৩০ অক্টো, ২০২৪

জাবি, শিবির ও মুজিবের ইসলামবিদ্বেষ

 

২০০৩ সালের কথা। ক্লাস নাইনে পড়ি। তখন জামায়াত-শিবির ক্ষমতার অংশ ছিল। আপনারা তো জানেন ছাত্রশিবির ক্যাডারভিত্তিক (স্তরভিত্তিক) সংগঠন। এখানে ৪ টি ক্যাডার। সমর্থক, কর্মী, সাথী ও সদস্য।

আমি কর্মী হয়েছিলাম ২০০০ সালে। কর্মী হওয়ার জন্য পড়ালেখা তেমন নেই। কয়েকটি বই, কয়েকটি বেসিক সূরা, কিছু আয়াত-হাদীস, আর কিছু ইনফরমেশন।

কিন্তু সাথী হওয়া এতটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে স্কুল ছাত্রদের জন্য একটু কঠিন ছিল। আর ক্ষমতার আমল ছিল বিধায় সাক্ষাৎকারগুলো বেশ কঠিন হতো। ২০০৩ সালে 'সাথী' হওয়ার পথ পরিক্রমায় জানতে পারি 'কে/জা' নামে আমাদের একটি সদস্য শাখা আছে।

ছাত্রশিবিরে জনশক্তিদের যেমন ক্যাডার থাকে তেমনি শাখাগুলোরও ক্যাডার থাকে। সেখানে তিনটি ক্যাডার। জেলা শাখা, সাথী শাখা ও সদস্য শাখা। সদস্য শাখাগুলোর নেতারা সাধারণত কেন্দ্রীয় সংগঠন পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন।

যাই হোক, ২০০৩ সালে দেখলাম একটি সদস্য শাখার নাম 'কে/জা'। দায়িত্বশীলদের কাছে জানতে চাইলাম। কে/জা মানে কী? উত্তর পেলাম এর মানে হলো কেন্দ্র জানে। অর্থাৎ একটি সদস্য শাখা আমাদের রয়েছে তবে সেটা প্রকাশ্য না। এর সম্পর্কে কেন্দ্র শাখাই ভালো জানে।

আমরা ছোট ছিলাম বলে এর থেকে বেশি ইনফরমেশন আমাদের জানানো হয়নি। আরেকটু বড় হওয়ার পর জানতে পারলাম কে/জা মানে হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ওখানে পরিবেশটা এতই প্রতিকূলে ছিল যে ক্ষমতার আমলেও ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারে নি।

এর কারণ কী?
এর কারণ জানার জন্য এর ইতিহাস জানা দরকার। পাকিস্তান আমলে ঢাকায় আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের জন্য আইকনিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ঢাকার মুসলিম রাজনীতিবিদেরা চেষ্টা করতে থাকেন।

পাকিস্তান পিরিয়ডে আইয়ুব খানের সময় জাবির কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭০ সালের ২০শে আগস্ট ইয়াহিয়া খানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ঢাকার পূর্ব নাম জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে মিলিয়ে 'জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়' নামকরণ করে। এরপর ১৯৭১ সালের ১২ই জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ইয়াহিয়া খান।

এরপর গন্ডগোলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা যায়নি। ১৯৭৩ সালে ইসলামবিরোধী স্বৈরাচার শেখ মুজিব 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় করে।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ঢাবি, রাবি ও চবিতে একচ্ছত্রভাবে ইসলাম বিরোধীদের পদায়ন করা যায় নি, যেহেতু এগুলোতে আগে থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের জন্য ও মুসলিম ছাত্রদের জন্য তৈরি হওয়া বিশাল আইকনিক বিশ্ববিদ্যালয় তার লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে। ফ্যসিবাদী সেক্যুলার মুজিব এখানে সমস্ত ইসলামবিরোধীদের সকল স্তরে পদায়ন করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ইসলামবিরোধী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেছে।

যেখানে ছাত্র আছে সেখানেই ছাত্রশিবির থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক। ছাত্রশিবিরও জাবিতে তার কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু জাবি প্রশাসনের বিরোধীতায় এই কার্যক্রম সবসময়ই বাধাগ্রস্থ হতে থাকে।

স্বৈরাচার লেজেহুমু এরশাদ দেখলো তার বিরুদ্ধে সবাই একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে। তাই একে একে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। তারই অংশ হিসেবে সে প্রথমে টার্গেট করে শিবিরকে। ঢাবি ও জাবিতে অর্থাৎ রাজধানীতে সে শিবির নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে। আর তার এর ঘৃণ্য কাজে সহায়তা করে সকল বাম সংগঠন, ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ।

ঢাবিতে পরিবেশ পরিষদ গঠন করে ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে পরিবেশ পরিষদের কোনো অস্তিত্বই নেই। অন্যদিকে জাবিতে সিন্ডিকেট মিটিং-এ শিবির নিষিদ্ধের দাবি উঠলেও সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সিন্ডিকেট।

ঢাবি ও জাবিতে স্বৈরাচার এরশাদের ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে ছাত্রদল, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন শিবিরের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। পুলিশ তাদের সহযোগিতা করে। ঢাবিতে শিবির প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য দুইভাবে থাকলেও জাবিতে একেবারেই অপ্রকাশ্য অবস্থানে চলে যায় ছাত্রশিবির।

নির্যাতনের ভয়ে ছাত্রশিবির কখনোই তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়নি। ছাত্রশিবির জাবিতে ১৯৮৯ সাল থেকেই অপ্রকাশ্য রাজনীতি করতে থাকে। আমরা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সা.-কে অনুসরণ করে রাজনীতি করি। প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে হিকমতের সাথে কাজ করতে তা আল্লাহর রাসূলের সিরাত থেকে আমরা জেনেছি। আমরা সেভাবেই কাজ করে গেছি। আলহামদুলিল্লাহ।

জাবিতে কুরবানীর ইতিহাসঃ
জাবিতে ছাত্রশিবিরের ইতিহাস বড় কুরবানির ইতিহাস। ইটের ওপর মাথা রেখে আরেকটি ইট দিয়ে মাথা থেতলে দেওয়ার ইতিহাস। অসংখ্য ভাইয়ের ছাত্রজীবন শেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে এখানে।

গোলাম আযম রহ. এর সর্বকনিষ্ঠ ছেলে জাবিতে পড়তেন। শুধুমাত্র গোলাম আযমের ছেলে হওয়ার কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়। শিবির বিশেষ কোচিং পরিচালনা করে জাবিতে নিজেদের জনশক্তিদের ভর্তি করায়। আমরা কখনোই হাল ছাড়ি নি। যতবার আমরা ওপেন হতে গিয়েছি ততবার বহু ছাত্রকে জাবি থেকে বহিষ্কার করেছে জাবি প্রশাসন।

গতরাতে জাবিতে শিবির আবার ওপেন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমরা আশা করি যুগ যুগ ধরে জাবিতে ইসলামপন্থীদের ওপর যে জুলুম নির্যাতন শুরু হয়েছে তার প্রতিবিধান এখন থেকে শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ।

জাবি শিবিরের জন্য দোয়া, ভালোবাসা ও শুভকামনা।

1 টি মন্তব্য: