বাইরে আন্দোলন চলছে। ভাত খাওয়া শেষে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল মাহদী। তাকে নামতেই হবে নিচে। কিন্তু মায়ের বাধায় সে নামতে পারছে না। এদিকে বার বার ফোন দিচ্ছে রোহান।
রোহান আহমেদ খান আর মাহাদী হাসান (পান্থ) ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একসঙ্গে বড় হয়েছেন। রোহান বিজ্ঞান আর মাহাদী কমার্স থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলো। ইন্টার পরিক্ষার্থী হওয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে তারা শুরু থেকেই ততটা যুক্ত ছিল না। তবে আবু সাঈদের শাহাদাতের পর তারা তাদের কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি তৈরি করেছে।
মাহাদী পড়তো নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজে। অন্যদিকে রোহান ছিল দনিয়া কলেজের। দুইজন দুই কলেজের হলেও তারা এক এলাকাতেই বড় হয়েছে। রোহান আর মাহাদীর বাসা যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ দনিয়ায় কাছাকাছি দূরত্বে। মাহাদীর বাসা পাটেরবাগে আর রোহানের বাসা বায়তুস সালাম জামে মসজিদ রোডে। তারা বন্ধু ছিল এবং আন্দোলনেও ছিল তারা একে অপরের বিশ্বস্ত সঙ্গী।
মা'কে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে মাহাদী। এর আগে দুপুরে বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন আর অনার্সে পড়া বড় ভাই মেরাজ হোসেনের সঙ্গে জুমার নামাজ পড়ে সে। তখনই তারা দেখেছে পরিস্থিতি কতটা খারাপ। বাবা হাত ধরে তাকে ঘরে নিয়ে আসে। তিনজন একসঙ্গে দুপুরের খাবার খান।
এদিকে মাহাদীর গলা দিয়ে ভাত নামছে না। তার বন্ধুরা তার জন্য অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে তার অন্যান্য বন্ধু সন্ত্রাসী পুলিশের সাথে লড়ছে, আহত হচ্ছে, গুলি খাচ্ছে, শহীদ হচ্ছে। মাহাদী তার বন্ধুদের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে যে, ডাইনী হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই করে যাবে।
এক পর্যায়ে বিকেলে মাহাদী ঘর থেকে বের হয়ে যায়। বন্ধুরা তখন রাস্তায় ওঠার প্লান করছিল। কিন্তু পেরে উঠছিলো না। বন্ধুদের মধ্যে রোহান ছিল সবচেয়ে সাহসী। তার নেতৃত্বে তারা একেকবার একেক পরিকল্পনা করছিল। অবশেষে তারা প্ল্যান করেছে আন্দোলনকারী বীর ছাত্ররা দুই ভাগ হয়ে রাস্তার দুই পাশে দুই গলিতে অবস্থান নিবে। এক গ্রুপ শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় উঠে আসবে। পুলিশ তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তখন অন্যদল ইট পাটকেল নিয়ে সন্ত্রাসী গণহত্যাকারী হানাদারা আওয়ামী পুলিশ লীগের বিরুদ্ধে আক্রমণ করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হয়েছে। ভয়ংকর সংঘর্ষ লেগে গেলো। দেশের মানুষকে রক্ষা করতে শাহদাতের নেশায় পঙ্গপালের মতো যাত্রাবাড়ির ছাত্ররা পুলিশকে নাজেহাল করে ফেললো। পুলিশকে রায়েরবাগ থেকে পিছু হটাতে হটাতে একেবারে যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো।
বাংলার সাহসী বীর সন্তানেরা আমাদের জীবন রক্ষা করতে, এদেশের মানুষের স্বাধীনতা আনতে নিজের জীবন বাজি রেখেছে। রায়েরবাগ থেকে কাজলা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা পুরো রক্তাক্ত হয়ে গেছে। শত শত কিশোর ছেলে গুলি খেয়ে আহত হয়েছে। তাদের তাজা রক্তে পবিত্র হয়েছে আমাদের দেশ। দশজনের মতো শহীদ হয়েছে।
আর সেই শাহদাতের তালিকায় আছে আমাদের বীর, আমাদের প্রাণ, আমাদের সাহসী সন্তান, আমাদের কলিজার টুকরো মাহাদী। ঘর থেকে বের হওয়ার আধাঘন্টার মধ্যেই আমাদের বীর মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যায়। ডাইনী হাসিনার ভয়ঙ্কর বুলেট উলোট পালোট করে দেয় মাহাদীর ছোট বুক। এই ছোট বুক দিয়েই মাহাদী আমাদের রক্ষা করে গেছে। আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে।
মাহাদী ঘর থেকে বের হওয়ার ৪০ মিনিটের মাথায় কাজলার সালমান হাসপাতাল থেকে মাহাদীর এক বন্ধু ফোন করে জানায়, মাহাদীর শরীরে গুলি লেগেছে। সেই মাহাদীকে কত ডাকলো মা, কত ডাকলো বাবা। মাহাদী তো তখন সবুজ পাখি হয়ে ঘুরছে জান্নাতে। সে কীভাবে জবাব দেবে!!
মাত্রই একসাথে থাকা পরিবারের সদস্যরা বুঝতেই পারলো না, কত দ্রুত রাক্ষসী হাসিনা তাদের সন্তানকে শেষ করে দিলো। মাহাদীর মা শাহীনূর বলছিলেন, ছেলে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও দেখে কষ্ট পেত। নিজেও আন্দোলনে যেতে চেয়েছিল। যেহেতু পরীক্ষা চলছে, তাই নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু সে তো বীর, সে তো শহীদ। সে তো না যেয়ে পারবে না।
মারা যাওয়ার সময় মাহাদীর পরনে ছিল গোলাপি রঙের একটি শার্ট, রক্তে তা কমলা হয়ে গেছে। রক্তমাখা শার্টটা না ধুয়ে সেভাবেই রেখে দিয়েছেন শাহীনূর বেগম। রোদ উঠলে শুকাতে দেন। এটাই এখন মা শাহীনূরের অবলম্বন। এটাকে আঁকড়ে ধরেই বাকী জীবন পাড়ি দিতে চান।
মাহাদীর বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন ছেলের পরীক্ষার প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে বসে ছিলেন। একটু পরপর হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। মাহাদী তার কাছে আবদার করেছে সে জাপানে যাবে। জাপানে মাহাদীকে পড়ানোর জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এই কথাগুলো স্মরণ করছেন আর বুক ভাসিয়ে দিচ্ছেন। কীভাবে আমরা এই বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেব? কীভাবে তাদের ক্ষত পূরণ করবো?
আমাদের মাহাদী আমাদের অনুপ্রেরণা। ১৯ জুলাই রোহান ও মাহাদীসহ শতাধিক মানুষ জীবন দিয়েছে। আমরা মাহাদীকে স্মরণ করে যাবো যেভাবে মাহাদী আমাদের ভালোবেসে আমাদের জন্য জীবন বাজি রেখেছে, নিজের ছোট শরীর দিয়ে দানবকে রুখে দিয়েছে।
রোহান আহমেদ খান আর মাহাদী হাসান (পান্থ) ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একসঙ্গে বড় হয়েছেন। রোহান বিজ্ঞান আর মাহাদী কমার্স থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলো। ইন্টার পরিক্ষার্থী হওয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে তারা শুরু থেকেই ততটা যুক্ত ছিল না। তবে আবু সাঈদের শাহাদাতের পর তারা তাদের কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি তৈরি করেছে।
মাহাদী পড়তো নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজে। অন্যদিকে রোহান ছিল দনিয়া কলেজের। দুইজন দুই কলেজের হলেও তারা এক এলাকাতেই বড় হয়েছে। রোহান আর মাহাদীর বাসা যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ দনিয়ায় কাছাকাছি দূরত্বে। মাহাদীর বাসা পাটেরবাগে আর রোহানের বাসা বায়তুস সালাম জামে মসজিদ রোডে। তারা বন্ধু ছিল এবং আন্দোলনেও ছিল তারা একে অপরের বিশ্বস্ত সঙ্গী।
মা'কে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে মাহাদী। এর আগে দুপুরে বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন আর অনার্সে পড়া বড় ভাই মেরাজ হোসেনের সঙ্গে জুমার নামাজ পড়ে সে। তখনই তারা দেখেছে পরিস্থিতি কতটা খারাপ। বাবা হাত ধরে তাকে ঘরে নিয়ে আসে। তিনজন একসঙ্গে দুপুরের খাবার খান।
এদিকে মাহাদীর গলা দিয়ে ভাত নামছে না। তার বন্ধুরা তার জন্য অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে তার অন্যান্য বন্ধু সন্ত্রাসী পুলিশের সাথে লড়ছে, আহত হচ্ছে, গুলি খাচ্ছে, শহীদ হচ্ছে। মাহাদী তার বন্ধুদের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে যে, ডাইনী হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই করে যাবে।
এক পর্যায়ে বিকেলে মাহাদী ঘর থেকে বের হয়ে যায়। বন্ধুরা তখন রাস্তায় ওঠার প্লান করছিল। কিন্তু পেরে উঠছিলো না। বন্ধুদের মধ্যে রোহান ছিল সবচেয়ে সাহসী। তার নেতৃত্বে তারা একেকবার একেক পরিকল্পনা করছিল। অবশেষে তারা প্ল্যান করেছে আন্দোলনকারী বীর ছাত্ররা দুই ভাগ হয়ে রাস্তার দুই পাশে দুই গলিতে অবস্থান নিবে। এক গ্রুপ শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় উঠে আসবে। পুলিশ তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তখন অন্যদল ইট পাটকেল নিয়ে সন্ত্রাসী গণহত্যাকারী হানাদারা আওয়ামী পুলিশ লীগের বিরুদ্ধে আক্রমণ করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হয়েছে। ভয়ংকর সংঘর্ষ লেগে গেলো। দেশের মানুষকে রক্ষা করতে শাহদাতের নেশায় পঙ্গপালের মতো যাত্রাবাড়ির ছাত্ররা পুলিশকে নাজেহাল করে ফেললো। পুলিশকে রায়েরবাগ থেকে পিছু হটাতে হটাতে একেবারে যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো।
বাংলার সাহসী বীর সন্তানেরা আমাদের জীবন রক্ষা করতে, এদেশের মানুষের স্বাধীনতা আনতে নিজের জীবন বাজি রেখেছে। রায়েরবাগ থেকে কাজলা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা পুরো রক্তাক্ত হয়ে গেছে। শত শত কিশোর ছেলে গুলি খেয়ে আহত হয়েছে। তাদের তাজা রক্তে পবিত্র হয়েছে আমাদের দেশ। দশজনের মতো শহীদ হয়েছে।
আর সেই শাহদাতের তালিকায় আছে আমাদের বীর, আমাদের প্রাণ, আমাদের সাহসী সন্তান, আমাদের কলিজার টুকরো মাহাদী। ঘর থেকে বের হওয়ার আধাঘন্টার মধ্যেই আমাদের বীর মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যায়। ডাইনী হাসিনার ভয়ঙ্কর বুলেট উলোট পালোট করে দেয় মাহাদীর ছোট বুক। এই ছোট বুক দিয়েই মাহাদী আমাদের রক্ষা করে গেছে। আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে।
মাহাদী ঘর থেকে বের হওয়ার ৪০ মিনিটের মাথায় কাজলার সালমান হাসপাতাল থেকে মাহাদীর এক বন্ধু ফোন করে জানায়, মাহাদীর শরীরে গুলি লেগেছে। সেই মাহাদীকে কত ডাকলো মা, কত ডাকলো বাবা। মাহাদী তো তখন সবুজ পাখি হয়ে ঘুরছে জান্নাতে। সে কীভাবে জবাব দেবে!!
মাত্রই একসাথে থাকা পরিবারের সদস্যরা বুঝতেই পারলো না, কত দ্রুত রাক্ষসী হাসিনা তাদের সন্তানকে শেষ করে দিলো। মাহাদীর মা শাহীনূর বলছিলেন, ছেলে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও দেখে কষ্ট পেত। নিজেও আন্দোলনে যেতে চেয়েছিল। যেহেতু পরীক্ষা চলছে, তাই নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু সে তো বীর, সে তো শহীদ। সে তো না যেয়ে পারবে না।
মারা যাওয়ার সময় মাহাদীর পরনে ছিল গোলাপি রঙের একটি শার্ট, রক্তে তা কমলা হয়ে গেছে। রক্তমাখা শার্টটা না ধুয়ে সেভাবেই রেখে দিয়েছেন শাহীনূর বেগম। রোদ উঠলে শুকাতে দেন। এটাই এখন মা শাহীনূরের অবলম্বন। এটাকে আঁকড়ে ধরেই বাকী জীবন পাড়ি দিতে চান।
মাহাদীর বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন ছেলের পরীক্ষার প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে বসে ছিলেন। একটু পরপর হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। মাহাদী তার কাছে আবদার করেছে সে জাপানে যাবে। জাপানে মাহাদীকে পড়ানোর জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এই কথাগুলো স্মরণ করছেন আর বুক ভাসিয়ে দিচ্ছেন। কীভাবে আমরা এই বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেব? কীভাবে তাদের ক্ষত পূরণ করবো?
আমাদের মাহাদী আমাদের অনুপ্রেরণা। ১৯ জুলাই রোহান ও মাহাদীসহ শতাধিক মানুষ জীবন দিয়েছে। আমরা মাহাদীকে স্মরণ করে যাবো যেভাবে মাহাদী আমাদের ভালোবেসে আমাদের জন্য জীবন বাজি রেখেছে, নিজের ছোট শরীর দিয়ে দানবকে রুখে দিয়েছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন