আবহাওয়াগত কারণে বাংলায় গরু ও মহিষ চাষ ভালো হয়। পানি বেষ্টিত এলাকায় এই পশুদের উৎপাদন ভালো। উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাংলায় আবহমানকাল থেকে এই পশুদের ব্যবহারও বেশি। হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা গরু ও মহিষকে অনেকভাবে কাজে লাগাতো। যেমন মানুষ পরিবহন, মালামাল পরিবহন, ছোট বড় শিল্প কারখানায় চাকতি ঘোরানো, হাল-চাষ ইত্যাদি।
খাদ্য হিসেবেও এই অঞ্চলের মানুষের গরুই বেশি পছন্দ। গরুর দুধ, দুধ থেকে ঘি, মাখন, মিস্টি ইত্যাদি তো আছেই। দেড় হাজার বছর আগে ইরান থেকে মুশরিক আর্যরা এসে এদেশ জবর দখল করলো। তারা তাদের অধিকৃত অঞ্চলে গরু খাওয়া নিষিদ্ধ করে দিলো। তাদের সংস্কৃতি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিলো। জাতের নাম দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করলো আর্য ব্রাহ্মণরা।
এই অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে যারা তাদের এসব অনাচারের প্রতিবাদ করলো তাদের পিটিয়ে শহর ছাড়া করলো। তারা পালিয়ে গেলো পাহাড় পর্বতে। কেউ কেউ গেল সমুদ্র উপকূলে।
তাওহীদবাদী ও মুশরিকদের মধ্যেকার এই লড়াই চলতেই থাকলো। এদেশের কৃষ্টি কালচার লুকিয়ে পালন করতে হতো। হিন্দুস্থানের উত্তর অংশে মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে মুসলিম শাসন শুরু হলেও বাংলায় মুসলিম শাসন চালু করা যায় নি। নদী বিধৌত অঞ্চলে মুসলিম সেনাবাহিনী ভালো করতে পারছিল না। অতচ তখন বাংলার একটি বড় অংশ মানুষ মুসলিম হয়ে নিজেদের ব্রাহ্মণ্যবাদীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষার রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছিল।
বাংলার বৌদ্ধ ও মুসলিমদের আমন্ত্রণে মুক্তি দূত হয়ে আসলেন ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি। তার হাত ধরে আস্তে আস্তে এদেশে মুসলিম শাসন শুরু হয়। আমরা আবার আমাদের সংস্কৃতি, মুয়ামেলাত ফিরে পেতে শুরু করি।
১৭৫৭ সালে আবারো আমরা পরাজিত হই ইংরেজদের কাছে। আমাদের থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে ইংরেজদের সহায়তা করে এদেশের মুশরিকরা। ইংরেজ বিজয়ের পর তাই হিন্দুরাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে এদেশের ইসলামপন্থীরা বার বার বিদ্রোহ করে। প্রায় ১০০ বছর বিদ্রোহ করেও আশানুরূপ ফল পায় নি ইসলামপন্থীরা।
একদিকে পরাজয়ের যন্ত্রণা, অন্যদিকে ইংরেজ-হিন্দুদের ষড়যন্ত্রে মুসলিমরা শিক্ষা, শিল্প, জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে পিছিয়ে পড়তে থাকে। কুশিক্ষা ও কুসংস্কারে হারিয়ে যেতে থাকে মুসলিম ঐতিহ্য। এমনই সময়ে জন্ম হয় মওদূদীর।
১৯১৮ সালে তাঁর বয়স যখন মাত্র ১৫ বছর তখন তিনি বিজনৌর থেকে প্রকাশিত পত্রিকা 'মদিনা'য় কাজ শুরু করেন। অল্প বয়সেই সাহিত্য সাধনায় সিদ্ধহস্ত হয়েছিলেন।
কিছুদিন মদিনায় কাজ করার পর তিনি জীবিকা অন্বেষণে দিল্লিতে চলে যান। সেখানে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু মনমতো দল পাচ্ছিলেন না যারা একইসাথে ব্রিটিশদের খেদাবে ও ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি “আনজুমানে এয়ানাতে নযরবন্দানে ইসলাম” নামে একটি ছোট দলের সন্ধান পান যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছিলেন। তিনি এই দলের কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এরপর তিনি 'তাজ' পত্রিকায় সম্পাদকের কাজ পান। এটি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর থেকে প্রকাশিত হতো। তিনি জব্বলপুরে চলে আসেন। এসময় খিলাফত আন্দোলন শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। জব্বলপুরের অভিজ্ঞতা ও খিলাফত আন্দোলনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে মাওলানা মওদূদী বলেন,
“সে সময় এখানে মুসলমানদের পক্ষ থেকে জনসভায় কিছু বলার কোনো লোক ছিল না। বাধ্য হয়ে আমাকেই এ কাজ করতে হয়। এতে আমার দু’টি বড়ো উপকার হয়েছিল। প্রথমটি এই যে, আমার মধ্যে বিরাট আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল যা পূর্বে ছিল না। পূর্বে কোন দায়িত্বপূর্ণ কাজ করতে সাহস করতাম না। কিন্তু জব্বলপুরে যখন অপরের সাহায্য ব্যতিরেকে সম্পূর্ণ একাকী এবং সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্বে সাংবাদিকতা ও জনসেবার কাজ শুরু করলাম, তখন অনুভব করলাম যে, আমার মধ্যে এমন কিছু শক্তি লুকায়িত আছে, যা প্রয়োজনের সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মপ্রকাশ করে। তারপর থেকে কোনো দায়িত্ব গ্রহণের কখনো দ্বিধাবোধ করিনি।
দ্বিতীয় উপকার এই যে, আমি আমার জীবনে একেবারে আত্মনির্ভরশীল হয়ে পড়লাম। ইতোপূর্বে আমি কোন না কোন আত্মীয় বন্ধুর সাথে একত্রে বাস করতাম এবং অপরের উপর নির্ভর করার দুর্বলতা কিয়ৎ পরিমান হলেও আমার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু জব্বলপুরে আত্মনির্ভরশীল হয়ে কাজ করতে পেরেছি।”
মাওলানা মওদূদী অল্প বয়সেই জনগণের মধ্যে উদ্দীপনা ও অদম্য প্রেরণা সৃস্টি করার ভাষাজ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন। তাঁর পূর্বাপর কথার মধ্যে ছিল পরিপূর্ণ ভারসাম্য ও সামঞ্জস্য। সে সময়ে ব্রিটিশ কর্তৃক তুরস্কের প্রতি যে চরম অবিচার করা হয়েছিল, তিনি সেজন্যে ব্রিটিশের তীব্র সমালোচনা করে দীর্ঘ সম্পাদকীয় প্রবন্ধ লেখেন। যার ফলে ‘তাজের’ প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। এর মাধ্যমে মাওলানা মওদূদীর গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে।
খেলাফত আন্দোলনের সময়ে হিন্দুস্থানে হিজরত আন্দোলনও শুরু হয়। মওলানা আবুল কালাম আজাদ ১৯২০ সালে রাঁচী জেল থেকে মুক্তিলাভের পর হিজরত আন্দোলন শুরু করেন। তার অনুসারী কওমী আলেমগণ ফতোয়া দিতে শুরু করেন, 'ভারত দারুল হারব এবং এখান থেকে হিজরত করে কোন দারুল ইসলামে যেতে হবে'। অথচ তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে এতদিন মুসলিম লীগের বিরোধীতা করে আসছিলেন। জেলখানায় গিয়ে তার জাতীয়তাবাদ ছুটে যায়।
মওলানা আজাদের আহ্বানে বহু মুসলমান হিজরতের জন্যে বদ্ধপরিকর হয়। দিল্লীতে হিজরত কমিটি প্রতিষ্ঠিত হলো এবং যথারীতি অফিস খোলা হলো। এই আন্দোলন যেহেতু মওলানা আজাদ আহ্বান করেছেন তাই আফগানিস্তানে যাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ মুসলিম প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলো, তারা তাদের সকল সহায় সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেশত্যাগের জন্য প্রস্তুতি নিলো। ১৯২০ সালের কেবলমাত্র আগস্ট মাসেই আঠারো হাজার মুসলিম হিজরত করে চলে যায়। এই মানুষগুলোর কোনো ব্যবস্থা হয় না আফগানে। তারা অবর্ণনীয় জিল্লতির শিকার হয়।
এদিকে প্রায় পাঁচ লক্ষ মুসলমান আফগানে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের ভিটেমাটি বিক্রয় করেছিলো। এ আন্দোলনের পেছনে ছিলো মূলত মওলানা আবুল কালাম আজাদের হুজুগ বা ঝোঁকপ্রবণতা। কোন একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়াই এবং হিজরতের ফলাফল বিচার বিশ্লেষণ না করেই এ আন্দোলনে ঝাঁপ দেওয়া হয়েছিল।
হিজরত কমিটির সেক্রেটারি তাজাম্মল হোসেন ছিলেন মাওলানা মওদূদীর আত্মীয়। তিনি মাওলানাকে হিজরতের জন্যে উদ্বুদ্ধ করেন। মাওলানা হিজরত কমিটির সাথে আলোচনা করে দেখেন তাদের কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। দলে দলে লোক আফগানিস্তানে চলে গেলেও আফগান সরকারের সাথে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলা হয়নি। মুফতী কেফায়েতুল্লাহ ও মওলানা আহমদ সাঈদ এ ব্যাপারে ছিলেন দায়িত্বশীল। মওদূদী সাহেব এ দুজনের সাথে দেখা করে একটি পরিকল্পনাহীন আন্দোলনের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো দেখিয়ে দেন।
তারা ত্রুটি স্বীকার করে মাওলানা মওদুদী সাহেবকে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্যে অনুরোধ করেন। মওদূদী সাহেব বলেন সর্বপ্রথম আফগান সরকারের নিকটে শুনতে হবে যে তাঁরা হিন্দুস্তান থেকে হিজরতকারীদের পুনর্বাসনের জন্যে রাজী আছেন কিনা এবং পুনর্বাসের পন্থাই বা কি হবে। আফগান রাষ্ট্রদূতের সংগে আলাপ করা হলো। তিনি বলেন, তাঁর সরকার বর্তমানে খুবই বিব্রত বোধ করছেন। যারা ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে চলে গেছে তাদেরকে ফেরৎ পাঠাতে অবশ্য সরকার দ্বিধাবোধ করছেন। কিন্তু তথাপি তাদের বোঝা বহন করা সরকারের সাধ্যের অতীত’।
এরপর হিজরত কমিটি হতাশ হয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। আফগানিস্তানের আমীরও মুসলিমদের আফগানিস্তানে যাওয়া রুখতে বলেন। সবমিলিয়ে এই আন্দোলন চরমভাবে ব্যর্থ হয়। উদ্বাস্তু হয় পনের থেকে বিশ লক্ষ মুসলিম। তাদের দুর্দশা চরমে পৌঁছায়। তবে আন্দোলন আহ্বানকারী মাওলানা আজাদের খুব একটা ভ্রুক্ষেপ দেখা যায় না। এরপর ১৯২৩ সালে তিনি কংগ্রসের সভাপতি হয়ে ভুলে যান মুসলিমদের অধিকার ও দুঃখ দুর্দশার কথা। তিনি থাকেন ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণা নিয়ে।
যাই হোক তাজ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলে মাওলানা মওদূদী দিল্লীতে যান। সেখানে মাওলানা মুফতী কেফায়েতুল্লাহ ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আহমদ সাঈদের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁরা জমিয়তের পক্ষ থেকে ‘মুসলিম’ নাম দিয়ে একটা পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং মাওলানা মওদূদীর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে তার সম্পাদক নিযুক্ত করেন। ১৯২৩ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন মাওলানা। এখানে থাকাকালে মাওলানা জ্ঞানর্জনে মনোনিবেশ করেন। তিনি দিল্লীর দারুল উলুম ফতেহপুর অনেকগুলো বিষয়ে সনদ অর্জন করেন। ১৯২৩ সালে ইংরেজরা মুসলিম পত্রিকা বন্ধ করে দিলে ১৯২৪ সালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ 'আল জমিয়ত' নামে নতুন পত্রিকা শুরু করে। মাওলানা এই পত্রিকার সম্পাদনা করতে থাকেন।
১৯২৬ সালের শেষ ভাগে শুদ্ধি আন্দোলনের প্রবর্তক ও নেতা স্বামী শ্রদ্ধানন্দ এক মুসলমান আততায়ীর হাতে নিহত হয়। এর ফলে ভারতের হিন্দুসমাজ অতিমাত্রায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে পড়ে। মুসলমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে এক ব্যাপক অভিযান শুরু হয় হিন্দুদের পক্ষ থেকে। তারা প্রচার করেন যে, ইসলাম তার অনুসারীদের হত্যায় উদ্বুদ্ধ করে। এমনকি মোহনদাস গান্ধী পর্যন্ত এই দাঙ্গা উস্কে দেয়। এক বিবৃতির মাধ্যমে সে জানায়, "অতীতে তরবারীর সাহায্যেই ইসলাম প্রচারিত হয়েছে এবং বর্তমানকালেও তাই হচ্ছে"। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের প্রচারণা ভারতের আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলে এবং বিভিন্ন স্থানে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা-হাঙ্গামার সূত্রপাত হয়। মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর এ সমস্ত ভিত্তিহীন এবং উস্কানীমূলক প্রচারণা বন্ধ করতে গিয়ে অতীব দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আহা! আজ যদি ভারতে এমন কোনো মর্দে মুজাহিদ আল্লাহর বান্দা থাকতো, যে তাদের এসব হীন প্রচারণার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে পারতো, তাহলে কতই না ভাল হতো!”
তরুণ মাওলানা মওদূদী দিল্লী জামে মসজিদের উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে তিনি ‘আল জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯২৭ সালের প্রথম থেকেই তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে “আল জিহাদু ফিল ইসলাম” শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশ করতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তা গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়। এটাই মাওলানা মওদূদীর প্রথম বই। এই বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ও বহু ভাষায় অনূদিত হয়।
আল্লামা ইকবাল এই বই সম্পর্কে বলেন, “জিহাদ, যুদ্ধ ও সন্ধি সম্পর্কে ইসলামী আইন-কানুন সম্বলিত এ বইটি অভিনব ও চমৎকার হয়েছে। প্রত্যেক জ্ঞানী ও সুধী ব্যক্তিকে গ্রন্থখানি পাঠ করতে অনুরোধ করি।”
১৯২৮ সাল থেকে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাথে মাওলানা মওদূদীর মতবিরোধ তৈরি হয়। এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য মাওলানা মওদূদীর উত্থান দেওবন্দী বা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের হাত ধরেই। তাদের পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে তার লিখা সারা ভারতের মুসলিমদের কাছে পৌঁছে যায়।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ছিল দেওবন্দি আলেমদের সংগঠন। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে এই সংগঠন মুসলিম লীগের বিরোধীতা করতে থাকে ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন জাতীয় কংগ্রেসের সকল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিতে থাকে। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ওপর মাওলানা আজাদের প্রভাব ছিল বলে এই ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে। আলেমদের পত্রিকা 'আল জমিয়ত' হিন্দুদের সংগঠন কংগ্রেসের মুখপাত্রে পরিণত হতে থাকে। এই প্রেক্ষিতে ১৯২৮ সালে তিনি আল জমিয়তের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।
এখান থেকেই শুরু হয় মাওলানার সাথে দেওবন্দী আলেমদের বিরোধ। হিন্দুত্ববাদী কংগ্রেসপন্থী আলেমরা মাওলানার নামে শত কুৎসা ও অপবাদ রটাতে থাকে। যার ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান। ১৯২৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত মাওলানা আর কোনো পত্রিকার সাথে যুক্ত হননি। এর মধ্যে তিনি পড়াশোনায় রত ছিলেন। জ্ঞানর্জনের এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন দ্বীন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একটি আন্দোলন দাঁড় করাতে হবে। এর অংশ হিসেবে তিনি ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ও প্রকাশ করেন মাসিক “তর্জুমানুল কোরআন” নামে একটি পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার গুরুত্বের ব্যাপারে মুসলিমদের সচেতন করে তুলেন।
এই পত্রিকার মাধ্যমে মাওলানা ইসলামের মর্মকথা পৌঁছে দেন বহু মানুষের কাছে। এর মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন আল্লামা ইকবাল। তার হাত ধরে এই মাওলানার এই আন্দোলন একটি শক্তিশালী নুসরাহ পায়।
চলবে ....
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন