২২ মার্চ, ২০২৫

সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনা ০৪ : সংবিধান থেকে ইসলামবিরোধী সমাজতন্ত্র বাদ দিতে হবে


জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পাশাপাশি বাংলাদেশের মূল সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির চারটি মৌলিক নীতির মধ্যে সমাজতন্ত্র অন্যতম। এটি প্রস্তাবনাতেও উল্লেখ করা হয়েছে। "সমাজতন্ত্র"কে সংবিধানে "একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার উপকরণ" হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আদতে সমাজতন্ত্র নিজেই শোষণের বড় হাতিয়ার। এই ব্যবস্থায় যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকেন তারাই রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদের মালিক বনে যান।

বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানায় সম্পদের মালিকানা ও সমবায়কে সমর্থন করে। সংবিধান বাংলাদেশকে একটি গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং কৃষক ও শ্রমিকদের মুক্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাঁদের অবস্থার সুরক্ষা ও উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা চালানোর অঙ্গীকার করে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে মূলনীতিতে সমাজতন্ত্র যুক্ত থাকলেও সমাজতন্ত্র ফলো করা হয় না। তবে অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক সংবিধানের মতোই, বাংলাদেশের সংবিধানও বিনামূল্য ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ঘোষণা দেয়।

১৯৭১ সালে দেশভাগের পর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নবপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির আকার ধারণ করে। তবে এর ফলে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং অর্থনৈতিক পশ্চাদপসরণ ঘটে। সম্পদ জাতীয়করণের নামে ব্যাপক লুটপাট শুরু করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিবর্তন হয় এবং দেশে শুধুমাত্র একটি নেতৃত্বস্থানীয় রাজনৈতিক দল বিদ্যমান থেকে যায়।

৭৫ এর আগস্ট বিপ্লবের পর স্বৈরাচার মুজিবের পতনের পর দেশ শাসনব্যবস্থার একটি পরিবর্তন দেখে এবং অবশেষে ১৯৭৯ সালে সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র অপসারণ করা হয়। মুক্ত বাজার অর্থনীতি চালু করা হয়। ২০১১ সালে ৭২ এর সমাজতান্ত্রিক সংবিধান ফিরিয়ে আনার নিমিত্তে "সমাজতন্ত্র" ও "সমাজতান্ত্রিক" শব্দদ্বয় পুনরায় যুক্ত করা হয়, কিন্তু দেশ একটি মুক্তবাজার মিশ্র অর্থনীতি হিসেবেই রয়ে গেছে।

সমাজতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য
১. দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ
২. ধর্মের উৎখাত
৩. ব্যক্তি স্বাধীনতার উচ্ছেদ
৪. নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি
৫. রাষ্ট্রীয় নিরংকুশ মালিকানা
৬. চিন্তার পরাধীনতা
৭. সর্বহারা নামে একদলীয় শাসন
৮. তাত্ত্বিকভাবে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হলেও বাস্তবে সাম্রাজ্যবাদী।

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা মেনে নেওয়া মানে হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ইসলামী অর্থনৈতিকব্যবস্থাকে অস্বীকার করা। আল্লাহর সার্বভোমত্ব মানা মানে হলো আল্লাহর আইন মেনে নেওয়া। অন্য কোনো ব্যবস্থায় আস্থা রাখা মানে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। এই বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আমরা আগের পর্বগুলোতে আলোচনা করেছি।

অতএব প্রস্তাবনা হলো সংবিধান থেকে ইসলামবিরোধী সমাজতন্ত্র অপসারণ করতে হবে। নতুবা এই মতবাদ আবারো মুজিবের মতো রক্তপিপাসু স্বৈরাচার তৈরি করবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন