পৃথিবীর মুসলিমদের কাছে ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মতোই একটি ধর্ম মাত্র। মুসলিমদের বেশিরভাগ অংশ মনে করে ইসলামী শরীয়ত কেবলমাত্র নৈতিক চরিত্র ও আল্লাহর সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক স্থাপনের বিধিবিধানই পেশ করে। এছাড়া মানব জীবনের অন্যান্য দিক ও বিভাগ সম্পর্কে ইসলামের কিছুই বলার নেই। সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে ইসলাম একেবারেই নীরব এবং সে পর্যায়ে মুসলমানরা যে কোনো নীতি বা আদর্শ গ্রহণে সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ইসলামের পূর্নাঙ্গ বিধান এ ধারণার তীব্র প্রতিবাদ করে।
ইসলাম তার গোটা ইতিহাসে কখনো রাষ্ট্রের গুরুত্বকে উপেক্ষা করেনি। আম্বিয়ায়ে করাম আলাইহিমুস সালাম তাঁদের স্ব স্ব সময়কালের সামাজিক ও সামষ্টিক শক্তিকে ইসলামের অনুগত ও অনুসারী বানাবার চেষ্টা সংগ্রাম করেছেন। তাদের গোটা দাওয়াতী মিশনের কেন্দ্রবিন্দু এই ধারণার উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিলো যে, ক্ষমতা কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যে নির্দিষ্ট হয়ে যাবে এবং শিরক তা গোপন ও প্রকাশ্য যে রূপেই বর্তমান থাকুকনা কেনো তাকে খতম করে দেওয়া হবে। তাঁদের প্রত্যেকের এই একই আহবান ছিলো,
হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই। [সূরা আরাফঃ ৬৫]
তোমার আল্লাহকে ভয় করো আর আমার আনুগত্য করো। [সূরা আশ শুয়ারাঃ ১৬৩]
আল্লাহর এই প্রেরিত বান্দারা মানব জীবনের প্রতিটি বিভাগকে পরিশুদ্ধ করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা সংগ্রাম করেছেন, যাতে করে আল্লাহর যমীনে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাঁর আইন ও বিধান চালু এবং কার্যকর হয়। তাঁদের এই প্রাণন্তকর চেষ্টা সংগ্রাম ছিলো পূর্ণাংগ জীবনের সংশোধনের জন্যে। আর রাষ্ট্রের সংশোধন ছিলো সেই সংশোধনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ইউসূফ আ., মূসা আ., দাউদ আ., সুলাইমান আ. এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তা আদর্শিক মানে পরিচালনা করেছিলেন। বনী ইসরাইলের অন্যান্য নবীগণও রাষ্ট্র সংস্থার সংশোধনের চেষ্টা করেছেন এবং ভ্রান্ত, স্বৈরাচারী, আল্লাহদ্রোহী ও অবৈধ নেতৃত্বের অবাধ সমালোচনা করেছেন। ইসলামী চিন্তাধারায় রাষ্ট্র যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এই বিষয়টি থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, স্বয়ং আসমান ও যমীনের স্রষ্টাই তাঁর নবী সা.-কে এরূপ দোয়া করতে শিখিয়ে দেন,
'আর তুমি দোয়া করো: হে প্রভু, আমাকে যেখানেই নিয়ে যাবে সত্যতা সহকারে নিয়ে যাও আর যেখান থেকেই বের করবে সত্যতা সহকারে বের করো, আর তোমার নিকট থেকে একটি সার্বভৌম শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও। [সূরা বনী ইসরাইলঃ ৮০]
ইসলাম পৃথিবীতে যে সংশোধন ও সংস্কার চায় তা শুধুমাত্র ওয়াজ নসীহত দ্বারা সম্ভব নয়, বরঞ্চ তা কার্যকর করার জন্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা অপরিহার্য। তাছাড়া আল্লাহ তা'য়ালাই যখন তাঁর নবী সা.-কে এই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, তখন তা থেকে এ জিনিসটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা, শরীয়াহ কার্যকর করা এবং আল্লাহর আইন জারি করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা চাওয়া এবং তা লাভ করার জন্যে চেষ্টা সংগ্রাম চালানো শুধু বৈধই নয়, বরঞ্চ তা একান্ত কাম্য ও বাঞ্চনীয়। যারা এই কাজকে দুনিয়াদারীর কাজ বলে ব্যাখ্যা করেন তারা সাংঘাতিক ভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছেন। কোনো ব্যক্তি যদি নিজের জন্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চায় তবে সেটা দুনিয়াদারীর কাজ হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর দ্বীন কার্যকর করার জন্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা পেতে চাওয়া দুনিয়াদারী নয়, বরং আল্লাহর আনুগত্যের অনিবার্য দাবী।
[তাফহীমুল কুরআন, সূরা বনী ইসরাইল টিকাঃ ১০০]
রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা নিয়ে কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনাগুলো নিন্মরূপ:
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আমি আমার রসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং হিদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। তাদের সাথে কিতাব ও মিযান নাযিল করেছি যাতে মানুষ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আর লোহা নাযিল করেছি যার মধ্যে বিরাট শক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে। এটা করা হয়েছে এজন্য যে, আল্লাহ জেনে নিতে চান কে তাঁকে না দেখেই তাঁকে ও তাঁর রসূলদেরকে সাহায্য করে। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ অত্যন্ত শক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।
[সূরা আল হাদীদ : ২৫]
তিনিই [আল্লাহ তা’য়ালা] তো সেই সত্তা যিনি রাসূলকে হিদায়াত এবং সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন, যেনো সে তাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করে দেয়। তা মুশরিকদের জন্যে সহ্য করা যতোই কঠিন হোক না কেনো।
[সূরা আসসফ: ৯]
আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুযায়ী ফয়সালা করেনা তারা কাফির।
[সূরা আল মায়িদা : ৪৪]
নবী করিম সা. বলেছেন,
ইসলাম এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা দুই সহোদর ভাই। তাদের একজন অপরজনকে ছাড়া সংশোধন হতে পারেনা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ইসলাম হচ্ছে কোনো অট্টালিকার ভিত আর রাষ্ট্র ক্ষমতা হচ্ছে তার পাহারাদার। যে অট্টালিকার ভিত নেই তা যেমন পড়ে যেতে বাধ্য, তেমনি যার পাহারাদার ও রক্ষক নেই তাও ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য। [কানযুল উম্মাল]
মুসলমানরা সবসময় চালিয়ে নিজেদের রাষ্ট্রকে ইসলামের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে চেষ্টা সংগ্রাম চালিয়ে আসছে, ফলে ইসলামী দর্শনে ধর্ম ও রাজনীতি দুটি আলাদা জিনিস হবার কোনো সুযোগ বা অবকাশ নেই। এই চেষ্টা সংগ্রাম তাদের দ্বীন ও ঈমানের দাবী। তারা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যেমন উত্তম চরিত্র এবং সদাচারের শিক্ষালাভ করে, তেমনি সমাজ, সভ্যতা, অর্থনীতি এবং রাজনীতির বিধানও তা থেকেই গ্রহণ করে। এই শেষোক্ত অংশের উপর আমল করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র অপরিহার্য। এই অংশের উপর আমল করা নাহলে শরীয়তের একটি অংশ বাদ পড়ে যায় এবং কুরআন চিত্রিত সমাজ ব্যবস্থা বাস্তবে রূপলাভ করেনা। এ কারণেই উম্মতের ফকীহগণ সর্বসম্মতিক্রমে ইমাম [রাষ্ট্র প্রধান] নির্বাচিত করাকে ফরয বলে ঘোষণা করেছেন। এ ব্যাপারে অসতর্কতা প্রদর্শনকে তাঁরা দ্বীনি বিধান বাস্তবায়নে অসতর্কতা বলে গন্য করেছেন।
আল্লামা ইবনে হাযম তাঁর 'আল ফাসলু বাইনাল মিলাল ওয়ান নাহল' গ্রন্থে লিখেছেনঃ
গোটা আহলে সুন্নাত, মারজিয়া, শীয়া এবং খারেজীগণ এ ব্যাপারে একমত যে, কাউকে ইমাম নির্বাচন করা ওয়াজিব এবং উম্মতের উপর এরূপ ন্যায় পরায়ণ ইমামের আনুগত্য করা ফরয, যিনি আল্লাহ তা'য়ালার বিধান কায়েম করবেন এবং সেই শরীয়তের বিধানের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেবেন, যা নিয়ে এসেছিলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। [ইবনে হাযমঃ ৪র্থ পৃষ্ঠাটঃ ৮৭]
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
'এই মুসলমানরাই সেই লোক, আমরা যদি পৃথিবীতে তাদের ক্ষমতা দান করি [অর্থাৎ পৃথিবীতে যদি তারা কর্তৃত্ব পায়] তবে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সততার নির্দেশ দেবে, অন্যায় অপকর্মে বাধা দেবে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম ফল তো আল্লাহরই হাতে।' [সূরা হজ্জঃ ৪১]
ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামী শরীয়তে রয়েছে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ এবং সকল কাজ ও ব্যাপার সম্পর্কে সুস্পষ্ট আইন ও বিধান। জীবনের এমন কোনো দিক ও বিভাগের উল্লেখ করা যেতে পারে না, যে বিষয়ে ইসলামী শরীয়তে কোনো নির্দেশ পাওয়া যায় না। ইসলামের পূর্নাঙ্গ ব্যবস্থায় রয়েছে ইবাদাত, নৈতিক চরিত্র, আকীদা-বিশ্বাস এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কাজকর্ম এবং লেনদেন পর্যায়ে সুস্পষ্ট বিধান। এর প্রত্যেকটি বিষয়ই ব্যাপক অর্থে প্রযোজ্য। মানব সমাজের ব্যক্তি ও সমষ্টি-স্বতন্ত্রভাবে এক একজন ব্যক্তি অথবা সমষ্টিগতভাবে গোটা সমাজ সম্পর্কেই আইন-বিধান রয়েছে ইসলামী শরীয়তে।
ইসলামী শরীয়তের বিধানে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়েই আইন-বিধান দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রকৃতি, তার পরামর্শভিত্তিক তথা গণতান্ত্রিক হওয়া, শাসন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা, ন্যায়সঙ্গত কাজে তাদের আনুগত্য, যুদ্ধ, সন্ধি, চুক্তি প্রভৃতি সর্ববিষয়ে অকাট্য বিধান রয়েছে ইসলামী শরীয়তে। আর তা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে তাই নয়, রসূলে করীম স.-এর সুন্নাতেও রয়েছে তার ব্যাখ্যা ও বাস্তবরূপ সংক্রান্ত বিধান। কুরআন-হাদীসে আমীর, ইমাম ও সুলতান প্রভৃতি পারিভাষিক শব্দগুলো বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। এ শব্দগুলো বুঝায় সেই ব্যক্তিকে যার হাতে রয়েছে সার্বভৌমত্ব, শাসন ও আইন রচনার ক্ষমতা। আধুনিক পরিভাষায় তাই হলো সরকার বা গভর্নমেন্ট। সরকার বা গভর্নমেন্ট হলো রাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কাজেই যেসব আয়াত এবং হাদীসের যেসব উক্তিতে এ পরিভাষাগুলো ব্যবহৃত হয়েছে তাকে বাস্তবায়িত করা একান্তই জরুরী। কেননা, এগুলো শুধু পড়া বা মুখে উচ্চারণের জন্যেই বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে এজন্যে যে, তা যেমন পড়া হবে তেমনি তাকে কার্যকরী করাও হবে। আর এগুলো কার্যকরী করতে হলে ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান অনুযায়ী পূর্নাঙ্গ রাষ্ট্র কায়েম করা অপরিহার্য।
শরীয়তের এমন অনেকগুলো আইন-বিধান রয়েছে যা কার্যকরী করতে হলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করে সেগুলোর বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভবপর নয়। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মানুষের পরস্পরের বিচার-ফায়সালা করার এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার নির্দেশ রয়েছে কুরআন-হাদীসে। কিন্তু রাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত এ কাজ না করবে ততক্ষণ কোনো ব্যক্তি বা সমাজের সাধারণ মানুষের পক্ষে তা করা কিছুতেই সম্ভবপর হতে পারে না। এজন্যেই জনগণের উপর কোনো কিছু কার্যকরী করার ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থা একান্তই জরুরী। এ পর্যায়ের যাবতীয় হুকুম-বিধানের প্রকৃতিই এমনি।
একথাটি বোঝাবার জন্যেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেনঃ
জনগণের যাবতীয় ব্যাপার সুসম্পন্ন করা-রাষ্ট্র কায়েম করা দীনের সর্বপ্রধান দায়িত্ব। বরং রাষ্ট্র ছাড়া দ্বীন প্রতিষ্ঠা হতেই পারে না। আল্লাহ তায়ালা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ এবং নিপীড়িতদের সাহায্য করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এভাবে তিনি জিহাদ, ইনসাফ ও আইন-শাসন প্রভৃতি যেসব কাজ ওয়াজিব করে দিয়েছেন তা রাষ্ট্রশক্তি ও রাষ্ট্র কর্তৃত্ব ছাড়া কিছুতেই সম্পন্ন হতে পারে না।
-আস-সিযাসাতুশ শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠা-১৭২-১৭৩।
অতএব শরীয়তের আইন-বিধান জারী ও কার্যকরী করার জন্যে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা একটি অপরিহার্য জরুরী কর্তব্য। আল্লাহর ইবাদাতের দায়িত্ব পালনের জন্যেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে তাঁরই ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের গোটা সমাজ ও পরিবেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে করে ইবাদত করা সহজ-সাধ্য হয়ে উঠে। কেননা মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের মধ্যেই যাপিত হয় মানুষের জীবন আর মানুষ যে সমাজ পরিবেশে বসবাস করে তার দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়াই হচ্ছে মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি। এ প্রভাব স্বীকৃতির ফলেই মানুষ যেমন ভালো হয় তেমন মন্দও হয়। যেমন হয় হেদায়েতের পথের পথিক তেমনি হয় গোমরাহীর আঁধার পথের যাত্রী। সহীহ হাদীস থেকে সমাজ-পরিবেশের এ অনস্বীকার্য প্রভাবের কথা সমর্থিত।
নবী করীম স. ইরশাদ করেছেনঃ
প্রত্যেকটি সন্তানই প্রাকৃতিক ব্যবস্থাধীন জন্মগত প্রকৃতিতে ভূমিষ্ঠ হয়। অতঃপর তার পিতামাতা হয় তাদের ইহুদী বানিয়ে দেয়, নয় খৃষ্টান কিংবা অগ্নিপূজক। ঠিক যেমন করে পশু প্রসব করে তার পূর্নাঙ্গ শাবক। তাতে তোমরা কোনো খুঁত দেখতে পাও কি, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা তাতে খুঁত সৃষ্টি করে দাও?- আল মুনতাখাব মিনাস সুন্নাহ, ৩৯১ পৃষ্ঠা।
রাষ্ট্রে যদি ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকে তাহলে একটি শিশু ছোট অবস্থা থেকেই সুদ, অশ্লীলতা, দুর্নীতি, অবিচার খোদাদ্রোহীতা, মূর্তিপূজা দেখে বড় হবে। আমাদের সমাজেও আমরা এসবে অভ্যস্থ হচ্ছি। অবস্থা এমন যে, সুদের ব্যবসায়ী ব্যাংকারেরা আজ আমাদের মাথার তাজ হয়ে উঠছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা সুদকে আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার শামিল বলে গণ্য করেছেন। ইসলামী রাষ্ট্র না হওয়ায় আজ বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষ অনৈসলামিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হচ্ছে।
আল্লাহর রাসূল সা.-এর সীরাত থেকেও রাষ্ট্র গঠনের কর্মসূচি পেয়ে থাকি। রসূলে করীম সা. রাষ্ট্র কায়েমের জন্য মক্কায় থাকাবস্থায়-ই বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আর তার সূচনা হয়েছিল আকাবার দ্বিতীয়বারের শপথ কালে এবং মক্কা থেকে মদীনায় হিজরাত করার পূর্বেই এ প্রচেষ্টা সম্পূর্ণতা লাভ করেছিলো। মদীনার মুসলমানদের একটি প্রতিনিধি দল মক্কা শরীফে এক গোপন স্থানে রসূলে করীম স.-এর সাথে মিলিত হয়। পুরুষ ও নারী মিলিয়ে তাদের সংখ্যা ছিলো তিয়াত্তর জন। এ গোপন বৈঠকে রসূলে করীম স. তাদের সামনে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করার দাওয়াত পেশ করেন।
এ দাওয়াত পেশ করার পর প্রতিনিধি দলের একজন বলেনঃ হে রসূল! আপনার হাতে বাইয়াত করবো কোন কথার ওপর? রসূলে করীম স. বলেনঃ তোমরা আমার হাতে এই বলে বাইয়াত করবে যে, তোমরা ভালো ও মন্দ উভয় অবস্থাতেই আমার কথা শুনতে ও মেনে চলতে প্রস্তুত থাকবে, তোমরা ভালো কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজ থেকে লোকদের নিষেধ করবে-বিরত রাখবে। আর তোমরা আল্লাহর কথা বলবে, কিন্তু তাতে কোনো উৎপীড়কের ভয় করবে না। আর তোমাদের বাইয়াত হবে একথার ওপর যে, তোমরা আমার সার্বিক সাহায্য করবে। আর আমি যখন তোমাদের মাঝে এসে বসবাস করতে থাকবো তখন যেসব ব্যাপার থেকে তোমরা নিজেদেরকে, তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিকে রক্ষা করো তা থেকে তোমরা আমাকেও রক্ষা করবে। আর এর বিনিময়ে তোমাদের জন্যে জান্নাত নির্দিষ্ট থাকবে।
এরপর মুসলিমরা বাইয়াত গ্রহণ করেন। এই বাইয়াতের মাধ্যমেই আল্লাহর রাসূল সা. কর্তৃক রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
'ইসলাম ও রাস্ট্র পরস্পর সহোদর ভাই' - এই হাদিসের রেফারেন্স দিলে উপকৃত হতাম।
উত্তরমুছুন