৪ আগস্ট, রাত ১১ টা । উত্তেজনা কাজ করছে সা'দের মধ্যে। অনলাইনে বন্ধুদের সাথে মিটিং করছে সে। আগামীকাল লংমার্চ কীভাবে সফল করবে এটা নিয়েই তাদের আলোচনা। নানান দিক নিয়ে আলোচনা করছিল। এর মধ্যে মূল বিষয় ছিলো কীভাবে ডাইনী শেখ হাসিনার পোষা সন্ত্রাসী পুলিশ লীগকে দমানো যায়।
একইসাথে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগও আজকে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। যদিও সা'দরা ছাত্রলীগ-যুবলীগকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। কারণ তাদের ধাওয়া দিলেই পালিয়ে যায়। তুমুল আলোচনা শেষে এই মর্মে তারা সিদ্ধান্তে আসলো যদি হাজার হাজার মানুষ নামে তবেই সব প্রতিকূলতা এড়ানো যাবে। সা'দরা সাভারে থাকে। সেখান থেকে ঢাকা অভিমুখে রওনা হবে তারা।
সিদ্ধান্ত হলো, শুধু ছাত্ররা নয়, সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে রওনা হতে হবে। তাই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তারই অংশ হিসেবে সা'দ দায়িত্ব নিলো অনলাইনে প্রচারের জন্য কিছু পোস্টার সে বানাবে। সা'দ মাত্র দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হলেও সে ছিল একজন ফ্রিল্যান্সার। গ্রাফিক্সের কাজ জানে। সা'দ পোস্টার বানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করলো, 'যে দেশের ইতিহাস রক্ত দিয়ে শুরু হয়েছে, ওই ইতিহাস আবার লিখতে রক্তই লাগবে'।
কে জানতো এই সা'দের রক্ত দিয়েই লেখা হবে নতুন স্বাধীনতার গল্প।
পরিবারের বড় ছেলে ছিল আফিকুল ইসলাম সাদ। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। পরিবারের আর্থিক দূরাবস্থার কথা ভেবে ফিল্যান্সারও হয়েছে। ছোট বয়সেই আয় করতো সে। মাধ্যমিক পাস করার পর ভর্তি হয় ঢাকার সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ইচ্ছা পূরণে মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে স্বৈরাচার পতনের এক দফা আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্য শিক্ষার্থীদের মতো দেশ বাঁচানোর জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাদ। ৫ আগস্ট 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচিতেও অংশ নেয় এ মেধাবী ছাত্র।
৫ আগস্ট দুপুরে তার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় পরিবারের সদস্যদের। এর পর আর যোগাযোগ করা যায়নি। সেদিন গণঅভ্যুত্থানের মুখে ডাইনি হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সা'দের সন্ধানে বের হন তার স্বজন। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে তন্ন তন্ন করে খোঁজ করা হয়। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন, সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তি আছে। সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায় সা'দকে।
সা'দরা দুই ভাই। ছোটজন হাইস্কুলে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামে শামিল হয়ে ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সামনে মিছিল করা অবস্থায় পুলিশের গুলিতে আহত হয় সাদ। সাদ তার মাকে বলেছিল, 'যদি বেঁচে না ফিরি গর্বিত হয়ো মা।' তার মা এখন ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সাদ সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। অধরাই থেকে গেল তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দরগ্রাম এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে সাদ। মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ লীগ। হঠাৎ একটি গুলি সাদের কপালের বাঁ পাশে ঢুকে যায়। ঢলে পড়ে রাস্তায়। সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তিন দিন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৮ আগস্ট সকালে মারা যায় সে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে আফিকুল ইসলাম সা'দ ফেসবুকে বেশ সক্রিয় ছিল। গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়ে একটি ব্যানার বানিয়ে ফেসবুকে 'কোটা আন্দোলন' শব্দটি কেটে 'স্বাধীনতা আন্দোলন' লিখেছিল। তার সেই চিন্তার পথ ধরেই আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি সা'দকে।
সা'দের মা আঞ্জুমান আরা জানান, ৫ আগস্ট সকালে ছেলে তাঁর বিছানায় শুয়ে ছিল। হঠাৎ একটি ফোন আসে। মায়ের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যায়। এই মা পরে শুনেছেন, ধামরাই থানা থেকে বের হয়ে পুলিশ গুলি করতে করতে সামনে এগোলে হার্ডিঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকের কাছে ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিটি লাগে সা'দের কপালের বাঁ পাশে। অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি বলে গুলিটি কপালে লেগে বাইরে বের হয়েছিল কি না, তা–ও জানা যায়নি।
আঞ্জুমান আরা আরও জানান, বেলা দেড়টার দিকে একজন ফোন করে জানান, সা'দের গায়ে গুলি লেগেছে। গুলি লাগায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। কয়েকজন মিলে সা'দকে হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ভয়ে কোনো হাসপাতাল ভর্তি করতে রাজি হয়নি। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেও পুলিশের গোলাগুলি চলে। পরে অ্যাম্বুলেন্স ওই পথ থেকে ফেরত এসে নয়ারহাট হয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে আবার এনাম হাসপাতালে যায়। সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায়।
মা আরো বলেন, 'আন্দোলনে মারা গেলে সবাই আমাকে শহীদের মা বলবে, এটা বলত ছেলেরা। মা আঞ্জুমান আরা ৫ আগস্ট ছেলেকে বারবার ফোন দিচ্ছিলেন। ছেলে তাঁকে নিয়ে চিন্তা না করতে এবং ফোন করে বিরক্ত না করার জন্য বলেছিল। এটাই ছিল মা ও ছেলের শেষ কথা। বেলা পৌনে একটার দিকে তিনি আবার ছেলেকে ফোন দিয়েছিলেন, কিন্তু ছেলে আর ফোন ধরেনি। পরে অ্যাম্বুলেন্সে রক্তে ভেসে যাওয়া ছেলেকে যখন দেখেন, তখন ছেলে আর কোনো সাড়া দেয়নি, শুধু নিশ্বাস নিচ্ছে, বেঁচে আছে, এটুকুই বুঝতে পেরেছিলেন এই মা।
বাবা শফিকুল ইসলাম একটি কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করতেন। দুই বছর আগে চাকরিটি চলে যায়। তার পর থেকেই সংসারে টানাটানি যাচ্ছে। সা'দ ফ্রিল্যান্সিং করে কিছু টাকা আয় করত। নিজের খরচের পাশাপাশি সংসারেও কিছু টাকা দিত। ডিসেম্বরে মা, বাবা ও ভাইকে নিয়ে সাজেকে বেড়াতে যেতে চেয়েছিল। ভাই সাজিদুল ইসলাম জানায়, ভাইকে নিয়ে যখন হাসপাতালে গিয়েছি, ততক্ষণে মানুষ বিজয় মিছিল নিয়ে বের হয়েছে। স্বাধীনতা পেতে ভাইকে হারাতে হবে, তা তো জানা ছিল না। তাই বিজয়ের উল্লাস করতে পারিনি। শুধুই কানছি।
ছেলে মারা যাওয়ার তিন–চার দিন আগে মা আঞ্জুমান আরা ছেলেকে পরিবারের চারজন মিলে একটি ছবি তোলার কথা বলেছিলেন। মায়ের আক্ষেপ, 'চারজন মিলে সেই ছবি আর কোনো দিন তোলা হবে না।'
সা'দ বাইচান্স আন্দোলনে যায় নি। সে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের হাত থেকে দেশকে ও দেশের মানুষকে উদ্ধার করার জন্য লড়াই করেছে। সে ১৬ তারিখ থেকে এই আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সে তার জীবন দিয়েছে। আমরা আমাদের এই যোদ্ধাকে ভুলে যাবো না। তাকে মাথায় তুলে রাখবো ইনশাআল্লাহ।
একইসাথে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগও আজকে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। যদিও সা'দরা ছাত্রলীগ-যুবলীগকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। কারণ তাদের ধাওয়া দিলেই পালিয়ে যায়। তুমুল আলোচনা শেষে এই মর্মে তারা সিদ্ধান্তে আসলো যদি হাজার হাজার মানুষ নামে তবেই সব প্রতিকূলতা এড়ানো যাবে। সা'দরা সাভারে থাকে। সেখান থেকে ঢাকা অভিমুখে রওনা হবে তারা।
সিদ্ধান্ত হলো, শুধু ছাত্ররা নয়, সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে রওনা হতে হবে। তাই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তারই অংশ হিসেবে সা'দ দায়িত্ব নিলো অনলাইনে প্রচারের জন্য কিছু পোস্টার সে বানাবে। সা'দ মাত্র দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হলেও সে ছিল একজন ফ্রিল্যান্সার। গ্রাফিক্সের কাজ জানে। সা'দ পোস্টার বানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করলো, 'যে দেশের ইতিহাস রক্ত দিয়ে শুরু হয়েছে, ওই ইতিহাস আবার লিখতে রক্তই লাগবে'।
কে জানতো এই সা'দের রক্ত দিয়েই লেখা হবে নতুন স্বাধীনতার গল্প।
পরিবারের বড় ছেলে ছিল আফিকুল ইসলাম সাদ। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। পরিবারের আর্থিক দূরাবস্থার কথা ভেবে ফিল্যান্সারও হয়েছে। ছোট বয়সেই আয় করতো সে। মাধ্যমিক পাস করার পর ভর্তি হয় ঢাকার সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ইচ্ছা পূরণে মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে স্বৈরাচার পতনের এক দফা আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্য শিক্ষার্থীদের মতো দেশ বাঁচানোর জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাদ। ৫ আগস্ট 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচিতেও অংশ নেয় এ মেধাবী ছাত্র।
৫ আগস্ট দুপুরে তার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় পরিবারের সদস্যদের। এর পর আর যোগাযোগ করা যায়নি। সেদিন গণঅভ্যুত্থানের মুখে ডাইনি হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সা'দের সন্ধানে বের হন তার স্বজন। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে তন্ন তন্ন করে খোঁজ করা হয়। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন, সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তি আছে। সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায় সা'দকে।
সা'দরা দুই ভাই। ছোটজন হাইস্কুলে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামে শামিল হয়ে ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সামনে মিছিল করা অবস্থায় পুলিশের গুলিতে আহত হয় সাদ। সাদ তার মাকে বলেছিল, 'যদি বেঁচে না ফিরি গর্বিত হয়ো মা।' তার মা এখন ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সাদ সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। অধরাই থেকে গেল তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দরগ্রাম এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে সাদ। মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ লীগ। হঠাৎ একটি গুলি সাদের কপালের বাঁ পাশে ঢুকে যায়। ঢলে পড়ে রাস্তায়। সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তিন দিন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৮ আগস্ট সকালে মারা যায় সে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে আফিকুল ইসলাম সা'দ ফেসবুকে বেশ সক্রিয় ছিল। গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়ে একটি ব্যানার বানিয়ে ফেসবুকে 'কোটা আন্দোলন' শব্দটি কেটে 'স্বাধীনতা আন্দোলন' লিখেছিল। তার সেই চিন্তার পথ ধরেই আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি সা'দকে।
সা'দের মা আঞ্জুমান আরা জানান, ৫ আগস্ট সকালে ছেলে তাঁর বিছানায় শুয়ে ছিল। হঠাৎ একটি ফোন আসে। মায়ের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যায়। এই মা পরে শুনেছেন, ধামরাই থানা থেকে বের হয়ে পুলিশ গুলি করতে করতে সামনে এগোলে হার্ডিঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকের কাছে ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিটি লাগে সা'দের কপালের বাঁ পাশে। অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি বলে গুলিটি কপালে লেগে বাইরে বের হয়েছিল কি না, তা–ও জানা যায়নি।
আঞ্জুমান আরা আরও জানান, বেলা দেড়টার দিকে একজন ফোন করে জানান, সা'দের গায়ে গুলি লেগেছে। গুলি লাগায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। কয়েকজন মিলে সা'দকে হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ভয়ে কোনো হাসপাতাল ভর্তি করতে রাজি হয়নি। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেও পুলিশের গোলাগুলি চলে। পরে অ্যাম্বুলেন্স ওই পথ থেকে ফেরত এসে নয়ারহাট হয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে আবার এনাম হাসপাতালে যায়। সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায়।
মা আরো বলেন, 'আন্দোলনে মারা গেলে সবাই আমাকে শহীদের মা বলবে, এটা বলত ছেলেরা। মা আঞ্জুমান আরা ৫ আগস্ট ছেলেকে বারবার ফোন দিচ্ছিলেন। ছেলে তাঁকে নিয়ে চিন্তা না করতে এবং ফোন করে বিরক্ত না করার জন্য বলেছিল। এটাই ছিল মা ও ছেলের শেষ কথা। বেলা পৌনে একটার দিকে তিনি আবার ছেলেকে ফোন দিয়েছিলেন, কিন্তু ছেলে আর ফোন ধরেনি। পরে অ্যাম্বুলেন্সে রক্তে ভেসে যাওয়া ছেলেকে যখন দেখেন, তখন ছেলে আর কোনো সাড়া দেয়নি, শুধু নিশ্বাস নিচ্ছে, বেঁচে আছে, এটুকুই বুঝতে পেরেছিলেন এই মা।
বাবা শফিকুল ইসলাম একটি কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করতেন। দুই বছর আগে চাকরিটি চলে যায়। তার পর থেকেই সংসারে টানাটানি যাচ্ছে। সা'দ ফ্রিল্যান্সিং করে কিছু টাকা আয় করত। নিজের খরচের পাশাপাশি সংসারেও কিছু টাকা দিত। ডিসেম্বরে মা, বাবা ও ভাইকে নিয়ে সাজেকে বেড়াতে যেতে চেয়েছিল। ভাই সাজিদুল ইসলাম জানায়, ভাইকে নিয়ে যখন হাসপাতালে গিয়েছি, ততক্ষণে মানুষ বিজয় মিছিল নিয়ে বের হয়েছে। স্বাধীনতা পেতে ভাইকে হারাতে হবে, তা তো জানা ছিল না। তাই বিজয়ের উল্লাস করতে পারিনি। শুধুই কানছি।
ছেলে মারা যাওয়ার তিন–চার দিন আগে মা আঞ্জুমান আরা ছেলেকে পরিবারের চারজন মিলে একটি ছবি তোলার কথা বলেছিলেন। মায়ের আক্ষেপ, 'চারজন মিলে সেই ছবি আর কোনো দিন তোলা হবে না।'
সা'দ বাইচান্স আন্দোলনে যায় নি। সে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের হাত থেকে দেশকে ও দেশের মানুষকে উদ্ধার করার জন্য লড়াই করেছে। সে ১৬ তারিখ থেকে এই আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সে তার জীবন দিয়েছে। আমরা আমাদের এই যোদ্ধাকে ভুলে যাবো না। তাকে মাথায় তুলে রাখবো ইনশাআল্লাহ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন