আরব অঞ্চল পৃথিবীর প্রায় মাঝামাঝ স্থানে থাকায় ইসলামী রাষ্ট্র মূলত দুইদিকে বিস্তার লাভ করে। প্রথমত ইরাক ইরান হয়ে ভারতের দিকে। দ্বিতীয়ত সিরিয়া হয়ে ইউরোপের দিকে। পূর্ব দিকে অর্থাৎ ইরাক-ইরানে অগ্নিপুজারী পারসিকদের সাম্রাজ্য ছিল। আর সিরিয়া ও ইউরোপে খ্রিস্টান রোমানদের সাম্রাজ্য ছিল। উমার রা.-এর বিজয় অভিযানের ক্ষেত্রে সিরিয়া থেকে বাহিনী দুইভাগ একভাগ ইউরোপের দিকে অন্যভাগ জেরুজালেম ও মিশরের দিকে এগিয়ে যায়। ৩য় খলিফা উসমান রা.-এর খিলাফতকালে ইসলামী রাষ্ট্র প্রাচ্যের আজারবাইজান থেকে বিজয় অভিযান শুরু করে কাবুল অর্থাৎ আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।
এই বিস্তৃতির লাভের অনেক আগ থেকেই অর্থাৎ উমার রা.-এর শাসনামল থেকেই মুসলিম দাঈ ও ব্যবসায়ীরা এসব অঞ্চলে মুসলিমদের দাওয়াত দিতে শুরু করেছেন। উসমান রা.-এর সময়ে দাঈরা সিন্দু নদীর তীরের হিন্দুস্থানে ব্যাপক দাওয়াতী কাজ করেছেন। প্রাচ্য ও ইউরোপ অভিযানে যুদ্ধকৌশল নির্ণয় ও সেনাপতি নির্বাচনে উসমান (রা.)-এর দূরদর্শিতার প্রমাণ মেলে। অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা সংরক্ষণ করেন, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করে রাষ্ট্রের সীমানা সম্প্রসারণ করেন। স্বভাবে উমার রা. থেকে কোমল হওয়ায় কোন কোন ইতিহাসবিদ উসমান রা.-কে দুর্বল শাসক হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছেন। একজন দুর্বল শাসকের পক্ষে এত বিশাল রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যের সীমানা সংরক্ষণ ও রাজ্য সম্প্রসারণ সম্ভব হত না।
প্রাচ্যের বিজয়সমূহ
কুফা বাহিনীর আজারবাইজান বিজয় :
উসমান রা. খালীফা হওয়ার পর আল-ওয়ালীদ ইবনু উকবাকে কূফার শাসনকর্তা নিয়োগ করা হলে তিনি কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে তার অধীনস্ত আজারবাইজানের শাসনকর্তা উতবা ইবনু ফারকাদকে পদচ্যুত করেন। এই সুযোগে আজারীরা বিদ্রোহ করে এবং উমার রা.-এর আমলে তারা যে সন্ধিচুক্তি করেছিল তা ভঙ্গ করে। উসমান রা. কুফার শাসনকর্তাকে বিদ্রোহ দমনের নির্দেশ দেন। ২৫ হিজরিতে আল-ওয়ালীদ সেনাপতি সালমান ইবনু রাবী'আহকে একদল সৈনিকসহ অগ্রবাহিনী হিসেবে প্রেরণ করেন। কিছু সময় পরে তিনিও একটি বড় সেনাদলসহ রওয়ানা হন। মুসলিমদের যুদ্ধযাত্রা দেখে আজারবাইজানের বিদ্রোহীরা আগের সন্ধির শর্তে আনুগত্য স্বীকার করল। আল-ওয়ালীদ তাদের আনুগত্য গ্রহণ করলেন এবং চারদিকে ক্ষুদ্র বাহিনী প্রেরণ করলেন। আবদুল্লাহ ইবনু শুবাইল আল-আহমাসী চার হাজার সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে মুকান, বাবর ও তাইলাসান জয় করেন। তারপর সালমান আল-বাহিলী বারো হাজার সৈনিক নিয়ে আর্মেনিয়া জয় করেন। এই যুদ্ধে প্রচুর গানীমতের সম্পদ অর্জিত হয়। বিজয় শেষে আল-ওয়ালীদ আশ'আস ইবনু কায়সকে আজারবাইজানের দায়িত্ব দিয়ে কুফায় ফিরে আসেন।
রোমানদের হামলা প্রতিরোধে কুফাবাসীদের অংশগ্রহণ :
এদিকে সিরিয়ার শাসক মুয়াবিয়া রা. রোমানদের পক্ষ বড় আক্রমণের আশংকায় ছিলেন। তাই খলিফা উসমান রা. কুফার শাসক আল ওয়ালিদকে লিখলেন, //মু'আবিয়া ইবনু আবি সুফিয়ান আমার কাছে এই মর্মে পত্র দিয়েছে যে, রোমানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশাল সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেছে। আমার মনে হয় কুফাবাসীদের উচিত সিরিয় সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। তোমার কাছে আমার পত্র পৌছলে তুমি এমন একজন সেনাপতি বাছাই করবে যার সাহসিকতা ও ধার্মিকতার ব্যাপারে তুমি সন্তুষ্ট এবং তাঁর সাথে আট, নয় বা দশ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী সিরিয়দের সাহায্যে প্রেরণ করবে। যেখানে আমার দূত তোমার সাথে সাক্ষাৎ করবে সেখান থেকেই তুমি সৈন্য প্রেরণ করবে।//
মাত্রই আজারবাইজান অভিযান শেষ করে এই চিঠি পেয়েছেন আল-ওয়ালীদ। তিনি সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বললেন,
//হে সমাবেশ! পুর্ব দিকে আল্লাহ তোমাদের পরীক্ষা নিয়েছেন আর তোমরা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছ। তিনি তোমাদের হৃত সাম্রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছেন, নতুন নতুন অঞ্চল তোমাদের করায়ত্ত করে দিয়েছেন, তোমরা সুস্থ অবস্থায় যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ও সাওয়াবের অধিকারী হয়ে প্রত্যাবর্তন করেছ। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমার কাছে আমীরুল মু'মিনীন এই পত্র দিয়েছেন যে আমি যেন তোমাদের মধ্য থেকে বাছাই করে আট থেকে দশ হাজার সৈন্যের একটি দল গঠন করি; যাতে তোমরা তোমাদের সিরিয় ভাইদেরকে সাহায্য করতে পার। কারণ তারা রোমানদের আক্রমণের মুখে পড়েছে। আর এতে রয়েছে মহান প্রতিদান ও সুস্পষ্ট মর্যাদা। কাজেই তোমরা সালমান ইবনু রাবী'আহ আল-বাহিলী-এর নেতৃত্বে এই আহবানে সাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।//
সৈনিকরা তাদের সেনাপতির আহবানে সাড়া দিল। তিনদিন অতিক্রান্ত হওয়ার আগে আট হাজার কুফাবাসী সালমান ইবনু রাবী'আহ আল-বাহিলীর নেতৃত্বে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করল। ওদিকে সিরিয় বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন হাবীব ইবনু মাসলামা ইবনু খালিদ আল-ফিহরী। যৌথবাহিনী শত্রু এলাকায় তীব্র হামলা করে রোমানদেরকে পর্যুদস্ত করে ফেলল। যুদ্ধ শেষে কুফা ও সিরিয়ার বাহিনী বিপুল গানীমতসহ ফিরে এলো।
সা'ঈদ ইবনুল 'আস-এর তিবরিস্তান অভিযান :
হিজরী ত্রিশ সনে কুফার গভর্ণর সা'ঈদ ইবনুল আস কুফা হতে খুরাসান (আফগানিস্তান) বিজয়ের উদ্দেশে রওয়ানা করলেন। তাঁর সাথে অনেক সাহাবী ছিলেন: হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা., আল-হাসান রা., আল-হুসাইন রা., আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনু উমার রা., আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আস রা., আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবাইর রা.-সহ অনেকে। তিনি ইরানের তিবরিস্তান বিজয় করেন। সেখানের মুশরিকবাহিনী বাধা তৈরী করলেও সেটা ভয়াবহ যুদ্ধে রূপ নেয়নি। তিনি একের পর এক শহর ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে নিয়ে আসেন। এরপর জুরজান শহরে পৌঁছলে শহরবাসী তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলিম বাহিনীর সাথে ব্যাপক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এত মারাত্মকভাবে যুদ্ধ করতে হয় যে, মুসলিমরা সালাতুল খাওফ (যুদ্ধকালীন নামাজ) পড়তে হয়। অবশেষে মুসলিমরা জুরজানবাসীর দূর্গ দখল করতে সক্ষম হয়। তিবরিস্তান জয় করে সৈন্যদল কুফায় ফেরত আসে।
পারস্য সম্রাট ইয়াযদগির্দ-এর পলায়ন ও হত্যাকাণ্ড:
আবদুল্লাহ ইবনু আমির ছিলেন বসরার শাসক। তিনি ফার্স অভিমুখে রওয়ানা করে সেটি অধিকার করেন। মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামিতার খবর পেয়ে ছন্নছাড়া পারস্যের সম্রাট ইয়াজদিগার্দ পালিয়ে গেলেন। এটি ৩০ হিজরী সনের ঘটনা। কিসরাকে ধাওয়া দেওয়ার জন্য মাজাশি ইবনু মাস'উদ আস-সুলামীকে প্রেরণ করলেন ইবনু আমির। তিনি কিসরাকে তাড়িয়ে কারমানে নিয়ে গেলেন। ইয়াযদিগার্দ খুরাসানে পালিয়ে গেলেন আর মাজাশি সেনাবাহিনী নিয়ে সায়ারজানে অবস্থান নিলেন। গ্রামবাসী নিজেদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ভয়ে সম্রাটকে আশ্রয় দিল না, শুধু তাই নয়, তারা সম্রাটের বিরুদ্ধে তুর্কীদের সাহায্য চাইল। তুর্কী সৈন্যরা ইয়াযদগির্দের ক্ষুদ্র বাহিনীকে হত্যা করলে সম্রাট পালিয়ে গিয়ে মারগাব নদীর তীরে এক ব্যক্তির ঘরে আশ্রয় নিলেন। সেখানে তাকে হত্যা করা হয়। এভাবে পরিসমাপ্তি হয় দীর্ঘ পার্সিয়ান শাসক কিসরার ইতিহাস। কিসরা আর ফিরে আসেনি পৃথিবীতে।
আবদুল্লাহ ইবনু আমিরের খুরাসান বিজয় :
উসমান রা.-এর নির্দেশে ৩১ হিজরিতে আব্দুল্লাহ ইবনু আমির খোরাসান অভিযানে বের হন। কিন্তু নিশাপুরের পথে কুহিস্তান অতিক্রম করার সময় তিনি কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। সেনাপতি আল- আহনাফ ইবনু কায়স তাদের দর্প চূর্ণ করে নিশাপুরের রাস্তার নিরাপত্তা বিধান করেন। তারপর ক্ষুদ্র সেনাদল প্রেরণ করে তিনি রাসতাক যাম, বাখার ও জুওয়াইন দখল করেন। এখান থেকে ইবনু 'আমির, আল-আসওয়াদ ইবনু কুলসূম আল-আদাবীকে বাইহাকেরও উদ্দেশে প্রেরণ করেন। নগরপ্রাচীরের এক ছিদ্রপথ দিয়ে তিনি দলবলসহ শহরে প্রবেশ করেই স্থানীয়দের প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। যুদ্ধে আল-আসওয়াদ নিহত হলে তার ছোট ভাই আদহাম ইবনু কুলসূম মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং বিজয় সম্পন্ন করেন। নিশাপুর বিজয়ের পূর্বে ইবনু আমিরের সেনাপতিত্বে বুত, আশবান্দ, রুখ, যাওয়াহ, খুওয়াফ, আসফারাইন ও আরগিয়ান বিজিত হয়।
আবদুল্লাহ ইবনু আমির নিশাপুরের উপকণ্ঠে এসে শহর অবরোধ করলেন। শহরটি চারভাগে বিভক্ত ছিল; প্রতি ভাগে একজন করে শাসক ছিল। এক চতুর্থাংশের শাসক, ইবনু 'আমিরের কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেয়ে মুসলিমদেরকে শহরে প্রবেশ করতে দিলেন। আচানক শত্রু বাহিনী দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নিশাপুরের প্রধান শাসক সন্ধির প্রস্তাব দিলেন। নিশাপুর হতে বার্ষিক দশ লক্ষ দিরহাম কর প্রদান করা হবে-এই শর্তে চুক্তি সম্পাদিত হল। কায়স ইবনুল হায়সাম নিশাপুরের শাসক নিযুক্ত হলেন। মুসলিম সেনাবাহিনী নিশাপুরের আশে পাশে আরো বেশ কয়েকটি শহর সন্ধির মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের অধিকারে নিয়ে আসেন।
মার্ভারুজ বিজয় :
আবদুল্লাহ ইবনু আমির তাঁর সেনাপতি আল-আহনাফ ইবনু কায়সকে মার্ভারুয অভিমুখে প্রেরণ করেন। আল-আহনাফ শহর অবরোধ করে রাখেন। শহরবাসী দুর্গ থেকে বের হয়ে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু পরাজিত হয়ে পুনরায় দুর্গে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। মার্ভবাসীর অনুরোধে সেই দিনের জন্য যুদ্ধ স্থগিত রেখে আল-আহনাফ শিবিরে ফিরে যান। পরদিন প্রত্যুষে মার্ভের গভর্ণর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র মাহাক মারফত আরব বাহিনীর অধিনায়ক আল-আহনাফের নিকট সন্ধির প্রস্তাব সম্বলিত একটি চিঠি প্রেরণ করেন। পত্রে নিম্নোক্ত শর্তাবলীর উল্লেখ ছিল:
ক) মার্ভ থেকে বার্ষিক ষাট হাজার দিরহাম কর প্রদান করা হবে;
খ) পারস্য সম্রাট কিসরা কর্তৃক দখলকৃত ভূমিতে গভর্ণরের অধিকার মেনে নিতে হবে;
গ) গভর্ণর ও তাঁর পরিবারের কাছ থেকে কর আদায় করা যাবে না এবং
ঘ) মার্ভের নেতৃত্ব তাঁর পরিবারের হাতেই বহাল রাখতে হবে।
আল-আহনাফ চিঠির বিষয়বস্তুর ব্যাপারে নেতৃস্থানীয় সৈনিকদের সাথে পরামর্শ করে ইতিবাচক জবাব দিলেন। তবে একটি অতিরিক্ত শর্ত যুক্ত করলেন যে মার্ভবাসীকে মুসলিমদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। তদুপরি তিনি তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানালেন; তারা যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তারা মর্যাদায় আসীন হবে এবং মুসলিমদের ভাই বলে পরিগণিত হবে। মুহাররাম মাসের প্রথম দিবসে সম্পাদিত এই চুক্তিনামা লেখেন বানু সা'লাবা - এর আযাদকৃত দাস কায়সান।
তুখারিস্তান, জুযজান, তালকান ও ফারিয়ার বিজয়:
এরপর আল- আহনাফ চার হাজার সৈনিক নিয়ে তুখারিস্তান অভিমুখে রওয়ানা করেন। মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামিতার খবর পেয়ে তুখারিস্তান, জুযজান, তালকান ও ফারিয়াব-এর প্রায় ত্রিশ হাজার সৈন্য তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। বিপুল সংখ্যক শত্রু সৈন্য দেখে মুসলিমদের মাঝে যুদ্ধের ব্যাপারে মতভেদ দেখা দেয়। কিন্তু সেনাপতি আল- আহনাফ ছিলেন অবিচল। তিনি অত্যন্ত কার্যকর একটি কৌশলের আশ্রয় নেন; মারগাব নদী ও পাহাড়ের মাঝখানের সরু পথ ধরে তিনি এগিয়ে যান। ফলে একসঙ্গে বিপুল সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা থেকে তিনি নিস্তার লাভ করেন। এই সময় মার্ভবাসী সাহায্যে এগিয়ে এলেও আল-আহনাফ এই বলে তাদের সাহায্য গ্রহণে বিরত থাকেন যে তিনি মুশরিকদের সাহায্য নেবেন না। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর মুসলিম বাহিনী জয়লাভ করে। পলায়নপর শত্রুবাহিনীকে পশ্চাদ্ধাবন করার জন্য আল-আকরা ইবনু হারিসকে পাঠানো হয়; তিনি বীরবিক্রমে হামলা চালিয়ে শত্রু বাহিনীকে তছনছ করে দেন।
বালখ বিজয়:
আল-আহনাফ মার্ভ থেকে বাল্খ অভিমুখে রওয়ানা করলেন। বালখবাসী যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক ছিল। তারা বার্ষিক চার লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে সন্ধির প্রস্তাব দিলে আল-আহনাফ তা মেনে নিলেন চাচাতো ভাই উসাইদ ইবনুল মুতাশাম্মিসকে বালখের শাসক হিসেবে নিয়োগ করে আল-আহনাফ খাওয়ারিজের-এর পথ ধরলেন। কিন্তু শীতের মৌসুম এসে পড়ায় তিনি কোন অভিযান পরিচালনা না করে বাল্খে ফিরে এলেন। তখন বাল্খে নববর্ষের উৎসব চলছিল। বাখবাসীরা শাসনকর্তা উসাইদকে স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্র ও অজস্র মুদ্রা উপহার দিল। আল-আহনাফ বাল্খে এলে উসাইদ স্থানীয়দের উপহারের বিষয়টি তাকে জানালেন। তিনি সকল উপহার সামগ্রী ইবনু 'আমিরের কাছে নিয়ে যান। ইবনু 'আমির বললেন, 'আবু বাহর! ওগুলো তুমি নিয়ে নাও।' আল-আহনাফ জবাব দিলেন, 'ওগুলোতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। আবদুল্লাহ্ ইবনু 'আমির যুদ্ধজয়ের পর বাসরায় ফিরে গেলেন। যাওয়ার পূর্বে তিনি কায়স ইবনুল হায়সামকে খুরাসানের শাসনকর্তা নিয়োগ করলেন।
তুর্কি সেনানায়ক কারেনের আক্রমণ :
মুসলিমদের অগ্রযাত্রার খবর পেয়ে ৭০ হাজার যোদ্ধা নিয়ে তুর্কী যুদ্ধবাজ কারেন এগিয়ে এল। তুর্কীদের মুকাবিলায় 'আবদুল্লাহ ইবনু খাযিম আস-সুলামী চার হাজার যোদ্ধা নিয়ে এগিয়ে গেলেন। এঁদের মধ্য হতে ছয়শ' সৈনিককে অগ্রবর্তী দল হিসেবে পাঠালেন। শত্রুসৈন্যের কাছে পৌঁছলে ইবনু খাযিম সৈন্যদেরকে বললেন, 'সবাই যেন বর্শাগ্রে কাপড়ের টুকরা বেঁধে তাতে তেল বা চর্বি মেখে আগুন জ্বালিয়ে নেয়। তারপর আগুনের বর্ষা দিয়ে কারেন বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়। ৭০ হাজার যোদ্ধার কারেন বাহিনী চারদিকে আগুন দেখে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পালাতে থাকে। তুর্কী দলপতি কারেনসহ বহু সৈন্য নিহত হয়।
কাবুল জয় :
আবদুল্লাহ ইবনু আমির কাবুল অভিযানের সেনানায়ক হিসেবে আবদুর রহমান ইবনু সামুরাকে নিয়োগ দেন। তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা বর্ধনে চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। প্রথমে তিনি যারানজ-এর বিদ্রোহ দমন করেন। তারপর ভারত সীমান্তে যারানজ ও কাশ-এর মধ্যবর্তী এলাকা জয় করেন। অতঃপর রুখরাজ জয় করে দাউন-এর বাসিন্দাদেরকে অবরোধ করেন। সামান্য প্রতিরোধের পর স্থানীয়রা সন্ধি করে। ঐ পাহাড়ে স্বর্ণমূর্তি ছিল, যার দু'চোখ ছিল ইয়াকুত পাথরের। আবদুর রহমান মূর্তিটির হাত কেটে চোখ বের করে নিলেন। কিন্তু স্বর্ণ ও জহরত না নিয়ে শহরের শাসকের কাছে সেগুলো ফেরত দিয়ে বললেন, এগুলোতে আমার কাজ নেই, আমি শুধু তোমাকে দেখাতে চেয়েছিলাম যে, মূর্তিটি ক্ষতি বা উপকার করতে পারে না। তারপর তিনি বুত, কাবুল ও যাবুলিস্তান (গজনী) জয় করেন। তারপর বিজয়াভিযান দীর্ঘ না করে তিনি যারানজ-এ ফিরে আসেন। উসমান রা.-এর খিলাফাতের শেষদিকে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তিনি উমাইর ইবনু আহমার আল-ইয়াশকুরীকে প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে যারানজ ত্যাগ করেন।
আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা জয় করার পর বসরার শাসক আব্দুল্লাহ ইবনু আমল উমরাহ আশ-শুকুর পালন করেন। ৩১ ও ৩২ হিজরিতে বসরার গভর্নর আব্দুল্লাহ ইবনু আমীর ও তাঁর অধীনস্থ সেনাপতিগণ মধ্য এশিয়ার বিশাল ভূখন্ড জয় করেন। এরকম বিজয়ের কৃতিত্ব খুব কম গভর্ণরের ভাগ্যে জুটেছে। বিজয়াভিযানের সমাপ্তিতে লোকজন ইবনু 'আমিরকে বলল: 'আল্লাহ আপনাকে বিপুল বিজয় দান করেছেন: আপনি ফার্স, কারমান, সিজিস্তান ও সমগ্র খুরাসান জয় করেছেন! ইবনু আমির বললেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ আমি এখান থেকে ইহরাম বেঁধে উমরাহ পালন করব। তারপর ইবনু আমির নিশাপুর থেকে ইহরাম বেঁধে মাক্কায় গিয়ে উমরাহ পালন করেন।
৩২ হিজরীতে বালানজার-এর যুদ্ধে বিপর্যয় :
কুফার গভর্ণর সা'ঈদ ইবনুল আসের অধীনে সেনাপতি আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ আল-বাবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি বালাজারে অভিযান পরিচালনার সংকল্প করলেন। বিষয়টি জানতে পেরে উসমান রা. সা'ঈদ ইবনুল আসকে লিখেন, 'তুমি সালমান ইবনু রাবী'আহকে তাঁর ভাই আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ-এর সহায়তার জন্য আল-বাবে প্রেরণ কর। আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ আল-বাবে ছিলেন, তাঁকে সাবধান করে খালীফা লিখলেন, 'বদহজমে প্রজাদের অনেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে; অতএব তুমি অভিযান সংক্ষেপ কর, মুসলিমদেরকে দুর্যোগে ঠেলে দিও না। কারণ আমার ভয় হয় তারা বিপদে পড়বে। খালীফার এই সতর্কবাণী আবদুর রহমানকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারল না। তিনি বালানজার থেকে ফিরে আসলেন না। উসমান রা.-এর খিলাফাতের নবম বছরে আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ বালানজারে পৌঁছে শহর অবরুদ্ধ করে মিনজানিক দাগিয়ে পাথর ছুঁড়তে লাগলেন। অবরুদ্ধ শহরবাসীর কেউ মিনজানিকের তোড়ে কাছে ঘেঁষতে পারছিল না। তারপর একদিন বালাজারবাসীর সহায়তায় তুর্কীরা এগিয়ে এল, যৌথ বাহিনী প্রচণ্ড আক্রমণের ফলে মুসলিম বাহিনী পরাজিত হলো। আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ নিহত হলেন। তাঁকে বালানজারের উপকন্ঠে দাফন করা হয়। পরাজিত মুসলিম বাহিনী ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। সালমান ইবনু রাবী'আহ একদলকে আশ্রয় দিয়ে আল-বাবের পথে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিলেন। আরেকদল খাযার-এর পথ ধরে জীলান ও জুরজানের পথে বেরিয়ে গেলেন। এঁদের সাথে সালমান ফারসী রা. ও আবূ হুরাইরা রা. ছিলেন।
হিন্দুস্থান অভিযানের পরিকল্পনা :
খলিফা উসমান রা. বাসরার গভর্ণর 'আবদুল্লাহ ইবনু আমিরকে হিন্দুস্থান তথা ভারত সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধানের নির্দেশ দেন। তিনি হুকাইম ইবনু জাবালা আল-‘আবদীকে সিন্ধুতে প্রেরণ করেন। হুকাইম ভারত সম্পর্কে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করে খালীফাকে অবহিত করে বলেন, 'ভারতে পানি কম, ফলমূল নিম্নমানের, ওই অঞ্চলের চোরগুলো অনেক সাহসী, আমাদের সৈনিক সংখ্যা কম হলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে আর বেশি হলে ক্ষুধায় মারা যাবে। খালীফা বললেন, 'তুমি কি অভিজ্ঞতা থেকে বলছো না বুদ্ধি থেকে বলছো? তিনি জবাব দিলেন, 'না, বরং অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।' এরপর খালীফা আর ভারতে কোন বাহিনী প্রেরণ করেননি।
এই বিস্তৃতির লাভের অনেক আগ থেকেই অর্থাৎ উমার রা.-এর শাসনামল থেকেই মুসলিম দাঈ ও ব্যবসায়ীরা এসব অঞ্চলে মুসলিমদের দাওয়াত দিতে শুরু করেছেন। উসমান রা.-এর সময়ে দাঈরা সিন্দু নদীর তীরের হিন্দুস্থানে ব্যাপক দাওয়াতী কাজ করেছেন। প্রাচ্য ও ইউরোপ অভিযানে যুদ্ধকৌশল নির্ণয় ও সেনাপতি নির্বাচনে উসমান (রা.)-এর দূরদর্শিতার প্রমাণ মেলে। অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা সংরক্ষণ করেন, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করে রাষ্ট্রের সীমানা সম্প্রসারণ করেন। স্বভাবে উমার রা. থেকে কোমল হওয়ায় কোন কোন ইতিহাসবিদ উসমান রা.-কে দুর্বল শাসক হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছেন। একজন দুর্বল শাসকের পক্ষে এত বিশাল রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যের সীমানা সংরক্ষণ ও রাজ্য সম্প্রসারণ সম্ভব হত না।
প্রাচ্যের বিজয়সমূহ
কুফা বাহিনীর আজারবাইজান বিজয় :
উসমান রা. খালীফা হওয়ার পর আল-ওয়ালীদ ইবনু উকবাকে কূফার শাসনকর্তা নিয়োগ করা হলে তিনি কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে তার অধীনস্ত আজারবাইজানের শাসনকর্তা উতবা ইবনু ফারকাদকে পদচ্যুত করেন। এই সুযোগে আজারীরা বিদ্রোহ করে এবং উমার রা.-এর আমলে তারা যে সন্ধিচুক্তি করেছিল তা ভঙ্গ করে। উসমান রা. কুফার শাসনকর্তাকে বিদ্রোহ দমনের নির্দেশ দেন। ২৫ হিজরিতে আল-ওয়ালীদ সেনাপতি সালমান ইবনু রাবী'আহকে একদল সৈনিকসহ অগ্রবাহিনী হিসেবে প্রেরণ করেন। কিছু সময় পরে তিনিও একটি বড় সেনাদলসহ রওয়ানা হন। মুসলিমদের যুদ্ধযাত্রা দেখে আজারবাইজানের বিদ্রোহীরা আগের সন্ধির শর্তে আনুগত্য স্বীকার করল। আল-ওয়ালীদ তাদের আনুগত্য গ্রহণ করলেন এবং চারদিকে ক্ষুদ্র বাহিনী প্রেরণ করলেন। আবদুল্লাহ ইবনু শুবাইল আল-আহমাসী চার হাজার সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে মুকান, বাবর ও তাইলাসান জয় করেন। তারপর সালমান আল-বাহিলী বারো হাজার সৈনিক নিয়ে আর্মেনিয়া জয় করেন। এই যুদ্ধে প্রচুর গানীমতের সম্পদ অর্জিত হয়। বিজয় শেষে আল-ওয়ালীদ আশ'আস ইবনু কায়সকে আজারবাইজানের দায়িত্ব দিয়ে কুফায় ফিরে আসেন।
রোমানদের হামলা প্রতিরোধে কুফাবাসীদের অংশগ্রহণ :
এদিকে সিরিয়ার শাসক মুয়াবিয়া রা. রোমানদের পক্ষ বড় আক্রমণের আশংকায় ছিলেন। তাই খলিফা উসমান রা. কুফার শাসক আল ওয়ালিদকে লিখলেন, //মু'আবিয়া ইবনু আবি সুফিয়ান আমার কাছে এই মর্মে পত্র দিয়েছে যে, রোমানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশাল সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেছে। আমার মনে হয় কুফাবাসীদের উচিত সিরিয় সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। তোমার কাছে আমার পত্র পৌছলে তুমি এমন একজন সেনাপতি বাছাই করবে যার সাহসিকতা ও ধার্মিকতার ব্যাপারে তুমি সন্তুষ্ট এবং তাঁর সাথে আট, নয় বা দশ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী সিরিয়দের সাহায্যে প্রেরণ করবে। যেখানে আমার দূত তোমার সাথে সাক্ষাৎ করবে সেখান থেকেই তুমি সৈন্য প্রেরণ করবে।//
মাত্রই আজারবাইজান অভিযান শেষ করে এই চিঠি পেয়েছেন আল-ওয়ালীদ। তিনি সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বললেন,
//হে সমাবেশ! পুর্ব দিকে আল্লাহ তোমাদের পরীক্ষা নিয়েছেন আর তোমরা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছ। তিনি তোমাদের হৃত সাম্রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছেন, নতুন নতুন অঞ্চল তোমাদের করায়ত্ত করে দিয়েছেন, তোমরা সুস্থ অবস্থায় যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ও সাওয়াবের অধিকারী হয়ে প্রত্যাবর্তন করেছ। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমার কাছে আমীরুল মু'মিনীন এই পত্র দিয়েছেন যে আমি যেন তোমাদের মধ্য থেকে বাছাই করে আট থেকে দশ হাজার সৈন্যের একটি দল গঠন করি; যাতে তোমরা তোমাদের সিরিয় ভাইদেরকে সাহায্য করতে পার। কারণ তারা রোমানদের আক্রমণের মুখে পড়েছে। আর এতে রয়েছে মহান প্রতিদান ও সুস্পষ্ট মর্যাদা। কাজেই তোমরা সালমান ইবনু রাবী'আহ আল-বাহিলী-এর নেতৃত্বে এই আহবানে সাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।//
সৈনিকরা তাদের সেনাপতির আহবানে সাড়া দিল। তিনদিন অতিক্রান্ত হওয়ার আগে আট হাজার কুফাবাসী সালমান ইবনু রাবী'আহ আল-বাহিলীর নেতৃত্বে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করল। ওদিকে সিরিয় বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন হাবীব ইবনু মাসলামা ইবনু খালিদ আল-ফিহরী। যৌথবাহিনী শত্রু এলাকায় তীব্র হামলা করে রোমানদেরকে পর্যুদস্ত করে ফেলল। যুদ্ধ শেষে কুফা ও সিরিয়ার বাহিনী বিপুল গানীমতসহ ফিরে এলো।
সা'ঈদ ইবনুল 'আস-এর তিবরিস্তান অভিযান :
হিজরী ত্রিশ সনে কুফার গভর্ণর সা'ঈদ ইবনুল আস কুফা হতে খুরাসান (আফগানিস্তান) বিজয়ের উদ্দেশে রওয়ানা করলেন। তাঁর সাথে অনেক সাহাবী ছিলেন: হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা., আল-হাসান রা., আল-হুসাইন রা., আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনু উমার রা., আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আস রা., আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবাইর রা.-সহ অনেকে। তিনি ইরানের তিবরিস্তান বিজয় করেন। সেখানের মুশরিকবাহিনী বাধা তৈরী করলেও সেটা ভয়াবহ যুদ্ধে রূপ নেয়নি। তিনি একের পর এক শহর ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে নিয়ে আসেন। এরপর জুরজান শহরে পৌঁছলে শহরবাসী তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলিম বাহিনীর সাথে ব্যাপক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এত মারাত্মকভাবে যুদ্ধ করতে হয় যে, মুসলিমরা সালাতুল খাওফ (যুদ্ধকালীন নামাজ) পড়তে হয়। অবশেষে মুসলিমরা জুরজানবাসীর দূর্গ দখল করতে সক্ষম হয়। তিবরিস্তান জয় করে সৈন্যদল কুফায় ফেরত আসে।
পারস্য সম্রাট ইয়াযদগির্দ-এর পলায়ন ও হত্যাকাণ্ড:
আবদুল্লাহ ইবনু আমির ছিলেন বসরার শাসক। তিনি ফার্স অভিমুখে রওয়ানা করে সেটি অধিকার করেন। মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামিতার খবর পেয়ে ছন্নছাড়া পারস্যের সম্রাট ইয়াজদিগার্দ পালিয়ে গেলেন। এটি ৩০ হিজরী সনের ঘটনা। কিসরাকে ধাওয়া দেওয়ার জন্য মাজাশি ইবনু মাস'উদ আস-সুলামীকে প্রেরণ করলেন ইবনু আমির। তিনি কিসরাকে তাড়িয়ে কারমানে নিয়ে গেলেন। ইয়াযদিগার্দ খুরাসানে পালিয়ে গেলেন আর মাজাশি সেনাবাহিনী নিয়ে সায়ারজানে অবস্থান নিলেন। গ্রামবাসী নিজেদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ভয়ে সম্রাটকে আশ্রয় দিল না, শুধু তাই নয়, তারা সম্রাটের বিরুদ্ধে তুর্কীদের সাহায্য চাইল। তুর্কী সৈন্যরা ইয়াযদগির্দের ক্ষুদ্র বাহিনীকে হত্যা করলে সম্রাট পালিয়ে গিয়ে মারগাব নদীর তীরে এক ব্যক্তির ঘরে আশ্রয় নিলেন। সেখানে তাকে হত্যা করা হয়। এভাবে পরিসমাপ্তি হয় দীর্ঘ পার্সিয়ান শাসক কিসরার ইতিহাস। কিসরা আর ফিরে আসেনি পৃথিবীতে।
আবদুল্লাহ ইবনু আমিরের খুরাসান বিজয় :
উসমান রা.-এর নির্দেশে ৩১ হিজরিতে আব্দুল্লাহ ইবনু আমির খোরাসান অভিযানে বের হন। কিন্তু নিশাপুরের পথে কুহিস্তান অতিক্রম করার সময় তিনি কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। সেনাপতি আল- আহনাফ ইবনু কায়স তাদের দর্প চূর্ণ করে নিশাপুরের রাস্তার নিরাপত্তা বিধান করেন। তারপর ক্ষুদ্র সেনাদল প্রেরণ করে তিনি রাসতাক যাম, বাখার ও জুওয়াইন দখল করেন। এখান থেকে ইবনু 'আমির, আল-আসওয়াদ ইবনু কুলসূম আল-আদাবীকে বাইহাকেরও উদ্দেশে প্রেরণ করেন। নগরপ্রাচীরের এক ছিদ্রপথ দিয়ে তিনি দলবলসহ শহরে প্রবেশ করেই স্থানীয়দের প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। যুদ্ধে আল-আসওয়াদ নিহত হলে তার ছোট ভাই আদহাম ইবনু কুলসূম মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং বিজয় সম্পন্ন করেন। নিশাপুর বিজয়ের পূর্বে ইবনু আমিরের সেনাপতিত্বে বুত, আশবান্দ, রুখ, যাওয়াহ, খুওয়াফ, আসফারাইন ও আরগিয়ান বিজিত হয়।
আবদুল্লাহ ইবনু আমির নিশাপুরের উপকণ্ঠে এসে শহর অবরোধ করলেন। শহরটি চারভাগে বিভক্ত ছিল; প্রতি ভাগে একজন করে শাসক ছিল। এক চতুর্থাংশের শাসক, ইবনু 'আমিরের কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেয়ে মুসলিমদেরকে শহরে প্রবেশ করতে দিলেন। আচানক শত্রু বাহিনী দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নিশাপুরের প্রধান শাসক সন্ধির প্রস্তাব দিলেন। নিশাপুর হতে বার্ষিক দশ লক্ষ দিরহাম কর প্রদান করা হবে-এই শর্তে চুক্তি সম্পাদিত হল। কায়স ইবনুল হায়সাম নিশাপুরের শাসক নিযুক্ত হলেন। মুসলিম সেনাবাহিনী নিশাপুরের আশে পাশে আরো বেশ কয়েকটি শহর সন্ধির মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের অধিকারে নিয়ে আসেন।
মার্ভারুজ বিজয় :
আবদুল্লাহ ইবনু আমির তাঁর সেনাপতি আল-আহনাফ ইবনু কায়সকে মার্ভারুয অভিমুখে প্রেরণ করেন। আল-আহনাফ শহর অবরোধ করে রাখেন। শহরবাসী দুর্গ থেকে বের হয়ে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু পরাজিত হয়ে পুনরায় দুর্গে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। মার্ভবাসীর অনুরোধে সেই দিনের জন্য যুদ্ধ স্থগিত রেখে আল-আহনাফ শিবিরে ফিরে যান। পরদিন প্রত্যুষে মার্ভের গভর্ণর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র মাহাক মারফত আরব বাহিনীর অধিনায়ক আল-আহনাফের নিকট সন্ধির প্রস্তাব সম্বলিত একটি চিঠি প্রেরণ করেন। পত্রে নিম্নোক্ত শর্তাবলীর উল্লেখ ছিল:
ক) মার্ভ থেকে বার্ষিক ষাট হাজার দিরহাম কর প্রদান করা হবে;
খ) পারস্য সম্রাট কিসরা কর্তৃক দখলকৃত ভূমিতে গভর্ণরের অধিকার মেনে নিতে হবে;
গ) গভর্ণর ও তাঁর পরিবারের কাছ থেকে কর আদায় করা যাবে না এবং
ঘ) মার্ভের নেতৃত্ব তাঁর পরিবারের হাতেই বহাল রাখতে হবে।
আল-আহনাফ চিঠির বিষয়বস্তুর ব্যাপারে নেতৃস্থানীয় সৈনিকদের সাথে পরামর্শ করে ইতিবাচক জবাব দিলেন। তবে একটি অতিরিক্ত শর্ত যুক্ত করলেন যে মার্ভবাসীকে মুসলিমদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। তদুপরি তিনি তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানালেন; তারা যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তারা মর্যাদায় আসীন হবে এবং মুসলিমদের ভাই বলে পরিগণিত হবে। মুহাররাম মাসের প্রথম দিবসে সম্পাদিত এই চুক্তিনামা লেখেন বানু সা'লাবা - এর আযাদকৃত দাস কায়সান।
তুখারিস্তান, জুযজান, তালকান ও ফারিয়ার বিজয়:
এরপর আল- আহনাফ চার হাজার সৈনিক নিয়ে তুখারিস্তান অভিমুখে রওয়ানা করেন। মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামিতার খবর পেয়ে তুখারিস্তান, জুযজান, তালকান ও ফারিয়াব-এর প্রায় ত্রিশ হাজার সৈন্য তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। বিপুল সংখ্যক শত্রু সৈন্য দেখে মুসলিমদের মাঝে যুদ্ধের ব্যাপারে মতভেদ দেখা দেয়। কিন্তু সেনাপতি আল- আহনাফ ছিলেন অবিচল। তিনি অত্যন্ত কার্যকর একটি কৌশলের আশ্রয় নেন; মারগাব নদী ও পাহাড়ের মাঝখানের সরু পথ ধরে তিনি এগিয়ে যান। ফলে একসঙ্গে বিপুল সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা থেকে তিনি নিস্তার লাভ করেন। এই সময় মার্ভবাসী সাহায্যে এগিয়ে এলেও আল-আহনাফ এই বলে তাদের সাহায্য গ্রহণে বিরত থাকেন যে তিনি মুশরিকদের সাহায্য নেবেন না। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর মুসলিম বাহিনী জয়লাভ করে। পলায়নপর শত্রুবাহিনীকে পশ্চাদ্ধাবন করার জন্য আল-আকরা ইবনু হারিসকে পাঠানো হয়; তিনি বীরবিক্রমে হামলা চালিয়ে শত্রু বাহিনীকে তছনছ করে দেন।
বালখ বিজয়:
আল-আহনাফ মার্ভ থেকে বাল্খ অভিমুখে রওয়ানা করলেন। বালখবাসী যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক ছিল। তারা বার্ষিক চার লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে সন্ধির প্রস্তাব দিলে আল-আহনাফ তা মেনে নিলেন চাচাতো ভাই উসাইদ ইবনুল মুতাশাম্মিসকে বালখের শাসক হিসেবে নিয়োগ করে আল-আহনাফ খাওয়ারিজের-এর পথ ধরলেন। কিন্তু শীতের মৌসুম এসে পড়ায় তিনি কোন অভিযান পরিচালনা না করে বাল্খে ফিরে এলেন। তখন বাল্খে নববর্ষের উৎসব চলছিল। বাখবাসীরা শাসনকর্তা উসাইদকে স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্র ও অজস্র মুদ্রা উপহার দিল। আল-আহনাফ বাল্খে এলে উসাইদ স্থানীয়দের উপহারের বিষয়টি তাকে জানালেন। তিনি সকল উপহার সামগ্রী ইবনু 'আমিরের কাছে নিয়ে যান। ইবনু 'আমির বললেন, 'আবু বাহর! ওগুলো তুমি নিয়ে নাও।' আল-আহনাফ জবাব দিলেন, 'ওগুলোতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। আবদুল্লাহ্ ইবনু 'আমির যুদ্ধজয়ের পর বাসরায় ফিরে গেলেন। যাওয়ার পূর্বে তিনি কায়স ইবনুল হায়সামকে খুরাসানের শাসনকর্তা নিয়োগ করলেন।
তুর্কি সেনানায়ক কারেনের আক্রমণ :
মুসলিমদের অগ্রযাত্রার খবর পেয়ে ৭০ হাজার যোদ্ধা নিয়ে তুর্কী যুদ্ধবাজ কারেন এগিয়ে এল। তুর্কীদের মুকাবিলায় 'আবদুল্লাহ ইবনু খাযিম আস-সুলামী চার হাজার যোদ্ধা নিয়ে এগিয়ে গেলেন। এঁদের মধ্য হতে ছয়শ' সৈনিককে অগ্রবর্তী দল হিসেবে পাঠালেন। শত্রুসৈন্যের কাছে পৌঁছলে ইবনু খাযিম সৈন্যদেরকে বললেন, 'সবাই যেন বর্শাগ্রে কাপড়ের টুকরা বেঁধে তাতে তেল বা চর্বি মেখে আগুন জ্বালিয়ে নেয়। তারপর আগুনের বর্ষা দিয়ে কারেন বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়। ৭০ হাজার যোদ্ধার কারেন বাহিনী চারদিকে আগুন দেখে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পালাতে থাকে। তুর্কী দলপতি কারেনসহ বহু সৈন্য নিহত হয়।
কাবুল জয় :
আবদুল্লাহ ইবনু আমির কাবুল অভিযানের সেনানায়ক হিসেবে আবদুর রহমান ইবনু সামুরাকে নিয়োগ দেন। তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা বর্ধনে চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। প্রথমে তিনি যারানজ-এর বিদ্রোহ দমন করেন। তারপর ভারত সীমান্তে যারানজ ও কাশ-এর মধ্যবর্তী এলাকা জয় করেন। অতঃপর রুখরাজ জয় করে দাউন-এর বাসিন্দাদেরকে অবরোধ করেন। সামান্য প্রতিরোধের পর স্থানীয়রা সন্ধি করে। ঐ পাহাড়ে স্বর্ণমূর্তি ছিল, যার দু'চোখ ছিল ইয়াকুত পাথরের। আবদুর রহমান মূর্তিটির হাত কেটে চোখ বের করে নিলেন। কিন্তু স্বর্ণ ও জহরত না নিয়ে শহরের শাসকের কাছে সেগুলো ফেরত দিয়ে বললেন, এগুলোতে আমার কাজ নেই, আমি শুধু তোমাকে দেখাতে চেয়েছিলাম যে, মূর্তিটি ক্ষতি বা উপকার করতে পারে না। তারপর তিনি বুত, কাবুল ও যাবুলিস্তান (গজনী) জয় করেন। তারপর বিজয়াভিযান দীর্ঘ না করে তিনি যারানজ-এ ফিরে আসেন। উসমান রা.-এর খিলাফাতের শেষদিকে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তিনি উমাইর ইবনু আহমার আল-ইয়াশকুরীকে প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে যারানজ ত্যাগ করেন।
আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা জয় করার পর বসরার শাসক আব্দুল্লাহ ইবনু আমল উমরাহ আশ-শুকুর পালন করেন। ৩১ ও ৩২ হিজরিতে বসরার গভর্নর আব্দুল্লাহ ইবনু আমীর ও তাঁর অধীনস্থ সেনাপতিগণ মধ্য এশিয়ার বিশাল ভূখন্ড জয় করেন। এরকম বিজয়ের কৃতিত্ব খুব কম গভর্ণরের ভাগ্যে জুটেছে। বিজয়াভিযানের সমাপ্তিতে লোকজন ইবনু 'আমিরকে বলল: 'আল্লাহ আপনাকে বিপুল বিজয় দান করেছেন: আপনি ফার্স, কারমান, সিজিস্তান ও সমগ্র খুরাসান জয় করেছেন! ইবনু আমির বললেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ আমি এখান থেকে ইহরাম বেঁধে উমরাহ পালন করব। তারপর ইবনু আমির নিশাপুর থেকে ইহরাম বেঁধে মাক্কায় গিয়ে উমরাহ পালন করেন।
৩২ হিজরীতে বালানজার-এর যুদ্ধে বিপর্যয় :
কুফার গভর্ণর সা'ঈদ ইবনুল আসের অধীনে সেনাপতি আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ আল-বাবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি বালাজারে অভিযান পরিচালনার সংকল্প করলেন। বিষয়টি জানতে পেরে উসমান রা. সা'ঈদ ইবনুল আসকে লিখেন, 'তুমি সালমান ইবনু রাবী'আহকে তাঁর ভাই আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ-এর সহায়তার জন্য আল-বাবে প্রেরণ কর। আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ আল-বাবে ছিলেন, তাঁকে সাবধান করে খালীফা লিখলেন, 'বদহজমে প্রজাদের অনেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে; অতএব তুমি অভিযান সংক্ষেপ কর, মুসলিমদেরকে দুর্যোগে ঠেলে দিও না। কারণ আমার ভয় হয় তারা বিপদে পড়বে। খালীফার এই সতর্কবাণী আবদুর রহমানকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারল না। তিনি বালানজার থেকে ফিরে আসলেন না। উসমান রা.-এর খিলাফাতের নবম বছরে আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ বালানজারে পৌঁছে শহর অবরুদ্ধ করে মিনজানিক দাগিয়ে পাথর ছুঁড়তে লাগলেন। অবরুদ্ধ শহরবাসীর কেউ মিনজানিকের তোড়ে কাছে ঘেঁষতে পারছিল না। তারপর একদিন বালাজারবাসীর সহায়তায় তুর্কীরা এগিয়ে এল, যৌথ বাহিনী প্রচণ্ড আক্রমণের ফলে মুসলিম বাহিনী পরাজিত হলো। আবদুর রহমান ইবনু রাবী'আহ নিহত হলেন। তাঁকে বালানজারের উপকন্ঠে দাফন করা হয়। পরাজিত মুসলিম বাহিনী ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। সালমান ইবনু রাবী'আহ একদলকে আশ্রয় দিয়ে আল-বাবের পথে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিলেন। আরেকদল খাযার-এর পথ ধরে জীলান ও জুরজানের পথে বেরিয়ে গেলেন। এঁদের সাথে সালমান ফারসী রা. ও আবূ হুরাইরা রা. ছিলেন।
হিন্দুস্থান অভিযানের পরিকল্পনা :
খলিফা উসমান রা. বাসরার গভর্ণর 'আবদুল্লাহ ইবনু আমিরকে হিন্দুস্থান তথা ভারত সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধানের নির্দেশ দেন। তিনি হুকাইম ইবনু জাবালা আল-‘আবদীকে সিন্ধুতে প্রেরণ করেন। হুকাইম ভারত সম্পর্কে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করে খালীফাকে অবহিত করে বলেন, 'ভারতে পানি কম, ফলমূল নিম্নমানের, ওই অঞ্চলের চোরগুলো অনেক সাহসী, আমাদের সৈনিক সংখ্যা কম হলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে আর বেশি হলে ক্ষুধায় মারা যাবে। খালীফা বললেন, 'তুমি কি অভিজ্ঞতা থেকে বলছো না বুদ্ধি থেকে বলছো? তিনি জবাব দিলেন, 'না, বরং অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।' এরপর খালীফা আর ভারতে কোন বাহিনী প্রেরণ করেননি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন