোগিতার সর্ম্পক গড়ে তোলে। আবার ক্ষমতা সংহত করার পর ইসলামপন্থী রাজনীতি নির্মুলের সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এখনও আওয়ামী লীগ একই দ্বৈতনীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ইসামপন্থী রাজনীতি দমনের নামে সমাজ থেকে ইসলামের প্রভাব কমিয়ে আনার লক্ষ নিয়ে দলটি কাজ করছে। আওয়ামীলীগ সরকারের ওপর প্রবল ভাবে প্রভাবশালী বামপন্থী ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো এ ক্ষেত্রে প্রধান ভুমিকা পালন করছে।

জাকির নায়েক ও পিস টিভির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র 
ভারতীয় নাগরিক ডা. জাকির নায়েক ইসলাম প্রচারে সমসাময়িক বিশ্বে এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তুলনামূলক ধর্মতত্বে আগাধ পান্ডিত্বের অধিকারী ডা. জাকির নায়েক একজন অসাধারণ বাগ্মী। ধারণাতীত স্মৃতিশক্তির অধিকারী ডা. জাকির আল-কুরআনসহ প্রায় সকল প্রধান প্রধান ধর্মের ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে অনর্গল রেফারেন্স প্রদানে সক্ষম একজন ধর্মতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক। 

তাঁর বক্তৃতায় ও প্রশ্নোত্তরে ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তেবিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে ইসলামকে জানার ও অনুধাবনের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর উদ্যোগে পিস টিভির মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের এক মহান কাজ পরিচালিত হয়ে আসছিল। তিনি উন্নত গবেষণার ভিত্তিতে ইসলাম প্রচারের কাজ এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী রিসার্চ ফাউন্ডেশন। দক্ষ ও যোগ্য ইসলাম প্রচারক তৈরীর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বিশ্বব্যাপী দুর্গত মুসলমানদের সাহায্যার্থে তহবিল গঠন করে মানবসেবার কাজে হাত দেন। বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় তার বক্তৃতার ডাবিং সারা বিশ্বে বিপুল শ্রোতাকে নিবিড়ভাবে আকর্ষণ করে। দেশে তাঁর চেতনার আদলে গড়ে উঠে পিস পাবলিকেশন্স ও পিস স্কুল। 

তাঁর বক্তৃতা বা উপস্থাপনায় কোথাও সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতামূলক কোন মন্তব্য শোনা যায়নি। এ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ এনে ভারত সরকারকে নোট প্রদান করে। ডা. জাকির নায়েকের বক্তৃতা ও লেখনীতে এদেশে যুব সমাজ জঙ্গীবাদে ঝুঁকে পড়ছে এরূপ অভিযোগে বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়। উল্লেখ্য যে, আনুষ্ঠানিক নিষিদ্ধ ঘোষণার বহু পূর্ব হতেই কেবল অপারেটরদেরকে পিস টিভি সম্প্রচার সীমিত করে তোলার নির্দেশ দেয়া হচ্ছিল। পিস নামের সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় হয়। বিপুল সংখ্যক ছাত্রের শিক্ষাজীবনে নেমে আসে বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ পেশাগত সংকটে পতিত হন। শত শত বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ হারিয়ে যায়। পিস প্রকাশনার উপর নেমে আসে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার খড়গ। এভাবে প্রমাণহীন কল্পিত অভিযোগে ইসলাম কেন্দ্রিক একটি বিশাল সেবা কার্যক্রমকে স্থবির করে  ফেলা হয়।

বাংলাদেশের অনুরোধে ভারত সরকার ডা. জাকির নায়েকের সেদেশেও সকল কার্যক্রমকে কার্যত বন্ধ করে দেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে ডা. জাকির নায়েক বিদেশের অবস্থান করে তাঁর তৎপরতার ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগ মোকাবিলায় সচেষ্ট রয়েছেন। 

ইসলামী প্রতিষ্ঠান দখল 
আওয়ামী শাসনামলের কৌশল ছিল ইসলামী প্রতিষ্ঠান দখল করা। বিভিন্ন স্থানে ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল বা প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরশিপে অনেক কিন্ডার গার্টেন, মাদ্রাসা, এতিমখানা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, এনজিও গড়ে উঠেছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে এসব এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো হয় দখল করা হয়েছে অথবা অনেকগুলো নানান চাপে ও প্রতিবন্ধকতায় কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। আর যেগুলো কোনো মতে চালু রয়েছে সেগুলো নজরদারি এবং নানান হুকুম পালনে কাতর হয়ে পড়েছে। কোথাও পরিচালক পরিবর্তন, কোথাও শেয়ার বিক্রয়ে বাধ্য করা, কোথাও অনুমোদন বাতিল, কোথাও কমিটি পরিবর্তন, কোথাও নামমাত্র মূল্যে বিক্রয়, কোথাও লুটপাট, ভাঙচুর বা জবরদখল প্রভৃতি নানা পন্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় ধ্বংস হওয়ার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা বা অন্যবিধ কারণে অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে গেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক জোরপূর্বকভাবে দখল করে সরকার সমর্থিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। 

দাড়ি, টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি 
ইসলামপন্থী মানুষদের হয়রানি করা এই সরকারের নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দাড়ি টুপি ছাত্রদের ও রোরকা পরা ছাত্রীদের হয়রানি করা নিয়মিত ব্যাপার। এসবের কোনো প্রতিকার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্যুলার শিক্ষকরা নিয়মিত হয়রানী করে যাচ্ছেন। বিশেষ মেয়েরা এসব হয়রানির শিকার হয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। 

বইমেলায় ইসলামী প্রকাশনী নিষিদ্ধ 
২১ ফেব্র“য়ারিকে কেন্দ্র করে এদেশে পুস্তক প্রকাশকদের উতসব শুরু হয়। বই মেলাকে ঘিরে প্রকাশকরা নানান ধরণের আয়োজন করে থাকেন। অনেক বই বাজারে নিয়ে আসেন। এই বইমেলায় অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ থাকে ইসলামী প্রকাশনীগুলো। বর্তমানে জনপ্রিয় ইসলামী প্রকাশকদের মধ্যে গার্ডিয়ান প্রকাশনী, প্রচ্ছদ প্রকাশনী, সমকালীন ইত্যাদি বেশ উল্লেখযোগ্য। কোনো ইসলামী প্রকাশকই মেলায় স্টল পায় না। কেন পায় না এর সঠিক কারণও নেই। অগত্যা প্রকাশনীগুলো স্টল পাওয়া অন্যান্য প্রকাশনীকে নিজেদের পরিবেশক বানিয়ে মেলায় বই বেচা-বিক্রি করার চেষ্টা করে। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের বই মেলায় প্রচ্ছদ প্রকাশন যাদেরকে পরিবেশক বানিয়েছে ২০২১ ও ২০২২ সালে তাদের স্টল দেওয়া হয়নি। ২০২২ সালের ঢাকার বই মেলায় গার্ডিয়ান ও সমকালীন যাদের পরিবেশক বানিয়েছে তাদের স্টল কোনো কারণ ছাড়াই জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছে বাংলা একাডেমি।

২০২১-এর মোদিবিরোধী আন্দোলন 
২০২১ সালের মার্চের শেষ দিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশ জুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়। অনেকেই এটিকে ২১ এর মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ বলে আখ্যায়িত করেছেন। গুজরাট সহিংসতা, বাবরি মসজিদ ইস্যুর পাশাপাশি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নির্যাতন এবং হিন্দুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য মোদীকে অভিযুক্ত করে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে আসছিল হেফাজতে ইসলাম ও এর সমর্থক ইসলামপন্থীরা। শুক্রবার ২৬ মার্চ, ২০২১ তারিখে বাংলাদেশের ৫১তম স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় পৌছান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ঢাকায় আগমন উপলক্ষ্যে সেদিন জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখা দেয় যা পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে। এই আন্দোলনে পুলিশ ১৭ জনকে গুলি করে খুন করে ৫ শতাধিক আন্দোলনকারীকে আহত করে। শুধু তাই নয় এই ঘটনার জেরে হেফাজত ইসলামের কমিটি ভেঙে দিতে বাধ্য করে হাসিনা সরকার। মামুনুল হকসহ অনেক আলেমকে গ্রেপ্তার করে। সরকারের এই আন্দোলনের সাথে জড়িত নেতারা তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। বস্তুত হাসিনা সরকার হেফাজতে ইসলামকে দমন-পীড়ন করে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।   


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন