আলী রা. যখন আহত অবস্থায় ছিলেন তখন তাঁকে মুসলিমরা প্রশ্ন করেছিলো, আমরা কার বাইয়াত নিব? আমরা কি হাসান রা.-এর কাছে বাইয়াত নিব? উত্তরে আলী রা. বলেছিলেন, না, তা আমি বলবো না। রাসূলুল্লাহ্ সা. তোমাদেরকে যেমন খলীফা নির্ধারণ না করে রেখে গিয়েছিলেন আমিও তেমনি রেখে যাব।
মহান আল্লাহ্ যদি তোমাদের কল্যাণ চান তাহলে তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠতম, তাঁর খলীফা নির্ধারণে তিনি তোমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে দিবেন, যেমন রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর পরে উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির খলীফা নির্বাচনে তিনি তোমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এটাই সঠিক পদ্ধতি। মুসলিমদের নেতা মুসলিমরাই ঠিক করবে। যার ব্যাপারে বেশিরভাগ মুসলিম একমত হবেন তিনিই হবে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ও রাসূল সা.-এর খলিফা।
আলী রা.-এর ইন্তিকালের পর হাসান রা. তাঁর জানাযার নামাযে ইমামতি করলেন। রাজধানীতে তাঁকে দাফন করা হলো। ধারণা করা হয়, এই কথাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ। হাসান রা. ও হুসাইন রা. আলী রা.-এর লাশের সাথে শত্রুরা অসম্মান করতে পারে এই ভেবে লাশ দাফন করা হয় গোপনে। তাই আলী রা.-এর কবর নিয়ে একটি ধুম্রজাল রয়েছে।
তিনটি মত আছে এই বিষয়ে। ১. কুফায় দাফন করা হয় ২. রাতের আঁধারে মদিনায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ফাতিমা রা.-এর কবরের পাশে দাফন করা হয়। ৩. মদিনায় পাঠানোর সময় লাশবাহী উট হারিয়ে যায়। সেটা আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফে পৌঁছে যায়। সেখানে দাফন করা হয়। তবে সর্বাধিক যুক্তিযুক্ত মত হলো আলী রা.-এর কবর কুফায়। কুফা ও আফগানিস্তানে আলী রা.-এর মাজার অবস্থিত।
দাফন-কাফন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সমাপ্ত করার পর সর্বপ্রথম কায়স ইবন সা'দ রা. হযরত হাসান রা.-এর সম্মুখে এলেন এবং বললেন, আপনার হাত প্রসারিত করুন। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর সুন্নাত বাস্তবায়নের মর্মে আমি আপনার হাতে বায়'আত করবো। তাঁর এই কথার ওপরে কুফার মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যান। উপস্থিত কেউই এর বিরোধীতা বা ভিন্ন কোনো প্রস্তাব দেননি। তারপর কায়স ইবনে সা'দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর হাতে বায়'আত করেন। এরপর অন্যান্য লোকজন তাঁর হাতে বায়'আত করে।
হযরত হাসান রা. খলীফা হিসেবে কাজ শুরু করেন। কায়স ইব্ন সা'দ ছিলেন আযারবাইজানের গভর্নর। তাঁর অধীনে ছিল চল্লিশ হাজার লড়াকু যোদ্ধা। তারা সকলে আমৃত্যু হযরত আলী রা.-এর প্রতি আনুগত্যের শপথ করেছিল। হাসান রা. দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই মুয়াবিয়া রা.-এর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার জন্য চাপ তৈরি হচ্ছিল। এদিকে মুয়াবিয়া রা. আলী রা.-এর শাহদাতের খবর শোনার পর থেকে কুফা দখলের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। হাসান রা. সবসময় গৃহযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল। আলী রা.-এর সাথে সবকয়টি যুদ্ধে অংশ নিলেও তিনি প্রায় সবক'টি যুদ্ধের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন।
এখানেও তাই ঘটেছিল। শুরা সদস্যরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বললেও তিনি যুদ্ধের জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন না। অবশেষে মুয়াবিয়া রা.-এর তৎপরতায় তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কায়স ইবনে সা'দের নেতৃত্বে সিরিয়া যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হলো। কায়স রা.-এর অবর্তমানে আজারবাইজানের নতুন গভর্নর করা হয় উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস রা.-কে। বিশাল বাহিনী নিয়ে যখন হাসান রা. রওনা হলেন তখন মাদায়েনে সেনাপতি কায়স রা. ইন্তেকালের গুজব তৈরি হয়। এতে সেনাবাহিনীর মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়।
এমনিতেই ব্যক্তিগতভাবে হাসান রা. যুদ্ধ বিরোধী ছিলেন এবং একইসাথে যখন তাঁর নিজের সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খল লক্ষ করলেন, তখন মীমাংসায় রাযী করানোর জন্যে মুআবিয়া রা.-এর নিকট চিঠি লিখলেন। মু'আবিয়া রা. তখন সৈন্যবাহিনী নিয়ে যাত্রা করে এসে পথিমধ্যে অবস্থান করছিলেন। মু'আবিয়া রা. তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমীর ও আবদুর রহমান ইব্ন সামুরাকে প্রেরণ করলেন। তারা হাসান রা.-এর সাথে সাক্ষাত করলেন। তারা খিলাফত থেকে সরে দাঁড়ানোর বিনিময়ে হাসান রা. যত ধন- সম্পদ চাইবেন তার সবই প্রদানের প্রস্তাব করলেন।
হাসান রা. এই শর্তে খিলাফতের দাবী পরিত্যাগে রাজি হলেন যে, তাঁকে কুফার বায়তুলমাল থেকে পঞ্চাশ লক্ষ দিরহাম দেওয়া হবে, আবজারাদ অঞ্চলের খাজনা তিনি গ্রহণ করবেন এবং হযরত আলী রা.-এর প্রতি কোনো নিন্দাবাদ যেন তাঁর কানে না আসে। মু'আবিয়া রা. যদি এসব শর্তে রাজি হন তাহলে তিনি মু'আবিয়া রা.-এর পক্ষে খিলাফতের পদ ছেড়ে দিবেন এবং তাতে মুসলমানদের পরস্পরের রক্তপাত বন্ধ হবে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা এই শর্তে মীমাংসা ও আপোষরফা করলেন এবং মু'আবিয়া রা. একক খলীফা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন।
হাসান রা. ও মুয়াবিয়া রা.-এর মধ্যে চুক্তি লিখিত না হওয়ায় এর সঠিক শব্দগুলো পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে যা জানা যায় তা হলো,
১. মুয়াবিয়া রা.-কে হযরত আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপবাদ ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।
২. জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারগুলোকে অর্থ সাহায্য দিতে হবে।
৩. মুয়াবিয়া রা. কোনো ব্যক্তিকেই (খেলাফতের জন্য) নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করতে পারবেন না। পরবর্তী খলিফা নির্ধারিত হবে শুরা কর্তৃক নির্বাচিত।
৪. মুয়াবিয়া রা.-এর মৃত্যুকালে হাসান রা. জীবিত থাকলে খেলাফতের উত্তরসূরি হবেন হাসান রা.।
হযরত হাসান রা.-এর ভাই হযরত হুসাইন রা. এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন এবং তিনি এই মীমাংসা মেনে নেন নি। সেনাপতি কায়স রা.-ও এই মীমাংসা ও আপোষরফা মেনে নিতে অস্বীকার করেন। ফলে তিনি হাসান রা. এবং মু'আবিয়া রা. উভয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেন এবং তার অনুগত সৈন্যদেরকে নিয়ে পৃথক সেনা দল গঠন করেন। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পৃথক হয়ে যান।
অবশ্য অল্প কিছুদিন পরে তিনি তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এবং খলিফা মু'আবিয়া রা.-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাঁর হাতে বায়'আত করে। খলীফা হিসেবে মু'আবিয়া রা.-এর প্রতি হযরত হাসান রা. আনুগত্যের এই ঘটনা ঘটে ৪১ হিজরী সনে। এজন্যে এই বছরটি 'ঐক্যের বছর' নামে প্রসিদ্ধ। যেহেতু এই বছর খলীফারূপে মু'আবিয়া রা.-এর পক্ষে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
মু'আবিয়া রা.-এর পক্ষে হযরত হাসান রা.-এর খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণের ঘটনাটি ঘটেছিল ৪১ হিজরী সনের ৫ই রবিউল আউয়াল তারিখে। এটা মোটামুটি বিশুদ্ধ মত। এই ব্যাপারে কিছু ভিন্নমতও আছে। তারপর মু'আবিয়া রা. কুফা প্রবেশ করেন। তাঁর হাতে সকলে বায়'আত সম্পন্ন হবার পর তিনি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন। ইবনে জারির উল্লেখ করেন, আমর ইবনুল আস রা. মু'আবিয়া রা.-কে ইঙ্গিতে বলেছিলেন, যেন হযরত হাসান রা.-কে ভাষণের সুযোগ দেওয়া হয় এবং ভাষণের মাধ্যমে তিনি যেন প্রকাশ্যে সবাইকে জানিয়ে দেন যে, সবাই যেন এখন থেকে মুয়াবিয়া রা.-এর আনুগত্য করে।
মু'আবিয়া রা. হযরত হাসান রা.-কে ভাষণ দানের অনুরোধ করলেন। হযরত হাসান রা. ভাষণ দানের জন্যে দাঁড়ালেন। ভাষণে তিনি আল্লাহ্ প্রশংসা, গুণগান ও রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠের পর বললেন-
//“হে লোক সকল! আমাদের প্রথম ব্যক্তিত্ব হযরত মুহাম্মদ সা.-এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলা আপনাদেরকে সত্য পথের দিশা দান করেছেন। আর আমাদের শেষ ব্যক্তি দ্বারা আপনাদেরকে রক্তপাত থেকে রক্ষা করেছেন। এ বিষয় অর্থাৎ শাসন ক্ষমতার একটি মেয়াদ নির্ধারিত রয়েছে। আর দুনিয়া হলো কূপের থেকে পানি তোলার বালতি সদৃশ। কখনো এর হাতে কখনো ওর হাতে।
মহান আল্লাহ্ তাঁর নবীকে সা. বলেছেন, আমি জানি না, হয়ত এটি তোমাদের জন্যে এক পরীক্ষা এবং জীবনের এই ক্ষমতা ভোগ কিছুকালের জন্যে। (সূরা ২১, আম্বিয়া : ১১১)।//
হযরত হাসান রা.-এর এতটুকু কথায় মু'আবিয়া রা. রেগে গেলেন এবং তাঁকে বসে যেতে নির্দেশ দিলেন। তাঁকে আর বক্তব্য দিতে দেননি। বক্তব্য প্রদানের অনুমতি দেয়ার ইঙ্গিত করায় তিনি আমর ইবনুল আস রা.-কেও ভর্ৎসনা করলেন এবং বিষয়টি আজীবন তাঁর মনে অক্ষুণ্ণ ছিল। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
ঐদিন থেকেই বুঝা গিয়েছে মুয়াবিয়া রা. যে চুক্তি করেছেন সেই চুক্তি সংরক্ষণ হবে না। আমরা ইতিহাস থেকে দেখতে পাই মুয়াবিয়া রা. কর্তৃক এই চুক্তিগুলোর মধ্যে ২ নং ছাড়া কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। ইমাম হাসান তিনবার বিষপ্রয়োগের শিকার হলেন। প্রথম দুইবার সুস্থ হলেও তৃতীয়বারে তিনি শহীদ হন।
প্রায়ই জুমুআর খুতবায় আলী রা.-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা ও অভিশম্পাত করা হতো। এর বিরুদ্ধে কথা বলায় হুজর বিন আদি রা.-কে হত্যা করা হয় মুয়াবিয়া রা.-এর নির্দেশে। একই ঘটনায় আলী রা.-এর ভাই আকিল রা.-কেও হত্যা করার চেষ্টা করেন। তিনি এক গুহায় মৃত্যবরণ করলে মুয়াবিয়া রা.-এর সৈন্যরা তাঁর মাথা কেটে মুয়াবিয়া রা.-এর কাছে পাঠিয়ে দেয়। মুয়াবিয়া রা. আকিল রা.-এর মাথা সিরিয়ার রাস্তায় রাস্তায় প্রদর্শনী করেন। এরপর বন্দি থাকা আকিল রা.-এর স্ত্রীর কাছে তা প্রেরণ করেন।
মুয়াবিয়া রা. নিজেকে ইসলামের প্রথম বাদশাহ হিসেবে দাবি করতেন। এর আগেও উমার রা.-এর খিলাফতকালে এই আচরণের জন্য তাকে বেত্রাঘাত করতে উদ্যত হয়েছিলেন। মুয়াবিয়া রা. তার জীবদ্দশায় তারই পুত্র ইয়াজিদকে খেলাফতের উত্তরসূরী হিসেবে ঘোষণা করেন এবং নেতাদের কাছ থেকে ইয়াজিদের পক্ষে বাইয়াত আদায় করেন। ৪র্থ শর্ত কার্যকর করার সুযোগ ছিল না কারণ তার আগেই হাসান রা. শাহদাতবরণ করেন। হাসান রা.-এর শাহদাতের ব্যাপারে উমাইয়াদের অনেকে দায়ি করলেও সুনির্দিষ্ট প্রমান হাজির করতে পারে নি।
ইয়াজিদ এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি খলিফা হওয়ার যোগ্য ছিলেন না। শুরা দ্বারা খলিফা নির্বাচনের ব্যাপার হলে তার নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হতো না। তিনি ইসলামের বেসিক জ্ঞান, ইনসাফ ও আদল তো দূরের কথা তিনি নামাজ ছেড়ে দিতেন। মদ পান করতেন ও প্রেমাসক্ত কবিতা লিখতেন।
হাসান বসরি রহ. চার কারণে মুয়াবিয়া রা. এর শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ মনে করতেন। ১. খলিফা আলী রা.-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তথা হুকুমতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। ২. হুজর বিন আদি রা.-কে খুন ৩. জিয়াদ বিন আবিহকে নিজের পিতার ঔরশভুক্ত করে নেওয়া (যা হারাম করা হয়েছে সূরা আহজাবের ৫ নং আয়াতে)। ৪. নিজের মদ্যপায়ী সন্তানের অনুকূলে খলিফা হিসেবে বাইয়াত নেওয়া।
মু'আবিয়া রা.-এর সাথে হযরত হাসান রা.-এর সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন হবার পর এক ব্যক্তি হযরত হাসান রা.-কে সম্বোধন করে বললো, 'আপনি মু'মিনদের চেহারায় কালিমা লেপন করেছেন। অথবা লোকটি বলেছে, 'হে মু'মিনদের মুখে কালিমা লেপনকারী ব্যক্তি!' উত্তরে তিনি বললেন, 'মহান আল্লাহ তোমকে দয়া করুন, আমাকে দুঃখ দিও না । কারণ নবী করীম সা.-কে স্বপ্নে দেখানো হয়েছিল যে, তাঁর মিম্বরে বানূ উমাইয়ার লোক বসেছে। এতে তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। তখন নাযিল হল- 'আমি অবশ্যই আপনাকে কাওসার দান করেছি। (সূরা-১০৮, কাওসার-১)। অর্থাৎ জান্নাতের কাওসার দান করেছি।
তখন আরো নাযিল হল, আমি এটি অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? মহিমান্বিত রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। (সূরা-৯৭, কাদর : ১-৩)। এর দ্বারা আল্লাহ্ তাআলা রাসূলুল্লাহ্ সা.-কে বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনার পরে বনু উমাইয়া গোত্র খিলাফতের অধিকারী হবে। এর বিনিময়ে আপনাকে কাওসার ও লাইলাতুল কদর দান করা হয়েছে। ইমাম তিরমিজি এই হাদিসটি বর্ণনা করেন।
আবূ আরিফ বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইমাম হাসান রা.-এর প্রেরণ করা অগ্রবর্তী সেনাদলে আমরা অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমরা ছিলাম সংখ্যায় ১২,০০০। সিরিয়াবাসীদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড যুদ্ধ পরিচালনার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আমরা 'মাসকান-ই-মুসতামীতীন' নামক স্থানে অবস্থান করছিলাম। ইমাম হাসান রা. উমাইয়াদের সাথে সন্ধি স্থাপন করেছেন এই সংবাদ যখন আমাদের নিকট পৌঁছে তখন মনে হচ্ছিল যে, ক্ষোভে-দুঃখে আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে। পরে হযরত হাসান রা. যখন কুফায় ফিরে এলেন তখন আবু আমির সাঈদ নামে আমাদের এক লোক তাঁকে সম্বোধন করে বললো,
'হে মু'মিনদেরকে লাঞ্ছিতকারী! আপনাকে সালাম।' হযরত হাসান রা. বললেন, //হে আবু আমির! এমন কথা বলো না। আমি মু'মিনদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করি নি বরং রাজত্বের লোভে মু'মিনদেরকে হত্যা করাকে ঘৃণা করেছি।//
যাই হোক শহর-উপশহরগুলোতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর মুআবিয়া রা. কুফায় এলেন এবং সেখানে একটি ভাষণ দিলেন। এ সময়ে সর্বত্র তাঁর প্রতি একক আনুগত্য ঘোষণা করা হল। প্রচণ্ড সাহসী আরব সেনাপতি কায়স ইব্ন সা'দও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলেন। যদিও শুরুতে তিনি মু'আবিয়া রা.-এর বিরুদ্ধাচরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। ওই বছরই মু'আবিয়া রা. সর্বত্র একক আনুগত্য অর্জন করেন।
এরপর ইমাম হাসান রা., তাঁর ভাই ইমাম হুসাইন রা., তাঁদের অবশিষ্ট ভাইয়েরা এবং তাঁদের চাচাত ভাই আব্দুল্লাহ্ ইবনে জা'ফর ইরাক থেকে মদীনায় চলে এলেন। মূলত এই কারণেই আলী রা.-এর কবরের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। এসব ঘটনা পরিক্রমার মধ্য দিয়ে খুলাফায়ে রাশিদার দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক পরিসমাপ্তি ঘটে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন