৩১ অক্টো, ২০২৪

কবি সৈয়দ আলী আহসান কে ছিলেন?


কবি সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন টুপি পরা ও দাঁড়ি রাখা একজন ভারতীয় সেবাদাস। পাকিস্তান আমলে সুবিধাজনক চাকুরি থাকার পরও তিনি ভারতের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন।

পাকিস্তান আমলে প্রথমে পাকিস্তান রেডিও তারপরে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ চালু হলে তিনি ওই বিভাগের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। এরপর বাংলা একাডেমির প্রধান নিযুক্ত হন।

৭১ এ যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে কবি আলী আহসান কলকাতায় চলে যান। সেখান থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভূমিকা রাখেন। ভারতীয় কর্তা ব্যক্তিদের সাথে সমন্বয় করে মুক্তিযুদ্ধে পক্ষে ক্যাম্পেইন করেন।

স্বাধীন হওয়ার পর পরই মুজিবের সাথে দেখা করেন ও জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ চেয়ে নেন। ওনার ধানমন্ডির বাসায় নিয়মিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ও অন্যান্য বেসামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠক হতো।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে রক্ষীবাহিনী গঠনের পরামর্শ ও জাবি'র জায়গা রক্ষীবাহিনীকে দেওয়া আলী আহসানেরই কাজ।

সৈয়দ আলী আহসানরা ইসলামের দোহাই দিয়ে মুজিবের অপশাসন টিকিয়ে রাখা যায় সে কাজই করে গেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান নিয়ে শুরু হয়। আলী আহসান অনেক বিভাগ চালু করলেও ইসলাম রিলেটেড কোনো বিভাগ চালু করেননি। যাতে মাদ্রাসা ছাত্ররা সহজে প্রবেশ করতে না পারে।

১৯৭৩ সালে মুজিব সরকারের ইসলাম বিরোধী প্রকল্প অনুসারে কবি সৈয়দ আলী আহসান তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও মুসলিম শব্দ বাদ দেন।

কুদরত-ই-খুদা'র ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষা কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন কবি আলী আহসান। তিনি তার বিভিন্ন লেখায় এই শিক্ষা কমিশনের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।

১৯৭৩ সালে নাগপুরে বিশ্ব হিন্দি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তিনি হিন্দি ভাষায় কোনো সাহিত্য রচনা না করেও হিন্দী সাহিত্যে পদক লাভ করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল না। সেই সম্পর্ক খারাপের সূত্র ধরে শেখ কামালের সাথে তার মতবিরোধ হয়। সৈয়দ আলী আহসান জাবিতে জাসদের ছাত্রদের সুবিধা দিতে থাকেন। ছাত্রলীগ গুন্ডামি করবে এই কারণে তিনি ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিচ্ছিলেন না।

অতঃপর এই বিষয়ে ফ্যাসিস্ট মুজিবের কাছে বিচার গেলে তিনি বলেন আমি এক শর্তে নির্বাচন দেব যদি আপনি আমাকে পুলিশ দেন। অতঃপর মুজিব পুলিশ দিল। কবি আলী আহসান পুলিশ দিয়ে ছাত্রলীগের গুন্ডামি রুখে দিল। নির্বাচনে জাসদ বিজয়ী হলো।

মুজিবের ব্ল্যাকলিস্টে পড়ে গেল আলী আহসান। উপাচার্যের চাকুরি হারালেন। মুজিবের সাথে দেখা করেও চাকুরি বাঁচাতে পারেন নি। অতঃপর চবিতে বাংলা বিভাগে জয়েন করলেন। সেখান থেকে বাকশালে যোগ দিতে ১৯৭৫ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকায় এসেছিলেন।

১৫ আগস্ট বাকশালে যোগ দেওয়ার আগেই শেখ মুজিব পটল তুলেছিল। মুজিবের মৃত্যুতে তিনি আফসোস লীগের ভূমিকায় ছিলেন। কামাল - জামালের বউ'র দোষ নেই, রাসেলের দোষ নেই, আমরা আমাদের জাতিসত্ত্বা হারিয়ে ফেলবো ইত্যাদি নিয়ে প্রায় আফসোস করতেন।

তৎকালীন ঢাবি ভিসির পালিয়ে যাওয়া দেখে তিনিও কিছুদিন পুরান ঢাকায় ভাগ্নের বাসায় লুকিয়ে ছিলেন। পরে পরিস্থিতি বুঝে জিয়া ও এরশাদের প্রিয়পাত্র বনে যান। জীবনের শেষদিকে এসে জামায়াতের সাথেও সখ্যতা গড়ে তুলেন।

শিবিরের কিশোর পত্রিকা 'কিশোর কন্ঠে' ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প লিখেছেন। ওনার একটি ছোটগল্প 'মানুষ' আমার এতো ভালো লেগেছিলো যে, গল্পটা এখনো মনে আছে। মরনোত্তর কিশোর কন্ঠ পুরষ্কারও পেয়েছেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন