সাইত্রিশ হিজরিতে খারেজিদের বিরুদ্ধে নাহরাওয়ানের যুদ্ধের পর আলী রা. দেখলেন তাঁর সেনাবাহিনী যথেষ্ট ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। তারা আর যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। আলী রা. পরিস্থিতি অনুধাবন করে সিরিয়ায় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা স্থগিত করলেন। তিনি ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে সময় দিয়েছেন। এরপর থেকে তাঁর শাহদাত পর্যন্ত তাঁকে আর যুদ্ধে জড়াতে হয়নি। এর মধ্যে সিরিয়া ছাড়া বাকী অংশ আলী রা.-এর অধীনে ছিল।
তবে আলী রা. দমে গেলেও দমে যাননি মুয়াবিয়া রা.। তাঁর যুক্তি ছিল আমর ইবনুল আস রা. ও আবু মুসা আশয়ারি রা.-এর সালিশ অনুসারে তিনি খলিফা নির্বাচিত হয়েছেন। আলী রা. সালিশ অস্বীকার করে চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। আদতে এটা সঠিক ছিল না। আমর রা. ও আবু মুসা রা. ঐক্যমতে পৌঁছান নি। আমর রা. নিজ ঘোষণায় মুয়াবিয়া রা.-কে খলিফা ঘোষণা করেছিলেন।
যাই হিজরি আটত্রিশ সনে মুয়াবিয়া রা. মিশর দখল করার জন্য আমর ইবনুল আস রা.-কে পাঠান। তখন আলী রা.-এর পক্ষে মিশরের গভর্নর ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর। মুয়াবিয়া রা.-এর কাছে তিনি উসমান হত্যাকারী হিসেবে সাব্যস্থ ছিলেন। আমর ইবনুল আস মিশর দখল করেন এবং খুবই নির্মমভাবে মিশরের গভর্নর মুহাম্মদ বিন আবু বকরকে হত্যা করেন। একই বছর তাঁর মা আসমা বিনতে উমাইস রা.-ও মৃত্যুবরণ করেন। মুহাম্মদ বিন আবু বকর জন্মের কয়েকবছর পর তাঁর পিতা আবু বকর রা. ইন্তেকাল করেন।
এরপর থেকেই তিনি আলী রা.-এর স্নেহে ও তত্ত্বাবধানে বড় হন। তিনি আলী রা.-এর ছেলের মতোই ছিলেন। খলিফা আলী রা. অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছেন। সিরিয়া থেকে মিশর কাছে হওয়ায় মুয়াবিয়া রা.-এর জন্য আক্রমণ সহজ হয়েছে। অন্যদিকে কুফা থেকে মিশর অনেক দূরের হওয়ায় আলী রা. যথাসময়ে সাহায্য পাঠাতে পারেন নি।
মুয়াবিয়া রা. ক্রমাগত ইসলামী রাষ্ট্রের সকল দিকেই হামলা চালিয়েছেন। তবে মিশর ছাড়া অন্য কোথাও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাননি। ৪০ হিজরিতে আলী রা.-এর শাহদাতের কিছু দিন পূর্বে মুয়াবিয়া রা. মক্কা-মদিনা দখল করার জন্য সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। বুসরের নেতৃত্বে মুয়াবিয়ার বাহিনী মক্কা ও মদিনায় হত্যাকাণ্ড চালায়। আলী রা. জারিয়াহ'র নেতৃত্বে একদল বাহিনী প্রেরণ করলে বুসর পালিয়ে যায়। এরপর আলী রা ও মুয়াবিয়া রা.-এর মধ্যে পত্র বিনিময় হয়। সিরিয়া ও মিশরে মুয়াবিয়া রা. কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেন আলী রা.। বিনিময়ে বাকী অংশে হামলা করা থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন মুয়াবিয়া রা.।
সাইত্রিশ সালে নির্মূল হওয়া চরমপন্থী খারেজি গোষ্ঠীর তিনজন প্রতিশোধ নিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। তারা হলো- ১. আবদুর রহমান ইবন আমর ওরফে ইবন মুলজিম ২. বারক ইব্ন আবদুল্লাহ তামীমী এবং ৩. আমর ইব্ন বকর তামীমী। এরা তিনজন একত্রিত হয়ে নাহরাওয়ানে আলীর হাতে তাদের ভাইদের নিহত হওয়ার ঘটনা আলোচনা করে অনুশোচনা ব্যক্ত করে বলে- এরাই যখন মারা গেল, তখন আমাদের বেঁচে থাকার সার্থকতা কি? তারা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করতো না। আমরা যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব পথভ্রষ্ট নেতাদের হত্যা করি, তাহলে সারা দেশের মানুষ এদের জুলুম থেকে নাজাত পাবে। তেমনি আমাদের নিহত ভাইদের প্রতিশোধও গ্রহণ করা হবে।
তখন ইবনে মুলজিম বললো, আমি আলী ইবন আবূ তালিবের দায়িত্ব নিলাম। বারক বললো, আমি মু'আবিয়ার দায়িত্ব নিলাম। আমর ইব্ন বকর বললো, আমি আমর ইবনুল আসের দায়িত্ব নিলাম। এরপর তিনজন শপথের মাধ্যমে অঙ্গীকার করলো যে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বের লোককে হত্যা করা থেকে ক্ষান্ত হবে না। হয় তার শত্রুকে হত্যা করবে, না হয় নিজে নিহত হবে। এরপর তারা নিজ নিজ তলোয়ারে বিষ সংযোগ করলো এবং হত্যাকাণ্ড ঘটাবার জন্যে রমযানের সতের তারিখ দিন ধার্য করলো। যে যাকে হত্যা করার দায়িত্ব নিল সে যে শহরে থাকে সে দিকে তারা রওনা হয়ে গেল।
ইব্ন মুলজিম কূফা গিয়ে পৌঁছলো। সে তার উদ্দেশ্য গোপন রেখে অবস্থান করতে থাকে। কুফায় তার নিজ সম্প্রদায়ের যেসব খারিজী বসবাস করতো তাদের কাছেও সে তার উদ্দেশ্য গোপন রাখে। একদিন বনু রাবাবের কতিপয় লোকের এক বৈঠকে ইব্ন মুলজিম বসে আছে। বৈঠকে তারা নাহরাওয়ানের যুদ্ধে নিজেদের নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আলোচনা করছিলেন। এক পর্যায়ে ঐ গোত্রের এক মহিলা তথায় উপস্থিত হয়। মহিলার নাম কিতাম বিনত শাজানাহ্ । নাহরাওয়ানে তার পিতা ও ভাই নিহত হয়। মহিলাটিও আলোচনায় যোগ দেয়। ইবনে মুলজিম মহিলাটিকে পছন্দ করে ও কিছুদিন পর বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
মহিলাটি তিন হাজার দিরহাম, একজন খাদেম, একজন দাসী ও আলী রা.-কে হত্যার শর্তে প্রস্তাবে সম্মত হয়। ইব্ন মুলজিম সকল শর্ত মেনে নেয়। প্রথম তিনটি তখনই আদায় করে এবং শেষেরটি সম্পর্কে জানায় যে, আমি এ শহরে কেবল আলীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই এসেছি। উভয়ের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায় এবং একত্রে বসবাস করে। মহিলা আলীর হত্যা ত্বরান্বিত করতে ইবন মুলজিমকে উত্তেজিত করতে থাকে। সে তার নিজের রাবাব গোত্রের ওয়ারদান নামক এক ব্যক্তিকে আলীর হত্যার কাজে সহযোগী হিসেবে ইবন মুলজিমের সাথী বানিয়ে দেয়। ইবনে মুলজিম শাবিব নামের একজনকেও তার সঙ্গী করে।
ইবনে মুলজিম তার সাথীদেরকে ১৭ রমজান শুক্রবার রাতে হামলা চালাবার কথা জানায়। তাদেরকে সে আরও জানালো যে, আমার আরও দুই সঙ্গী আছে যারা এই একই সময়ে মু'আবিয়া ও আমর ইবন আসের উপর হামলা করবে। নির্ধারিত সময়ে তারা তলোয়ার সজ্জিত হয়ে যেই দরজা দিয়ে আলী রা. মসজিদে প্রবেশ করেন সেই দরজার কাছে গিয়ে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে আলী রা. তাঁর কক্ষ থেকে বেরিয়ে মসজিদে রওনা হন। আসার পথে লোকদের ঘুম থেকে জাগাবার জন্যে আস্-সালাত আস্-সালাত শব্দে আহ্বান করেন। মসজিদে ঢুকার প্রাক্কালে প্রথমে শাবীব তার তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে। কিন্তু সে আঘাত আলীর গায়ে না লেগে মসজিদের প্রাচীরে লাগে। এরপর ইব্ন মুলজিম আলীর মাথার উপরিভাগে আঘাত করে। তখন আলীর মস্তক থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে দাড়ি ভিজে যেতে থাকে।
শব্দ শুনে মুসলিমরা দ্রুত এগিয়ে আসে। ইবনে মুলজিম সাথে সাথেই ধরা পড়ে। ওয়ারদান পালিয়ে যাবার সময় হাযরা মাওতের এক লোক তাকে ধরে ফেলে ও হত্যা করে। শাবীব পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। লোকে চেষ্টা করেও তাকে ধরতে পারেনি। সালাতে ইমামতি করার জন্যে আলী জা'দাতা ইব্ন হুবাইরা ইব্ন আবূ ওহাবকে নির্দেশ দেন। তিনি ফজরের সালাতে ইমামতি করেন। আলীকে তার গৃহে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আবদুর রহমান বন্দি অবস্থায় ইব্ন মুলজিমকে তাঁর সামনে হাযির করেন। আলী রা. বললেন, হে আল্লাহর দুশমন! তুমি এ কাজ কেন করলে?
সে বললো, আমি চল্লিশ দিন যাবত এ তরবারি ধার দিয়েছি এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যেন সৃষ্টি জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক এ তরবারির আঘাতে নিহত হয়। আলী রা. বললেন, আমি দেখছি এর দ্বারা তোমাকে হত্যা করা হবে এবং তুমিই হবে সৃষ্টি জগতের নিকৃষ্টতম লোক। এরপর আলী সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি যদি মারা যাই, তবে কিসাস হিসেবে তাকে হত্যা করবে। আর যদি বেঁচে যাই তা হলে আমিই সিদ্ধান্ত নিব, তার ব্যাপারে কি করা যায়। এ সময় জুনদুব ইব্ন আবদুল্লাহ্ আলী (রা)-কে জিজ্ঞেস করেন, আপনার যদি মৃত্যু হয়ে যায়, তা হলে আমরা কি হাসানের নিকট বায়'আত গ্রহণ করবো?
তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আদেশও করছি না, নিষেধও করছি না। এ ব্যাপারে কি করবে তোমরাই ভালো জান। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আলীর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো। তিনি বারবার কালেমায়ে তাওহীদ পড়তে থাকেন। এরপর তিনি তাঁর দুই ছেলে হাসান ও হুসাইনকে ডেকে উপদেশ দেন, সকল ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে চলবে, সালাত কায়েম করবে। যাকাত আদায় করবে, ক্রোধ নিবারণ করবে, সেলায়ে রেহেমী রক্ষা করবে, মূর্খদের ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করবে, দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করবে, দৃঢ়তার সাথে কাজ করবে, কুরআনের হিফাজত করবে, প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করবে, ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ করবে, নির্লজ্জতা থেকে দূরে থাকবে।
এরপর আলী রা. সবার উপস্থিতিতে অসিয়ত করতে থাকেন।
//বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
এটা আলী ইব্ন আবু তালিবের ওসিয়ত। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তিনি তাঁকে হিদায়াত ও দ্বীনে হকসহ পাঠিয়েছেন যাতে অন্যান্য সকল দীনের উপর একে জয়ী করতে পারে। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্যে নিবেদিত। তাঁর কোন শরীক নেই, এটা বলার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই সর্বপ্রথম তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।
হে হাসান! আমি তোমাকে, আমার সকল সন্তানকে ও যাদের কাছে আমার এ ওসিয়ত লিপি পৌঁছবে সকলের কাছে আমার উপদেশ রইল, তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করে চলবে। খাঁটি মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো। ছিন্নভিন্ন হয়ে থেকো না।
আমি আবুল কাসিম সা.-কে বলতে শুনেছি যে, সালাত ও সিয়ামের ব্যাপকতার তুলনায় নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সুসম্পর্কের গুরুত্ব অনেক বেশী। তোমরা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের অধিকারের প্রতি যত্নবান থাকিও। তাদের অধিকার প্রদান পূর্বক সম্পর্ক রক্ষা করবে। আল্লাহ তোমাদের হিসাব সহজ করে নিবেন। ইয়াতীমদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তাদের খোরাক বন্ধ করো না। তোমরা বেঁচে থাকতে যেন তারা ধ্বংস হয়ে না যায়। প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তাদের অধিকারের ব্যাপারে তোমাদের নবীর ওসিয়ত রয়েছে। তিনি প্রতিবেশীর ব্যাপারে সর্বদা অসিয়ত করতেন। এমনকি আমাদের মনে হতে লাগলো যে, হয়তো তিনি প্রতিবেশীকেও ওয়ারিসদের অন্তর্ভুক্ত করে দিবেন।
পবিত্র কুরআনের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। এমন যেন না হয় যে, কুরআন অনুসরণে অন্যরা তোমাদের চেয়ে এগিয়ে যাবে। সালাতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কারণ সালাত হচ্ছে দ্বীনের স্তম্ভ। তোমাদের প্রতিপালকের ঘর সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করো। যতদিন জীবিত থাকো, তোমাদের থেকে যেন তা খালি না হয়। রমজান মাসের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা এ মাসের সিয়াম জাহান্নামের আগুন থেকে ঢালস্বরূপ রক্ষা করবে। আল্লাহর পথে জান-মাল দিয়ে জিহাদ করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। যাকাতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা যাকাত আল্লাহর ক্রোধকে নির্বাপিত করে।
তোমাদের নবীর যিম্মীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তোমাদের সম্মুখে যেন তাদের উপর অত্যাচার না হয়। তোমাদের নবীর সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা রাসূলুল্লাহ্ তাদের সম্পর্কে সংযত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। ফকীর ও মিসকীনদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তোমাদের সমাজের অন্তর্ভুক্ত করে রেখো। তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা, তাঁর জীবনের সর্বশেষ উপদেশ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন : আমি দুই শ্রেণীর দুর্বলদের ব্যাপারে সদয় হতে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি। তারা হলো, নারী ও দাস-দাসী।
আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করো না, এ মনোভাব তোমাদেরকে তাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে যারা তোমাদের আক্রমণ করতে চায় কিংবা যারা তোমাদের উপর বিদ্রোহ করতে চায়। মানুষের সাথে সদালাপ করো। মহান আল্লাহ্ তোমাদেরকে সে আদেশই করেছেন। সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা ত্যাগ করো না। যদি ত্যাগ করো, তা হলে নিকৃষ্ট লোকদের হাতে নেতৃত্ব চলে যাবে। তখন তোমরা দু'আ করবে, কিন্তু সে দু'আ কবুল হবে না। পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা করবে এবং একে অপরের জন্যে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করবে। কারও দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করা, সম্পর্ক ছিন্ন করা ও অনৈক্য সৃষ্টি করা থেকে সাবধান থাকবে। ভালো কাজে ও তাকওয়ামূলক কাজে একে অপরের সহযোগিতা করো। পাপ কাজে ও সীমালংঘনমূলক কাজে কারও সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে সদা-সর্বদা ভয় করবে। তিনি কঠিন শাস্তি দানকারী।
আহলে বাইতের কোনো ক্ষতি করা থেকে আল্লাহ্ তোমাদেরকে রক্ষা করুন। তোমাদের নবী করীম তোমাদের উপর হিফাজতের দায়িত্ব অর্পণ করে গেছেন। আমি তোমাদেরকে মহান আল্লাহর দায়িত্বে রেখে যাচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্।//
এরপর তিনি সকল কথা বন্ধ করে কেবল কালেমা পড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে তাঁর নির্ধারিত নিঃশ্বাস শেষ হয়ে যায়। তাঁর দুনিয়ার জীবনের অবসান ঘটে। তাঁর ইন্তিকালের তারিখ চল্লিশ হিজরী সনের রমযান মাস।
ইন্তিকালের পর আলী রা.-কে তাঁর দুই ছেলে হাসান ও হুসাইন এবং আবদুল্লাহ ইব্ন জা'ফর গোসল করায়। হাসান রা. জানাযা নামাযের ইমামতি করেন। দাফনের পর আলী রা.-এর বিচার অনুসারে ইবনে মুলজিমকে শিরচ্ছেদ করে হত্যা করেন হাসান রা.।
ওই নির্ধারিত দিনে মুয়াবিয়া রা.-কে হত্যা চেষ্টা করা হয়। তিনি আহত হন, এর মধ্যেই লোকেরা ঐ চরমপন্থীকে ধরে ফেলে। আমর ইবনুল আস একইদিন অসুস্থ থাকায় তিনি মসজিদে যান নি। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে ইমামতি করতে যান খারিজা ইব্ন আবূ হাবিবা। চরমপন্থী খারিজাকে হত্যা করে আমর ইবনুল আস মনে করে। লোকজন তাকে ধরে ফেলে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন