- দোস্ত তুই কইরে?
- বাসায়!
- এখনো বাসায়?
- বাহির হইতে পারতেছি না, একটু অপেক্ষা কর।
- তোর বাসার নিচে আমি, তাড়াতাড়ি নাম
রোহান দাঁড়িয়ে আছে মাহাদীর বাসার নিচে। রোহানের বুঝ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই সে দেখে আসছে শেখ হাসিনার জুলুম, দুর্নীতি ও লুটপাট। এদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিশ্চিত হয়েছে তারা আর আন্দোলন করে এই জুলুম থেকে জনগণকে উদ্ধার করতে পারবে না, তখন রোহানের মতো কিশোর তরুণরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা হাসিনার জুলুম থেকে দেশকে মুক্ত করবেই। এজন্য প্রয়োজনে তারা জীবন দেবে।
রোহান তার বন্ধুদের সাথে অপেক্ষা করছে। মাহাদী নামলেই তারা রাস্তায় উঠবে। রাস্তায় ওঠা কোনো সহজ কাজ ছিল না। রাস্তায় উঠলে পুলিশ গুলি করছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো স্নাইফারের গুলি। কই থেকে যে গুলি হয় তাই বুঝা যায় না।
১৬ জুলাই ও ১৮ জুলাই বহু মানুষের মৃত্যুর পর রোহানরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আর ফিরে যাবে না। মাহাদী বের হয়ে এলে তারা সবাই গলির মুখে যায়। পাটেরবাগ থেকে বেরিয়ে রায়েরবাগে ওঠার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে আন্দোলনকারী ছাত্রের সংখ্যা দুইশত পার হয়ে যায়। একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে ইশারা করে। সবাই প্রস্তুতি নেয়, একযোগে পুলিশ অভিমুখে দৌড় দেওয়ার জন্য।
তখন বিকেল তিনটা। রোহান গগনবিদারি শ্লোগান দেয়,
//আমার ভাই মরলো কেন
খুনী হাসিনা জবাব দে।//
//আমার ভাই কবরে
খুনি কেন ওপরে?//
মুহূর্তের মধ্যেই মৌমাছির মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্ররা রাস্তায় চলে আসে। পুলিশ পিছু হটতে থাকে। একইসাথে সন্ত্রাসী পুলিশ লীগও সরাসরি গুলি করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর পর গুলিতে লুটিয়ে পড়ছে ছাত্ররা। এত গুলি, এতো লাশ, এতো রক্ত কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারছে না ছাত্রদেরকে।
এক পর্যায়ে গুলি এসে লাগে রোহানের বন্ধু মাহাদীর বুকে। মাহাদী মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ে। মাহাদীকে নিয়ে রোহান ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আরো দুইজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে মাহাদীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয় রোহান। ফোন করে মাহাদীদের বাসায় খবর পাঠায়।
বন্ধুর জন্য কলিজা ফেটে যাচ্ছে। অজ্ঞান হয়ে থাকা বন্ধুকে ডাক্তাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসে রোহান। আবার কী জানি ভেবে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় মাহাদীর। যেন বলতে চাইছে, বন্ধু যাও, আমিও আসতেছি। তারপরও হাসিনার শেষ দেখে ছাড়বো।
রোহান স্কাউট করা ছেলে। প্রাথমিক চিকিৎসার ট্রেনিং নেওয়া আছে তার। শত শত আহত আন্দোলনকারীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে সে। কাউকে পানি খাওয়াচ্ছে, কাউকে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী অংশ এখন আন্দোলনকারীদের দখলে। গলা ফাটিয়ে বিক্ষোভ করছে সবাই।
রোহান ঘুরে ঘুরে খবর নিচ্ছে সবার। ইতোমধ্যে খবর এলো তার বন্ধু মাহাদী আর নেই। বন্ধুরা পরস্পর গলা জড়িয়ে কাঁদলো। বন্ধুর রক্ত ছুঁয়ে শপথ করলো আমাদের বন্ধুর খুনী হাসিনাকে পরাজিত না করা পর্যন্ত শান্ত হবো না। আমরা প্রতিশোধ নিবোই।
আসরের নামাজের পরে পুলিশ নতুনভাবে অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ব্রাশ ফায়ার করতে করতে রাস্তায় নামলো। প্রথমে পিছু হটে ছাত্ররা আবারো তাদের ঘিরে ফেললো। লড়াই শুরু হলো। এক অসম যুদ্ধ। একদিকে হাজার হাজার নিরস্ত্র জনতা। অন্যদিকে শতাধিক সশস্ত্র পুলিশ লীগ। পুলিশলীগকে সহায়তা করার জন্য এবার এলো র্যাবের হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুঁড়ে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে লাগলো র্যাব।
বন্ধুদের লিড দিয়ে নিয়ে যাওয়া রোহানকে টার্গেট করে হেলকপ্টারে থাকে র্যাবের সন্ত্রাসীরা। তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। কয়েকটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও একটি গুলি রোহানের বুককে ঝাঁঝরা করে দেয়। লুটিয়ে পড়ে রোহান। বন্ধু মাহাদীকে বিদায় দেওয়ার দুই ঘন্টার মধ্যে তার সাথী হয়ে যায় রোহান।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী রোহানের স্বপ্ন ছিলো সেনা কর্মকর্তা হওয়ার। কিন্তু জুলাই মাসের মাঝামাঝি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় তখন ১৯ জুলাই রোহান পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। সে সাথে স্বপ্নও ধুলিস্যাৎ হয়ে যায় তার। বাবা-মায়ের স্নেহ, ভালবাসা এবং পারিবারিক বন্ধনকে উপেক্ষা করে রোহানের মতো অনেক কিশোর-কিশোরীই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। ফলে তাদের জোরালো এই প্রতিবাদ এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার যৌথ আন্দোলনে রূপ নেয়। যার মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে।
রোহানের বাবা বলেন আমরা প্রতিবেশীদের শেষ বারের মতো দেখানোর জন্যই রোহানের লাশ মসজিদে নিয়েছিলাম। কিন্তু রোহানের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব এবং শিক্ষকসহ হাজার হাজার মানুষ তাকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য মসজিদে ভিড় করে এবং সেখানে তার প্রথম জানাজায় অংশ নেয়।
রোহানের মধ্যে আন্দোলনের নিয়ে রোহানের মধ্যে একাগ্রতা ছিল। তার মা মনিরা বেগম জানান, রোহান শুরু থেকেই আন্দোলনে অংশ নিতো। কিন্তু তারা বিষয়টি জানতেন না। প্রথম যেদিন রোহান আন্দোলনে যায় সেদিন সে আমাকে বলেছিলো যে সে কলেজের একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। কিন্তু ১৬ জুলাই আমি আমার এক ছাত্রের মায়ের কাছে জানতে পারি, রোহানকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গেছে। সেসময় রোহানকে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের কথা জিজ্ঞেস করলে প্রথমে সে অস্বীকার করে।
অশ্রুসিক্ত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে সে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। সে বলে, যখন আমার অনেক ভাই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে তখন তো আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারি না। শাহদাতের দুই দিন আগে অর্থাৎ ১৭ জুলাই রোহান আন্দোলনে অংশ নিলে সেদিন তার পায়ে ইটের আঘাত লাগে। এতে তিনি আহত হলে মায়ের কাছে আন্দোলনে যোগ দেয়ার কথা স্বীকার করেন এবং পায়ের একটা এক্সরে করার কথা বলেন।
রোহান আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধর মৃত্যুতে অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলো উল্লেখ করে মনিরা বেগম বলেন, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় রোহান আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল আবু সাঈদ আর মুগ্ধ ভাইকে দেখো। তাদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা সবাই যদি ঘরে বসে থাকি এবং একে অপরকে আন্দোলনে যোগ দিতে বাধা দিই, তাহলে আমরা কীভাবে স্বাধীনতা অর্জন করব? ১৮ জুলাই সারারাত রোহান "আমি হবো আন্দোলনের চাবি, তোমরা করবে সিংহাসনের দাবি" এই শ্লোগানটি আবৃত্তি করেছিল।
রোহানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার টেবিলে স্কাউটের ইউনিফর্মসহ একটি ছবি এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের সম্মাননা স্মারকসহ তার সব বই এবং জিনিসপত্র একইভাবে রাখা আছে। তার টেবিলেই একটি কোরআন শরীফ রাখা। যা তিনি পাঠ করতেন। কোরান শরীফে রোহানের দেয়া চিহ্নটি দেখিয়ে তার মা বলেন, 'এখন আমি এই কোরআন তেলাওয়াত করি, কিন্তু আমি আমার ছেলের দেয়া চিহ্ন সরাইনি। এটা আমার ছেলের স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি।'
রোহান ও মাহাদীরাই আমাদের প্রাণ ভোমরা। আমরা যদি তাদের রক্তকে অস্বীকার করি তাহলে নিজেদেরই অস্বীকার করা হবে। রোহানসহ সকল শহীদের স্মৃতি আমরা আগলে রাখবো যেভাবে তারা আমাদের আগলে রেখে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।
- বাসায়!
- এখনো বাসায়?
- বাহির হইতে পারতেছি না, একটু অপেক্ষা কর।
- তোর বাসার নিচে আমি, তাড়াতাড়ি নাম
রোহান দাঁড়িয়ে আছে মাহাদীর বাসার নিচে। রোহানের বুঝ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই সে দেখে আসছে শেখ হাসিনার জুলুম, দুর্নীতি ও লুটপাট। এদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিশ্চিত হয়েছে তারা আর আন্দোলন করে এই জুলুম থেকে জনগণকে উদ্ধার করতে পারবে না, তখন রোহানের মতো কিশোর তরুণরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা হাসিনার জুলুম থেকে দেশকে মুক্ত করবেই। এজন্য প্রয়োজনে তারা জীবন দেবে।
রোহান তার বন্ধুদের সাথে অপেক্ষা করছে। মাহাদী নামলেই তারা রাস্তায় উঠবে। রাস্তায় ওঠা কোনো সহজ কাজ ছিল না। রাস্তায় উঠলে পুলিশ গুলি করছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো স্নাইফারের গুলি। কই থেকে যে গুলি হয় তাই বুঝা যায় না।
১৬ জুলাই ও ১৮ জুলাই বহু মানুষের মৃত্যুর পর রোহানরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আর ফিরে যাবে না। মাহাদী বের হয়ে এলে তারা সবাই গলির মুখে যায়। পাটেরবাগ থেকে বেরিয়ে রায়েরবাগে ওঠার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে আন্দোলনকারী ছাত্রের সংখ্যা দুইশত পার হয়ে যায়। একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে ইশারা করে। সবাই প্রস্তুতি নেয়, একযোগে পুলিশ অভিমুখে দৌড় দেওয়ার জন্য।
তখন বিকেল তিনটা। রোহান গগনবিদারি শ্লোগান দেয়,
//আমার ভাই মরলো কেন
খুনী হাসিনা জবাব দে।//
//আমার ভাই কবরে
খুনি কেন ওপরে?//
মুহূর্তের মধ্যেই মৌমাছির মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্ররা রাস্তায় চলে আসে। পুলিশ পিছু হটতে থাকে। একইসাথে সন্ত্রাসী পুলিশ লীগও সরাসরি গুলি করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর পর গুলিতে লুটিয়ে পড়ছে ছাত্ররা। এত গুলি, এতো লাশ, এতো রক্ত কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারছে না ছাত্রদেরকে।
এক পর্যায়ে গুলি এসে লাগে রোহানের বন্ধু মাহাদীর বুকে। মাহাদী মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ে। মাহাদীকে নিয়ে রোহান ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আরো দুইজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে মাহাদীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয় রোহান। ফোন করে মাহাদীদের বাসায় খবর পাঠায়।
বন্ধুর জন্য কলিজা ফেটে যাচ্ছে। অজ্ঞান হয়ে থাকা বন্ধুকে ডাক্তাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসে রোহান। আবার কী জানি ভেবে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় মাহাদীর। যেন বলতে চাইছে, বন্ধু যাও, আমিও আসতেছি। তারপরও হাসিনার শেষ দেখে ছাড়বো।
রোহান স্কাউট করা ছেলে। প্রাথমিক চিকিৎসার ট্রেনিং নেওয়া আছে তার। শত শত আহত আন্দোলনকারীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে সে। কাউকে পানি খাওয়াচ্ছে, কাউকে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী অংশ এখন আন্দোলনকারীদের দখলে। গলা ফাটিয়ে বিক্ষোভ করছে সবাই।
রোহান ঘুরে ঘুরে খবর নিচ্ছে সবার। ইতোমধ্যে খবর এলো তার বন্ধু মাহাদী আর নেই। বন্ধুরা পরস্পর গলা জড়িয়ে কাঁদলো। বন্ধুর রক্ত ছুঁয়ে শপথ করলো আমাদের বন্ধুর খুনী হাসিনাকে পরাজিত না করা পর্যন্ত শান্ত হবো না। আমরা প্রতিশোধ নিবোই।
আসরের নামাজের পরে পুলিশ নতুনভাবে অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ব্রাশ ফায়ার করতে করতে রাস্তায় নামলো। প্রথমে পিছু হটে ছাত্ররা আবারো তাদের ঘিরে ফেললো। লড়াই শুরু হলো। এক অসম যুদ্ধ। একদিকে হাজার হাজার নিরস্ত্র জনতা। অন্যদিকে শতাধিক সশস্ত্র পুলিশ লীগ। পুলিশলীগকে সহায়তা করার জন্য এবার এলো র্যাবের হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুঁড়ে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে লাগলো র্যাব।
বন্ধুদের লিড দিয়ে নিয়ে যাওয়া রোহানকে টার্গেট করে হেলকপ্টারে থাকে র্যাবের সন্ত্রাসীরা। তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। কয়েকটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও একটি গুলি রোহানের বুককে ঝাঁঝরা করে দেয়। লুটিয়ে পড়ে রোহান। বন্ধু মাহাদীকে বিদায় দেওয়ার দুই ঘন্টার মধ্যে তার সাথী হয়ে যায় রোহান।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী রোহানের স্বপ্ন ছিলো সেনা কর্মকর্তা হওয়ার। কিন্তু জুলাই মাসের মাঝামাঝি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় তখন ১৯ জুলাই রোহান পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। সে সাথে স্বপ্নও ধুলিস্যাৎ হয়ে যায় তার। বাবা-মায়ের স্নেহ, ভালবাসা এবং পারিবারিক বন্ধনকে উপেক্ষা করে রোহানের মতো অনেক কিশোর-কিশোরীই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। ফলে তাদের জোরালো এই প্রতিবাদ এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার যৌথ আন্দোলনে রূপ নেয়। যার মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে।
রোহানের বাবা বলেন আমরা প্রতিবেশীদের শেষ বারের মতো দেখানোর জন্যই রোহানের লাশ মসজিদে নিয়েছিলাম। কিন্তু রোহানের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব এবং শিক্ষকসহ হাজার হাজার মানুষ তাকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য মসজিদে ভিড় করে এবং সেখানে তার প্রথম জানাজায় অংশ নেয়।
রোহানের মধ্যে আন্দোলনের নিয়ে রোহানের মধ্যে একাগ্রতা ছিল। তার মা মনিরা বেগম জানান, রোহান শুরু থেকেই আন্দোলনে অংশ নিতো। কিন্তু তারা বিষয়টি জানতেন না। প্রথম যেদিন রোহান আন্দোলনে যায় সেদিন সে আমাকে বলেছিলো যে সে কলেজের একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। কিন্তু ১৬ জুলাই আমি আমার এক ছাত্রের মায়ের কাছে জানতে পারি, রোহানকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গেছে। সেসময় রোহানকে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের কথা জিজ্ঞেস করলে প্রথমে সে অস্বীকার করে।
অশ্রুসিক্ত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে সে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। সে বলে, যখন আমার অনেক ভাই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে তখন তো আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারি না। শাহদাতের দুই দিন আগে অর্থাৎ ১৭ জুলাই রোহান আন্দোলনে অংশ নিলে সেদিন তার পায়ে ইটের আঘাত লাগে। এতে তিনি আহত হলে মায়ের কাছে আন্দোলনে যোগ দেয়ার কথা স্বীকার করেন এবং পায়ের একটা এক্সরে করার কথা বলেন।
রোহান আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধর মৃত্যুতে অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলো উল্লেখ করে মনিরা বেগম বলেন, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় রোহান আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল আবু সাঈদ আর মুগ্ধ ভাইকে দেখো। তাদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা সবাই যদি ঘরে বসে থাকি এবং একে অপরকে আন্দোলনে যোগ দিতে বাধা দিই, তাহলে আমরা কীভাবে স্বাধীনতা অর্জন করব? ১৮ জুলাই সারারাত রোহান "আমি হবো আন্দোলনের চাবি, তোমরা করবে সিংহাসনের দাবি" এই শ্লোগানটি আবৃত্তি করেছিল।
রোহানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার টেবিলে স্কাউটের ইউনিফর্মসহ একটি ছবি এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের সম্মাননা স্মারকসহ তার সব বই এবং জিনিসপত্র একইভাবে রাখা আছে। তার টেবিলেই একটি কোরআন শরীফ রাখা। যা তিনি পাঠ করতেন। কোরান শরীফে রোহানের দেয়া চিহ্নটি দেখিয়ে তার মা বলেন, 'এখন আমি এই কোরআন তেলাওয়াত করি, কিন্তু আমি আমার ছেলের দেয়া চিহ্ন সরাইনি। এটা আমার ছেলের স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি।'
রোহান ও মাহাদীরাই আমাদের প্রাণ ভোমরা। আমরা যদি তাদের রক্তকে অস্বীকার করি তাহলে নিজেদেরই অস্বীকার করা হবে। রোহানসহ সকল শহীদের স্মৃতি আমরা আগলে রাখবো যেভাবে তারা আমাদের আগলে রেখে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন