৭ জুন, ২০২২

জামায়াত কি ফিরকা তৈরি করে?

জামায়াতের বয়স তখন মাত্র ৫ বছর। ১৯৪৬ সাল। লাহোরে একটি সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন মাওলানা মওদূদী রহ.। বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি কিছু অভিযোগের জবাব দেন। এর মধ্যে একটি ছিল, জামায়াতে ইসলাম নতুন ফিরকা তৈরি করছে। এর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এর উত্তরে মাওলানা বলেন, //বলা হয় যে, আমাদের জামায়াত মুসলমানদের মধ্যে একটি নতুন ফিরকার গোড়া পত্তন করেছে। এ ধরনের কথা যারা প্রচার করে থাকেন, সম্ভবত ফিরকা সৃষ্টির মূল কারণগুলোই তাদের জানা নেই, মুসলমানদের মধ্যে যেসব কারনে ফিরকা বা উপদলের সৃষ্টি হয়, সেগুলোকে মোটামুটি চার, ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমতঃ দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীন কোন বস্তুকে আসল দ্বীনের মধ্যে শামিল করে নিয়ে তাকেই কুফর ও ঈমান অথবা হিদায়াত ও গোমরাহীর মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা। দ্বিতীয়তঃ দ্বীনের কোন বিশেষ মাসয়ালাকে কুরআন ও সুন্নাহর চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তাকেই উপদল সৃষ্টির ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা। তৃতীয়তঃ ইজতিহাদী বিষয়াদিতে বাড়াবাড়ি করা এবং ভিন্ন মত পোষনকারীদের ওপর ফাসিক ও কুফরীর অপবাদ চাপিয়ে দেয়া কিংবা অন্তত তাদের সাথে স্বতন্ত্র আচার পদ্ধতি অবলম্বন করা। চতুর্থতঃ নবী করীম (স.) এর পর কোন বিশেষ ব্যক্তি সম্পর্কে অতিরিক্ত ধারণা পোষণ করা এবং তার সম্পর্কে এমন কোন মর্যাদা দাবী করা যা মানা বা না মানার উপর লোকদের ঈমান কিংবা কুফর নির্ভরশীল হতে পারে অথবা কোন বিশেষ দলে যোগদান করলেই সত্যপন্থী হওয়া যাবে এবং তার বাইরে অবস্থানকারী মুসলমানরা হবে বাতিলপন্থী এমন কোন দাবী উত্থাপন করা। এখন আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে, উপরোক্ত চারটি ভুলের কোনটি আমরা করেছি? কোনো ভদ্রলোক যদি দলিল-প্রমাণসহ স্পষ্টভাবে বলে দিতে পারেন যে, আমরা অমুক ভুলটি করেছি তবে তৎক্ষণাৎ আমরা তওবা করবো এবং নিজেদের সংশোধন করে নিতে আমরা মোটেই দ্বিধাবোধ করবো না। কেননা-আমরা আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার উদ্দেশ্যেই সংঘবদ্ধ হয়েছি, দলাদলি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু আমাদের কার্যকলাপ দ্বারা যদি ভুল প্রমাণিত না হয়, তবে আমাদের সম্পর্কে ফিরকা সৃষ্টির আশংকা কীভাবে করা যেতে পারে? আমরা শুধু আসল ইসলাম এবং কোন কাটছাঁট না করে পূর্ণ ইসলামকে নিয়েই দাড়িয়েছি, আর মুসলমানদের কাছে আমাদের আবেদন শুধু এই যে, আসুন আমরা সবাই মিলে একে কার্যত প্রতিষ্ঠিত করে দুনিয়ার সামনে এর সত্যতার সাক্ষ্য দান করি। বস্তুত দ্বীনের কোন একটি বা কয়েকটি বিষয়কে নয় বরং পরিপূর্ণ দীন ইসলামকে আমরা সংগঠন ও সম্মিলনের বুনিয়াদ হিসেবে স্থির করে নিয়েছি।// নতুন একটা কথা পাওয়া যায়, এটা মূলত মাদখালীদের প্রচারণায় তৈরি হয়েছে। তারা ইসলামী আন্দোলন থেকে মানুষকে দূরে রাখার ব্যাপারে সদা তৎপর। আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করুন। নতুন কথাটি হলো, আমরা মুসলিমরা এক জামায়াত। কেউ মুসলিম হলে তাকে আলাদা করে দল করার দরকার নেই। কথাটা ঠিক। তবে এর সাথে বাস্তবতার মিল নেই। কারণ আমরা মুসলিমরা কেউ সংঘবদ্ধ নই। আমাদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নেই। অতএব নেতা বিহীন এই দলকে জামায়াত হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এজন্যই মুহাম্মদ সা. বলেছেন, মেষের পাল থেকে আলাদা একটি মেষকে যেমন নেকড়ে বাঘ সহজেই ধরে খায়, তেমনি জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন একজন মুসলিম সহজেই শয়তানের খপ্পরে পড়ে যায়। যদি মুসলিম মানেই জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত হতো তাহলে মুহাম্মদ সা.-এর এই কথার দরকার ছিল না। উমার রা. বলেন, لا إسلام الا بجماعة ولا جماعة الا بإمارة ولا إمارة إلا بطاعة জামায়াত ছাড়া ইসলাম হয়না এবং নেতৃত্ব ছাড়া ইসলাম হয় না এবং আনুগত্য ছাড়া নেতৃত্ব হয় না। অতএব নেতৃত্বহীন একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে জামায়াতবদ্ধ রয়েছে বলে যে ধারণা দেওয়া হচ্ছে এটা ভুল। অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি এসব কথা বললেও এগুলো অসার কথা। আমরা আসলে ব্যক্তি বিবেচনায় কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। যদি নেই তাহলে তা ঘুরে ফিরে ফিরকায় পরিণত হবে। ইসলামকে তার বিধান অনুসারেই মানতে হবে। জামায়াতে ইসলাম এমন একটি দল বা জামায়াত যারা মাজহাবগত পার্থক্য, আমলগত মতপার্থক্য ও ইজতেহাদী পার্থক্যকে একেবারেই ইগ্নোর করে। এসব ক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো বক্তব্য নেই। জামায়াত কর্মীরা তাদের পছন্দমত মতামতকে অনুসরণ করতে পারে। জামায়াতে ইসলাম মূলত মুসলিমদের সংঘবদ্ধ করে তাদের দায়িত্ব পালনে তাকিদ করে। যারা অভিযোগ দাতা তারা এসব অভিযোগ আগেও করেছে এখনো করছে। এর দ্বারা মুসলিমদের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা আশা করি তারা ধীরে ধীরে হক উপলব্ধি করতে পারবেন এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালনে শামিল হবেন। ইনশাআল্লাহ। যারা এখনো জামায়াতে ইসলামে যোগ দেননি, আমরা তাদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন আমরা হাতে হাত রেখে দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব পালন করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন, আমাদের সঠিক পথ অনুসরণের তাওফিক দান করুন। #গণসংযোগ_পক্ষ


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন