৩০ মার্চ, ২০২২

ভারতীয় আগ্রাসন ও আজ্ঞাবাহী আওয়ামী সরকার

২০০৭ সাল থেকে এদেশের উপর সরাসরি কর্তৃত্ব করছে ভারত। তাদের আগ্রাসী নীতির কারণে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় যারা অবৈধভাবে দুই বছর শাসন কর্ম পরিচালনা করে এবং ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি ভারত-বান্ধব রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় ভারতীয় আগ্রাসনের নতুন রূপ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সেনা সরকারের দায়মুক্তির আশ্বাসে পাতানো নির্বাচনের কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন তৎকালীন ভারতীয় প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি।  

প্রায় বিনা শুল্কে দেওয়া ট্রানজিট ও তার কুফল 

১. উচ্চ সুদে ভারত থেকে বাংলাদেশের ট্রানজিট ঋণ গ্রহণ, সুবিধা ভোগ করবে ভারত। 
২০১০ সালে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার নীতিগত সিদ্ধান্তনেয়। ওই বছর ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে ট্রানজিটসহ অন্য কয়েকটি বিষয়ে যৌথ ইশতেহার সই হয়। ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশের সড়ক ও রেলপথ উন্নয়নে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার উচ্চ সুদের ঋণও মঞ্জুর করে ভারত। অর্থাৎ উচ্চ সুদের এ ঋণ ব্যবহৃত হবে আমাদের সড়ক-রেলপথ উন্নয়নে, যা ৮০-৮৫ ভাগ ব্যবহৃত হবে ভারতের পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে। 
কালের কণ্ঠ, ৯ জুলাই ২০১৫

২. ভারত ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য পরিবহন করলেও এ থেকে বাংলাদেশ এক টাকাও পায়নি। 
ট্রানজিট ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ভারত সরকার এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে এবং স্বল্প খরচে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করার সুযোগ লাভ করল। এমনিতে যেখানে কলকাতা থেকে শিলিগুডড় দিয়ে আগরতলায় প্রতিটন পণ্য পরিবহনে ৬৭ মার্কিন ডলার খরচ পড়ে এবং ৩০দিন সময় লাগে, সেখানে দ্বিপাক্ষিক ট্রানজিটের আওতায় আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে আগরতলায় পণ্য পাঠাতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১০ দিন এবং খরচ পঙবে সব মিলিয়ে ৩৫ মার্কিন ডলারের কম। বাংলাদেশের নৌবন্দর, আভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল, ৫২ কিলোমিটারের বেশী সড়ক ব্যবহার করা হলেও এ খাত থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট ফি বাবদ বাংলাদেশ পাবে টন প্রতি মাত্র ১৯২.২২ টাকা। ন্যুনতম এই ট্রানজিট ফি নির্ধারণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য পরিবহন শুরুর অনেক আগে থেকেই ভারত বিনাশুল্কে ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করে আসছে। পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্টের নামে মূলত ২০১১ সাল থেকেই ভারত বাংলাদেশের বন্দর ও যোগাযোগ অবকাঠামো ব্যবহার করে বিনাশুল্কে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে পণ্য পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। পালটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনসহ আশুগঞ্জ বন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য পরিবহন করলেও এ থেকে বাংলাদেশ এক টাকাও পায়নি। 
ইনকিলাব, ১৬ জুন ২০১৬

৩. ট্রানজিটের কারণে মাদকের উপদ্রব বেড়ে গেছে 
বাংলাদেশকে মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে সীমান্তবর্তী মাদক উৎপাদনকারী দেশগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মাদক পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে সীমান্তবর্তী মাদক উৎপাদনকারী দেশগুলো। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও বাংলাদেশকে হেরোইন গাঁজা, ইয়াবা ট্রানজিট দেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারত ও মিয়ানমারের রুট ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। দেশের কোন কোন জেলা ও উপজেলা দিয়ে হেরোইন পাচার হয় সেসবের নামও দেওয়া হয়েছে। ভৌগোলিক সীমারেখার কারণে অবৈধ সীমান্তবাণিজ্য সুবিধার মাধ্যমে মাদক উৎপাদনকারী দেশগুলোর মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে মাদক পাঠায়। 
প্রজন্মকন্ঠ, ৩ এপ্রিল ২০১৭

৪. ট্রানজিটের কারণে এইডস এবং হেপাটাইটিসের প্রকোপ হবে বাংলাদেশে
বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয়া হলে বাংলাদেশে এইডস ও হেপাটাইটিসের প্রকোপ হবে বলে দাবি করেছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ভারতের কট্টর সমালোচক এই বুদ্ধিজীবী এও বলেছেন, বাংলাদেশের সড়কগুলো ভারতের ভারী ট্রাক বহনের জন্য উপযোগী নয়। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সেমিনারে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে আগে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ওয়াটার ডিসপিউট’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেন তিনি। আয়োজন করে সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি নামে একটি সংগঠন এর আয়োজন করে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ট্রানজিটের মাধ্যমে আমাদের প্রতারণা করছে। তাদের হেভি ট্রাকের জন্য আমাদের রাস্তা প্রস্তুত নয়। আবার ট্রানজিটের কারণে এইডস এবং হেপাটাইটিসের প্রকোপ হবে বাংলাদেশে। 
ঢাকাটাইমস, ০৫ এপ্রিল ২০১৭

৫. বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবেশদ্বার হতে চায় আগরতলা। 
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে কলকাতার দূরত্ব ১৭শ কিলোমিটার। আর চট্টগ্রামের দূরত্ব মাত্র ১শ ৪০ কিলোমিটার। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে নেই কোন নৌবন্দর। ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথেও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক বেশি দুর্বল। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে চায় ত্রিপুরা। সে সাথে বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করে ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবেশদ্বার হতে চায় আগরতলা। 
সময় নিউজ, ২১ এপ্রিল ২০১৭

পরিবেশ বিরোধী ও ভারতের সার্থ হাসিলের বিদ্যুৎ চুক্তি
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সাথে চুক্তি রামপালে মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (বিএইচইএল) নামে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। বিআইএফপিসিএলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তিভট্টাচার্য এবং বিএইচইএলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেম পাল যাদব চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী বলেন, “সম্প্রতি বাংলাদেশেরই একজন গবেষক বলেছেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না, যেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। অপরদিকে রামপালে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সুন্দরবন হুমকির মুখে পঙবে আশঙ্কা প্রকাশ করে এর বিরোধিতা করে আসছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রা জাতীয় কমিটি। 
এশিয়াবার্তা২৪ডটনিউজ, ১৩ জুলাই ২০১৬।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প চুক্তি যে কারণে গোপনে স্বাক্ষরিত 
১. আমরা দেশী সংস্থা থেকে বিদ্যুৎ ৩ টাকা ৮০ পয়সা ইউনিটে পাচ্ছি, রামপালে আমাদের কিনতে হবে প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ৮৫ পয়সা করে, দ্বিগুণেরও বেশী। 
২. দেশের বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ সাত হাজার ৩০০ মেগাওয়াট আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রেগুলো পুরোদমে উৎপাদন করলে ৭ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট উৎপাদন কতে পারে, তাহলে কেন রামপাল? 
৩. ১৮৩৪ একর আবাদ জমি অধিগ্রহণের ফলে ৮০০০ পরিবার উচ্ছেদ হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মসংস্থান হতে পারে সর্বোচ্চ ৪০০-৫০০ জনের, ফলে উদ্বাস্থ এবং কর্মহীন হয়ে যাবে প্রায় ৭৫০০ পরিবার। ৪. এই প্রকল্পে ৫০% শতাংশ মালিকানা ভারতীয় কোম্পানি, দেশের মাত্র ১৫%। 
২৪ বাংলানিউজ, ২২ এপ্রিল ২০১৩

রামপাল চুক্তি করায় পরিবেশবাদীদের তীব্র ক্ষোভ 
দেশের পরিবেশ ও বন রক্ষার ইতিহাসে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তির দিনটি, অর্থাৎ ১২ জুলাইকে কালোদিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। ৫৩টি পরিবেশবাদী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটির পক্ষ থেকে রামপাল চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, রামপাল চুক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করা বর্তমান সরকার কিভাবে এই চুক্তি করল, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চরম উদ্বেগ প্রকাশের পরও সুন্দরবনের পরিবেশকে হুমকির মধ্যে রেখে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁর এ ধন্যবাদ দেওয়ায় আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, চুক্তিটি কি তবে ভারতের স্বার্থে হচ্ছে?' তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, সরকার এ চুক্তি বাতিল করুক। 
প্রথম আলো, ১৩ জুলাই ২০১৬

রামপাল চুক্তির অসঙ্গতি ও লাভ-ক্ষতি 
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) বা বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য ভারতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট (এক্সিম ব্যাংক থেকে ১৬০ কোটি ডলার ঋণ নিতে হচ্ছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ শতাংশ করে মালিকানা দুই দেশের হলেও ঋণের পুরোটা দায়ভার থাকবে বাংলাদেশের ওপর। বাংলাদেশ সরকার হবে এ ঋণের গ্যারান্টি হবে। কোন কারণে প্রকল্প বন্ধ/লোকসান, কিংবা কিস্তির অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। যৌথ মালিকানার কোম্পানি হলেও এক্সিম ব্যাংক ঋণের দায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়েছে। এ প্রকল্প থেকে শুধু মুনাফার অর্ধেকই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাবে না, ঠিকাদারি কাজ, কয়লা সরবরাহের কাজ সবই পাবে তারা। সেখানেও ভারত লাভবান হবে।

শর্তে যা আছে 
- এক্সিম ব্যাংকের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী ১৬০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে ২০ বছরে। সাত বছর পর থেকে ঋণের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। 
- ২৭টি অর্ধবার্ষিক কিস্তিতে এক্সিম ব্যাংককে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণের সুদের হার হবে। লন্ডন আন্তব্যাংক হারের (লাইবর) সঙ্গে ১ শতাংশ সুদ যোগ করে। গত জুন মাসের হিসাবে লাইবর সুদের হার দশমিক ৯৩ শতাংশ। 
- এ ছাড়া ঋণের অব্যবহৃত বা ছাঙ না করা অর্থের ওপর বার্ষিক দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। 
- ঋণ প্রক্রিয়াকরণের জন্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক মাশুল ২ লাখ ডলারও দিতে হবে বিআইএফপিসিএলকে। 
- প্রকল্পটি বাংলাদেশের স্বার্থে তৈরী হয়েছে। এর উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশই কিনবে বাজার মূল্যের সাথে মুনাফা যোগ করে। 
- এক্ষেত্রে কোন ভর্তুকি দেয়া হবে না। 
- মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার। 
কেবল টাউনশিপ (ছোট শহর) নির্মাণে খরচ হবে ১০ কোটি ডলার। ২০১৯ সালের মধ্যে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। গত ১২ জুলাই ঢাকায় মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেডের (ভেল) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিআইএফপিসিএল।

চুক্তির অসঙ্গতি 
১. ৫০ শতাংশ করে মালিকানা হলে এই ঋণের গ্যারান্টিও দুই দেশের সমান আনুপাতিক হওয়া উচিত ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যের এটাই স্বীকৃত ধারা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর পুরো ঋণের দায়ভার দেয়ায় চুক্তিটি ভারসাম্যহীন হয়েছে! 
২. মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ৫২২ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনার লবণচরা ও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ২৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। ২০১১’র ডিসেম্বরে দেশীয় কোম্পানি ওরিয়ন গ্রুপের সাথে পিডিবির ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী মাওয়ার প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৪ টাকা, লবনচরা ও আনোয়ারার কেন্দ্র থেকে কিনবে ৩ টাকা ৮০ পয়সা করে। কিন্তু রামপাল থেকে কিনতে হবে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা দরে। এনটিপিসি ও পিডিবি’র চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হবে কয়লার বাজার দরের ওপর। প্রতি টন কয়লার মূল্য যদি ১৪৫ ডলার হয় তাহলে বিদ্যুতের দাম হবে দ্বিগুন। 
৩. প্রকল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে কর অবকাশ সুবিধা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতি আনতে পশুর নদী ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 
৪. ভারতে কয়লা উৎপাদনকারী সবচেয়ে বঙ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিআইএল) কয়লা রপ্তানি করতে বাংলাদেশের আলােচনা সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতে কয়লার চাহিদা কমে যাওয়ায় খনি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮ কোটি টনেরও বেশি কয়লা মজুত রয়েছে। ভারত সরকার চলতি অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৮০ লাখ টন কয়লা এবং ২০২০ সাল নাগাদ ১০০ কোটি টন কয়লা উৎপাদন করতে চায় ভারত। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে ভারতের বাণিজ্য ও মুনাফার প্রকল্প।

কঠিন শর্ত ও অধিক সুদে বড় অংকের ঋণচুক্তি 
ভারতের সঙ্গে ২০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বার। ভারতের সাথে আরো দুইশ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করলো বাংলাদেশ। নমনীয় সুদে এই অর্থ ব্যয় হবে বিদ্যুৎ, রেলপথ, সড়ক, পরিবহন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জাহাজ চলাচল, স্বাস্থ্য ও কারিগরি শিক্ষাখাতের ১৪টি প্রকল্পে। ১ শতাংশ সুদ হারে এই ঋণচুক্তির আওতায় ৭৫ ভাগ পণ্য ও সেবা ভারত থেকে সংগ্রহের বাধ্যবাধকতা থাকছে। এর আগে লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় ২০১০ সালে ভারতের সাথে প্রথম একশ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০ কোটি ডলার পরবর্তীকালে অনুদান সহায়তা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। গতবছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় নতুন করে ২০০ কোটি ডলারের নমনীয় ঋণ দিতে সমঝোতা চুক্তি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার ঢাকায় এই ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। শতাংশ সুদে এ ঋণে কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ৫ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ব্যয় নিশ্চিত করতে না পারলে ২ শতাংশ হারে সুদের অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে। 
ইত্তেফাক, ১০ মার্চ ২০১৬

ভারতের সঙ্গে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই 
ভারতের সঙ্গে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। আজ বুধবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই চুক্তি সই হয়। এই চুক্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প থাকবে। কোনো ঋণচুক্তির আওতায় এটিই হচ্ছে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বঙ ঋণ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের (বাংলাদেশের টাকায় যা প্রায় ৯২ হাজার কোটি) ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। 
প্রথম আলো, ০৪ অক্টোবর ২০১৭

পানি আগ্রাসন 
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের পানি আগ্রাসন শুরু হয়েছে। একের পর এক নদীতে বাঁধ দিচ্ছে তাদের ইচ্ছেমতো। চুক্তি মানছে না। আওয়ামী সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে তারা এর প্রতিবাদও করছে না। এই সরকারের আমলে আমরা চুক্তি অনুসারে পানি পাচ্ছি না। তিস্তা নিয়ে আমাদের মন্ত্রীরা ও খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে শুধু আশ্বাস নিয়েই চলে আসছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনী নদীর পানি দেয়ার চুক্তিও করে আসিছেন কোন বিনিময় ছাড়াই। অথচ আমাদের পানির কোনো খবর নেই।   

ফারাক্কা
১. ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪ নদীর পানিশূন্য ফারাক্কার অশুভ প্রতিক্রিয়া, জলবায়ুর পরিবর্তন ও বার্ষিক বৃষ্টির হার কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৪টি নদীতে পানি না থাকায় সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বাহার উদ্দিন মৃধা জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মওসুমে জেলার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর গঙে প্রায় ৮০-৮৫ ফুট নীচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে গোমস্তাপুর, নাচোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের কিছু অংশে পানির স্তর নেমে যাওয়া উদ্বেগজনক। তিনি আরো জানান, আদিবাসী অধ্যুষিত পার্বতীপুর ইউনিয়নে ১১৬ ফুটেও পানির স্তর না পাওয়া যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। 
সংগ্রাম, ২৫ এপ্রিল, ২০১৪

২. উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে ফারাক্কার বাঁধের কারণে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা যখন মরুভূমিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে তখন তিস্তার প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের গেটওয়ে বগুঙায়। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই জেলায় এক সময় অসংখ্য নদী, খাল-বিল থাকলেও বর্তমানে তা কেবলই বই-পুস্তকের পাতায় জায়গা পেয়েছে। বাস্তবে এসব নদী-নালা, খাল-বিলের অস্তিত্ব বিলীন প্রায়। জেলার ১৮টি নদীর মধ্যে ১৩টি নদীই অস্থিত্ব হারিয়েছে। 
সংগ্রাম, ২০ এপ্রিল ২০১৪

৩. ফারাক্কা: বাংলাদেশ ও ভারতের প্রথম পানিচুক্তি। 
কলকাতা বন্দরকে পলিমুক্ত রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে। পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত রাজমহল ও ভগবান গোলার মধ্যবর্তী স্থানে ফারাক্কা বাঁধ অবস্থিত। ১৯৫৬ সালে ২.২৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মাণের কাজ হয় এবং ১৯৬৯ সালে শেষ হয়। এই বাঁধের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভাগীরথী নদী দিয়ে ৪০,০০০ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের মাধ্যমে কলকাতা বন্দরকে সচল রাখা। চুক্তির শতঅনুসারে ফারাক্কা পয়েন্টে পানি প্রবাহ ৭০,০০০ কিউসেক হলে ভারত ৫০% এবং বাংলাদেশ ৫০% পাবে। পানিপ্রবাহ ৭০,০০০ হতে ৭৫,০০০ কিউসেক হলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫,০০০ কিউসেক এবং অবশিষ্ট পাবে ভারত। পানিপ্রবাহ ৭৫,০০০ কিউসেক এর বেশি হলে ভারত ৪০,০০০ কিউসেক এবং অবশিষ্ট বাংলাদেশ। এই চুক্তিটি বর্তমানে কার্যকরী আছে। 
উৎস: এধহমবং ডধঃবৎ ঞৎবধঃু,১৯৯৬, অঢ়ঢ়বহফরীঅ) লাইফবিডি২৪ডটকম, ১৯ জুন ২০১৫

৪. ফারাক্কা পয়েন্টে পানির দাবি আমলে নিচ্ছে না 
ভারত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী পদ্মা নদীর ফারাক্কা পয়েন্টে নির্ধারিত পানি নিশ্চিত করার দাবি মোটেই আমলে নিচ্ছে না ভারত। যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১১ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্তএই ১০ দিনে চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাওয়ার কথা ৪২ হাজার ৮৫৯ কিউসেক। কিন্তু এই ১০ দিনে ১৪ হাজার ৩৯ কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ চুক্তির সংলগ্নি-১ অনুযায়ী ২৮ হাজার ৮২০ কিউসেক পানি পেলেও ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী পানি পায়নি। এর আগে ফারাক্কা পয়েন্টে জানুয়ারি মাসের ১০ দিনে ৩২ হাজার ৫১৬ কিউসেক। পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ। অপর দিকে ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিনে চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ পাওয়ার কথা ছিল ৪৬ হাজার ৩২৩ কিউসেক পানি। কিন্তু এ সময়ে পেয়েছে ২৯ হাজার ৭৩৭ কিউসিক । 
নয়া দিগন্ত, ০৫ মার্চ ২০১৬

৫. ৪০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম পানি দিচ্ছে ভারত
৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই প্রথম বাংলাদেশ সর্বনিম্ন পানি। । পেয়েছে। দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ ২০১৬ এই ১০ দিনে ভারত বাংলাদেশকে ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি দিয়েছে। যা ছিল স্মরণকালের সর্বনিম্ন পানির রেকর্ড। জেআরসি'র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি শুষ্ক মৌসুমে (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত) প্রতি ১০ দিনওয়ারি হিসাবে ১ থেকে ১০ জানুয়ারি পানি পেয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক, ১১ থেকে ২০ জানুয়ারি পেয়েছে ৩১ হাজার ৩৯৪ কিউসেক, ২১ থেকে ৩১ জানুয়ারি ৩১ হাজার ১৪ কিউসেক। ১ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২৯ হাজার ৭৩৩ কিউসেক, ১১ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ২৮ হাজার ৮২০ কিউসেক, ২১ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্তপেয়েছে ২৬ হাজার ৮৬৫ কিউসেক পানি। মার্চে প্রথম ১০ দিনে অর্থাৎ ১ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্তপেয়েছে ২৫ হাজার ৪১৯ কিউসেক, ১১ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্তপেয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক, ২১ থেকে ৩১ মার্চ এই ১০ দিনে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি। যা স্মরণকালে সর্বনিম্ন রেকর্ড। ১ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্তপানি পেয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক, ১১ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্তপেয়েছে ১৮ হাজার ২৮২ কিউসেক এবং ২১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্তপেয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি। আর যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ (জেআরসি) জানায়, ১৯৯৬ সালে দু’দেশের মধ্যে গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই প্রথম বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে সর্বনিম্ন পানি পাচ্ছে। যা চুক্তিপত্রের লঙ্ঘন। 
শীর্ষ নিউজ, ০৫ মে ২০১৬

৬. ফারাক্কার প্রভাব : রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির স্তর সর্বনিম্ন। 
ফারাক্কার প্রভাবে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এই প্রভাবে এরই মধ্যে মরে গেছে পদ্মার ১০টি শাখা নদী। এছাঙা এ অঞ্চলের আরও অন্তত ১০টি শাখা নদী মৃত প্রায়। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিতে ভয়ঙ্কর থাবা আঘাত হেনেছে ফারাক্কা। এবছর পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে গত ৪৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম এতটা খারাপ অবস্থা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার দ্য রিপোর্টকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী, পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্তবাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার কথা ভারতের। তবে তা মানছে না দেশটি। ভারত ফারাক্কা পয়েন্টের আগেই অন্য পথে পানি প্রত্যাহার করায় ফারাক্কা পয়েন্টেই পানির সংকট তীব্র হয়েছে। 
যুগান্তর, ১৬ মে ২০১৬

৭. ৪১ দিনের কথা বলে ৪১ বছর ধরে চালু ফারাক্কা বাঁধ 
কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় রাজমহল ও ভগবানগোলার মাঝে ফারাক্কা নামক স্থানে বাঁধ নির্মাণ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পশ্চিম সীমানা থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) উজানে গঙ্গা নদীর ওপর বসানো হয় বাঁধটি। ১৯৬১ সালে বাঁধের মূল নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হয় যা ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়। ১৯৭৫ সালে ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত৪১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধের সব ফিডার ক্যানেল চালুর কথা বলে ভারত। কিন্তু ওই ৪১ দিনের পরিবর্তে ৪১ বছর পরও বাঁধটি চালু আছে। 
আমাদের সময়, ২৭ আগস্ট ২০১৬

৮. তিস্তা ব্যারেজের ৫২টি গেটের ৪৪টিই বন্ধ। 
তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় ২৯ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি পর্যন্তমাত্র ৯ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের পানি দেয়া সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পভুক্ত ২০ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতেই পানি দেয়া সম্ভব হয়নি। তিস্তা ব্যারেজের ২টি গেটের মধ্যে ৪৪টি বন্ধ রাখা হয়েছে। ৮টি গেট দিয়ে অতি সামান্য পরিমাণে পানি আসছে। 
কালবেলা, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

৯. তিস্তা নদীতে পানি নেই, নৌ যোগাযোগ হুমকির মুখে। অব্যাহত পানি হ্রাসের ফলে গাইবান্ধায় তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র ও যমুনাসহ সবগুলো নদীর চ্যানেল শুকিয়ে যাওয়ায় নৌ যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তাসহ তিনটি নদীর পানি এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। এসব নদীর বুকে বিশাল বিশাল চর জেগে উঠেছে এখন। নাব্যতা থাকায় স্বাভাবিক সময়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছডড়, সাঘাটা ও সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য ৩০টি রুটে নৌযান চলাচল করতো। এখন সেখানে মাত্র ১৭টি রুটে যান্ত্রিক নৌকা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ফলে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। 
সংগ্রাম, ০৭ মার্চ ২০১৬

১০. ফেনী নদীর পানি যাবে ত্রিপুরার সাবরুমে 
ভারতের হায়দরাবাদ হাউসে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্য দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। বৈঠকে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত। সেই পানি যাবে ত্রিপুরার সাবরুম শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পে।
প্রথম আলো, ১৭ অক্টোবর ২০১৯ 

১১. তিস্তা পেলাম না, দিলাম ইলিশ! 
বাংলাদেশ ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানি করল তিস্তার পানি না পেয়েও। গত সোমবার বাংলাদেশ থেকে পাঠানো পদ্মার ইলিশের প্রথম চালান পৌঁছেছে কলকাতায়। দুর্গোৎসব সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার ভারতে যে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে, তার প্রথম চালানে গিয়েছে ৩০ টন। 
প্রথম আলো, ৫ অক্টোবর ২০১৯ 

১২. তিস্তা চুক্তির আশা কি শেষ?
২০১৪ সালে তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করার কারণে তিস্তা অববাহিকায় ভীষণ সংকট দেখা দিয়েছে। তিস্তায় যখন পানির প্রয়োজন ৫ হাজার কিউসেক, তখন পানি পাওয়া যায় মাত্র ২০০-৩০০ কিউসেক। কখনো কখনো এরও কম।রংপুরের মানুষের সংকট সরকারের কাছে সব সময় কম গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রমাণ একবাক্যেই দেওয়া যায়। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের সিঁড়িতে পা রাখছে, তখন রংপুর বিভাগের দারিদ্র্যের হার গত পরিসংখ্যানের হারের চেয়ে বেড়েছে। তিস্তায় পানি না থাকার কারণে যত সংকট দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে সরকারকে খুব বেশি বিচলিত হতে দেখা যায়নি।
প্রথম আলো, ৫ জুন ২০১৮ 

সীমান্তে হত্যা
তিন দিক ঘিরে আছে ভারত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর মাঝখানে বাংলাদেশ। এই মাঝখানে টিকে থাকাটাই যেন বাংলাদেশের জন্য কাল হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে  ভারতের আন্তর্জাতিক সীমারেখা ৪,০৯৬ কিলোমিটার।  স্বাধীনতার পর থেকেই এই সীমান্তেভারতের বৈরী আচরণের শিকার বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ। মূলত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিএসএফ কর্তৃক সাধারণ ও বেসামরিক বাংলাদেশি নাগরিকদের উপর সংগঠিত হচ্ছে নিয়মিত নির্যাতন ও হত্যাকান্ড।  সীমান্তেচোরাচালান ও বাংলাদেশ থেকে কথিত অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিতর্কিত শ্যূট-অন-সাইট (দেখামাত্র গুলি) নীতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেবহাল আছে, যার প্রেক্ষিতে বিএসএফ কারণে কিংবা অকারণে বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করতে পারে।  আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, হাট-বাজার, বিকিকিনি করা এবং কাজ খোঁজার জন্য অনেক মানুষ নিয়মিতভাবে সীমান্তপারাপার করে। এছাঙাও সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে কৃষিজমিতে কৃষিকাজ কিংবা নদীতটে মৎস্য আহরণের জন্যও অনেক মানুষকে সীমান্তপথ অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু এসব কাজকে কোন অপরাধ বিবেচনা না করা হলেও , বিভিন্ন সময়ই বিএসএফ এর আক্রমণের শিকার হোন নিরপরাধ বাংলাদেশীরা।

বলা হয়ে থাকে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে মহাজোট সরকারের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। আর ভারতও নাকি তাদের জন্য সুবিধাজনক হিসেবে আওয়ামীলীগকে বিবেচনা করে থাকে। তাই এই মহাজোট সরকার আসার পর সীমান্তবর্তী মানুষগুলোর আশা ছিলো এই সীমান্তহত্যার একটা সুরাহা হবে। কিন্তু দেখতে দেখতে আওয়ামী সরকারের ১৩ বছর পার হয়ে গেলো। আসক, অধিকার ও বিজিবি প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, গত ১৩ বছরে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৪০ জন। আর আহত ও অপহরণের শিকার যথাক্রমে ৭০৩ ও ৬৪১ জন। এসব ছাড়াও আরো ২৮৪ জনকে অপহরণের পর সীমান্তে বিভিন্ন দফায় বৈঠকের পর ছেড়ে দেয়া হয়।




শুধু তাই নয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে বিএসএফের মহানির্দেশক ইউ কে বনশল বলেন, “গুলি চালনা পুরোপুরি বন্ধ করা কখনোই সম্ভব না।” ২০১১ সালের জুলাইয়ে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ সীমান্তহত্যা নিয়ে বলে, “ভারত সরকারের বাংলাদেশের সীমান্তে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স কর্তৃক নির্যাতন ও অন্যান্য অনাচারের অভিযোগগুলোর দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ”

এই লক্ষ্যে ২০১৬ সালের মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৪২তম সীমান্ত সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকান্ড তদন্তে বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ তদন্তদল কাজ করবে।অথচ ৪৪তম সীমান্তসম্মেলন শেষে যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিএসএফ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোনো ঘটনা তদন্তের দায়িত্বটি পুলিশের। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমন ঠুনকো যুক্তিতে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার মানেই হচ্ছে এ সরকার সীমান্তরক্ষার ব্যাপারে ভারতের নীতির কাছে অসহায়।

এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়, ফেলানী হত্যার বিচারের পর। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালের ফেলানী হত্যায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। অথচ ভারতীয় আইনানুযায়ীই শুধুমাত্র অবৈধভাবে সীমান্তপাড়ি এমনকি আদম/ গরু পাচারের জন্যও কাউকে গুলি করে হত্যা করা যায় না, ভারতীয় আইনেও গুলি করা কেবল মাত্র তখনই জাষ্টিফাইড যখন সীমান্তরক্ষীর নিজের প্রান বিপন্ন হয় । এছাড়া ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুমে’র তথ্য অনুযায়ী, ‘যেখানে ফেলানি মারা যায়, সেখান দিয়ে ওর আগে আরও চল্লিশজন বেঙা পেরিয়েছে – বিএসএফ – বিজিবি টাকা নিয়েছে সবার কাছ থেকে। এটা ওয়েল রেকর্ডেড।’ তারা আরো জানায়, ‘ভারতের সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেকের জীবনের অধিকার রয়েছে। শুধু ভারতের নাগরিক নয়, দেশের মাটিতে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির। এক্ষেত্রে সেটাও লঙ্ঘিত হয়েছে।’ এতগুলো শক্ত তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অবস্থান কি?? তখনও বাংলাদেশের সরকারের তরফ থেকে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ ছাড়া আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়াই দেওয়া হয় নি। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কী হবে কিংবা কোনও উদ্যোগ থাকবে কিনা সেটাও স্পষ্ট করেননি তৎকালীন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী। আরও লজ্জার বিষয় এই যে, বাংলাদেশ চুপ করে থাকলেও, বিএসএফ এর রায়কে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্তনেন ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুমে’র প্রধান কিরীটি রায়। এ তো গেল সরকারের নম নম নীতির কথা। এটুকু করেও যদি সরকার ক্ষান্ত থাকতো তাহলেও মনকে সান্ত্বনা দেওয়া যেত। কিন্তু সরকারে প্রত্যক্ষ অসহযোগিতার প্রমান পাওয়া যায় এই মামলায়।

মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’ এর ভাষ্যমতে, এই মামলার আগে তারাও একবার ভারতীয় আদালতে ফেলানি হত্যা নিয়ে মামলা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তখন ফেলানির পরিবারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নথি আর সহযোগিতা তাঁরা পান নি। কারণ কি? বাংলাদেশে আসার জন্য মাসুমের দু’জন মানবাধিকার কর্মী কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে বারবার ভিসার আবেদন করার পরও ভিসা পাননি। এ দু’জন মানবাধিকার কর্মী হলেন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের চেয়ারম্যান, সিকিম আদালতের সাবেক বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত এবং সংগঠনটির শীর্ষ কর্মকর্তা কিরিটি রায়। কিরিটি রায় অভিযোগ করেছিলেন, এক সপ্তাহে ছয় দফায় তিনি উপ-দূতাবাসে ভিসার জন্য গিয়েছেন। প্রতিবারই তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি দেশের নাগরিককে অন্যায়ভাবে হত্যা করবার পর তার প্রতিকার চাওয়ার ক্ষেত্রে এই হচ্ছে আমাদের অবস্থান, সাহস এবং যোগ্যতা।

অথচ বছর দুই আগে এনরিকা লেক্সি কেসে আমরা ভারতের যোগ্যতা আর দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই। এইখানে ফরিয়াদীর আসনে ছিলো ভারত, আর আসামী ছিলো ইতালি। ২০১২ সালে বঙ্গোপসাগরে চলমান ইটালিয়ান তেলবাহী জাহাজ এম টি এনরিকা লেক্সি’তে অবস্থানরত ইটালিয়ান মেরিন সেনারা গুলি চালিয়ে এমভি অ্যান্থনী নামের একটি ভারতীয় জেলে নৌকায় থাকা দু’জন ভারতীয় জেলেকে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ড নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আইনী বিবাদ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও টানাপোড়েন দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক জলসীমা না ভারতীয় জলসীমা, ভারত এই বিদেশী সৈনিকদের বিচার করবার এখতিয়ার রাখে কি না এতসব বিতর্কের মধ্যেই ভারতীয় আদালতে তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের অভিযোগে বিচার শুরু হয়।

এই দুই সৈনিককে কেন্দ্র করে দুই দেশের দূতাবাস পর্যায়ে চরম বিরোধ দেখা দেয়। ভারত যেমন ইতালীর রাষ্ট্রদূতকে প্রবল চাপে রাখে, তেমনি ইতালিও ভারতীয় দূতাবাসের মেইলবক্স থেকে বুলেট উদ্ধারের ঘোষণা দেয়। যাই হোক, ভারতীয় চাপের মুখে দুই মেরিন সেনাকে রোম থেকে ফিরিয়ে এনে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে ইতালি। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের ধোঁয়াশাপূর্ণ একটি জায়গাকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় সরকার এবং আদালত ইতালির সৈন্যদের বিচার শুরু করে এবং তা অব্যাহত রাখে। এমনকি ইতালি সরকার দুই নিহত জেলের পরিবারকে দশ লক্ষ রুপি ক্ষতিপূরণ প্রদাণ করতেও বাধ্য হয়। এই বিচার এখনো ভারতের আদালতে চলমান। ভারতীয় সরকার, তাদের সুশীল সমাজ এবং আদালতের জন্য এটি এক চরম সফলতা।

এ থেকে আমাদের সরকারের অনেক কিছুই শেখার আছে। দেশের জনগণের স্বার্থে ভারতের যে অবস্থান এটি আমাদের জন্য একটা উদাহরণ। মুখে দেশ ও স্বাধীনতার কথা বলে ফেনা তুললেও সত্যিকার অর্থে মহাজোট সরকার জনগনের কথা আসলে কমই এ ভাবেন। এই মহাজোট সরকারের আমলে সীমান্তেযে পরিমান হত্যার শিকার হয়েছে বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক জনগণ তা আর কখনোই হয় নি। কখনো চাষাবাদ করতে গিয়ে কেউ ভারতীয় সীমান্তেঢুকে গেছেন, কখনো গরু পারাপার করতে গিয়ে সীমান্তপার হয়েছেন, আবার কখনো মাছ ধরতে গিয়ে সীমানা ক্রস করেছেন এমন ঘটনায় গুলির শিকার হয়েছেন বহু বাংলাদেশী। কিন্তু সরকার নির্বিকার। শুধু যে ভারতের হাতেই সীমান্তেআমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছি তা নয়, মায়ানমারের মতো দেশও আমাদের সেনাদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য লজ্জার। দু একটা উদাহরণ দিলেই বুঝা যাবে।

২০১৪ সালের ২৮ মে বান্দরবানের পাইনছড়ি সীমান্ত এলাকায় বিজিপির সদস্যরা বিনা উসকানিতে বিজিবির সদস্যদের উপর গুলি চালায়। ওই সময়ে বিজিবির সদস্য নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানকে একইভাবে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাকে হত্যা করা হয়। দুই দিন পরে অনেক টালবাহানা করে মিজানুরের লাশ ফেরত দিতে সম্মত হয় বিজিপি। বিজিবির প্রতিনিধিদল মিজানুরের লাশ নিতে গেলে উল্টো তাঁদের ওপর আবারও গুলি চালায় বিজিপি। মিজানুরের হত্যার এক বছর পেরুতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় ২২ শে জুন ২০১৫ সালে।

মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ২০১৫ সালে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাককে অপহরণ করে। ২২শে জুনে প্রকাশিত খবর অনুসারে জানা যায়, নায়েক রাজ্জাকের নেতৃত্বে বিজিবির ছয় সদস্যের একটি দল ১৬ জুন সকালে নাফ নদীতে টহল দিচ্ছিল। দলটি বাংলাদেশ জলসীমায় মাদক চোরাচালান সন্দেহে দুটি নৌকায় তল্লাশি করছিল। এ সময় মায়ামারের রইগ্যাদং ক্যাম্পের বিজিপির একটি টহল দল ট্রলারে করে বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে দলটি বিজিবির নৌযানের কাছে গিয়ে থামে। বিজিপির ট্রলারটিকে বাংলাদেশের জলসীমা ছেড়ে যেতে বলা হলে তারা বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাককে জোর করে ট্রলারে তুলে নেয়। এ সময় বিজিবির অন্য সদস্যরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। এতে বিজিবির সিপাহি বিপ্লব কুমার গুলিবিদ্ধ হন। এরপর বিজিপির ট্রলারটি রাজ্জাককে নিয়ে মায়ানমারের দিকে চলে যায়। এটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। এভাবে সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আমাদের সীমান্তঅরক্ষিত হয়ে পড়েছে। নিয়মিত নির্যাতিত হচ্ছে সীমান্তের মানুষ। এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এর কোনো প্রতিকার নেই। 

ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি 

ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতার বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে যথেষ্টই স্পর্শকাতর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে থেকেই এই সমঝোতা নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে কি না, সেই সংশয় বিভিন্ন মহল প্রকাশও করেছিল। কিন্তু সেই সব আশঙ্কা উপেক্ষা করে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়। জঙ্গী সমস্যার মূলেও রয়েছে এই চুক্তি এমনটাই মনে করেন অনেকে। ভারতের এই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উঠে পড়ে লাগার কারণ হিসেবে নিরাপত্তা বিশারদরা নিন্মোক্ত কারণগুলোকে দায়ী করছেন।

ক. চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং-এর বাংলাদেশ সফরের কার্যকারিতা,
খ. চীন থেকে বাংলাদেশের দুটো সাবমেরিন ক্রয়,
গ. ভারতের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমেই সম্প্রসারিত সামরিক শক্তি,
ঘ. বাংলাদেশকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতাহীন করার পরিকল্পনা ও
ঙ. বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলেও যাতে ভারতের প্রতি বাধ্যবাধকতা থাকে।

স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরে যখন ভারতে এই প্রথমবারের মতো হিন্দু মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, তখন এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর দেশপ্রেমিক নাগরিক সাধারণকে বিচলিত না করে পারে না। যেখানে ভারত নিজেই একটি অর্থসঙ্কটে নিপতিত দেশ তারা কি স্বার্থে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে যৌথ সহযোগিতায় প্রতিরক্ষা সরাঞ্জাম তৈরি হবে। এ ছাড়া সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ আরো নিবিড় করা হবে। বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির আরো বাড়ানো হবে। বাংলাদেশের জন্য সামরিক নৌযান নির্মাণেও ভারত সাহায্য করবে। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরেই যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে এর পরিধি আরো বাড়ানো হবে। সর্বতোভাবে বাংলাদেশকে বিশেষত এর সেনাবাহিনীকে প্রকারান্তরে নিয়ন্ত্রণে নেয়াই ভারত সরকারের উদ্দেশ্য। বিগত দীর্ঘ বছরগুলোতে ভারতের তরফ থেকে এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব কখনোই আসেনি।

# প্রতিরক্ষা চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রতিরক্ষা খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি
আমরা না চাইতেই ভারত প্রতিরক্ষা খাতে আমাদেরকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চায়। এটা ভারতের একটা কৌশলগত চালাকি। ওরা জানে আমরা রাষ্ট্র হিসেব দরিদ্র। এখানে প্রতিরক্ষা খাতে আমরা খুব সামান্যই ব্যয় করি এবং করবো। ওরা আমাদের ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে অস্ত্র ক্রয় করার জন্য। এই অস্ত্র আবার ক্রয় করতে হবে ভারত থেকেই। ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক রাষ্ট্র। ওরা নিজেরাই নিজেদের অস্ত্রের কোয়ালিটির ব্যপারে আস্থাবান নয়। তারা অস্ত্র রপ্তানি করতে চাইলেও সারাবিশ্বের কেউ সাড়া দেয়নি। এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে তারা সেই নিন্মমানের সরঞ্জাম আমাদের উপর চাপিয়ে দেবে। নেপালের সাথে ১৯৫০ সালে ভারতের যে সামরিক চুক্তি হয়, তাতে উল্লেখ আছে, নেপাল ভারতের অনুমতি ছাড়া তৃতীয় কোন দেশ থেকে অস্ত্র ক্রয় করতে পারবে না। ভারত সিকিমের সাথেও সামরিক চুক্তি করেছে। এরপর ভারত সিকিমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশটি দখল করে নেয়। শ্রীলঙ্কার সাথেও ভারত অনুরূপ আচরণ করেছে।

এই চুক্তিতে আমাদের সমস্যা :
১- আমরা ভারত ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবো না।
২- ভারতের নিম্নমানের অস্ত্রতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
৩- ভারত আমাদের অস্ত্রের সক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবে।
৪- রাশিয়া এবং চীন যাদের থেকে আমরা নিয়মিত অস্ত্র ক্রয় করি তাদের সাথে সম্পর্কের ঘাটতি হবে।
৫- ভারত ভিন্ন আমাদের আর মিত্র থাকবে না। যা আমাদেরকে ভারতের উপর নির্ভরশীল করে তুলবে।
৬- আমরা ওদের থেকে অস্ত্র কিনতে বাধ্য থাকবো বিধায় ভারতের নির্ধারিত মূল্যেই আমাদের ক্রয় করতে হবে।
৭- এই চুক্তি ২৫ বছরের জন্য হওয়া মানে কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের একটি প্যারামিলিটারি বাহিনীতে পরিণত হবে।

এই চুক্তিতে ভারতের সুবিধা :
১- আমাদের সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা
২- নিম্নমান ও অচল অস্ত্র উচ্চমূল্যে বিক্রয় করতে পারা
৩- মিত্রবিহীন বাংলাদেশকে ইচ্ছেমত ব্যবহার
৪- আমাদের অস্ত্র ও জনবল দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা সমস্যা সমাধান করা।

সেনাবাহিনীর যৌথ প্রশিক্ষণ
প্রতিরক্ষা চুক্তির আরেকটি দিক হলো দুই দেশের সেনাবাহিনীর যৌথ প্রশিক্ষণ হবে। শক্তির দূর্বলতায় আমরাতো ভারতকে প্রশিক্ষণ দিতে পারবো না, বরং ভারতই আমাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে তাদের বাংলাদেশভীতি দূর করবে।

যৌথ প্রশিক্ষণে আমাদের সমস্যা :
১- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও কৌশল সম্পর্কে পুরো ধারণা ভারত পেয়ে যাবে।
২- প্রশিক্ষণে ও কৌশলে মৌলিকত্ব বলে কিছু থাকবে না।
৩- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্যাপকহারে র’ এর প্রভাব সৃষ্টি হবে।
৪- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য দেশের সাথে যৌথ কার্যক্রমে ভারত বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
৫- মোট কথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের অধিনস্থ একটা বাহিনীতে রুপান্তরিত হবে।

চুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উভয়পক্ষ পারষ্পরিক ডিফেন্স তথ্য আদান প্রদান করবে।
এটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অনেক বড় একটা সংকট সৃষ্টি করবে। এখানে যদিও বলা হয়েছে উভয়পক্ষ তথ্য আদান-প্রদান করবে কিন্তু এটা মোটেই বিশ্বাস যোগ্য নয়। কারণ যে ভারত গঙ্গা চুক্তির পর এই পর্যন্তএকবারও ঠিকমত পানি দেয় নি সেই ভারত তাদের ডিফেন্স তথ্য বাংলাদেশকে দিবে এটা বিশ্বাস করা পাপ। এর মাধ্যমে চুক্তির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের ডিজিএফআইকে হাত করবে ভারত। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বলে আর কিছু থাকবে। ভারতকে সব তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে বাংলাদেশ। এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ একটি পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত হবে। চুক্তি করা মানে আমাদের জান মালের নিরাপত্তা ভারতের কাছে বন্ধক রাখা।

সবচেয়ে বড় কথা হলো স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্তকোন পারষ্পরিক বিষয়ে ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারেনি। প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের শোষন করেছে। প্রতিটা চুক্তিতে আমাদের থেকে প্রাপ্তি বুঝে নিয়েছে কিন্তু আমাদের হিস্যা দেয় নি। মৈত্রী চুক্তি, গঙ্গা চুক্তি এগুলোর অন্যতম। ভারত আমাদের থেকে বেরুবাড়ি বুঝে নিয়েও তিন বিঘা করিডোর দেয় নি। কথা ছিল ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে আমাদের তিস্তা চুক্তির মাধ্যমে পানির নায্য হিস্যা বুঝিয়ে দেবে। অথচ নতজানু হাসিনা সরকার ভারতকে সব সুবিধা (বিনা শুল্কে ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার) দিয়েও আজ পর্যন্ততিস্তা চুক্তি করতে পারেনি। এক তিস্তা চুক্তির মূলা দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করে নিচ্ছে। হাসিনা ৭ এপ্রিল ইন্ডিয়া যাচ্ছে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে সেই সাথে ইন্ডিয়ার সহায়তায় নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে। হাসিনা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয় তাই জনগণের ইচ্ছার মূল্য এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে ভূলন্ঠিত করতে সে কুন্ঠাবোধ করে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন